জিজ্ঞাসা-২০৪: আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। আমাদের একজন আরটি হুজুরের কাছে তার সিও জানতে চেয়েছেন,
طلب العلم فريضة এই ফরজের অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলো কি কি? কারো সংগ্রহে কোন রেফারেন্স নোট তৈরি করা থাকলে দেয়ার জন্য অনুরোধ রইল।
(তারিখ- ২৪/০৬/২০২২ ঈসায়ি)
মাওলানা মোহাম্মাদ আব্দুর রহমান (সাভার)থেকে--
জবাব: وَعَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيضَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ وَوَاضِعُ الْعِلْمِ عِنْدَ غير أَهله كمقلد الْخَنَازِير الْجَوْهَر واللؤلؤ وَالذَّهَبَ» . رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ وَرَوَى الْبَيْهَقِيُّ فِي شُعَبِ
আনাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ’ইলম বা জ্ঞানার্জন করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ফরয এবং অপাত্রে তথা অযোগ্য মানুষকে ’ইলম শিক্ষা দেয়া শুকরের গলায় মণিমুক্তা বা স্বর্ণ পরানোর শামিল। তখরিজ: ইবনে মাজাহ্ ২২৪, সহীহুল জামি-৩৯১৩ বায়হাকি-১৫৪৪
নোট: প্রথম অংশ তথা (طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيْضَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ) সহীহ। দ্বিতীয় অংশ জয়িফ।
জবাব: ‘নিঃসন্দেহে মুসলিম مسلم (পুরুষ) শব্দটি المسلمة মুসলিমা (নারী) কেও শামিল করে। অর্থাৎ এই বিধান পুরুষের সঙ্গে সঙ্গে নারীর জন্য সমানহারে প্রযোজ্য। আর কোনো কোনো হাদীছে المسلمة শব্দটি উল্লেখ করা হয়েছে। এ হাদিসের ব্যাখ্যা সম্পর্কে এসেছে-
وَكُلُّ مَنْ اشْتَغَلَ بِشَيْءٍ يُفْرَضُ عَلَيْهِ عِلْمُهُ وَحُكْمُهُ لِيَمْتَنِعَ عَنْ الْحَرَامِ فِيهِ اهـ
যে বক্তি কোনো জিনিষ বা কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট হবে নিজেকে সংশ্লিষ্ট করজে, তার উপর উক্ত বিষয় সম্পর্কে ইলম অর্জন করা ফরয।যাতে করে উক্ত বিষয় ও বিষয় সংশ্লিষ্ট সমস্ত হারাম থেকে সে অনায়াসে বেছে থাকতে পারে। রদ্দুল মুহতার-১/৪২
ফাতাওয়ায়ে শামীতে আছে
وَفَرْضٌ عَلَى كُلِّ مُكَلَّفٍ وَمُكَلَّفَةٍ بَعْدَ تَعَلُّمِهِ عِلْمَ الدِّينِ وَالْهِدَايَةِ تَعَلُّمُ عِلْمِ الْوُضُوءِ وَالْغُسْلِ وَالصَّلَاةِ وَالصَّوْمِ، وَعِلْمِ الزَّكَاةِ لِمَنْ لَهُ نِصَابٌ، وَالْحَجِّ لِمَنْ وَجَبَ عَلَيْهِ وَالْبُيُوعِ عَلَى التُّجَّارِ لِيَحْتَرِزُوا عَنْ الشُّبُهَاتِ وَالْمَكْرُوهَاتِ فِي سَائِرِ الْمُعَامَلَاتِ. وَكَذَا أَهْلُ الْحِرَفِ،
প্রত্যেক মুকাল্লাফ-মুকাল্লাফাহ(আক্বেল-বালেগ নর-নারী)এর উপর দ্বীনের প্রয়োজনীয় জ্ঞানার্জনের পর ফরয হচ্ছে,ওজু,গোসল,নামায এবং রোযা,এর জ্ঞান অর্জন করা। এবং নেসাব প্রাপ্ত মালের মালিকের উপর যাকাতের জ্ঞান অর্জন করা এবং যার উপর হজ্ব ফরয,তার জন্য হজ্বের বিধি-বিধান অর্জন করা।
এবং ব্যবসায়ীদের উপর ব্যবসা সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জন করা। এজন্য ফরয,যাতে তারা উক্ত বিষয় সম্পর্কিত বিভিন্ন অস্পষ্টতা,সন্দেহ ও অপছন্দনীয় দিবসসমূহ থেকে অনায়াস বেছে থাকতে পারে। ঠিকতেমনিভাবে পেশাজীবীদের জন্য সংশ্লিষ্ট পেশা সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা ফরয।
এ বিষয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক রচিত- “দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম” কিতাবের ইলম অধ্যায় দেখে নিতে পারেন। তাছাড়া আমার লেখা- “মুসলিম জীবন সাফল্যে চল্লিশ(৪০) হাদিস” কিতাবের ৬০ নং পৃষ্ঠা দেখা যেতে পারে। কিতাবটির পিডিএফ কপি দেওয়া হবে ইনশাল্লাহ।
এ সংক্রান্ত খুলাসা (সারকথা) শা্হ আশরাফ আলী থানভী রহমাতুল্লাহ আলাইহির বাণীটি যথার্থ। তিনি বলেছেন, ইসলামে যে আমল করা ফরজ; তার জ্ঞান অর্জন করাও ফরজ (যেমন-ঈমান-আখিরাত-রিসালাত ইত্যাদি)। যে আমল করা ওয়াজিব, সে সস্পর্কে জ্ঞান অর্জন করাও ওয়াজিব। যে আমল করা সুন্নাত, তার জ্ঞান অর্জন করা সুন্নাত। আর ইসলামে যে আমল করা নফল/মুস্তাহাব ওই সংক্রান্ত জ্ঞান অর্জন করাও নফল/মুস্তাহাব।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক (বগুড়া),