আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

নির্বাচিত প্রবন্ধ-৩০: রব্বুল আলামীন যাদের নিয়ে গর্ব করেন-২

No Comments

 



রব্বুল আলামীন যাদের নিয়ে গর্ব করেন-২

Daily Inqilab মাওলানা মুহাম্মাদ ইমরান হুসাইন

 ১৫ মে ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ১৫ মে ২০২৪, ১২:০২ এএম


শেষ রজনী বরকতপূর্ণ ও রহমতঘেরা সময়। দুআ কবুলের বিশেষ মুহূর্ত। আল্লাহ বান্দার প্রতি রহমতের দৃষ্টি দান করেন। বান্দা যে দুআ করে তা কবুল করেন। আমর ইবনে আবাসা রা. বলেন, আমি নবী (সা.)-এর নিকট এলাম। তখন তিনি ‘উকায’ বাজারে ছিলেন। জিজ্ঞেস করলাম : ইয়া রাসূলাল্লাহ! বিশেষ কোনো দুআ বা বিশেষ কোনো সময় আছে কি, যা আল্লাহ তাআলার কাছে অন্য দুআ ও অন্য সময় থেকে অধিক প্রিয়? নবী (সা.) বলেছেন : অবশ্যই আছে। রাব্বে কারীম বান্দার সবচেয়ে নিকটবর্তী হন রাতের শেষ প্রহরে। সুতরাং সম্ভব হলে ওই সময় যারা আল্লাহর যিকির করে, তাদের মধ্যে তুমিও শামিল হয়ে যাও। (সহীহ ইবনে খুযায়মা : ১১৪৭)। রাতের শেষ প্রহর খায়ের ও কল্যাণের আধার। এ সময় উন্মুক্ত হয় আল্লাহর দয়া ও দানের প্রশস্ত দুয়ার। আল্লাহ তাআলার রহমত ও মাগফিরাতের সাগরে যেন জোয়ার আসে। তিনি বান্দার প্রতি কৃপাদৃষ্টি দেন। বান্দাকে দান করার জন্য বান্দার গুনাহ মাফ করার জন্য এবং বান্দার হাজত ও প্রয়োজন পুরা করার জন্য ডাকতে থাকেন।


আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : আমাদের রব আল্লাহ তা‘আলা প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে প্রথম আসমানে অবতরণ করেন এবং বলতে থাকেন, কে আছ, আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেবো! কে আছ, আমার কাছে (কিছু) চাইবে, আমি তাকে দান করব! কে আছ, আমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে, আমি তাকে ক্ষমা করে দেবো! (সহীহ বুখারী : ৬৩২১)।



যুগে যুগে যারা আল্লাহকে মহব্বত করেছেন, আল্লাহর ওলী হয়েছেন, কিয়ামুল লাইল তথা তাহাজ্জুদ ও শেষ রাতের যিকির-ইস্তিগফার ছিল তাদের একটি প্রিয় আমল। এমনকি পূর্ববর্তী উম্মতের যারা সালেহ তথা নেককার বান্দা ছিলেন তারাও কিয়ামুল লাইলের প্রতি বেশ যত্ন নিতেন। কারণ এর মাধ্যমে আল্লাহর পরম নৈকট্য লাভ হয়, গুনাহ মাফ হয় এবং গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা সহজ হয়!


আবু উমামা রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : তোমরা অবশ্যই তাহাজ্জুদের পাবন্দী করবে। কেননা, তাহাজ্জুদ ছিল পূর্ববর্তী সালেহীনের অভ্যাস। এ নামায তোমাদের আপন রবের নৈকট্য দান করে, তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করায় এবং তোমাদের গুনাহ থেকে বিরত রাখে। (সহীহ ইবনে খুযায়মা : ১১৫৩)।



জান্নাতে বিশেষ ধরনের কক্ষ আছে, এত জাঁকজমকপূর্ণ এবং এমন স্বচ্ছ যে, এর ভেতর থেকে বাহির এবং বাহির থেকে ভেতর দেখা যাবে। যারা এই অসাধারণ কামরার অধিকারী হবে, তাদের একটি সিফাত হচ্ছে, তারা তাহাজ্জুদের পাবন্দ হবেন। আবু মালেক আশআরী রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : জান্নাতে একটি কক্ষ আছে, যার বাহির থেকে ভেতর এবং ভেতর থেকে বাহির দেখা যাবে। এই কামরাটি আল্লাহ তাআলা ঐ ব্যক্তিদের জন্য প্রস্তুত করেছেন, যারা মানুষকে খাবার খাওয়ায়, কোমল স্বরে কথা বলে, বেশি বেশি রোযা রাখে এবং মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন নামাযে দণ্ডায়মান হয়। (মুসনাদে আহমাদ : ২২৯০৫)।


হাসসান ইবনে আতিয়্যা রাহ. বলেন, আমাদের নিকট এই হাদিস পৌঁছেছে যে, নবী (সা.) বলেছেন : রাতের গভীরে দুই রাকাত নামায দুনিয়া এবং দুনিয়াতে যা কিছু আছে তার চেয়েও উত্তম। আমি যদি আমার উম্মতের জন্য কষ্টকর হওয়ার আশঙ্কা না করতাম, তাহলে আমি তাদের ওপর শেষ রাতের দুই রাকাত নামায ফরজ করে দিতাম। (আযযুহ্দ ওয়ার রাকাইক, আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক : ১২৮৯)।


নবী করীম (সা.) ওই স্বামী-স্ত্রীর জন্য রহমতের দুআ করেছেন, যাদের একজন তাহাজ্জুদের জন্য জাগ্রত হয়, এরপর অন্যজনকে জাগিয়ে দেয়। আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন : ওই ব্যক্তির প্রতি আল্লাহ তাআলা রহম করুন, যে রাতে ঘুম থেকে উঠেছে, নামায পড়েছে এবং আপন স্ত্রীকে জাগিয়েছে। ফলে স্ত্রীও নামায পড়েছে। আর স্ত্রী না উঠতে চাইলে (তাকে জাগানোর জন্য) তার চেহারায় পানি ছিটিয়েছে।

আল্লাহ তা‘আলা ওই নারীর প্রতিও রহম করুন, যে রাতে ঘুম থেকে জেগেছে, এরপর নামায পড়েছে এবং স্বামীকে জাগিয়েছে। তখন সেও নামায পড়েছে। স্বামী উঠতে অস্বীকার করলে (তাকে ওঠানোর জন্য) তার চেহারায় পানির ছিটা দিয়েছে। (সুনানে আবু দাউদ : ১৪৫০)। আসুন, আমরা নিজেরা তাহাজ্জুদের পাবন্দী করি, পরিবার-পরিজনকে এর জন্য উদ্বুদ্ধ করি এবং স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে সহযোগিতা করি। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের তাওফীক দান করুন- আমীন।


সূত্র: দৈনিক ইনকিলাব ১৫ মে ২০২৪