জিজ্ঞাসা-১৩০৫৫:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। তাসবিহ-এর দানা দ্বারা জিকির-আজকার, তাসবিহ-তাহলিল গণনা করার বিধান কি?
তারিখ: ০৭/০৮/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি
জনৈক মাওলানা ঢাকা থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, হাতের আঙুল দ্বারা তাসবিহ গণনা করা সুন্নাত এ বিষয়ে কোনো মতভেদ নেই, তবে তাসবিহ-এর দানা দ্বারা জিকির-আজকার, তাসবিহ-তাহলিল গণনার বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। জমহুর বা অধিকাংশ ইমামদের মতে জায়েজ, শায়েখ আলবানি ও আহলে হাদিসের মতে বিদআত।
জমহুরের দলিল-
হাদিস নং-০১
دَخَلَ عَلَيَّ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ وَبَيْنَ يَدَيَّ أَرْبَعَةُ آلَافِ نَوَاةٍ أُسَبِّحُ بِهَا ، فَقَالَ : لَقَدْ سَبَّحْتِ بِهَذِهِ ، أَلَا أُعَلِّمُكِ بِأَكْثَرَ مِمَّا سَبَّحْتِ بِهِ ، فَقُلْتُ : بَلَى عَلِّمْنِي . فَقَالَ : قُولِي : سُبْحَانَ اللَّهِ عَدَدَ خَلْقِهِ
উম্মুল মুমিনীন সাফিয়্যা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
একদিন রাসূলুল্লাহ ﷺ আমার কাছে এলেন। আমার কাছে তখন চার হাজার খেজুর-বীচি ছিল। এগুলো দ্বারা আমি তাসবিহ পাঠ করছিলাম। তিনি বললেন, তুমি তো এগুলোর মাধ্যমে তাসবিহ পাঠ করছ। যে পরিমাণ তাসবিহ তুমি পাঠ করেছ, তদপেক্ষা বেশী পরিমাণের উপায় কি আমি তোমাকে শিখিয়ে দিব? আমি বললাম, অবশ্যই আমাকে শিখিয়ে দিন। তিনি বললেন, তুমি বলবে, (سُبْحَانَ اللَّهِ عَدَدَ خَلْقِهِ) – সৃষ্টির পরিমাণ সংখ্যকবার সুবহানাল্লাহ। জামে তিরমিযি, হাদীস নং: ৩৫৫৪ ৷
হাদিস নং-০২
عن سعد بن أبي وقاص رضي الله عنه : (أَنَّهُ دَخَلَ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى امْرَأَةٍ وَبَيْنَ يَدَيْهَا نَوًى - أَوْ قَالَ حَصًى - تُسَبِّحُ بِهِ ، فَقَالَ : أَلَا أُخْبِرُكِ بِمَا هُوَ أَيْسَرُ عَلَيْكِ مِنْ هَذَا أَوْ أَفْضَلُ ؟ سُبْحَانَ اللَّهِ عَدَدَ مَا خَلَقَ فِي السَّمَاءِ ، وَسُبْحَانَ اللَّهِ عَدَدَ مَا خَلَقَ فِي الْأَرْضِ ، وَسُبْحَانَ اللَّهِ عَدَدَ مَا بَيْنَ ذَلِكَ ، وَسُبْحَانَ اللَّهِ عَدَدَ مَا هُوَ خَالِقٌ ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ مِثْلَ ذَلِكَ ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ مِثْلَ ذَلِكَ ، وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ مِثْلَ ذَلِكَ)
সা’দ ইবন আবূ ওয়ক্কাস রাযি. থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ–এর সঙ্গে এক মহিলার কাছে গেলেন। উক্ত মহিলার সামনে তখন কিছু খেজুর-বীচি ছিল। এগুলো দিয়ে তিনি তাসবিহ পাঠ করছিলেন। নবীজী ﷺ তাকে বললেন, এর চেয়ে সহজ ও উত্তম উপায় সম্পর্কে কি তোমাকে অবহিত করব? তা হল,
سُبْحَانَ اللَّهِ عَدَدَ مَا خَلَقَ فِي السَّمَاءِ وَسُبْحَانَ اللَّهِ عَدَدَ مَا خَلَقَ فِي الأَرْضِ وَسُبْحَانَ اللَّهِ عَدَدَ مَا بَيْنَ ذَلِكَ وَسُبْحَانَ اللَّهِ عَدَدَ مَا هُوَ خَالِقٌ وَاللَّهُ أَكْبَرُ مِثْلَ ذَلِكَ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ مِثْلَ ذَلِكَ وَلاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ مِثْلَ ذَلِكَ
অর্থাৎ, আল্লাহ মহাপবিত্র আকাশে তার সৃষ্টি জীবের সমসংখ্যক, আল্লাহ মহাপবিত্র দুনিয়াতে তার সৃষ্ট জীবের সমসংখ্যক, আল্লাহ তা’আলা মহাপবিত্র এতদুভয়ের মধ্যকার সৃষ্টির সমসংখ্যক, আল্লাহ তা’আলা মহাপবিত্র তিনি যে সকল প্রাণী সৃষ্টি করবেন তার সমসংখ্যক, অনুরূপ পরিমাণ আল্লাহ তা’আলা মহান, অনুরূপ পরিমাণ আল্লাহ তা’আলার প্রশংসা, অনুরূপ সংখ্যকবার আল্লাহ তা’আলা ছাড়া কল্যাণ করার বা ক্ষতিসাধনের আর কোন শক্তি নেই। সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং: ১৩১৭ ৷
ব্যাখ্যা:
উল্লেখিত হাদীসে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাটিকে পাথরকুচি দিয়ে তাসবীহ জপতে নিষেধ করেননি। কাজটি যে শরীয়তপরিপন্থী নয় তা প্রমাণের জন্য এটিই যথেষ্ট। -বাযলুল মাজহুদ ২/৩৫৫
ومن العلماء من ألحق السبحة بالنوى والحصى، قال الشوكاني: ( والحديثان الآخران يدلان على جواز عد التسبيح بالنوى والحصى، وكذا بالسبحة لعدم الفارق لتقريره صلى الله عليه وسلم للمرأتين على ذلك، وعدم إنكاره، والإرشاد إلى ما هو أفضل لا ينافي الجواز) ثم ذكر آثارا عن الصحابة في التسبيح بالحصى والنوى. انظر نيل الأوطار (2/602).
অর্থাৎ আল্লামা শাওকানি রহ়. বলেন, উপরোক্ত দুটি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে খেজুরের আঁটি ও পাথর দ্বারা তাসবিহ গণনা করা জায়েয। ----------। সূত্র: নায়লুল আওতার-২/৬০২
রাসূলুল্লাহ ﷺ উক্ত মহিলাকে নিষেধ করেন নি। তিনি কেবল এর চেয়ে উত্তম ও সহজটা বলে দিয়েছেন। যদি এটি নিষিদ্ধ হত তাহলে তিনি বলে দিতেন। সুতরাং এই হাদিস ও অনুরূপ আরো হাদিস একথার দলিল যে, জিকিরের গণনার জন্য প্রচলিত তাসবিহ-দানা ব্যবহারে কোনো অসুবিধা নেই। আর বর্ণিত আছে যে, আবু হুরায়রা রাযি.ও এরূপ করতেন।
আল বাহরুর রায়িক ২/৩১; আল মাউসুয়াতুল ফিকহিয়্যা ১১/২৮৩; ফয়যুল কাদির ৪/৩৫৫; মাজমুউল ফাতাওয়া ২২/৫০৬ ৷
শায়েখ ইবনে তাইমিয়া রহ় এর মতামত:
، قال شيخ الإسلام ابن تيمية: وعد التسبيح بالأصابع سنة… وأما عده بالنوى والحصى ونحو ذلك فحسن، وكان من الصحابة رضي الله عنهم من يفعل ذلك
আল্লামা ইবনে তাইমিয়া [রহ.] বলেন, ‘অঙ্গুলি দ্বারা তাসবীহ গণনা করা সুন্নত। আর খেজুরদানা এবং পাথর টুকরো বা এ জাতীয় বস্ত্ত দ্বারা গণনা করা ভাল। সাহাবীদের কেউ কেউ এমন করতেন।’
সূত্র: মাজমূআ ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া ২২/৫০৬
সারকথা হলো, তাসবিহ-এর দানা দ্বারা জিকির-আজকার, তাসবিহ-তাহলিল গণনা করা জায়েয এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে জিকির গণনায় তাসবিহ-দানা ব্যবহার করার চাইতে উত্তম হল, হাতের আঙ্গুল বা আঙ্গুলের কর ব্যবহার করা। কেননা তাসবিহমালা হাতে থাকলে রিয়া আসতে পারে। তাছাড়া হাদিস শরিফে এসেছে, ইয়ুসাইরাহ রাযি. বলেন,
أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ أَمَرَهُنَّ أَنْ يُرَاعِينَ بِالتَّكْبِيرِ وَالتَّقْدِيسِ وَالتَّهْلِيلِ وَأَنْ يَعْقِدْنَ بِالْأَنَامِلِ فَإِنَّهُنَّ مَسْئُولَاتٌ مُسْتَنْطَقَاتٌ
রাসূলুল্লাহ ﷺ তাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, তোমরা তাকবির, তাকদিস এবং তাহলিল এগুলো খুব ভালভাবে স্মরণে রাখবে এবং এগুলোকে আঙ্গুলে গুণে রাখবে। কেননা আঙ্গুলগুলোকে জিজ্ঞাসা করা হবে এবং এগুলোও সেদিন অর্থাৎ কেয়ামতের দিন কথা বলবে। মুসনাদে আহমাদ, হাদীস: ২৫৮৪১; আবু দাউদ, হাদীস: ১৫০১৷
والله اعلم بالصواب