আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-১৪২: নবীরা কি কবরে জীবিত?

No Comments

 


জিজ্ঞাসা-১৪২:   নবীরা কি কবরে জীবিতএ বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের বিশুদ্ধ আক্বীদা কি? তারিখ-১২/০৬/২২


মাওলানা আব্দুর রহমান বগুড়া থেকে---


প্রশ্ন     ক।    নবীরা কি কবরে জীবিত?

 

জবাব:    ক।  হ্যাঁনবিরা কবরে জীবিত।

 

কুরআনুল কারিম থেকে দলীল:

(আল্লাহর পথে যারা নিহত (শহীদ) হয়তোমরা তাদেরকে মৃত বলো না। বরং তারা জীবিত। তবে তা তোমরা উপলব্ধি করতে পারো না। সূরা বাকারাআয়াত নং ১৫৪

()  যারা আল্লাহর পথে নিহত (শহীদ) হয়েছেতোমরা তাদেরকে মৃত জ্ঞান করো না। বরং তারা জীবিততাদের রব-প্রতিপালকের নিকট থেকে তারা রিযিকপ্রাপ্ত হয়। সূরা আলে ইমরানআয়াত নং ১৬৯

 

উপরোক্ত দুটি আয়াত থেকে ইশারাতুন নস দ্বারা প্রমাণিত হয় যেনবিরা কবরে জীবিত কেননা,  নবিরা  শহীদদের চেয়েও শ্রেষ্ঠ।

 

 

হাদিস থেকে দলিল:

()  হযরত আনাস বিন মালিক রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল () ইরশাদ করেছেন-

3425 – حَدَّثَنَا أَبُو الْجَهْمِ الْأَزْرَقُ بْنُ عَلِيٍّ، حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ أَبِي بُكَيْرٍ، حَدَّثَنَا الْمُسْتَلِمُ بْنُ سَعِيدٍ، عَنِ الْحَجَّاجِ، عَنْ ثَابِتٍ الْبُنَانِيِّ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْأَنْبِيَاءُ أَحْيَاءٌ فِي قُبُورِهِمْ يُصَلُّونَ

[حكم حسين سليم أسد] : إسناده صحيح

হযরত আনাস বিন মালিক রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল () ইরশাদ করেছেননবীগণ তাদের কবরে জীবিত। তারা সেখানে নামায পড়েন। মুসনাদে আবী ইয়ালাহাদীস নং-৩৪২৫

মুহাদ্দিসীনদের ঐক্যমত্বে এ হাদীসটি সহীহ।

()  হযরত আনাস বিন মালিক রা. থেকে বর্ণিত আরো একটি পরিস্কার হাদীসও এর প্রমাণবাহী।

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” أَتَيْتُ – وَفِي رِوَايَةِ هَدَّابٍ: مَرَرْتُ – عَلَى مُوسَى لَيْلَةَ أُسْرِيَ بِي عِنْدَ الْكَثِيبِ الْأَحْمَرِ، وَهُوَ قَائِمٌ يُصَلِّي فِي قَبْرِهِ “

হযরত আনাস বিন মালিক রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল () ইরশাদ করেছেনআমি মেরাজের রাতে কাসীবে আহমার স্থান অতিক্রমকালে দেখতে পাই হযরত মুসা আঃ তার কবরে নামায পড়ছেন। সহীহ মুসলিমহাদীস নং-২৩৭৫

()  ) হযরত আবু হুরাইরা রা. বর্ণনা করেন,

রাসূলুল্লাহ ()ইরশাদ করেন-

مَنْ صَلَّى عَلَيَّ عِنْدَ قَبْرِي سَمِعْتُهُ، وَمَنْ صَلَّى عَلَيّ َنَائِيًا مِنْهُ أُبْلِغْتُه.

যে আমার কবরের পাশে আমার উপর সালাত পেশ করে আমি তা শুনি। এবং যে দূরে থেকে আমার উপর দরূদ পড়ে তা আমার কাছে পৌঁছানো হয়

কিতাবুস সওয়াবআবু হাইয়ান ইবনু আবিশ শায়খ ইছফাহানীফাতহুল বারী ৬/৬০৫আল-কাওলুল বাদী পৃ. ১৬০

 

()  হযরত আউস ইবনে আউস রা. বর্ণনা করেন,

রাসূলুল্লাহ ()ইরশাদ করেন-

إِنَّ مِن ْأَفْضَلِ أَيَّامِكُمْ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، فِيهِ خُلِقَ آدَمُ، وَفِيهِ قُبِضَ، وَفِيهِ النَّفْخَةُ، وَفِيهِ الصَّعْقَةُ، فَأَكْثِرُوا عَلَيَّ مِنَ الصَّلَاةِ فِيهِ فَإِنَّ صَلَاتَكُمْ مَعْرُوضَةٌ عَلَيَّ" قَالَ: قَالُوا: يَارَسُولَ اللَّهِ، وَكَيْف َتُعْرَضُ صَلَاتُنَا عَلَيْكَ وَقَدْ أَرِمْتَ؟ يَقُولُونَ: بَلِيتَ، فَقَالَ: "إِنَّ اللَّهَ حَرَّمَ عَلَى الْأَرْضِ أَجْسَادَ الْأَنْبِيَاءِ".

তোমাদের শ্রেষ্ঠ দিনগুলোর একটি হল জুমার দিন। এ দিনেই আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ দিনেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এ দিনেই শিঙ্গায় ফুৎকার দেওয়া হবেআর এ দিনেই সকল প্রাণী মৃত্যুবরণ করবে। সুতরাং এ দিনে তোমরা আমার উপর বেশি করে ছালাত ও সালাম পাঠাও। তোমাদের ছালাত আমার কাছে পেশ করা হবে। সাহাবাগণ বললেনআমাদের ছালাত আপনার কাছে কীভাবে পেশ করা হবেতখন যে আপনি (মাটির সাথে মিশে) ক্ষয়প্রাপ্ত (নিঃশেষিত) হয়ে যাবেননবী ()বলেননিশ্চয় আল্লাহ তাআলা মাটির জন্য নবীগণের দেহ খাওয়াকে হারাম করে দিয়েছেন  ড. মুছতাফা আজমী (সহীহ ইবনে খুযাইমার টীকা হাদীস  ১৭৩৩)


প্রশ্ন:        এ বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের বিশুদ্ধ আক্বীদা কি?

উত্তর:   খ।  আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের সর্বসম্মত ঐক্যমত্বের বিষয় হল নবীগণ কবরে জীবিত আছেন।  মৃত্যুর পর সকল নবীদের কবরে পুনরায় বিশেষ জীবন দান করা হয়েছে। ইমাম বাইহাকী রাহ. তাঁর ‘আল ইতিকাদ’ গ্রন্থে বলেন-

والأنبياء عليهم الصلاة والسلام بعدما قبضوا ردت إليهم أرواحهم، فهم أحياء عند ربهم كالشهداء.

সকল নবীর রূহ কবজ করার পর তা আবার ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই তাঁরা শহীদদের ন্যায় তাদের রবের কাছে জীবিত -আল ইতিকাদ পৃ.৪১৫ দারুল ফযীলাহ রিয়াদআত-তালখীছুল হাবীর ২/২৫৪আল বাদরুল মুনীর ৫/২৯২

হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. বলেন,

وقد تمسك به من أنكر الحياة في القبر، وأجيب عن أهل السنة المثبتين لذلك بأن المراد نفي الموت اللازم من الذي أثبته عمر بقوله: "وليبعثه الله في الدنيا ليقطع أيدي القائلين بموته" وليس فيه تعرض لما يقع في البرزخ، وأحسن من هذا الجواب أن يقال: إن حياته صلى الله عليه وسلم في القبر لا يعقبها موت بل يستمر حيا، والأنبياء أحياء في قبورهم، ولعل هذا هو الحكمة في تعريف الموتتين حيث قال :لا يذيقك الله الموتتين أي المعروفتين المشهورتين الواقعتين لكل أحد غير الأنبياء. (فتح الباري، باب لو كنت متخذا خليلا لتخذت أبا بكر خليلا)

যারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরে জীবিত থাকাকে অস্বীকার করে তারা হযরত আবু বকর রা.-এর এ বক্তব্য দিয়ে দলিল পেশ করতে চায়-‘আল্লাহ আপনাকে দুইবার মৃত্যু দিবেন না। আর আহলুস সুন্নাহযারা নবীর কবরে জীবিত থাকায় বিশ্বাস রাখেনএদের পক্ষ থেকে এর জবাব দেয়া হয়েছে যেহযরত আবু বকর রা.-এর বক্তব্যের উদ্দেশ্য ছিল উমর রা.-এর ভুল ধারণার খণ্ডন করা। উমর রা. বলেছিলেনআল্লাহ তাআলা নবীজীকে আবার দুনিয়াতে জীবিত করবেন ...। এ কথার মধ্যে বারযাখে কী হবে এ বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি। অবশ্য হযরত আবু বকর রা.-এর এ কথার সর্বোত্তম ব্যাখ্যা হলকবরে নবীজী ()যে জীবন পেয়েছেন তারপর আর কোনো মৃত্যু আসবে না। বরং তিনি বরাবরই কবরে জীবিত থাকবেনআর নবীগণ কবরে জীবিত। ...।-ফাতহুল বারীআবু বকরের ফযীলত অধ্যায় ৭/৩৩


প্রশ্ন:         গ।   নবিরা কি দুনিয়ার জীবনের/মানুষের মত জীবিত?

উত্তর:     গ।  কবরে নবীজীর জীবন কিছু কিছু বিষয়ে দুনিয়ার জীবনের সাথে সাদৃশ্য রাখে। তবে সকল বিষয়ে তাঁদের কবরের জীবন দুনিয়ার জীবনের মত নয়। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আকীদা

() নির্ধারিত মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করার মাধ্যমে সকল নবীগণের দুনিয়ার জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটেছে

() মৃত্যুর পর তাঁরা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে এক বিশেষ জীবন লাভ করেছেন। তাই তাঁরা কবরে জীবিত। তাঁদের কবরের জীবনের ধরণ বিষয়ে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআর বিশ্বাস হল:

() আলমে বারযাখে সাধারণ মুমিনের জীবনের চেয়ে শহীদদের জীবন পূর্ণাঙ্গ। আর শহীদের জীবন থেকে নবীদের জীবন আরো পূর্ণাঙ্গ ও উন্নততর।

() দুনিয়ার জীবনের সাথে তাঁদের কবরের জীবনের কিছু কিছু বিষয়ে সাদৃশ্য রয়েছে।(১) যেমন কবরে তাঁদের দেহ মোবারক সুসংরক্ষিত রয়েছে। তাঁরা কবরে নামায আদায় করেন। যারা কবরের নিকট গিয়ে ছালাত ও সালাম পেশ করে তাঁরা তা সরাসরি শুনেন এবং যারা দূর থেকে সালাম পাঠান তা ফেরেশতা তাদের কাছে (কবরে) পৌঁছে দেন এবং তাঁরা আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ রিযিক প্রাপ্ত হন।

() কবরের জীবনের ধরণ সম্পর্কে যে বিষয়গুলো কুরআন-সুন্নাহয় পাওয়া যায় না সে বিষয়ে নিরবতা অবলম্বন করি।

 

والله اعلم بالصواب

 

উত্তর দিচ্ছেন