আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-১৩০৫২: কারও জন্য দুআ করে তাকে জানালে সওয়াব নষ্ট হয়ে যায় কি

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১৩০৫২: 

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। সম্মানিত মুফতি সাহেব,

একটি বিষয় পরিষ্কার হওয়া উচিত, তাহলো কারও জন্য দুআ করে, সেটা আবার তাকে জানালে এই আয়াত (নিচে উল্লেখ করা হলো) তথা খোঁটা দেওয়ার অন্তর্ভুক্ত হবে কি না? কুরআন- হাদি ছবিসের সমাধান দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো। জাযাকাল্লাহু খাইরান 


Surah Al-Baqara, Verse 264:

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُبْطِلُوا صَدَقَاتِكُم بِالْمَنِّ وَالْأَذَىٰ 

হে ঈমানদারগণ!তোমরা অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে এবং কষ্ট দিয়ে নিজেদের দান খয়রাত বরবাদ করো না। সূরা বাকারা-২৩৬

তারিখ: ১৬/০৭/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 মাওলানা আব্দুর রহমান সাভার থেকে।


 জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, কোন মুসলিম ভাইয়ের জন্য দোয়া করা মস্ত বড় নেকির ও সৌভাগ্যের কাজ। যেমন,

أَبِي الدَّرْدَاءِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا مِنْ عَبْدٍ مُسْلِمٍ يَدْعُو لِأَخِيهِ بِظَهْرِ الْغَيْبِ، إِلَّا قَالَ الْمَلَكُ: وَلَكَ بِمِثْلٍ رواه مسلم (2732).

 আবু দারদা (রাঃ) এর হাদিসে এসেছে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: "কোন মুসলিম তার মুসলিম ভাইয়ের জন্য গোপনে দোয়া করতে থাকলে একজন ফেরেশতা বলে: তোমfর জন্যেও অনুরূপ।"[সহিহ মুসলিম (২৭৩২)]

 দ্বিতীয় কথা হলো, কাউকে দান বা দোয়া করার পর তাকে যদি কষ্ট অথবা খোঁটা দেওয়া হয় তাহলে আমল বাতিল হয়ে যাবে, আর যদি তাকে খুশি করা উদ্দেশ্য হয় তাহলে এ আয়াতে কারিমার অন্তর্ভুক্ত হবে না। যেমন, এ বিষয়ে শায়খ উসমানি রহ.  কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন,


إخبار المدعو له بظهر الغيب بالدعاء له 

وبناء على هذا؛ فإن إخبار الأخ بذلك قد يكون لعدة مقاصد 

فإن قصد بذلك : إظهار التفضل والمنّ على المدعو له، فالمن من كبائر الذنوب، وقد يحبط ذلك العمل الذي منه به صاحبه.


قال الشيخ ابن عثيمين رحمه الله تعالى:

" ما يطرأ بعد انتهاء العبادة؛ فإنه لا يؤثر عليها شيئا، اللهم إلا أن يكون فيه عدوان؛ كالمن والأذى بالصدقة، فإن هذا العدوان يكون إثمه مقابلا لأجر الصدقة فيبطلها؛ لقوله تعالى: ( يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لا تُبْطِلُوا صَدَقَاتِكُمْ بِالْمَنِّ وَالْأَذَى ) " انتهى من"القول المفيد" (2 / 126).

وقد يكون هذا الإعلان من الأعمال الصالحة التي يؤجر عليها المعلن؛ كأن يخبر بأنه يدعو بظهر الغيب إجابة على سؤال، فيكون إخباره من باب تحري الصدق في الحديث، أو أراد إظهار موَدته للمدعو له وإدخال السرور على قلبه، وجلب مزيد الألفة والمودة بينهما؛ كما جاء في الحديث: قِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ! مَنْ أَحَبُّ النَّاسِ إِلَى اللَّهِ؟

قَالَ: أَنْفَعُهُمْ لِلنَّاسِ، وَإِنَّ أَحَبَّ الْأَعْمَالِ إِلَى اللَّهِ سُرُورٌ تَدْخِلُهُ عَلَى مُؤْمِنٍ... رواه ابن أبي الدنيا في "قضاء الحوائج" (ص 47)، وحسّنه الشيخ الألباني في "السلسلة الصحيحة" (2 / 575).

ومن هذا ما رواه الخطيب البغدادي في "تاريخ بغداد" (4 / 325) بإسناده عن خطاب بن بشر: قال:

" جعلت أسأل أبا عبد الله أحمد بن حنبل فيجيبني، ويلتفت إلى ابن الشافعي فيقول: هذا مما علمنا أبو عبد الله، يعني الشافعي.

قَالَ خطاب: وسمعت أبا عبد الله أحمد بن محمد بن حنبل يذاكر أبا عثمان أمر أبيه، فقال أحمد: يرحم الله أبا عبد الله، ما أصلي صلاة إلا دعوت فيها لخمسة، هو أحدهم ".

فمثل هذه المصالح : لا يظهر ما يمنع منها ، بل هي أعمال خير وبر، ولا يظهر أنها تؤثر في اجر الدعاء بظهر الغيب، ولا أن يكون للداعي مثل ما سأل لصاحبه.


অর্থাৎ যার জন্য দোয়া করা হয় তাকে দোয়া করার বিষয়টি অবহিত করা:

পূর্বোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে যার জন্য দোয়া করা হল তাকে অবহিত করার কয়েকটি উদ্দেশ্য হতে পারে:


যদি এ অবহিত করণের মাধ্যমে তার উপর অনুকম্পা প্রকাশ করা ও তাকে খোঁটা দেয়ার উদ্দেশ্য করা হয় তাহলে খোঁটা দেয়া একটি কবিরা গুনাহ। খোঁটা দেয়ার মাধ্যমে আমলকারীর আমল নষ্ট হয়ে যেতে পারে।


শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন:

"ইবাদতটি শেষ হয়ে যাওয়ার পর যা কিছুর উদয় হয় এটি ইবাদতের উপর কোন প্রভাব ফেলবে না। তবে ওটার মধ্যে যদি সীমালঙ্ঘন থাকে; যেমন- খোঁটা দেয়া, দান করে কষ্ট দেয়া; তাহলে এই সীমালঙ্ঘনের পাপ দানের সওয়াবের সাথে পাল্টাপাল্টি হয়ে দানকে বাতিল করে দিবে। যেহেতু আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: "ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা খোঁটা দেয়া ও কষ্ট দেয়ার মাধ্যমে তোমাদের দানগুলোকে নষ্ট করো না।"[আল-কাওলুল মুফিদ (২/১২৬) থেকে সমাপ্ত]


আবার হতে পারে এ অবহিতকরণ নেক আমল হিসেবে গণ্য হবে এবং এর জন্য অবহিতকারীকে সওয়াব দেয়া হবে। উদাহরণতঃ কেউ যদি জানতে চায় তখন তাকে জানানো যে, তার জন্য গোপনে দোয়া করে। এমন জানানোটা কথাবার্তায় সত্যবাদিতা ফুটিয়ে তোলার পর্যায়ভুক্ত। কিংবা যদি যার জন্য দোয়া করা হল তার প্রতি মমত্ব ফুটিয়ে তোলা ও তার মনে আনন্দ প্রবেশ করানোর জন্য হয় এবং উভয়ের মাঝে সম্পর্ক-সম্প্রীতি বৃদ্ধি করার জন্য হয়। যেমনটি হাদিসে এসেছে: "জিজ্ঞেস করা হল: ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! আল্লাহ্‌র কাছে সর্বাধিক প্রিয় কে? তিনি বললেন: মানুষের সর্বাধিক উপকারী ব্যক্তি। এবং আল্লাহ্‌র কাছে সর্বাধিক প্রিয় আমল হচ্ছে— কোন মুমিনের অন্তরে খুশি প্রবেশ করানো।…[কাযাউল হাউয়ায়িজ (পৃষ্ঠা-৪৭), শাইখ আলবানী 'আস্‌-সিলসিলা আস্‌-সাহিহা' গ্রন্থে (২/৫৭৫) হাদিসটিকে 'হাসান' বলেছেন]


এ বিষয়ে খতীব আল-বাগদাদী তার 'তারিখু বাগদাদে (৪/৩২৫) নিজের সনদে 'খাত্তাব বিন বিশর' থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন: "আমি আব্দুল্লাহর পিতা আহমাদ বিন হাম্বলকে প্রশ্ন করছিলাম আর তিনি জবাব দিচ্ছিলেন এবং শাফেয়ির ছেলের দিকে তাকিয়ে বলছিলেন: এটি আমাদেরকে আব্দুল্লাহ্‌র পিতা শিখিয়েছেন। বুঝাতে চেয়েছেন: শাফেয়ি।


খাত্তাব বলেন: আমি আব্দুল্লাহর পিতা আহমাদ বিন মুহাম্মদ বিন হাম্বলকে ওসমানের পিতার সাথে তার বাবার ব্যাপারে আলোচনা করতে শুনেছি। আহমাদ বলেন: আব্দুল্লাহ্‌র পিতার প্রতি আল্লাহ্‌ রহম করুন। আমি যখনই কোন নামায পড়ি পাঁচজনের জন্য দোয়া করি। তিনি পাঁচজনের একজন।"

এ ধরণের উদ্দেশ্যের ক্ষেত্রে: অবহিতকরণ নিষিদ্ধ হবে না মর্মে প্রতীয়মান হয়। বরং এ উদ্দেশ্যগুলো নেক কাজ ও ভাল কাজ। এবং এটি গোপন দোয়ার সওয়াবপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে কোন প্রভাব ফেলবে না এবং দোয়াকারী তার ভাইয়ের জন্য যা যা দোয়া করেছে সেও তা তা পাওয়ার ক্ষেত্রে কোন প্রভাব ফেলবে না মর্মে প্রতীয়মান হয়।


হাদিস নং--০১

مَنْ أَتَى إِلَيْكُمْ مَعْرُوفًا فَكَافِئُوهُ، فَإِنْ لَمْ تَجِدُوا فَادْعُوا لَهُ، حَتَّى يَعْلَمَ أَنْ قَدْ كَافَأْتُمُوهُ.

তোমাদের প্রতি যে ব্যক্তি কোনো ভালো আচরণ করে তোমরা তার প্রতিদান দাও। যদি দেয়ার মতো কিছু না পাও তাহলে তার জন্যে দুআ করো, যাতে সে বুঝতে পরে- তোমরা তার প্রতিদান দিয়েছ। -আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদীস ২১৬


হাদিস নং--০২

مَنْ أُعْطِيَ عَطَاءً فَوَجَدَ فَلْيَجْزِ بِهِ، وَمَنْ لَمْ يَجِدْ فَلْيُثْنِ، فَإِنّ مَنْ أَثْنَى فَقَدْ شَكَرَ، وَمَنْ كَتَمَ فَقَدْ كَفَرَ.

কাউকে যখন উপহারস্বরূপ কিছু দেয়া হয়, তখন সে যদি এর পরিবর্তে দেয়ার মতো কিছু পায় তাহলে যেন তা দিয়ে দেয়। আর যে এমন কিছু না পাবে সে যেন তার প্রশংসা করে। কেননা যে প্রশংসা করল সেও কৃতজ্ঞতা আদায় করল। আর যে লুকিয়ে রাখল সে অস্বীকার করল। -জামে তিরমিযী, হাদীস ২০৩৪

ব্যাখ্যা: কোন ব্যক্তির সামনে যদি তার কৃতজ্ঞতা বা প্রশংসা করার সুযোগ না হয়, তাহলে মেসেজ/সংবাদ পৌঁছিয়ে দিলেও হবে।


সারকথা হলো,  খোঁটা/কষ্ট দিলে আমল নষ্ট হয়ে যায়।  খোঁটা দেওয়া আর জানানো এক জিনিস নয় বরং কোন মুসলমান ভাইয়ের সন্তুষ্টির জন্য তাকে জানানো আল্লাহ তাআলার নিকট সর্বাধিক প্রিয় আমল।  তাই মুসলিম ভাইয়ের মন খুশির জন্য জানালে উল্লেখিত আয়াতের অন্তর্ভুক্ত হবে না।

  والله اعلم بالصواب