জিজ্ঞাসা-২০৯: আসসালামুয়ালাইকুম মুহতারাম শায়েখ এর নিকট জানতে চাই নিজ জন্মভূমি কে মা বলা কুরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতে কতটুকু সঠিক? তারিখ-২৮/০৬/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আখতারুজ্জামান দা.বা. দিনাজপুর থেকে----
জবাব: ওয়ালাইকুমসসালাম রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। আল্লাহ আপনাকে দোজাহানের সম্মান-ইজ্জতের জীবন দান করুন। আপনার প্রশ্নকে সহজ ভাবে বোঝার জন্য আমরা কয়েকটি ভাগে ভাগ করছি: প্রথম কথা হল, কবিতা যথার্থ কবিতা হওয়ার পেছনে আরো কয়েকটি উপাদান বা অনুষঙ্গ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হলো- ছন্দ, শব্দালঙ্কার, রূপক-উপমা -প্রতীক-রূপকল্প ইত্যাদি। কবিরা প্রয়োজন, নিজস্ব রুচি ও পছন্দ অনুযায়ী প্রচলিত-অপ্রচলিত, নতুন-পুরাতন, সাধু-চলতি ইত্যাদি সব ধরনের শব্দই ব্যবহার করে থাকেন।
প্রশ্ন : ক। রুপক কাকে বলে?
উত্তর: ক। ভাষা আলঙ্কার এটার জন্য অলঙ্কৃত প্রভাব, সরাসরি অন্য একটি জিনিস উল্লেখ করে একটি জিনিস বোঝায়। পৃথিবীর সকল ভাষায় রূপক শব্দ ব্যবহার করা হয় বিশেষ করে কবিতায় কয়েকটি উদাহরণ নিম্নে দেয়া হল: (১)আরবি সাহিত্যে রূপক শব্দের ব্যবহার:
وقالت عائشة رضى الله تعالى عنه: لنا شمس وللآفاق شمس + وشمسى خير من شمس السماء،، وشمس الناس تطلع بعد فجر + وشمسى تطلع بعد العشاء.
অর্থ: "আমার একটি সূর্য আছে, আকাশেরও একটি সূর্য আছে। আমার সূর্য আকাশে সূর্য চেয়েও উত্তম। মানুষের সূর্য ওঠে ফজরের পরে আর আমার সূর্য উদিত হয় এশারের পরে।"।
উক্ত কবিতায় হজরত আয়েশা রা. রাসূল (ﷺ) এর সৌন্দর্য ও উজ্জ্বলতা তার চেহারার নূরকে সূর্যের সাথে তুলনা করেছেন।
(২) ইংরেজি সাহিত্যের রূপকের সবচেয়ে সাধারণভাবে উদ্ধৃত উদাহরণগুলির মধ্যে একটি "সমস্ত বিশ্বের একটি পর্যায়"একাকীত্ব থেকে যেমন আপনি এটি পছন্দ:
সমস্ত বিশ্বের একটি পর্যায়,
এবং সমস্ত পুরুষ এবং মহিলা কেবল খেলোয়াড়;
তাদের প্রস্থান এবং প্রবেশদ্বার রয়েছে ...
—উইলিয়াম শেক্সপিয়ার,
এই উদ্ধৃতিটি একটি রূপককে প্রকাশ করে কারণ বিশ্ব আক্ষরিক অর্থে একটি পর্যায় নয়। বিশ্বটি একটি মঞ্চ বলে জোর দিয়ে শেক্সপিয়ার বিশ্বের মেকানিক্স এবং এর মধ্যে থাকা মানুষের আচরণ সম্পর্কে বোঝার জন্য বিশ্বের এবং একটি মঞ্চের তুলনা করার পয়েন্ট ব্যবহার করে।
(৩) বাংলা কবিতায় রূপক শব্দের ব্যবহার:
"রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি?
এখনো তোমার আসমান ভরা মেঘে?
সেতারা, হেলার এখনো ওঠেনি জেগে?"
এখানে মুসলিম রেনেসাঁর কবি ফারুক আহমেদ পাঞ্জেরী দ্বারা (পাঞ্জেরী অর্থ জাহাজের অগ্রভাগে যিনি থাকেন) মুসলিম জাতির কর্ণধার বুঝিয়েছেন। সুতরাং উপরোক্ত আলোচনার দ্বারা আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো স্বদেশকে বোঝাতে রূপক অর্থে মা শব্দ ব্যবহারে কোন সমস্যা নেই।
প্রশ্ন: খ। বিজাতীয় ভাষা বা শব্দ ব্যবহার করা যাবে কি?
উত্তর: খ। বিজাতীয় যেসব ভাষা তাদের ধর্মের সাথে নির্দিষ্ট সেটা মুসলিম ব্যবহার করতে পারে না। যেমন আল্লাহ ঈশ্বর, ভগবান, যীশু ইত্যাদি বলে সম্বোধন করা। দলিল: Surah Al-Araf, Verse 180:
وَلِلَّهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَىٰ فَادْعُوهُ بِهَا وَذَرُوا الَّذِينَ يُلْحِدُونَ فِي أَسْمَائِهِ سَيُجْزَوْنَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ
অর্থ: আর আল্লাহর জন্য রয়েছে সব উত্তম নাম। কাজেই সে নাম ধরেই তাঁকে ডাক। আর তাদেরকে বর্জন কর, যারা তাঁর নামের ব্যাপারে বাঁকা পথে চলে। তারা নিজেদের কৃতকর্মের ফল শীঘ্রই পাবে।
সূরা আরাফ-১৮০
সারকথা: শেষ কথা হল স্বদেশ বা মাতৃভূমির রূপক হিসেবে মা শব্দ ব্যবহার করা কোরআন হাদিসের সাথে কোন সংঘর্ষিক নয়। ভাষা বৈচিত্র্য রব্বুল আলামীনের একটি মহান দান। যেমন তিনি বলেন,
وَمِنْ آيَاتِهِ خَلْقُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافُ أَلْسِنَتِكُمْ وَأَلْوَانِكُمْ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّلْعَالِمِينَ
তাঁর আর ও এক নিদর্শন হচ্ছে নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের সৃজন এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র। নিশ্চয় এতে জ্ঞানীদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে। সূরা রুম-২২
الله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন,