আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-১৯৪: মাগরিবের আযান ও সালাতের মাঝে নফল নামাজ আদায় করার বিধান কি?

No Comments

 

 

জিজ্ঞাসা-১৯৪:  শায়েখদের কাছে আমার প্রশ্ন মাগরিবের আযান ও সালাতের মাঝখানে যে দুই রাকাত নফল পড়া হয় তার দলিল কি? তারিখ-২৪/০৬/২২

মাওলানা মোওলিউল্লাহ ঢাকা থেকে---


জবাব:  ইমাম আবু হানিফাইমাম মালেক ও ইমাম হাম্বল রহকেহই মাগরিবের আযান ও সালাতের মাঝখানে যে দুই রাকাত নফল পড়া সুন্নাত বা মুস্তাহাব নির্ণয় করেননি। তবে  ইমাম শাফেয়ি (রহ)-এর দুটি মত রয়েছেএক.মুস্তাহাবদুইজায়েজ।

 

তাদের দলিল এই হাদিস:

 

بين كل أذانين صلاة، بين كل أذانين صلاة، ثم قال في الثالثة لمن شاء

 (অর্থ) রাসূলুল্লাহ () ইরশাদ করেছেনপ্রত্যেক আযান ও ইকামতের মাঝে নামায রয়েছে। প্রত্যেক আযান ও ইকামতের মাঝে নামায রয়েছে। অতপর তৃতীয়বার বললেন, ‘যে ব্যক্তি চায়।’-সহীহ বুখারীহাদীস : ৬২৭

 

প্রশ্ন:  ক। বুখারির সহিহ হাদিস পেলেই কি আমলযোগ্য/করতেই হবে?

 

উত্তর:  ক। হায় আফসোসঐ সব ভাইয়ের শুধু বুখারির বর্ণনা নিয়ে লাফালাফি করেকিন্তু এর বিপরীতে যে হাদিস রয়েছেসেটা জানার চেষ্টা করে না। সুতরাং বুখারির সহিহ হাদিস পেলেই  আমলযোগ্য না।

 

প্রশ্ন:  খ। উপরোক্ত বুখারি হাদিস দ্বারা জানা গেল প্রত্যেক আজান ও একামতের মাঝে নফল নামাজ রয়েছেকিন্তু মাগরিবের ব্যতিক্রম তার কোন নস আছে কি?

 

উত্তর:  খ।  হ্যাঁমাগরিব এবং ফজরের আজান ও একামতের মাঝে কোন নফল নামাজ নেই। কিন্তু আমার ভাইয়েরা মুস্তাসনা বুঝে না। উদাহরণটা এ রকমধরুন ইউনিটে ঘোষণা হলোসমস্ত লোক ফলিন। এখন প্রশ্ন হলো যিনি কোয়াটার গার্ডে/কোতে ডিউটিতে  আছেনতিনি ফলিনে মিলবেন না?  কেননা বলা হয়েছেসমস্ত লোক ফলিন।  বিষয়টা যেরকম মাগরিব ও ফজরের সময়টাও একি রকম। দলিল:

 

হাদিস নং-০১ 

عَن عَبد اللَّهِ بْنِ بُرَيدة، عَن أَبيهِ، رَضِي اللَّهُ عَنْهُ، أَنَّ النَّبيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيه وَسَلَّم قَالَبين أَذَانَيْنِ صَلاةٌ إلاَّ الَمْغَرِبَ.

 হযরত আব্দুল্লাহ বিন বারিদাহ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যেরাসূল ( ইরশাদ করেছেন-প্রতিটি দুই আজান [আজান ও ইকামত] এর মাঝে [নফল] নামায আছে মাগরিব নামায ছাড়া। তাখরিজ-মুসনাদুল বাজ্জারহাদীস নং-৪৪২২,আলমুজামুল আওসাত,হাদীস নং-৮৩২৮,সুনানে দারা কুতনী-১০৪০সুনানে কুবরা বায়হাকী-৪১৭২

 

নোটমুহাদ্দিস বাজ্জার রহঃ বলেনএতে হিব্বান বিন উবায়দুল্লাহ রয়েছেন। যিনি মাশহুর। যার মাঝে কোন সমস্যা নেই। সূত্রআলবাহরুর যুখার-১০/৩০৩

 

হাদিস নং-০২

عَنْ طَاوُسٍ، قَالَسُئِلَ ابْنُ عُمَرَ، عَنِ الرَّكْعَتَيْنِ قَبْلَ الْمَغْرِبِ، فَقَالَ: «مَا رَأَيْتُ أَحَدًا عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّيهِمَا،

হযরত তাউস থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন-হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ কে প্রশ্ন করা হল-মাগরিবের [ফরজের আগে ও আজানের পর] আগে কোন নামায আছে কিতিনি বললেন-আমি নবীজী ( এর সময় থেকে আজ পর্যন্ত কাউকে এ সময় নামায পড়তে দেখিনি।

তাখরিজসুনানে আবু দাউদ-১২৮৪মুসনাদে আবদ বিন হুমাইদ-৮০৪সুনানে কুবরা বায়হাকী-৪১৮৪

 

নোটআল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রহঃ বলেনহাদীসটির সনদ সহীহ। সূত্রউমদাতুল কারী-৭/৩৫৮

 

 

হাদিস নং-০৩

عَنْ حَفْصَةَ قَالَتْ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلمإِذَا طَلَعَ الْفَجْرُ لاَ يُصَلِّى إِلاَّ رَكْعَتَيْنِ خَفِيفَتَيْنِ وفى رواية إلا ركعتي الفجر

অনুবাদ-হযরত হাফসা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল ( ফজর উদিত হবার পর ফজরের দুই রাকাত সুন্নাত ছাড়া অন্য কোন নামায পড়তেন না। তাখরিজসহীহ মুসলিম-১৭১১,সহীহ ইবনে হিব্বানহাদীস নং-১৫৮৭,মুসনাদে আহমাদহাদীস নং-২৪২২৫,সুনানে নাসায়ী-৪২২৭,সুনানে বায়হাকী,হাদীস নং-৯৭৯,আল মুজামুল কাবীর-৩৮৫

হাদিস নং-০৪

 

فى صحيح البخارى– أبا سعيد الخدري يقول سمعت رسول الله صلى الله عليه و سلم يقول لا صلاة بعد الصبح حتى ترتفع الشمس ولا صلاة بعد العصر حتى تغيب الشمس صحيح البخارىكتاب مواقيت الصلاة، باب لا يتحرى الصلاة قبل غروب الشمس، رقم-1139)

অনুবাদ-হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাঃ বলেন-আমি নবীজি ( কে বলতে শুনেছি যেফজরের (ফজরের ওয়াক্ত হবার পরনামাযের পর সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত কোন নামায নেইএবং আসরের পর সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত কোন নামায নেই। তাখরিজসহীহ বুখারী-১/৮২হাদীস নং-১১৩৯

 

প্রিয় পাঠকবুখারি এক হাদিসে আজান ও একামতের মাঝে নামাজ পড়ার কথা বলা হয়েছেকিন্তু ৩নং ও ৪নং হাদিসে আবার ফজর  পড়তে নিষেধ করা হয়েছে। এখন কি আমাদের সমন্বয় করতে হবে না?

 

আসার নং-০১

 

ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন,আবু বকরউমর ও উসমান রা. মাগরিবের পূর্বে দুই রাকাত নামায পড়তেন না।-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাকহাদীস : ৩৯৮৫

 

আসার-০২

হাম্মাদ ইবনে আবী সুলাইমান থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,আমি ইবরাহীম নাখায়ী রাহ.-কে মাগরিবের পূর্বে নফল নামায সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি আমাকে তা পড়তে নিষেধ করলেন এবং বললেন,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আবু বকর ও উমর রা. তা পড়েননি। -কিতাবুল আছার ১/১৬৩

 

আসার নং-০৩

সুফিয়ান ছাওরি (রহ.) বলেনআমার মতও ইবরাহীম নাখায়ির মতই। সুনানে বায়হাকি : ২/৪৭৬

 

 

সুতরাং খোলাফায়ে রাশেদীনসহ সাহাবায়ে কেরামের অনেকেই যেহেতু এ সময় কোনো নফল নামায পড়তেন না এবং এ সময়ের নফল নামাযের বিশেষ কোনো ফযীলতও হাদীসে বর্ণিত নেইঅন্যদিকে মাগরিবের নামায আযানের পর বিলম্ব না করে দ্রুত আদায় করার কথা অন্যান্য হাদীসে এসেছে তাই এসব বিষয়ের উপর ভিত্তি করে হানাফী,মালেকী ও হাম্বলী মাযহাবের ফকীহগণ উক্ত দু’ রাকাত নফল নামাযকে সুন্নত বা মুস্তাহাব পর্যায়ের আমল হিসেবে গণ্য করেননি।

 

 

সারকথা:  মাগরিবের আযান ও সালাতের মাঝখানে যে দুই রাকাত নফল পড়া সম্পর্কে কিছু ফুকাহা মাকরুহ বা নিষেধ করেছেন। তবে নির্ভরযোগ্য ফতোয়া হলএটা জায়েজ পর্যায়ের কিন্তু সুন্নাহ নয়।

সুতরাং এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করা যাবে না।

 যদি কোন মসজিদে ইমামের মাগরিবের নামাজের আগে আলোচনা নিয়ম থাকেসেক্ষেতে এই দুরাকাত নামাজ ত্যাগ করা উচিত। যাতে ইমামের কাজে বাধা না হয়।

  

والله اعلم بالصواب