জিজ্ঞাসা-১৯৪: শায়েখদের কাছে আমার প্রশ্ন মাগরিবের আযান ও সালাতের মাঝখানে যে দুই রাকাত নফল পড়া হয় তার দলিল কি? তারিখ-২৪/০৬/২২
মাওলানা মো. ওলিউল্লাহ ঢাকা থেকে---
জবাব: ইমাম আবু হানিফা, ইমাম মালেক ও ইমাম হাম্বল রহ. কেহই মাগরিবের আযান ও সালাতের মাঝখানে যে দুই রাকাত নফল পড়া সুন্নাত বা মুস্তাহাব নির্ণয় করেননি। তবে ইমাম শাফেয়ি (রহ)-এর দুটি মত রয়েছে- এক.মুস্তাহাব, দুই. জায়েজ।
তাদের দলিল এই হাদিস:
بين كل أذانين صلاة، بين كل أذانين صلاة، ثم قال في الثالثة : لمن شاء
(অর্থ) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, প্রত্যেক আযান ও ইকামতের মাঝে নামায রয়েছে। প্রত্যেক আযান ও ইকামতের মাঝে নামায রয়েছে। অতপর তৃতীয়বার বললেন, ‘যে ব্যক্তি চায়।’-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৬২৭
প্রশ্ন: ক। বুখারির সহিহ হাদিস পেলেই কি আমলযোগ্য/করতেই হবে?
উত্তর: ক। হায় আফসোস, ঐ সব ভাইয়ের শুধু বুখারির বর্ণনা নিয়ে লাফালাফি করে, কিন্তু এর বিপরীতে যে হাদিস রয়েছে, সেটা জানার চেষ্টা করে না। সুতরাং বুখারির সহিহ হাদিস পেলেই আমলযোগ্য না।
প্রশ্ন: খ। উপরোক্ত বুখারি হাদিস দ্বারা জানা গেল প্রত্যেক আজান ও একামতের মাঝে নফল নামাজ রয়েছে; কিন্তু মাগরিবের ব্যতিক্রম তার কোন নস আছে কি?
উত্তর: খ। হ্যাঁ, মাগরিব এবং ফজরের আজান ও একামতের মাঝে কোন নফল নামাজ নেই। কিন্তু আমার ভাইয়েরা মুস্তাসনা বুঝে না। উদাহরণটা এ রকম, ধরুন ইউনিটে ঘোষণা হলো, সমস্ত লোক ফলিন। এখন প্রশ্ন হলো যিনি কোয়াটার গার্ডে/কোতে ডিউটিতে আছেন, তিনি ফলিনে মিলবেন না? কেননা বলা হয়েছে, সমস্ত লোক ফলিন। বিষয়টা যেরকম মাগরিব ও ফজরের সময়টাও একি রকম। দলিল:
হাদিস নং-০১
عَن عَبد اللَّهِ بْنِ بُرَيدة، عَن أَبيهِ، رَضِي اللَّهُ عَنْهُ، أَنَّ النَّبيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيه وَسَلَّم قَالَ: بين أَذَانَيْنِ صَلاةٌ إلاَّ الَمْغَرِبَ.
হযরত আব্দুল্লাহ বিন বারিদাহ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন-প্রতিটি দুই আজান [আজান ও ইকামত] এর মাঝে [নফল] নামায আছে মাগরিব নামায ছাড়া। তাখরিজ-মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৪৪২২,আলমুজামুল আওসাত,হাদীস নং-৮৩২৮,সুনানে দারা কুতনী-১০৪০, সুনানে কুবরা বায়হাকী-৪১৭২
নোট: মুহাদ্দিস বাজ্জার রহঃ বলেন, এতে হিব্বান বিন উবায়দুল্লাহ রয়েছেন। যিনি মাশহুর। যার মাঝে কোন সমস্যা নেই। সূত্র: আলবাহরুর যুখার-১০/৩০৩
হাদিস নং-০২
عَنْ طَاوُسٍ، قَالَ: سُئِلَ ابْنُ عُمَرَ، عَنِ الرَّكْعَتَيْنِ قَبْلَ الْمَغْرِبِ، فَقَالَ: «مَا رَأَيْتُ أَحَدًا عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّيهِمَا،
হযরত তাউস থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন-হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ কে প্রশ্ন করা হল-মাগরিবের [ফরজের আগে ও আজানের পর] আগে কোন নামায আছে কি? তিনি বললেন-আমি নবীজী (ﷺ) এর সময় থেকে আজ পর্যন্ত কাউকে এ সময় নামায পড়তে দেখিনি।
তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ-১২৮৪, মুসনাদে আবদ বিন হুমাইদ-৮০৪, সুনানে কুবরা বায়হাকী-৪১৮৪
নোট: আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রহঃ বলেন, হাদীসটির সনদ সহীহ। সূত্র: উমদাতুল কারী-৭/৩৫৮
হাদিস নং-০৩
عَنْ حَفْصَةَ قَالَتْ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- إِذَا طَلَعَ الْفَجْرُ لاَ يُصَلِّى إِلاَّ رَكْعَتَيْنِ خَفِيفَتَيْنِ وفى رواية إلا ركعتي الفجر
অনুবাদ-হযরত হাফসা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) ফজর উদিত হবার পর ফজরের দুই রাকাত সুন্নাত ছাড়া অন্য কোন নামায পড়তেন না। তাখরিজ: সহীহ মুসলিম-১৭১১,সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-১৫৮৭,মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৪২২৫,সুনানে নাসায়ী-৪২২৭,সুনানে বায়হাকী,হাদীস নং-৯৭৯,আল মু’জামুল কাবীর-৩৮৫
হাদিস নং-০৪
فى صحيح البخارى– أبا سعيد الخدري يقول : سمعت رسول الله صلى الله عليه و سلم يقول لا صلاة بعد الصبح حتى ترتفع الشمس ولا صلاة بعد العصر حتى تغيب الشمس ( صحيح البخارى- كتاب مواقيت الصلاة، باب لا يتحرى الصلاة قبل غروب الشمس، رقم-1139)
অনুবাদ-হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাঃ বলেন-আমি নবীজি (ﷺ) কে বলতে শুনেছি যে, ফজরের (ফজরের ওয়াক্ত হবার পর) নামাযের পর সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত কোন নামায নেই, এবং আসরের পর সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত কোন নামায নেই। তাখরিজ: সহীহ বুখারী-১/৮২, হাদীস নং-১১৩৯
প্রিয় পাঠক! বুখারি এক হাদিসে আজান ও একামতের মাঝে নামাজ পড়ার কথা বলা হয়েছে; কিন্তু ৩নং ও ৪নং হাদিসে আবার ফজর পড়তে নিষেধ করা হয়েছে। এখন কি আমাদের সমন্বয় করতে হবে না?
আসার নং-০১
ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন,আবু বকর, উমর ও উসমান রা. মাগরিবের পূর্বে দুই রাকাত নামায পড়তেন না।-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস : ৩৯৮৫
আসার-০২
হাম্মাদ ইবনে আবী সুলাইমান থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,আমি ইবরাহীম নাখায়ী রাহ.-কে মাগরিবের পূর্বে নফল নামায সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি আমাকে তা পড়তে নিষেধ করলেন এবং বললেন,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আবু বকর ও উমর রা. তা পড়েননি। -কিতাবুল আছার ১/১৬৩
আসার নং-০৩
সুফিয়ান ছাওরি (রহ.) বলেন, আমার মতও ইবরাহীম নাখায়ির মতই। সুনানে বায়হাকি : ২/৪৭৬
সুতরাং খোলাফায়ে রাশেদীনসহ সাহাবায়ে কেরামের অনেকেই যেহেতু এ সময় কোনো নফল নামায পড়তেন না এবং এ সময়ের নফল নামাযের বিশেষ কোনো ফযীলতও হাদীসে বর্ণিত নেই; অন্যদিকে মাগরিবের নামায আযানের পর বিলম্ব না করে দ্রুত আদায় করার কথা অন্যান্য হাদীসে এসেছে তাই এসব বিষয়ের উপর ভিত্তি করে হানাফী,মালেকী ও হাম্বলী মাযহাবের ফকীহগণ উক্ত দু’ রাকাত নফল নামাযকে সুন্নত বা মুস্তাহাব পর্যায়ের আমল হিসেবে গণ্য করেননি।
সারকথা: মাগরিবের আযান ও সালাতের মাঝখানে যে দুই রাকাত নফল পড়া সম্পর্কে কিছু ফুকাহা মাকরুহ বা নিষেধ করেছেন। তবে নির্ভরযোগ্য ফতোয়া হল, এটা জায়েজ পর্যায়ের কিন্তু সুন্নাহ নয়।
সুতরাং এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করা যাবে না।
যদি কোন মসজিদে ইমামের মাগরিবের নামাজের আগে আলোচনা নিয়ম থাকে; সেক্ষেতে এই দুরাকাত নামাজ ত্যাগ করা উচিত। যাতে ইমামের কাজে বাধা না হয়।
والله اعلم بالصواب