আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-১৪৬: সমুদয় আমলের সওয়াব রাসূলের রওজায় পৌঁছে দাও, এভাবে দুআ করা জায়েয?

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১৪৬: 1- ইছালে সাওয়াব কি শুধু মৃত ব্যক্তিদের জন্য না জীবিত ব্যক্তিদের জন্য করা যায় ?

2- "আমরা যা কিছু আমল করলাম এর সাওয়াব রাসূল সা এর রওজা মোবারক এ পৌঁছে দিন। সকল মুমিন মুমিনাতের রূহে এর সাওয়াব পৌঁছে দিন ", এভাবে বলার বিধান কী ? ভিত্তি কী? তারিখ-১৫/০৬/২০২২

 হাফেজ মাও. সাজ্জাদ হোসেন বগুড়া থেকে---


প্রশ্ন: ক। ইছালে সাওয়াব কি শুধু মৃত ব্যক্তিদের জন্য না জীবিত ব্যক্তিদের জন্য করা যায় ?


উত্তর: ক। প্রথমে আমরা ঈসালে সওয়াব অর্থ জেনে নিই।

‘ঈসালে সওয়াব ফারসী শব্দ। আরবীতে হবে ঈসালুস সাওয়াব (তবে এ ক্ষেত্রে আরবীতে অন্য শব্দ বেশি ব্যবহৃত হয় যেমন ইহদাউস সাওয়াব)। এর আভিধানিক অর্থ হল সওয়াব পৌঁছানো। পরিভাষায় ঈসালে সওয়াব হল কোনো নেক আমল করে এর সওয়াব মৃত ব্যক্তিকে দান করা।


হ্যাঁ, ঈসালে সাওয়াব জীবিত ও মৃত উভয়ের জন্যই করা যায়। 


কুরআন থেকে দলীল:

 আয়াত নং-০১ 

وَ الَّذِیْنَ جَآءُوْ مِنْۢ بَعْدِهِمْ یَقُوْلُوْنَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَ لِاِخْوَانِنَا الَّذِیْنَ سَبَقُوْنَا بِالْاِیْمَانِ وَ لَا تَجْعَلْ فِیْ قُلُوْبِنَا غِلًّا لِّلَّذِیْنَ اٰمَنُوْا رَبَّنَاۤ اِنَّكَ رَءُوْفٌ رَّحِیْمٌ۠ .

এবং (ফাই-এর সম্পদ তাদেরও প্রাপ্য আছে ) যারা তাদের (অর্থাৎ মুহাজির ও আনসারদের) পরে এসেছে। তারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! ক্ষমা করুন আমাদের এবং আমাদের সেই ভাইদেরও যারা আমাদের আগে ঈমান এনেছে এবং আমাদের অন্তরে ঈমানদারদের প্রতি কোনো হিংসা-বিদ্বেষ রাখবেন না। হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি অতি মমতাবান, পরম দয়ালু। সূরা হাশর-১০


এখানে পূববর্তী মুমিনদের জন্য (যাতে জীবিত ও মৃত সকলই আছেন) দুআ করার প্রশংসা করা হয়েছে। দুআ যদি তাদের জন্য উপকারী না হয়, তবে এ প্রশংসার কী অর্থ থাকে?


হাফেয সাখাবী রহ. (৯০২হি.) বলেন, এখানে পূর্ববর্তীদের জন্য দুআ করায় তাদের প্রশংসা করা হয়েছে। বোঝা গেল যে, দুআ উপকারে আসে। কুররাতুল আইন পৃ. ১২৩


 আয়াত নং-০২ 

رَبَّنَا اغْفِرْ لِیْ وَ لِوَالِدَیَّ وَ لِلْمُؤْمِنِیْنَ یَوْمَ یَقُوْمُ الْحِسَابُ.

হে আমার প্রতিপালক! যেদিন হিসাব প্রতিষ্ঠিত হবে, সেদিন আমাকে, আমার পিতা-মাতা ও সকল ঈমানদারকে ক্ষমা করুন। সূরা ইবরাহীম-৪১


 আয়াত নং-০৩

رَبِّ اغْفِرْ لِیْ وَ لِوَالِدَیَّ وَ لِمَنْ دَخَلَ بَیْتِیَ مُؤْمِنًا وَّ لِلْمُؤْمِنِیْنَ وَ الْمُؤْمِنٰتِ وَ لَا تَزِدِ الظّٰلِمِیْنَ اِلَّا تَبَارًا۠.

হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা করে দিন এবং আমার পিতা-মাতাকেও এবং যে ঈমান অবস্থায় আমার ঘরে প্রবেশ করেছে আর সমস্ত মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীকেও। সূরা নূহ-২৮


 আয়াত নং-০৪

فَاعْلَمْ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَ اسْتَغْفِرْ لِذَنْۢبِكَ وَ لِلْمُؤْمِنِیْنَ وَ الْمُؤْمِنٰتِ وَ اللهُ یَعْلَمُ مُتَقَلَّبَكُمْ وَ مَثْوٰىكُمْ.

জেনে রেখো, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই এবং ক্ষমাপ্রার্থনা কর নিজ ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য এবং মুসলিম নর-নারীদের জন্যও। সূরা মুহাম্মদ-১৯

এ দুআগুলোতে জীবিত-মৃতের পার্থক্য ছাড়া সাধারণ মুমিনদের জন্য দুআ করা হয়েছে।


খ। একটি প্রশ্ন:

 কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে

 وَأَن لَّيْسَ لِلْإِنسَانِ إِلَّا مَا سَعَىٰ٩]

এবং মানুষ তাই পায়,যা সে করে। সূরা নজম-৩৯

এ আয়াত দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, ব্যক্তি যা করে কেবল এর সওয়াবই সে পাবে। একজনের সওয়াবের কাজ অন্যের জন্য কোন কাজে আসবে না।


খ। উত্তর/জবাব:

আয়াত বুঝতে হবে সালফে সালেহীনের বুঝ অনুপাতে। নতুবা তা মনগড়া, আমরা বিভ্রান্ত হবো। উক্ত আয়াতের দ্বারা উদ্দেশ্য কারা?

আল্লামা কুরতুবী রহ. তাফসীরে কুরতুবীতে লিখেনঃ

 وَقَالَ الرَّبِيعُ بْنُ أَنَسٍ: (وَأَنْ لَيْسَ لِلْإِنْسانِ إِلَّا مَا سَعى) يَعْنِي الْكَافِرَ وَأَمَّا الْمُؤْمِنُ فَلَهُ مَا سَعَى وَمَا سَعَى لَهُ غَيْرُهُ. قُلْتُ: وَكَثِيرٌ مِنَ الْأَحَادِيثِ يَدُلُّ عَلَى هَذَا الْقَوْلِ، وَأَنَّ المؤمن يصل إليه ثَوَابِ الْعَمَلِ الصَّالِحِ مِنْ غَيْرِهِ،

রবী বিন আনাস বলেন, “এবং মানুষ তাই পায়, যা সে করে কথার দ্বারা উদ্দেশ্য হল কাফের।

অর্থাৎ কাফেররা যা করে শুধু এতটুকুই সে পাবে। কিন্তু মুমিনরা সে যা করে তার সওয়াবও পায়, আবার অন্যের কৃত সওয়াব ও পায়।

আমি [ইমাম কুরতুবী] বলি, অনেক হাদীস এ বিষয়টির প্রমাণ বহন করে। নিশ্চয় মুমিনের জন্য অন্যের কৃত নেক আমলের সওয়াবও পৌঁছে। তাফসীরে কুরতুবী-১৭/১১৪।


হাদিস থেকে দলীল:

হাদিস নং-০১

 عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ: شَهِدْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْأَضْحَى بِالْمُصَلَّى، فَلَمَّا قَضَى خُطْبَتَهُ نَزَلَ مِنْ مِنْبَرِهِ وأُتِيَ بِكَبْشٍ فَذَبَحَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَدِهِ، وَقَالَ: «بِسْمِ اللَّهِ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ، هَذَا عَنِّي، وَعَمَّنْ لَمْ يُضَحِّ مِنْ أُمَّتِي

হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি প্রিয় নাবী রাসূলুন কারিম (صلى الله عليه و آله وسلم) এর সাথে ঈদুল আযহায় নামাযে শরীক ছিলাম। যখন খুতবা শেষ হল। তখন তিনি মিম্বর থেকে নামলেন। তারপর তার কাছে একটি ভেড়া আনা হল। তারপর তিনি তা জবাই করলে নিজ হাতে। জবাইকালে বললেন, বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার, এটি আমার এবং আমার ঐ উম্মতীর পক্ষ থেকে যারা কুরবানী করতে পারেনি।

আবু দাউদ, হাদীস নং-২৮১০


এ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হলো জীবিত ব্যক্তির ঈসালে সওয়াব করা যায়, অর্থাৎ সওয়াব গিফট করা যায়।


হাদিস নং-০২


জানাযা নামাজের মধ্যেই জীবিত-মৃত সবার জন্য দয়া করা হয়েছে।

اللهم اغفر لحينا وميتنا، وشاهدنا وغائبنا، وصغيرنا وكبيرنا، وذكرنا وأنثانا، اللهم من أحييته منا فأحيه على الإسلام، ومن توفيته منا فتوفه على الإيمان.

ইয়া আল্লাহ, আপনি আমাদের জীবিত-মৃতদের মাফ করুন। আমাদের উপস্থিত ও অনুপস্থিত, ছোট ও বড়, পুরুষ ও নারী সকলকে মাফ করুন। ইয়া আল্লাহ, আপনি আমাদের মধ্যে যাকে জীবিত রাখেন তাকে ইসলামের উপর জীবিত রাখুন আর যাকে মৃত্যু দেন তাকে ঈমানের উপর মৃত্যু দিন। মুসনাদে আহমদ-৮৮০৯


হাদিস নং-০৩

কবর জিয়ারতকালে দুআ

السلام على أهل الديار من المؤمنين والمسلمين، ويرحم الله المستقدمين منا والمستأخرين، وإنا إن شاء الله بكم للاحقون.

এই কবরস্থানের বাসিন্দা মুসলিম-মুমিনদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের প্রতি আল্লাহ রহম করুন। ইনশাআল্লাহ আমরাও আপনাদের সাথে মিলিত হব। সহীহ মুসলিম-৯৭৪

উপরোক্ত আয়াত ও হাদীসগুলো থেকে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, দুআ জীবিত ও মৃত সকলের জন্য কল্যাণকর।


। একটি সংশয়/প্রশ্ন/ডাউট:

 উপরোক্ত আয়াত ও হাদিসগুলোতে দুআর কথা বলা হয়েছে। আমলের কথা বলা হয়নি?

গ। সমাধান/ জবাব:

ঈসালে সওয়াবের কয়েকটি পদ্ধতি মধ্যে একটি হচ্ছে দুআ।


এক হাদীসে প্রিয় নাবী রাসূলুন কারিম (صلى الله عليه و آله وسلم) ব্যাখ্যা করেনঃ

 عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” إِذَا مَاتَ الْإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلَّا مِنْ ثَلَاثٍ: إِلَّا مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ، أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ، أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। প্রিয় নাবী রাসূলুন কারিম (صلى الله عليه و آله وسلم) ইরশাদ করেন, ব্যক্তি যখন মারা যায়, তখন তার নেক আমল করার পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি পথ ছাড়া। একটি হল, সদকায়ে জারিয়া, দ্বিতীয় হল ইলম, যদ্বারা মানুষ উপকার পায়, এবং তৃতীয় হল, নেক সন্তানের দুআ।

 মুসনাদে আহমাদ-নং-৮৮৪৪,; সুনানে আবু দাউদ-২৮৮০; মুসলিম-১৬৩১


এ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হলো দুআ মৃত্য ব্যক্তির কাছে পৌছে।

 দ্বিতীয়ত জবাব হলো, দু্আ নিজেই একটি স্বতন্ত্র ইবাদত ও আমল। দলীল:


 হাদীস শরীফে এসেছে,

إِنَّ الدُّعَاءَ هُوَ الْعِبَادَةُ. وفي الباب عن أنس عند الترمذي الدُّعَاءُ مُخُّ العِبَادَةِ وهو حسن في الشواهد.

দুআই ইবাদত। অন্য বর্ণনায় এসেছে, দুআ হলো ইবাদতের মগজ। মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ১৮৩৫২


প্রশ্ন: ঘ। কোন আমল করার পর তা বখশে/ঈসালে সওয়াব/সওয়া রেসানি না করলে ঐ আমল কাংখিত ব্যক্তি পাবে কিনা?  

উত্তর: ঘ। জবাব হলো যার জন্য কোন আমল করা হয় তার তা পৌঁছে যায়, এর জন্য আলাদা কোন দুআর প্রয়োজন হয় না।

দলীল:

হাদিস নং-০১

 আবু হুরাইরা (রা) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন :

مَنْ صَلَّى عَلَيَّ عِنْدَ قَبْرِيْ سَمِعْتُهُ، وَمَنْ صَلَّى عَلَيَّ مِنْ بَعِيْدٍ أُعْلِمْتُهُ

কেউ আমার কবরের কাছে থেকে আমার উপর দরুদ পাঠ করলে আমি শুনতে পাই। আর যদি কেউ দূর থেকে আমার উপর দরুদ পাঠ করে তাহলে আমাকে জানান হয়। বাইহাকী, হায়াতুল আম্বিয়া ১০৩-১০৫ পৃ. সাখাবী, আল-কাউলুল বাদী ১৫৪ পৃ.


হাদিস নং-০২

 আম্মার বিন ইয়াসির (রা)-এর সূত্রে রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে বর্ণিত:

إِنَّ اللهَ وَكَّلَ بِقَبْرِيْ مَلَكاً أَعْطَاهُ أَسْمَاعَ الْخَلاَئِقِ، فَلاَ يُصَلِّي عَلَيَّ أَحَدٌ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ إِلاَّ أَبْلَغَنِيْ بِاسْمِهِ وَاسْمِ أَبِيْهِ: هَذاَ فُلاَنُ بْنُ فُلاَنٍ قَدْ صَلَّى عَلَيْكَ

আল্লাহ আমার কবরে একজন ফিরিশতা নিয়োগ করছেন, যাকে তিনি সকল সৃষ্টির শ্রবণশক্তি প্রদান করেছেন, কিয়ামত পর্যন্ত যখনই কোনো ব্যক্তি আমার উপর সালাত (দরুদ) পাঠ করবে তখনই ঐ ফিরিশতা সালাত পাঠকারীর নাম ও তাঁর পিতার নাম উল্লেখ করে আমাকে তাঁর সালাত পৌঁছে দিয়ে বলবে : অমুকের ছেলে অমুক আপনার উপর সালাত প্রেরণ করেছে। মুনযিরী, আত-তারগীব ২/৩৮৮; হাইসামী, মাজমাউয যাওয়ায়িদ ১০/১৬২; সাখাবী, আল-কাওলুল বাদী, পৃ.


উপরোক্ত দুটি হাদিস দ্বারা জানা গেল ফিরিশতাগণ সে সালাত ও সালাম রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর কবর মুবারাকে পৌঁছিয়ে দেবেন, সওয়াব রেসানি কথা বলা হয়নি।


হাদিস নং-০৩

عَنْ أَبِي أُسَيْدٍ مَالِكِ بْنِ رَبِيعَةَ قَالَ: بَيْنَمَا نَحْنُ عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذْ جَاءَهُ رَجُلٌ مِنْ بَنِي سَلَمَةَ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَبَقِيَ مِنْ بِرِّ أَبَوَيَّ شَيْءٌ أَبَرُّهُمَا بِهِ مِنْ بَعْدِ مَوْتِهِمَا؟ قَالَ: «نَعَمْ، الصَّلَاةُ عَلَيْهِمَا، وَالِاسْتِغْفَارُ لَهُمَا، وَإِيفَاءٌ بِعُهُودِهِمَا مِنْ بَعْدِ مَوْتِهِمَا، وَإِكْرَامُ صَدِيقِهِمَا، وَصِلَةُ الرَّحِمِ الَّتِي لَا تُوصَلُ إِلَّا بِهِمَا»

হযরত আবূ সাঈদ আসসায়েদী রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা একদা রাসূল (ﷺ) এর কাছে ছিলাম। এমতাবস্থায় বনী সালামা গোত্রের একজন ব্যক্তি আসল। লোকটি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতা মাতার ইন্তেকালের পর তাদের জন্য কোন নেক কাজ করার কি সুযোগ আছে? নবীজী (ﷺ) ইরশাদ করলেন, তাদের জন্য নামায পড়ে [ঈসালে সওয়াব কর] তাদের জন্য ইস্তিগফার কর। তাদের অঙ্গিকার ওয়াদাগুলো পূর্ণ কর। তাদের সম্পর্কিত আত্মীয়দের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখ। তাদের বন্ধুদের সাথে ভাল ব্যবহার কর। সনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৩৬৬৪, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৫১৪


এ হাদিস থেকে প্রমাণিত হলো মৃত্য ব্যক্তির পক্ষে কোনো আমল তার কাছে পৌঁছে এবং এত তার ফায়দা হয় সওয়াব রেসানি ছাড়াই।


প্রশ্ন। ঙ। আমরা যা কিছু আমল করলাম এর সাওয়াব রাসূল সা এর রওজা মোবারক এ পৌঁছে দিন। সকল মুমিন মুমিনাতের রূহে এর সাওয়াব পৌঁছে দিন ", এভাবে বলার বিধান কী ? ভিত্তি কী?


উত্তর: ঙ। হ্যাঁ, এভাবে বলা জায়েয আছে। ফুকাহায়ে কেরাম এটা জায়েয বলেছেন। যেমন,     


(১) ইমাম ইবনে কুদামা রাহ. তিলাওয়াতের সওয়াব রেসানির বৈধতার দলীল আলোচনা করতে গিয়ে বলেন,

وأنه إجماع المسلمين، فإنهم في كل عصر ومصر يجتمعون ويقرؤون القرآن، ويهدون ثوابه إلى موتاهم، من غير نكير.

এতে মুসলমানদের ইজমা আছে। প্রত্যেক যুগে প্রত্যেক শহরে তারা সমবেত হয়ে কুরআন তিলাওয়াত করে সওয়াব রেসানি করেছে। এতে কেউ কোনো আপত্তি করেনি। -আলমুগনী ৩/৫২২


(২) শাফেয়ী ফকীহদের মধ্যেও ফকীহের মত এটাই যে, কুরআন তিলাওয়াতের ঈসালে সওয়াব করা জায়েয। বিশেষত যদি আল্লাহর কাছে এই দুআ করা হয় যে, তিনি যেন এই সওয়াব মাইয়িতের কাছে পৌঁছে দেন। যাদের মধ্যে ইবনে আবী আসরূন রাহ. (৫৮৫হি.), ইবনে আবিদ দাম রাহ. (৬৪২হি.), ইবনুস সালাহ রাহ. (৬৪৩হি.), তাকীউদ্দীন সুবকী রাহ. (৭৫৬হি.), ইবনুল মুলাক্কীন রাহ. (৮০৪হি.), যাকারিয়া আনসারী রাহ. (৯২৬হি.) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।


(৩) ইমাম ইবনুস সালাহ রাহ.-এর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, কুরআন পড়ে পিতা-মাতা বা আত্মীয়-স্বজন কিংবা সাধারণ মুসলমানকে সওয়াব পৌঁছানো যাবে কি না? উত্তরে তিনি বলেছেন, এতে ফকীহদের মতভেদ আছে। তবে অধিকাংশ মানুষ তা জায়েয মনে করে। এক্ষেত্রে এই দুআ করা উচিত যে, হে আল্লাহ, আপনি এর সওয়াব অমুককে পৌঁছে দিন। -ফাতাওয়া ইবনুস সালাহ ১/১৯৩


বোঝা গেল যে, সকল ইবাদতের হুকুম একই এবং এখানে প্রশস্ততা আছে। -মাজমূউ ফাতাওয়া ওয়া রাসায়েলে ইবনে উসায়মীন ১৭/২৬২


(৪) আল্লামা মনজুর নুমানি (রহ.) –এর সংকলিত ‘আলফিয়াতু হাদিস’ গ্রন্থে শেষের দিকে তিনি একটি হাদিস উদ্ধৃতি দিয়েছেন যার সারমর্ম হলো এই, দুআয় যত মুসলমানের জন্য দুআ করা যাবে (সওয়াব রেসানি) তত পরিমাণ সওয়াব পাওয়া যাবে।


নোট: কিতাবটি বাসায় থাকায় আরবি ইবারত ও হুবুহু অর্থ দিতে পারলাম না।


সুতরাং উপরোক্ত সব আলোচনার দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, আমরা বলি হে আল্লাহ! এর সাওয়াব রাসূল সা এর রওজা মোবারক এ পৌঁছে দিন। সকল মুমিন মুমিনাতের রূহে এর সাওয়াব পৌঁছে দিন। এভাবে বলা জায়েজ। মুমিনদের জন্য দুআর ব্যাপারে উৎসাহিত করতে মহান আল্লাহ নবিদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, ( নবী কারীম ﷺ- কে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে)


فَاعْلَمْ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَ اسْتَغْفِرْ لِذَنْۢبِكَ وَ لِلْمُؤْمِنِیْنَ وَ الْمُؤْمِنٰتِ وَ اللهُ یَعْلَمُ مُتَقَلَّبَكُمْ وَ مَثْوٰىكُمْ.

জেনে রেখো, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই এবং ক্ষমা প্রার্থনা কর নিজ ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য এবং মুসলিম নর-নারীদের জন্যও। সূরা মুহাম্মদ-১৯



والله اعلم بالصواب

উত্তর দিচ্ছেন,