_*কিভাবে ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার অভ্যাস গড়তে পারি........!?*_
_(ফজল মাহমুদ সজীব)_
_প্রথমতঃ_
নামাজ কি, আপনি নামাজ কেন পরবেন? এটার উত্তর কি আছে আপনার কাছে? এই প্রশ্নটা ঘুরে ফিরেই আপনার মনে আসবে। এখন না একটু পরে, আরে সময় আছে মেলা, কালকে থেকে নামাজ পড়বই পড়ব। এছাড়াও কাপড় ঠিক নাই, অজু করার পানি নাই, আজকে তো দুই ওয়াক্ত মিস হয়েই গেছে, কালকে থেকে ফজরের ওয়াক্ত থেকে পুরাপুরি শুরু। এ যাতিও অনেক কথাই শয়তান আপনাকে সব সময় মনের ভিতরে, চুপিসারে বলতেই থাকবে। কিন্তু শয়তানের জন্য আপনি একজন গোয়ার মানুষ। বিচার যাই হোক, তাল গাছটা আমার। যতো যাই হোক, এখনই নামাজ পড়ব, এটাই হবে আপনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।
আপনি মনে মনে সিদ্ধান্ত নেন যে আমি আজ থেকে ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ব, মিস হবে না। যখন সিদ্ধান্ত
নিলেন, অজু করে ফেলেন। তখন নামাজের যেই ওয়াক্ত সেটা আদায় সিদ্ধান্তের প্রতিফলন ঘটান। ব্যাস হয়ে গেছে। আপনার ৫ ওয়াক্ত নামাজ মিস না হওয়ার চাকা ঘুরা শুরু করলো। এই চাকা সচল রাখার জন্য তাল গাছ যেমন আপনার চাই, তেমনি তালের স্বাদ ও গন্ধও আপনাকে উপভোগ করতে হবে। অর্থাৎ নামাজ মিস করা চলবে না ও অর্থ সহ নামাজ আদায় । আপনি যখনই ৫ ওয়াক্ত নামাজ পরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেদিন থেকে আল্লাহ তাঁর অপরিসীম দয়ায় প্রতিটা ওয়াক্তের আজান দেখবেন আপনার কাছে আসছে, প্রতিটা ওয়াক্তে একবার হলেও নামজের কথা আপনার মনে পরবে। আপনার তখন দায়িত্ব হচ্ছে সব কিছু ফেলে দিয়ে, আগে নামাজ আদায় করে নিতে হবে।
নামাজ ক্বাযা বলে কিছু নাই। আপনি প্রথম মাস এমন সিধান্ত নেন যে নামাজ মিস করবেন না, কিন্তু মিস হয়ে যাবে। শয়তানর পিছে আঠার মতো লেগে থাকবে। আপনি প্রথম মাসে নামাজ ফিল আপ করার চেষ্টা করবেন না। মিস হয়ে গেছে, জেতে দিন। মিস হয়েছে, কেননা আপনার মনে ছিল না বা একটু আলসেমির কারনে হয়ে গেছে। প্রথম এক মাস যে নামাজটি মিস গেলো সেটার জন্য পরের নামাজে সালাম ফিরানর আগে আল্লাহ এর কাছে মাফ চান। আল্লাহ কে বলুন আল্লাহ জেনো আপনাকে সাহায্য করে ৫ ওয়াক্তের নামাজ আদায় করার জন্য।
ধরেই নেন আপনার ফজর প্রতি রাতেই মিস হচ্ছে। সকালে ঘুম থেকে যখনই উঠবেন, সবার আগে অজু করে দুই রাকাত ফজরের নামাজ পরে নিন। কে কি বলল শুনার দরকার নাই। তাল গাছ আপনার। আপনি আগে নামাজ পড়ুন। আপনি এতটুকু খেয়াল করবেন দিনের চার ওয়াক্তের নামাজই যেন ওয়াক্তের ভিতরে পড়তে পারেন। আর প্রথম মাসে গড়ে প্রতিদিন যদি তিন ওয়াক্তের নামাজ ভালো ভাবে পড়তে পারেন, বুঝবেন, আপনার মন প্রস্তুত হচ্ছে নামাজের জন্য।
প্রথম মাস পার হলে আপনি চল্লিশ দিনের প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করুন যে, চল্লিশ দিন কোন নামাজ মিস হবে না। ফররের ওয়াক্তে উঠার অভ্যাস করতে পারলে ভালো, না হলে ঘুম থেকে উঠেই পড়বেন এই অভ্যাস চালিয়ে যান।
এবার দ্বিতীয় বিষয়টা-
*দ্বিতীয়তঃ*
আপনাকে কিছু বিষয়ের অর্থ জানতে হবে। সবার প্রথমে আপনাকে সুরা ফাতিহার অর্থ জানতে হবে। প্রতিটা শব্দের অর্থ বুঝতে হবে, প্রতিটা লাইন বুঝতে হবে। পড়ে জেনে নিতে হবে যে, ফাতিহার পড়ে আমিন কেন পড়বেন।
আপনি আল্লাহ আকবর বলে নামাজ শুরু করে সালাম ফিরায়ে নামাজ শেষ করেন। আপনি তাকবীর
১) আল্লাহ আকবর,
২) হামদ বা তাহমিদ - সামি আল্লাহু লিমান হামিদা, রাব্বানা লাকাল হামদ,
এবং
৩) তাসবিহ-সুবহানা রাব্বি আল আলা ও সুবহানা রাব্বি আল আজিম এর অর্থ জেনে নিন। তাশাহুদ, দরুদে ইব্রাহিম ও দোয়া মাসুরা এর অর্থ জানতে হবে। এগুলি মুখস্ত করার চেষ্টা করতে হবে না। প্রতিদিন একটি করে জানুন।
এ ছাড়াও আপনি সুরা ওয়াকিয়া এর অর্থ পড়েন। ওখানে দোজখ ও বেহেস্তের বর্ণনা আছে। এই অর্থ পরার সময় ওই জায়গায় নিজেকে খুঁজুন। অবশ্যয় জান্নাতে। কল্পনা করুন এই সুরার বিষয় বস্তু নিয়ে যত পারেন।
এর পড়ে আপনি সুরা ফিল পড়ুন, ভাবুন। এর অর্থ জানুন, মুখস্ত করে ফেলুন, কেননা নামজে পড়তে পারবেন। কল্পনা করুন, হস্তি বাহিনীর ঘটনাটা রাসুল এর সমসাময়িক বিষয়। সমুদ্র দুই ভাগ হয় নাই, কিন্তু চাঁদ দুই ভাগ হয়েছে। চিন্তা করুন আমাদের রাসুলের মেরাজ নিয়ে। আরও অনেক বিষয় আছে। কিন্তু নতুন হিসাবে এতোটুকু দিয়ে শুরু করেন।
আপনি এক মাস, অতঃপর চল্লিশ দিন নামাজ পরেছেন। এই দুইমাসে আপনি শিখেছেন যে নামাজে আপনি কি বলছেন সেগুলির অর্থ। এভাবে অর্থ জানা সহ নামাজ চালিয়ে যান। ফজরের নামাজ এর জন্য আলাদ কোন প্রস্তুতির দরকার নাই। আপনার নামাজের প্রতি যে ভালবাসা এই দুই মাসে তৈরি হবে সেটাই আপানকে ফজরের জন্য প্রস্তুত করে ফেলবে। নিজের অজান্তেই একদিন থেকে দেখবেন ফজরের সময় উঠতে চাচ্ছেন এবং ইনশাআল্লাহ্ তা পারবেন ও।
অতিরিক্ত হিসাবে আরও একটা কথা বলি। আপনি যখন আল্লাহ আকবর বলে নামাজ শুরু করেবন, সেই মুহূর্তে থেকে আপনি চোখ বন্ধ করে নিজেকে কাবা শরিফের সামনে দাঁড়িয়ে নামাজ পরছেন কল্পনা করুন। এরপরও শয়তান আপনাকে নামাজের ভিতরে দুনিয়ার কথা মনে কড়াইয়ে দিবে। আপনি কল্পনা করবেন যে আপনি কাবার দরজার নীচে মাথা ঠেকিয়ে সব কিরাত করছেন। যখন রুকু ও সিজদায় যাবেন, ক্বাবার যেই কর্নারে হাজরে আস ওয়াত আছে সেই কোনায় প্রথম বার সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম/ আলা পড়ুন, পরের কোনায় একবার, তারপরের কোনায় একবার এভাবে যখন আবার হাজরে আসওয়াত এ আসবেন, তখন পাঁচ বার পরা হয়ে যাবে, আরও একবার আসলে ৯ বার পরা হবে।
যদি আমি আপনাকে বুঝাতে পারি, আর আপনিও যদি এমনটা করতে পারেন, দেখবেন নামাজে ক্বাবা ও ক্বাবার সামনে দাঁড়ানো আপনি ছাড়া আর কোন কিছু নাই। ইনশাআল্লাহ্ নামাজ শেষ হলেও আপনার অনেক ভালো লাগবে।
আপনার বাসার কাছে যদি মসজিদ থাকে, মসজিদে যেয়ে জামাতে নামাজ পরার চেষ্টা করুন। কিন্তু মসজিদ বা বাসায় পড়েন, যেভাবে বললাম, তাতে ইনশাআল্লাহ্ আপনার নামজের অভ্যাস হবে ও নামাজ আদায়ের শান্তিটা পাবেন।
_*আল্লাহু আকবার*_