আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-১৩০৪৩: জুমুআর খুতবা কোন কোন বিষয় উল্লেখ করা সুন্নাত বা মুস্তাহাব

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১৩০৪৩: 

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। মুহতারাম, আমার জানার বিষয় হলো, জুমার খুতবায় কোন কোন বিষয় উল্লেখ করতে হয়।

তারিখ:০৩/০৭/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 হাফেজ মাওলানা রেজাউল করিম নাটোর থেকে।


 জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, নিম্নলিখিত বিষয়গুলো খুতবায় উল্লেখ করা সুন্নাত বা মুস্তাহাব।


০১. হামদ তথা আল্লাহ তাআলার প্রশংসা দ্বারা দুই খুতবা শুরু করা। দলিল-

حَدَّثَنَا أَبُو تَوْبَةَ، قَالَ زَعَمَ الْوَلِيدُ عَنِ الأَوْزَاعِيِّ، عَنْ قُرَّةَ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ أَبِي سَلَمَةَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " كُلُّ كَلاَمٍ لاَ يُبْدَأُ فِيهِ بِـ الْحَمْدُ لِلَّهِ فَهُوَ أَجْذَمُ " . قَالَ أَبُو دَاوُدَ رَوَاهُ يُونُسُ وَعُقَيْلٌ وَشُعَيْبٌ وَسَعِيدُ بْنُ عَبْدِ الْعَزِيزِ عَنِ الزُّهْرِيِّ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم مُرْسَ

৪৭৬৫. আবু তাওবা (রাহঃ) ..... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ আল্লাহর প্রশংসা ব্যতীত যে কথাবার্তা শুরু করা হয়, তা অসম্পূর্ণ থাকে, (অর্থাৎ তাতে কোন বরকত হয় না।)


Narrated AbuHurayrah:

The Prophet (ﷺ) said: Every important matter which is not begun by an expression of praise to Allah is maimed.

Abu Dawud said: It has also been transmitted by Yunus, ’Aqil, Shu’aib, Sa’id b. ’Abd al-Aziz from al-Zuhri from the Prophet (ﷺ) in Mursal form (the link of the Companion is missing).

—সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৭৬৫ (আন্তর্জাতিক নং ৪৮৪০)


০২. নবির প্রতি সালাম: দলিল -

الركن الثاني من أركانها: هو الصلاة على النبي صلى الله عليه وسلم ووجهه عندهم أن كل عبادة افتقرت إلى ذكر الله تعالى افتقرت إلى ذكر رسوله -صلى الله عليه وسلم- كالأذان. وفيه نظر, ولكن يقويه كلام الإمام أحمد المتقدم وفيه نقل عمل الناس على هذ

খুতবাহ'র দ্বিতীয় অনিবার্য অনুষঙ্গ হল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর উপর দরূদ পাঠ করা। তার অন্তর্নিহিত কারণ হলো, যে সকল ইবাদত পালনকালে আল্লাহ তায়ালা'র নাম উল্লেখ করতে হয়, অবধারিতভাবেই সেই সকল স্থানে রাসূলের নামও উল্লেখ করা অলিখিতভাবেই পালনীয়। উদাহরণস্বরূপ আযান'এর কথা বলা যেতে পারে।সেখানে আল্লাহ তাআলার নামের পাশাপাশি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামও সমুচ্চকণ্ঠে উচ্চারিত হয়। 

তবে এই যুক্তির ওপর নানারকম যৌক্তিক আপত্তি উত্থাপন করার অবকাশ রয়েছে।  

 অন্যদিকে এ কথাও অনস্বীকার্য যে, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রাহি.) এর মন্তব্যটি এই যুক্তিটিকে শানিত করে, এই বুদ্ধিবৃত্তিক প্রমাণের স্বপক্ষে অকুণ্ঠ সমর্থন যোগায়। তিনি বলেন : আবহমানকাল জুড়ে বিস্তৃত, যুগযুগ ধরে চলে আসার কারণেই খুতবা প্রদানকালে রাসূলের উপর দরুদ পাঠ করার এই অনবদ্য কর্মপদ্ধতিই মূলত এটিকে খুতবার অন্যতম অপরিহার্য অনুষঙ্গে পরিণত করেছে। সূত্র: ফিকহুল ইবাদাত, সলাতুল জুমুআ-৪৬৪১৮ 


০৩. তাওহিদ ও রিসালাতের সাক্ষ্য দেওয়া। দলিল-

حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، وَمُوسَى بْنُ إِسْمَاعِيلَ، قَالاَ حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَاحِدِ بْنُ زِيَادٍ، حَدَّثَنَا عَاصِمُ بْنُ كُلَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " كُلُّ خُطْبَةٍ لَيْسَ فِيهَا تَشَهُّدٌ فَهِيَ كَالْيَدِ الْجَذْمَاءِ " .

৪৭৬৬. মুসাদ্দাদ (রাহঃ) .... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যে খুতবা বা বক্তৃতার মধ্যে তাশাহ্‌হুদ (অর্থাৎ আশহাদু আল লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলাল্লাহ) নাই, তা কর্তিত হাতের মত অর্থাৎ অসম্পূর্ণ।

—সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৭৬৬ (আন্তর্জাতিক নং ৪৮৪১)


০৪. কুরআনুল কারিমের কিছু অংশ তেলাওয়াত করা। দলিল-

وَحَدَّثَنَا عَمْرٌو النَّاقِدُ، حَدَّثَنَا يَعْقُوبُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ بْنِ سَعْدٍ، حَدَّثَنَا أَبِي، عَنْ مُحَمَّدِ، بْنِ إِسْحَاقَ قَالَ حَدَّثَنِي عَبْدُ اللَّهِ بْنُ أَبِي بَكْرِ بْنِ مُحَمَّدِ بْنِ عَمْرِو بْنِ حَزْمٍ الأَنْصَارِيُّ، عَنْ يَحْيَى بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ سَعْدِ بْنِ زُرَارَةَ، عَنْ أُمِّ هِشَامٍ بِنْتِ حَارِثَةَ بْنِ النُّعْمَانِ، قَالَتْ لَقَدْ كَانَ تَنُّورُنَا وَتَنُّورُ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَاحِدًا سَنَتَيْنِ أَوْ سَنَةً وَبَعْضَ سَنَةٍ وَمَا أَخَذْتُ ( ق وَالْقُرْآنِ الْمَجِيدِ) إِلاَّ عَنْ لِسَانِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقْرَؤُهَا كُلَّ يَوْمِ جُمُعَةٍ عَلَى الْمِنْبَرِ إِذَا خَطَبَ النَّاسَ .

১৮৮৮। আমরুন নাকিদ (রাহঃ) ......... উম্মে হিশাম বিনতে হারিসা ইবনে নুমান (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের ও রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর চুলা দু-কিংবা দেড় বছর অভিন্ন ছিল। আমি ″কাফ ওয়াল কুরআনিল মাজীদ″ সূরাটি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মুখ থেকে শুনে মুখস্ত করেছি। তিনি প্রতি ওক্রবার মিম্বরে থেকে লোকদের খুতবা প্রদানকালে এ সূরা পাঠ করতেন।

—সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮৮৮ (আন্তর্জাতিক নং ৮৭৩-২)


০৫. নসিহত করা: ঈমান, আকিদা, তাকওয়ার বিষয়ে। দলিল 

فإن خير الحديث كتاب الله، وخير الهدي هدي محمد (ﷺ)، وشر الأمور محدثاتها،

وكل محدثة بدعة، وكل بدعة ضلالة، وكل ضلالة في النار।

অর্থাৎ, অতঃপর নিশ্চয়ই সর্বশ্রেষ্ঠ বাণী আল্লাহর গ্রন্থ। সর্বশ্রেষ্ঠ হেদায়াত মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর হেদায়াত। আর সর্বনিকৃষ্ট কর্ম হল নব রচিত কর্ম। প্রত্যেক নব রচিত কর্মই বিদআত। প্রত্যেক বিদআতই ভ্রষ্টতা এবং প্রত্যেক ভ্রষ্টতা দোযখে। তাখরিজ: মুসলিম-৮৬৭


০৬. সমকালীন বিষয়ে সতর্ক করা: দলিল-

. وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا خَطَبَ احْمَرَّتْ عَيْنَاهُ وَعَلَا صَوْتُهُ وَاشْتَدَّ غَضَبُهُ حَتَّى كَأَنَّهُ مُنْذِرُ جَيش يقولك: «صَبَّحَكُمْ وَمَسَّاكُمْ» وَيَقُولُ: «بُعِثْتُ أَنَا وَالسَّاعَةُ كَهَاتَيْنِ» . وَيَقْرُنُ بَيْنَ إِصْبَعَيْهِ السَّبَابَةِ وَالْوُسْطَى. رَوَاهُ مُسْلِمٌ

জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন খুতবাহ্ (ভাষণ) দিতেন তাঁর দু’চোখ লাল হয়ে যেত, কণ্ঠস্বর হত সুউচ্চ, রাগ বেড়ে যেত। মনে হত তিনি কোন সামরিক বাহিনীকে এ বলে শত্রু হতে সতর্ক করে দিচ্ছেনঃ সকাল-সন্ধ্যায় তোমাদের ওপর শত্রু বাহিনী হানা দিতে পারে। তিনি খুতবায় বলতেন, আমাকে ও ক্বিয়ামাত (কিয়ামত)কে এভাবে পাঠানো হয়েছে। এ কথা বলে তিনি তাঁর তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুলকে একত্র করে মিলিয়ে দেখালেন। সহীহ : মুসলিম ৮৬৭, ইবনু মাজাহ্ ৪৫,


০৭. মুমিন, সাহাবা, আহলে বায়আতের জন্য বিশেষ হজরত আব্বাস রা এর জন্য দুআ করা। এ বিষয়ে আল-বুরহানে জিজ্ঞাসা-১২৭২০ শিরোনামে মাসয়ালাটি আলোচিত হয়েছে। দলিল- 

سمرة بن جندب أن النبي صلى الله عليه وسلم كان يستغفر للمؤمنين والمؤمنات كل جمعة. رواه البزار بإسناد لين كما قال الحافظ ابن حجر في "بلوغ المرام" ورواه الطبراني في الكبير

অর্থ: হযরত সামুরা ইবনে জুনদুব রাদিয়াল্লাহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক জুমায় সকল মুমিন নর-নারীর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। তাখরিজ: বুলূগুল মারাম -৪৬৮; মুসনাদে বাজ্জার -১/৩০৭-৩০৮; তাবারানি


فالدعاء للمؤمنين والمؤمنات في خطبة الجمعة سنة عند جماهير الفقهاء من الحنفية والمالكية والحنابلة وقول عند الشافعية، ومعتمد مذهب الشافعية أن الدعاء للمؤمنين في الخطبة ركن من أركانها لا تصح الخطبة إلا به.

অর্থাৎ জুমার খুতবায় মুমিন নর-নারীর জন্য দুআ করা জমহুর ফুকাহায়ে কিরামের নিকট সুন্নাত। তাদের মধ্যে হলো হানাফি মালেকি হাম্বলি। সূত্র: ফিকহুল ইবাদাত, সলাতুল জুমুআ-৪৬৪১৮ 


সারকথা হলো,  আরও কিছু বিষয় ওলামায়ে কেরাম উল্লেখ করেছেন। এ বিষয়ে ইমামে আজম রহ. বলেন,

كما روي عن أبي حنيفة أنه قال ينبغي أن يخطب خطبة خفيفة يفتتح بحمد الله تعالى ويثني عليه ويتشهد ويصلى على النبي صلى الله عليه وسلم ويعظ ويذكر ويقرأ سورة ثم يجلس جلسة خفيفة ثم يقوم فيخطب خطبة أخرى يحمد الله تعالى ويثني عليه ويتشهد ويصلي على النبي صلى الله عليه وسلم ويدعو للمؤمنين والمؤمنات كما في البدائع ، وقد علم من هذا أنه لا يعظ في الثانية ; ولهذا قال في التجنيس أن الثانية كالأولى إلا أنه يدعو للمسلمين مكان الوعظ وظاهره أنه يسن قراءة آية في الثانية كالأولى .

অর্থাৎ, আবু হানিফা (রাহি.) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন খুতবার সময়কাল হওয়া চাই অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত পরিসরে। যার সূচনা হবে, আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও প্রশংসা জ্ঞাপনের মাধ্যমে। এছাড়া খুতবার মাঝে স্থান পাবে যথাক্রমে-

 আল্লাহর একত্ববাদের সাক্ষ্য প্রদান, রাসূলের প্রতি দরুদ পাঠ। তারপর খতীব সাহেব উপস্থিত মুসল্লীদেরকে উদ্দেশ্য করে শিক্ষামূলক উপদেশ প্রদান করবেন। এছাড়া তিনি পবিত্র কুরআন থেকে সূরাও পাঠ করবেন। অতঃপর প্রথম খুতবা শেষে মেম্বারে খানিকসময় উপবেশন করবেন। তারপর পুনরায় দাঁড়িয়ে আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা সম্বলিত গুণকীর্তন করে দ্বিতীয় খুতবার সূচনা ঘটাবেন। তারপর প্রথম খুতবার মতো দ্বিতীয় খুতবাতেও আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদের সত্যায়ন, রাসূলের প্রতি দরূদ পাঠ করবেন। অতপর নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল মুমিন ব্যক্তির জন্য দুআ করবেন। 'বাদায়ে' গ্রন্থে খুতবাহর কার্যধারা এভাবেই বর্ণিত হয়েছে।

  এখান থেকে একটি বিষয় অনুমেয় হলো যে, 

দ্বিতীয় খুতবায় উপস্থিত মুসল্লীদের উদ্দেশ্যে আলাদাভাবে উপদেশমূলক বক্তব্য প্রদানের প্রয়োজন নেই। এইজন্যই "তাজনিস" কিতাবে বলা হয়েছে, " বিষয়বস্তুর বিবেচনায় দ্বিতীয় খুতবাহ প্রথম খুতবা'র মতোই। এতদুভয়ের মাঝে কাঠামোগতকোন পার্থক্য নেই। তবে পার্থক্য শুধু এতটুকুই যে, প্রথম খুতবায় উপদেশ সম্বলিত বক্তব্য প্রদানের স্থলে দ্বিতীয় খুতবায় মুসলিম ব্যক্তিবর্গের সার্বজনীন কল্যাণ কামনা করে খতীব সাহেব দুআ করবেন। প্রকাশ থাকে যে, প্রথম খুতবা'র মতো দ্বিতীয় খুতবাতেও পবিত্র কুরআন থেকে সূরা পাঠ করা সুন্নাত। সূত্র: আলবাহরুর রায়েক শারহু কানযিল দাকায়িক-২/১৬০



  والله اعلم بالصواب