আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

নসিহা-০৪: সময়ের অপচয়ের কারণে আমরা একদিন ভীষণ লজ্জিত হব।

No Comments

 



*সময়ের অপচয়ের কারণে আমরা একদিন ভীষণ লজ্জিত হব...* 


6412 - حَدَّثَنَا المَكِّيُّ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ سَعِيدٍ هُوَ ابْنُ أَبِي هِنْدٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " نِعْمَتَانِ مَغْبُونٌ فِيهِمَا كَثِيرٌ مِنَ النَّاسِ: الصِّحَّةُ وَالفَرَاغُ " قَالَ عَبَّاسٌ العَنْبَرِيُّ: حَدَّثَنَا صَفْوَانُ بْنُ عِيسَى، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ سَعِيدِ بْنِ أَبِي هِنْدٍ، عَنْ أَبِيهِ، سَمِعْتُ ابْنَ عَبَّاسٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِثْلَهُ

মক্কী ইবনে ইবরাহীম (রাহঃ) ......... ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ দুটি নিআমত এমন আছে, যে দু’টোতে অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। তা হল, সুস্থতা আর অবসর। তাখরিজ: বুখারি-৬৪১২


হাদীসের ব্যখ্যা:

মানুষকে আল্লাহ যে নিয়ামতগুলো দান করেছেন সেগুলোর সঠিক ও যথার্থ ব্যবহারের মাধ্যমে উন্নতি ও সফলতা অর্জন করা সম্ভব, আর তার অন্যথা হলে অবনতি ও ব্যর্থতা এই সহজ সত্যটাই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতের সামনে তুলে ধরেছেন। এই হাদীসে এ ধরনের দু’টি নেয়ামতের কথা উল্লেখ করে তিনি ইরশাদ করেছেন, ‘দু’টি নিয়ামতের ব্যাপারে অসংখ্য মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। (অর্থাৎ এ দু’টি নিয়ামতের যথাযথ মূল্যায়ন না করার কারণে তারা কল্যাণবঞ্চিত।) নিয়ামত দু’টি হল ‘সুস্থতা’ ও ‘অবকাশ’।’


অনেক মানুষ ধোঁকার মধ্যে থাকার অর্থ হল, প্রথমত এই দুই নিআমত সাধারণত একসাথে লাভ হয় না। অনেক মানুষ সুস্থ, কিন্তু তার অবসর নেই। আবার অনেকে অবসর, কিন্তু সুস্থ নয়। আর কারো ভাগ্যে যদি উভয় নিআমতই একসাথে মিলে যায় তবে এর প্রকৃত মূল্যায়ন খুব কম মানুষই করে থাকে; বরং অযথা কাজকর্মে এ দুই নিআমত নষ্ট হয়ে যায়।


অসুস্থতাও আল্লাহ তাআলার অনেক বড় নিআমত। বিভিন্ন হাদীসে রোগ-শোক ও বালা-মসিবতেরও তাৎপর্য ও ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। অসুস্থতা দেহের যাকাত স্বরূপ। এর দ্বারা শরীর গুনাহমুক্ত হয়, পাক-পবিত্র হয়। আল্লাহর কাছে বান্দার মর্যাদা বুলন্দ হয়। ভবিষ্যত জীবনের জন্য উপদেশ গ্রহণের সুযোগ তৈরি হয়।


এ দু’টি বিষয়ে আল্লাহর তাআলার কত বড় দান তা খুব ভালোভাবে বুঝে আসে যখন এগুলো হারিয়ে যায়। অসুস্থ মানুষের পক্ষে সুস্থতার মাহাত্ম্য বোঝা সহজ। আর নানা অবাঞ্ছিত ঝামেলায় জর্জরিত হলে তখনই বুঝে আসে অবকাশের মূল্য। কিন্তু তখন বুঝে আসলেও কিছু করার থাকে না।


পবিত্র কুরআনের ইরশাদ-

وَ اِنْ تَعُدُّوْا نِعْمَتَ اللهِ لَا تُحْصُوْهَا اِنَّ الْاِنْسَانَ لَظَلُوْمٌ كَفَّارٌ.

তোমরা আল্লাহ্র নিআমত গণনা করে শেষ করতে পারবে না। নিশ্চয়ই মানুষ অকৃতজ্ঞ ও নাফরমান। -সূরা ইবরাহীম (১৪) : ৩৪


শায়খুল ইসলাম হযরত মাওলানা শাব্বীর আহমাদ উসমানী রাহ. এ আয়াতের ব্যাখ্যায় লেখেন, ‘আল্লাহ তাআলার নিআমত এত অসংখ্য যে, যদি তোমরা সবাই মিলে ভাসাভাসাভাবেও গণনা শুরু কর তাহলেও ক্লান্ত হয়ে বসে পড়বে। শেষ অংশের ব্যাখ্যায় বলেন- ‘মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অকৃতজ্ঞ ও জালেম ঐ ব্যক্তি, যে এত অসংখ্য নিআমত দেখেও নিজের প্রকৃত ও মহান দাতার হক সম্পর্কে সচেতন হয়নি।


আমরা আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায়ের ক্ষেত্রে কত অক্ষম! তাঁর একটি নিআমতের শুকরিয়াও আমাদের পক্ষে যথাযথভাবে আদায় করা সম্ভব নয়। শুধু আফিয়াতের নিআমতের কথাই চিন্তা করুন। কত বিস্তৃত এই নিআমাত! কত অসংখ্য তার শাখা-প্রশাখা। এই অসংখ্য শাখা-প্রশাখার অধিকাংশের ক্ষেত্রেই আমাদের মনে হয় না যে, এরও শুকরিয়া আদায় করা উচিত।


প্রতিটি মুহূর্তে আমরা কত নিআমতের মধ্যে ডুবে আছি। অনেক নিআমতের দিকে তো মানুষের দৃষ্টি যায় এবং কিছু না কিছু হলেও শুকরিয়া আদায় করে। কিন্তু লাখো-কোটি নিআমত এমন, যা মানুষের উপলদ্ধি- সীমারও বাইরে; সেগুলোর শুকরিয়া আদায় হবে কীভাবে? আমাদের এই দেহযন্ত্রের প্রতিটি অংশের জন্যই কি আলাদা আলাদাভাবে শুকরিয়া করা উচিত নয়? কিন্তু আমাদের মধ্যে কে এমন আছে, যার দেহের কোনো একটি অঙ্গের সুস্থতা ও আফিয়াতের জন্য সার্বক্ষণিক শুকরিয়া আদায়ের সৌভাগ্য হয়েছে।


হাদীসে শরীফে এসেছে- কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যে নিয়ামত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে তা হল, আমি কি তোমাকে একটি সুস্থ দেহ দেইনি? তোমাকে কি ঠান্ডা পানি দ্বারা পরিতৃপ্ত করিনি? অর্থাৎ এই নিয়ামত প্রহণ করে তোমার দায়িত্ব কতটুকু পালন করেছ? এই প্রশ্নের উত্তর মানুষকে দিতে হবে।


একটি সুস্থ ও কর্মক্ষম শরীর আল্লাহ তাআলার অনেক বড় নেয়ামত। এ শরীর আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেছেন তাঁর অসীম কুদরতের মাধ্যমে। এক ঘনান্ধকার স্থানে, মাতৃজঠরে। মহাকুশলী আল্লাহ এমনই নিপুণতায় মানবদেহ সৃষ্টি করেছেন, যতই মানুষ তা চিন্তা করে ততই অভিভূত হয়। মানুষের নিজের স্বত্তায় রয়েছে সৃষ্টিকর্তার পরিচয়। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেছেন, ‘ভূ-পৃষ্ঠে রয়েছে বিশ্বাসীদের জন্য অনেক নিদর্শন। আর রয়েছে তোমাদের নিজ স্বত্তায়। এরপরও কি তোমরা দেখবে না?’-সূরা যারিয়াত : ২১ 


আল্লাহর পরিচয়, তাঁর জ্ঞান ও কুশলতার পরিচয় লাভের এত সহজ উপায় বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও যদি আল্লাহর সঙ্গে পরিচিত না হওয়া যায় তবে এরচেয়ে বড় বঞ্চনা আর কী হতে পারে!

মানবদেহে যে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেছেন এবং যে নিপুণভাবে এগুলো কাজ করে যাচ্ছে তা এক মহাবিস্ময়। সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যথাযথভাবে কাজ করে গেলেই মানুষ পূর্ণ সুস্থ থাকে। আর কোনো অঙ্গের কাজ সামান্য ব্যাহত হলে মানুষ হয়ে পড়ে অসুস্থ। তার প্রয়োজনীয় কাজ-কর্মও তখন স্থগিত হয়ে যায়।



পার্থিব এ জীবনই আমল চাষের সময়। আর আখিরাত হচ্ছে সাওয়াবের ফসল তোলার মৌসুম। তাই কোনো মুমিনের জন্য সময় নষ্ট করা ও সময়ের মতো অমূল্য পুঁজিকে অনর্থক খরচ করা মোটেই শোভনীয় নয়।


আজ যারা সময়ের মূল্য সম্পর্কে অজ্ঞাত—অচিরেই একদিন আসবে,যেদিন তারা সময়ের মূল্য ও শ্রেষ্ঠত্বের কথা জানতে পারবে। জানতে পারবে সঠিক সময়ে কাজ করার বহুমূল্যতা সম্পর্কে। মানুষ সময়ের মূল্য ঠিকই বুঝতে পারবে, তবে সেটা সময় চলে যাওয়ার পর। এ বিষয়েই কুরআন দুটি অবস্থানের কথা বর্ণনা করেছে, যে স্থানে এসে মানুষ লজ্জিত হবে। লজ্জিত

হবে সময় নষ্ট করা ও অনর্থক কাজে সময় ব্যয় করার জন্য।


সময়ের অপচয়ের কারণে দুটি সময়ে মানুষ ভীষণ লজ্জিত হবে—


১. জীবনের অন্তিম মুহূর্তেঃ


যখন মানুষ পেছনে রেখে যাবে দুনিয়ার এ জীবনকে। এগিয়ে যাবে আখিরাত পানে। তখন সে আক্ষেপ করবে, যদি তাকে একটুখানি সময় দেওয়া হতো!

যদি একটু সুযোগ দেওয়া হতো! তবে সে তার বিনষ্ট অবস্থা ঠিক করে নিত সংশোধন করে নিত ছুটে যাওয়া আমলগুলো।


২. আখিরাতের ভীষণ মুহূর্তেঃ


আখিরাত। এটি সে সময়ের নাম, যখন প্রতিটি প্রাণকে তার কৃতকর্মের পুরোপুরি ফল দেওয়া হবে। আখিরাত সে সময়টির নাম, যখন প্রতিটি মানুষকে তার কর্মের প্রতিদান দেওয়া হবে। হয়তো সে জান্নাতবাসী হবে,

অথবা হবে জাহান্নামের অধিবাসী। তখন জাহান্নামিরা আফসোস করবে, যদি তাদের আরেকটি বার দুনিয়ার এ জীবনে ফিরিয়ে দেওয়া হতো! তাহলে অবশ্যই তারা নতুন করে সৎ আমল করে নিজেদের শুধরে নিত। কিন্তু এ কেবলই দুরাশা! তাদের এ আবেদন ব্যর্থ। কারণ সময় কখনো ফিরে আসে না । আমলের সময় তো শেষ হয়ে গেছে। এখন হচ্ছে প্রতিদানের সময়।


_______ _______