কোন বয়সে কতটুকু ক্যালসিয়াম গ্রহণ প্রয়োজন
লে. কর্নেল ডা. নাসির উদ্দিন আহমদ
প্রকাশ: ২৪ জুলাই ২০২৪ | ০০:৫৭
মানব শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ক্যালসিয়াম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা খাদ্য উপাদান। হাড়, মাংসপেশি, দাঁত, স্নায়ুতন্ত্রসহ বিভিন্ন অঙ্গের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ক্যালসিয়াম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
তবে বয়সভেদে ক্যালসিয়ামের চাহিদা ভিন্ন ভিন্ন হয়। ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সের সময় ক্যালসিয়ামের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। এ সময় দৈহিক বৃদ্ধি এবং হাড়ের গঠনের জন্য ক্যালসিয়ামের জোগান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভকালীন ও স্তন প্রদানকারী মায়েদের ক্যালসিয়ামের প্রয়োজনও বেশি। ৫১ থেকে ৭০ বছর বয়সের নারীদের ক্যালসিয়ামের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এ সময় নারীদের ইস্ট্রোজেন নামক হরমোন কমে যায়। এই হরমোন ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে এবং হাড় গঠনে অংশ নেয়। এর অভাবে হাড় ক্ষয়ের ইঞ্জিন সক্রিয় হয়ে ওঠে। নারীদের রজঃনিবৃত্তি বা মেনোপজ হলে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। ফলে হাড় ক্ষয় হতে থাকে। সে জন্য এ বয়সে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণে খাদ্যের পাশাপাশি প্রয়োজন রয়েছে অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম ওষুধ হিসেবে সেবন করা। এ সময়গুলোতে প্রতিদিন ১ হাজার ৩০০ মিলিগ্রামের মতো ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন।
যেসব শিশু গুঁড়া দুধের ওপর নির্ভরশীল, তাদের ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হওয়ার আশঙ্কা বেশি। কেননা, গুঁড়া দুধে বিদ্যমান ক্যালসিয়াম সহজে হজম হয় না। মায়ের বুকের দুধের ক্যালসিয়াম শিশুদের শরীরে সহজে হজম হয়। যাদের দুধে অ্যালার্জি রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
ধূমপানের ফলে ক্যালসিয়াম শোষণ বাধাপ্রাপ্ত হয়। হাড় ক্ষয়ে যাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। অতিরিক্ত কফি, কোক ও চা ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। অতিরিক্ত অ্যালকোহল একই পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। ভিটামিন-ডি ক্যালসিয়াম শোষণের নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। ভিটামিন-ডি এর প্রধান উৎস হচ্ছে সূর্যের আলো। যারা রোদ থেকে দূরে অবস্থান করে, তাদের ক্যালসিয়ামের ঘাটতির আশঙ্কা বেশি।
অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ করলে শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হতে পারে। হাড় থেকে ক্যালসিয়াম চলে আসে রক্তে এবং কিডনির মাধ্যমে তা বেরিয়ে যায় শরীর থেকে। সোডিয়াম তথা খাবার লবণ কিডনি পথে ক্যালসিয়াম বের করতে সাহায্য করে। সে জন্য লবণ গ্রহণ কমালে কিডনি ক্যালসিয়াম ধরে রাখতে পারে। যেসব খাদ্যে অতিরিক্ত লবণ রয়েছে, সেগুলো পরিহার করতে হবে ক্যালসিয়ামের ভারসাম্য রক্ষার জন্য।
লেখক : মেডিসিন স্পেশালিস্ট ও এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট, সিএমএইচ, বরিশাল।
সূত্র: দৈনিক সমকাল ২৪ জুলাই ২০২৪