জিজ্ঞাসা-১৩০৪৬:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। জনাব মুফতি সাহেব ! আপনার কাছে আমার জানার বিষয় হচ্ছে। বাইতুল্লাহ শরীফ এবং মসজিদে নাববিতে সাউন্ড সিস্টেম থাকা সত্ত্বেও মুকাব্বির তাকবীর দিয়ে থাকেন, আমাদের দেশে এ প্রচলন নাই কেন ? আর এ ব্যাপারে শরীয়তের বিধান কি? ধন্যবাদ।
তারিখ: ১০/০৭/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা নুরুল আলম জামালপুর থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, মাইকে আজান একামত এবং নামাজ পড়ানো যাবে কিনা এ বিষয়ে আলেমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। মাইক বা সাউন্ড সিস্টেম আবিষ্কারের সময়
ওলামা একরামের একটা বিশাল অংশ নামাজ-আযান-ইকামতে এর ব্যবহারের বিরোধিতা করেন। তবে পরবর্তীতে ফতোয়াটি শীতলতা প্রদর্শন করেন।
উদাহরণস্বরূপ: দারুল উলুম মইনুল ইসলাম হাটহাজারীতে ২০০৯ সালের আগ পর্যন্ত নামাজ এবং আযান একামতে মাইক ব্যবহার করা হতো না, পরবর্তীতে ফতোয়াটি পরিবর্তন করেন।
এভাবে দারুল উলুম দেওবন্দের প্রথম দিকের মুরুব্বিরা নামাজ-একামতে মাইক ব্যবহারের বিরোধিতা করলেও পরবর্তীতে ফতোয়াতি পরিবর্তন করেন।
সৌদি আরবের বিখ্যাত আলেম শায়েখ উসাইমিন রহ. মাইকে/লাউডস্পিকারে নামাজ পড়া নাজায়েজ মনে করেন। (অনলাইনে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় ওনার ফতোয়াটি ভাইরাল হয়েছিল, এখনো খুঁজলে পাওয়া যাবে) তবে উনার মতে আযান-একামতে মাইক ব্যবহার জায়েজ।
যাইহোক বর্তমান প্রেক্ষাপটে মুসলিম বিশ্বের অধিকাংশ ফকিহ, মুফতি ও ইসলামিক স্কলারদের মতে আধুনিক টেকনোলজি তথা আযান-একামত-নামাজে ব্যবহার করা জায়েজ। তাদের দলিল-
مارءاه المسلمون حسنًا فهو عند الله حسن ـ
اخرجه احمد فى مسنده موقوفا والحاكم فى المستدرك وقال الذهبى والحاكم صحيح ـ [كتاب الاشباه والنظائر وشرحه غمز عيون البصائر ـ الفن الاول فى القواعد ـ القاعدة السادسة ـ ج ـ ১ ـ صفحه ـ ৪১১]
অর্থাৎ আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত আছে- মুসলমানগণ ভাল হিসেবে গণ্য করেন/ দেখেন, তা মহান আল্লাহ্ তা‘আলার নিকটও উত্তম হিসেবে গণ্য। তদুপরি ক্বোরআন ও হাদীসের দলীল দ্বারা প্রমাণিত ও বাস্তবসম্মত কানুন (বিধান) হল- اصل الاشياء الاباحة অর্থাৎ প্রত্যেক বস্তুর আসল বা মূল বৈধ। অতএব, যতক্ষণ পর্যন্ত কোন বস্তু নিষেধ হওয়ার সুস্পষ্ট কোন দলীল ক্বোরআন-সুন্নাহয় পাওয়া না যায় ততক্ষণ তা বৈধ এবং জায়েয। সূত্র: কিতাবুল আশবাহ্ ওয়ান্নাযায়ের, কৃত. ইমাম ইবনে নুজাইম হানাফী রহ.
দ্বিতীয় কথা হল, নামাজে লাউডস্পীকার ব্যবহার করার পরও মুকাব্বির কেন নির্ধারণ করা হয়? এর কয়েকটি কারণ হতে পারে।
(০১) নামাজে লাউডস্পিকার ব্যবহার করা জায়েজ হলেও সুন্নাহ নয়, সুন্নাত হল মোকাব্বের নির্ধারণ করা, তাই সুন্নাহর উপর আমল করা হয়।
(০২) বড় জামায়াতের জন্য মুকাব্বির নির্ধারণ করা সুন্নত । এই সুন্নাত যেন একেবারেই সমাজ থেকে বিলুপ্ত না হয়, তাই লাউডস্পীকার থাকা সত্ত্বেও মোকাব্বের নির্ধারণ করা হয়।
(০৩) ইসলাম কোন যন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল নয়, তাই লক্ষাধিক মানুষের জামাতে যান্ত্রিক গোলযোগ বা বিদ্যুৎ বিভ্রাট হতে পারে, ফলে নামাজের সমস্যা হবে। তাই পূর্ব সতর্কতার জন্য মুকাব্বির নির্ধারণ এবং আমল করা হয়।
সারকথা হলো, নামাজে লাউডস্পিকার ব্যবহার করা জায়েজ সুন্নাত নয়, সুন্নাত হলো মোকাব্বের নির্ধারণ করা, এবং যান্ত্রিক সমস্যা বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার ভয়ে সতর্কতার জন্য মোকাব্বের নির্ধারণ করা হয়। তাই বাইতুল্লাহ শরীফ এবং মসজিদে নাববিতে সাউন্ড সিস্টেম থাকা সত্ত্বেও মুকাব্বির তাকবীর দিয়ে থাকেন।
আর আমাদের দেশে এ প্রচলন নেই, একথা ঠিক নয়, আছে তবে কম। যেমন, টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমায় সাউন্ড সিস্টেম থাকার পরও মোকাব্বের নির্ধারণ করা হয় মক্কা-মদিনার মত।
তবে অপ্রয়োজনীয় সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করা ঠিক নয়, যেমন,
ভারতের প্রখ্যাত মুফতি মাওলানা সালমান মানসুরপুরি লেখেন, কোথাও সাউন্ড বক্স বা মাইক ছাড়াই যদি ইমামের তাকবিরের শব্দ মুসল্লিদের কানে পৌঁছে, তাহলে সেখানে মাইক বা সাউন্ড বক্স ব্যবহার মাকরুহ হবে। [কিতাবুন নাওয়াজিল]
والله اعلم بالصواب