আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-১৪৩: আত্তাহিয়াতু পড়ার সময় আংগুল নাড়ানোর বিধান?

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১৪৩:   নামাজে আত্তাহিয়াতু পড়ার সময় আংগুল একবার উঠানোর দলিল কি জানাবেন আর যারা সবসময় উঠায় তাদের দলিল কতটা মজবুত তাও জানতে চাই। তারিখ-১২/০৬/২০২২


  মাওলানা আশরাফুল আলম  সুদান থেকে----

 

প্রশ্ন:      ক।              নামাজে আত্তাহিয়াতু পড়ার সময় আংগুল একবার উঠানোর দলিল কি জানাবেন?


উত্তর:       ক।   আত্তাহিয়াতু পড়ার সময় আংগুল একবার উঠানোর দলিল:


হাদিস নং-০১  

 عَنْ عَامِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الزُّبَيْرِ عَنْ أَبِيهِ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ 

 -صلى الله عليه وسلم- إِذَا قَعَدَ يَدْعُو وَضَعَ يَدَهُ الْيُمْنَى عَلَى فَخِذِهِ الْيُمْنَى وَيَدَهُ الْيُسْرَى عَلَى فَخِذِهِ الْيُسْرَى وَأَشَارَ بِإِصْبَعِهِ السَّبَّابَةِ وَوَضَعَ إِبْهَامَهُ عَلَى إِصْبَعِهِ الْوُسْطَى وَيُلْقِمُ كَفَّهُ الْيُسْرَى رُكْبَتَهُ

হযরত আমের আব্দুল্লাহ বিন জুবায়ের তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যেতিনি বলেছেনরাসূল () যখন তাশাহুদ পড়ার জন্য বসতেনতখন ডান হাতখানা ডান উরুর উপর এবং বাঁ হাতখানা বাঁ উরুর উপর রাখতেন। আর শাহাদত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করতেন। এ সময় তিনি বৃদ্ধাঙ্গুলিকে মধ্যমার সাথে সংযুক্ত করতেন এবং বাঁ হাতের তালু [বাঁ] হাঁটুর রাখতেন। সহীহ মুসলিমহাদীস নং-১৩৩৬সহীহ ইবনে হিব্বান-৫/২৭০

 

হাদিস নং-০২

عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- كَانَ إِذَا جَلَسَ فِى الصَّلاَةِ وَضَعَ يَدَيْهِ عَلَى رُكْبَتَيْهِ وَرَفَعَ إِصْبَعَهُ الْيُمْنَى الَّتِى تَلِى الإِبْهَامَ فَدَعَا بِهَا وَيَدَهُ الْيُسْرَى عَلَى رُكْبَتِهِ الْيُسْرَى بَاسِطُهَا عَلَيْهَا

হযরত ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল () নামায পড়ার সময় যখন বসতেন বৈঠক করতেন] তখন হাত দুইখানা দ্ইু হাঁটুর উপর রাখতেন। আর ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির পার্শ্ববতী [শাহাদাত] আঙ্গুল উঠিয়ে ইশারা করতেন এবং বাঁ হাত বাঁ হাঁটুর উপর ছড়িয়ে রাখতেন। {সহীহ মুসলিমহাদীস নং-১৩৩৭}


হাদিস নং-০৩

عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- كَانَ إِذَا قَعَدَ فِى التَّشَهُّدِ وَضَعَ يَدَهُ الْيُسْرَى عَلَى رُكْبَتِهِ الْيُسْرَى وَوَضَعَ يَدَهُ الْيُمْنَى عَلَى رُكْبَتِهِ الْيُمْنَى وَعَقَدَ ثَلاَثَةً وَخَمْسِينَ وَأَشَارَ بِالسَّبَّابَةِ

হযরত ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল () যখন তাশাহুদের জন্য বসতেনতখন বাম হাতকে রাখতেন বাম হাঁটুর উপর এবং ডান হাতখানা ডান হাঁটুর উপর রাখতেন। আর [হাতের তালু ও আঙ্গুলসমূহ গুটিয়ে আরবী] তিপ্পান্ন সংখ্যার মত করে শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করতেন। {সহীহ মুসলিম,হাদীস নং-১৩৩৮}

 

উল্লেখিত হাদীসমূহে শুধুমাত্র আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করার কথা এসেছে। আঙ্গুল নাড়ানোর কথা আসেনি। কিন্তু আঙ্গুল নাড়বে কি নাএ ব্যাপারে কোন স্পষ্ট নির্দেশনা নেই। অন্য হাদীসে তাও স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করে দেয়া হয়েছে। যেমন-

 

হাদিস নং-০৪

عن عبد الله بن الزبير أن النبي صلى الله عليه وسلم كان يشير بأصبعه إذا دعا ولا يحركها

হযরত আব্দুল্লাহ বিন জুবায়ের রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল () যখন তাশাহুদ পড়তেনতখন আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করতেনকিন্তু আঙ্গুল নাড়াতেই থাকতেন না। {সুনানে নাসায়ী কুবরাহাদীস নং-১১৯৩সুনানে আবু দাউদহাদীস নং-৯৮৯মুসনাদে আবী আওয়ানাহাদীস নং-১৫৯৪}

ইবনে হাজার আসকালানী রহ. ;ইমাম নববী রহআল্লামা ইবনুল মুলাক্কিন রহপ্রমুখ মুহাদ্দিসগণ  বলেন- হাদীসটির সনদ সহীহ। {আলখুলাসা-১/৪২৮আলমাজমূ-৩/৪৫৪}

 

উক্ত সহীহ হাদীস দ্বারা একথা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হচ্ছে যেরাসূল () তাশাহুদের সময় শুধুমাত্র আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করতেনআঙ্গুল নাড়াতেই থাকতেন না।

 

প্রশ্ন:         খ।   আর যারা সবসময় উঠায় তাদের দলিল কতটা মজবুত তাও জানতে চাই।

উত্তর:       খ।   আর যারা সবসময় উঠায় তাদের দলীল:

 

 তবে অপর একটি হাদীসের বাহ্যিক শব্দ দ্বারা ধারণা হয় যেরাসূল () আঙ্গুল নাড়াতে থাকতেন। হাদীসটি ওয়ায়েল বিন হুজুর রা. থেকে বর্ণিত। হাদীসটির শব্দ হল-

ثم رفع أصبعه فرأيته يحركها

তারপর তিনি আঙ্গুল উঠালেনতারপর আমি দেখলাম তিনি তা নাড়াচ্ছেন। {সুনানে নাসায়ী কুবরাহাদীস নং-১১৯১সুনানে দারেমীহাদীস নং-১৩৫৭}

হাদীসটি সম্পর্কে মুহাদ্দিসদের মন্তব্য

আল্লামা ওয়াদেয়ী রহ. বলেন, বাহ্যিকভাবে বুঝা যায় হাদীসটি হাসান। কিন্তু তাতে শাজ শব্দ আছে। সেটি হল আঙ্গুল নাড়ানোর বিষয়টি। {আহাদীসে মুআল্লাহ-৩৮৯}

 

উল্লেখ যেআঙুল নাড়ানোর শুধু  এই একটি হাদিসও পাওয়া যায়।

 

প্রশ্ন:            গ।    দুই হাদীসের মাঝে বৈপরীত্বের সমাধান কি?


উত্তর:       গ।   আল্লামা ইমাম বায়হাকী রহ. উভয় হাদীসের বাহ্যিক এ বৈপরীত্ব নিরসন করে বলেন,

 

فيحتمل أن يكون المراد بالتحريك الإشارة بها لا تكرير تحريكها فيكون موافقا لرواية بن الزبير والله تعالى أعلم

আঙ্গুল নাড়াতে থাকা দ্বারা উদ্দেশ্য হলইশারা করা। আঙ্গুল নাড়াতেই থাকা উদ্দেশ্য নয়। এ অর্থ নিলে এ হাদীসটি আব্দুল্লাহ বিন জুবায়ের রা. এর বর্ণনার সাথে মিলে যায়। তাখরিজ: সুনানে বায়হাকী কুবরা-২৬১৫

ইমাম বায়হাকী রহ. যে সমাধান দিয়েছেন এটিই এ দুই হাদীসের মাঝের বাহ্যিক বৈপরীত্ব নিরসনের প্রকৃত সমাধান। অর্থাৎ ওয়ায়েল বিন হুজুর রা. এর হাদীস দ্বারা যে বুঝা যাচ্ছে যেআঙ্গুল নাড়াতে ছিলেন। এর মানে হলআঙ্গুল দিয়ে ইশারা করতে ছিলেন। নাড়াতেই ছিলেন উদ্দেশ্য নয়। এ ব্যাখ্যা নিলে ওয়াইল বিন হুজুর রা. এর হাদীস এবং আব্দুল্লা বিন জুবায়ের রা. থেকে বর্ণিত হাদীস একই অর্থবোধক হয়ে যায়কোন বৈপরীত্ব আর বাকি থাকে না।{বাজলুল মাযহুদ-২/১২৭}

স্বাভাবিক যুক্তিও একথা বলে যেতাশাহুদের সময় বসে বসে আঙ্গুল নাড়াতে থাকবে না। কারণ এটি নামাযের খুশু খুজুর খেলাফ। তাছাড়া এভাবে আঙ্গুল নাড়াতে থাকলে পাশের জনের নামাযে মনযোগের মাঝে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। তাই একটি সুষ্পষ্ট সহীহ হাদীসের উপর আমল ছেড়ে দিয়ে একটি ব্যাখ্যা সাপেক্ষ্য হাদীসের উপর আন্দাজের উপর আমল করে আঙ্গুল নাড়াতেই থাকা কোন বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।

 

প্রশ্ন:        ঘ।     এ বিষয়ে আলেমদের মতামত কি?

উত্তর      ঘ।     আঙুল না নাড়ানোর পক্ষে-

 

Ø শাফিঈদের মতেইল্লাল্লাহু বলার সময় আঙ্গুল দিয়ে একবার ইশারা করতে হবে।

Ø আর হাম্বালীদের মতেঃ যখন আল্লাহর নাম উচ্চারণ হবে তখন আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করবেকিন্তু তা নাড়াবে না। দেখুনফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৭০আইনী তুহফা

 

Ø ইমাম নাববী বলেন, তাশাহহুদের ইল্লাল্লাহু বলার সময় ইশারা করতে হবে।

Ø সুবুলুস সালাম প্রণেতা বলেন, বায়হাক্বীর বর্ণনানুসারে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলার সময় এরূপ করতে হবে।

Ø  আল্লামা ত্বীবী ইবনু উমার বর্ণিত একটি হাদীসের বরাত দিয়ে বলেন, ইল্লাল্লাহু বলার সময় ইশারা করতে হবেযাতে কথায় ও কাজে তাওহীদের সামঞ্জস্য হয়ে যায়।

Ø মোল্লা আলী ক্বারী হানফী বলেন, হানাফী মতে লা ইলাহা বলার সময় তর্জনী আঙ্গুল তুলতে হবে এবং ইল্লাল্লাহু বলার সময় তা রেখে দিতে হবে। দেখুনতুহফাতুল আহওয়াযী ১/২৪২

Ø শায়খ সালিহ আল-উসাইমিন (রহ) বলেছেন, তর্জনী আঙ্গুল নাড়ানো শুধুমাত্র দুআর সময় হবে। পুরো তাশাহহুদে নয়। যেমনটি হাদীসে এসেছেতিনি তা নাড়াতেন ও দুআ করতেন।- (ফাতহুর রব্বানী-৩/১৪৭সানাদ হাসান)

 

 

আঙুল নাড়ানোর পক্ষে-

 

Ø মালিকীদের মতেঃ আত্তাহিয়্যাতুর শুরু থেকে সালাম পর্যন্ত আঙ্গুলটিকে ডানে ও বামে নাড়াতে হবে। (দেখুনফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৭০আইনী তুহফা)

Ø  শায়খ আবদুল আযীয বিন বায (রহ.) বলেন, মুসল্লীর জন্য সুন্নাত হচ্ছে তাশাহহুদের সময় ডান হাতের অঙ্গুলিগুলো মুষ্ঠিবদ্ধ করবে এবং দুআকালে তাওহীদের ইশারা স্বরূপ তর্জনী অঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করবে ও হালকাভাবে নাড়াবে। (দেখুনফাতাওয়াহ শায়খ বিন বায১১/১৮৫)


والله اعلم بالصواب

 

উত্তর দিচ্ছেন