জিজ্ঞাসা-১৩০০০:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। মৃত শিয়াদের জন্য আমরা কি তার নাজাতের দোয়া করতে পারি?
তারিখ: ২২/০৫/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা শরিফুল ইসলাম হাফিজাহুল্লাহু রাজশাহী থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, কোন মুসলিমকে অকাট্ট প্রমাণ ছাড়া কাফের বলা মারাত্মক গুনাহের কাজ। দলিল-
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ، عَنْ مَالِكِ بْنِ أَنَسٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ دِينَارٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " أَيُّمَا رَجُلٍ قَالَ لأَخِيهِ كَافِرٌ فَقَدْ بَاءَ بِهِ أَحَدُهُمَا " . هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ غَرِيبٌ . وَمَعْنَى قَوْلِهِ بَاءَ يَعْنِي أَقَرَّ .
২৬৩৮. কুতায়বা (রাহঃ) ..... ইবনে উমর (রাযিঃ) সূত্রে নবী (ﷺ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি যদি তার ভাইকে কাফির বলে আখ্যায়িত করে তবে সে সেই কুফরীর কথা তাদের উভয়ের কোন একজনের উপর বর্তাবে। - মুসলিম
হাদীসটি হাসান-সহীহ।
Narrated Ibn ’Umar:
Ibn ’Umar narrated that the Prophet (ﷺ) said: "Whoever says to his brother ’disbeliever’ then it will have settled upon one of them."
—জামে' তিরমিযী, হাদীস নং ২৬৩৭ (আন্তর্জাতিক নং ২৬৩৭)
দ্বিতীয় কথা হল, কোন অমুসলিমের (কাফের-মুশরিক) জন্য মাগফেরাতের দুআ করা সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। (এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা-১২৯২৬ শিরোনামে মাসয়ালাটি আলোচিত হয়েছে)
দলিল-
مَا كَانَ لِلنَّبِیِّ وَ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْۤا اَنْ یَّسْتَغْفِرُوْا لِلْمُشْرِكِیْنَ وَ لَوْ كَانُوْۤا اُولِیْ قُرْبٰی مِنْۢ بَعْدِ مَا تَبَیَّنَ لَهُمْ اَنَّهُمْ اَصْحٰبُ الْجَحِیْمِ
“নবী ও যারা ঈমান এনেছে তাদের পক্ষে মুশরিকদের জন্য মাগফিরাতের দোয়া করা সংগত নয়, তারা তাদের আত্মীয়-স্বজন হলেই বা কি এসে যায়, যখন একথা সুষ্পষ্ট হয়ে গেছে যে, তারা জাহান্নামেরই উপযুক্ত।”(সূরা আত তওবা : ১১৩)
ইমাম নববী রহ. বলেন,
الصلاة على الكافر والدعاء له بالمغفرة : حرام بنص القرآن والإجماع
অমুসলিমের জন্য রহমত ও মাগফিরাতের দোয়া করা কোরআনের বক্তব্য ও সকলের ঐক্যমতে হারাম। (আলমাজমু’ ৫/১১৯)
তৃতীয় কথা হল, শিয়াদের সবাই কাফের নয়, সুতরাং যারা কুফুরি আকিদা পোষণ করে তারাই শুধু কাফের হবে।
শিয়াদের দল উপদল:
শিয়াদের মধ্যে প্রথমত তিনটি দল রয়েছে;
এক. তাফযিলিয়া শিয়া। এরা হজরত আলী রাদি. কে শাইখাইনের (হযরত আবু বকর ও উমর রা.) উপর ফযিলত দিয়ে থাকে।
দুই. সাবইয়্যা শিয়া। এরা হজরত সালমান ফারসি, আবু জর গিফারি, মেকদাদ ও আম্মার রাদি. প্রমুখ অল্প সংখ্যক সাহাবি ব্যতীত অন্য সকল সাহাবি রাদি.কে মুনাফেক ও কাফের মনে করে।
তিন. গুলাত বা চরমপন্থী শিয়া। এদের কতক হজরত আলী রাদি. এর খোদা হওয়ার প্রবক্তা ছিল। এদের অনেকে আবার মনে করে, খোদা তার মধ্যে প্রবেশ করেছেন অর্থাৎ তিনি ছিলেন খোদার অবতার বা খোদার প্রকাশ। এভাবে নানা মতে ও বিশ্বাসে শিয়াদের ২৪টি উপদল ছিল। যাদের একটি দল ছিল ইমামিয়া। এরা শিয়াদের একটি বৃহৎ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল। সাবইয়্যাদের ছিল ৩৯টি উপদল। ইমামিয়া দলের মধ্যে প্রধান ও প্রসিদ্ধ হল ৩টি উপদল। যথা
এক. ইছনা আশারিয়া।
দুই. ইসমাইলিয়া।
তিন. যায়দিয়া।
এ বিষয়ে শায়েখ সালেহ ইবনে মুহাম্মাদ হাফিজাহুল্লাহু জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন,
السؤال : هل الشيعة كفار؟
الجواب : الأصل أن الشيعة مسلمون، لكن من اعتقد من الشيعة اعتقادا كفريا أو قال قولا كفريا أو فعل كفرا وقامت عليه الحجة فهو كافر، كمن اعتقد تحريف القرآن أو عصمة الأئمة أو طعن في عرض عائشة رضي الله عنها أو كفر كل الصحابة رضي الله عنهم، والكفر كثير اليوم في الشيعة، فالشيعة طائفة نفاق، لكن لا يجوز تكفير الشيعة بالعموم على الراجح، ولم يزل علماء وحكام أهل السنة يعاملون الشيعة معاملة المسلمين ولا يمنعونهم من حج بيت الله الحرام ودخول مكة والمدينة. والله أعلم.
মূল নীতি হল শিয়ারা মুসলিম, কিন্তু শিয়াদের মধ্যে যে কেউ কাফের বিশ্বাস রাখে বা কাফের কথা বলে বা একটি কাফের কাজ করে এবং তার উপর ভিত্তি করে যুক্তি সে কাফের, যেমন কেউ বিকৃতিতে বিশ্বাস করে।
কুরআন পবিত্র বা ইমামরা নিষ্পাপ বা আয়েশা (রাঃ) এর সম্মানকে ক্ষুণ্ণ করে বা সমস্ত সাহাবীকে অস্বীকার করা।
আজ শিয়াদের মধ্যে প্রচুর কুফর রয়েছে শিয়ারা একটি মুনাফিক সম্প্রদায়, কিন্তু শিয়াদেরকে সাধারণভাবে কাফের বলে ঘোষণা করা জায়েজ নয়, সুন্নি পণ্ডিত ও শাসকগণ এখনও শিয়াদেরকে মুসলমান হিসেবে গণ্য করেন এবং তাদের হজ করতে বাধা দেন না এবং মক্কা ও মদিনায় প্রবেশ করতে। সূত্র: সালেহ ইবনে মুহাম্মাদ বাকরামান এর ওয়েবসাইটে থেকে-২৭৮৮ (ফতোয়া নং)
আল্লামা ইবনে কাসির রহ. বলেন,
قال ابن كثير – رحمه الله – في تفسير قوله تعالى ( مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ وَالَّذِينَ مَعَهُ أَشِدَّاءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ تَرَاهُمْ رُكَّعًا سُجَّدًا يَبْتَغُونَ فَضْلًا مِنَ اللَّهِ وَرِضْوَانًا سِيمَاهُمْ فِي وُجُوهِهِمْ مِنْ أَثَرِ السُّجُودِ ذَلِكَ مَثَلُهُمْ فِي التَّوْرَاةِ وَمَثَلُهُمْ فِي الْإِنْجِيلِ كَزَرْعٍ أَخْرَجَ شَطْأَهُ فَآَزَرَهُ فَاسْتَغْلَظَ فَاسْتَوَى عَلَى سُوقِهِ يُعْجِبُ الزُّرَّاعَ لِيَغِيظَ بِهِمُ الْكُفَّارَ وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آَمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ مِنْهُمْ مَغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيماً ) الفتح/ 29 :
ومِن هذه الآية انتزع الإمام مالك رحمه الله - في رواية عنه - بتكفير الروافض ، الذين يبغضون الصحابة ، قال : لأنهم يغيظونهم ، ومن غاظ الصحابة : فهو كافر ؛ لهذه الآية ، ووافقه طائفة من العلماء على ذلك ، والأحاديث في فضائل الصحابة ، والنهي عن التعرض لهم بمساءة : كثيرة ، ويكفيهم ثناء الله عليهم ، ورضاه عنهم .
" تفسير ابن كثير " ( 7 / 362 )
এ বিষয়ে শায়েখ ইবনে বাজ রহ. কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,
الشيعة فرق كثيرة و فيهم الكافر الذي يعبد علياً ويقول: يا على، ويعبد فاطمة والحسين وغيرهم.
ومنهم من يقول: جبريل عليه الصلاة والسلام خان الأمانة وأن النبوة عند على وليست عند محمد.
وفيهم أناس آخرون، منهم الإمامية ـ وهم الرافضة الاثنا عشريةـ عُبَّاد علي ويقولون: إن أئمتهم أفضل من الملائكة والأنبياء.
ومنهم أقسام كثيرة وفيهم الكافر وفيهم غير الكافر، وأسهلهم وأيسرهم من يقول علي أفضل من الثلاثة ( أبوبكر وعمر وعثمان ) وهذا ليس بكافر لكن مخطئ
শিয়াদের নানা উপদল রয়েছে। তাদের কোনটি আলী (রাঃ) এর পূজারী কাফের। এ দলটি বলে, হে আলী! এবং এরা ফাতেমা (রাঃ) ও হুসাইন (রাঃ) প্রমুখ এরও পূজা করে।
শিয়াদের কোন উপদল বলে: জিব্রাইল (আঃ) আমানতের খেয়ানত করেছেন। নবুয়ত পাওয়ার কথা আলী (রাঃ); মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নয়।
তাদের আরেকটি উপদলকে বলা হয় ইমামিয়া। এরা হচ্ছে- বার ইমামে বিশ্বাসী রাফেজী। এরাও আলী (রাঃ) এর পূজারী। এরা বলে: তাদের ইমামগণ ফেরেশতাদের চেয়ে ও নবীদের চেয়ে উত্তম।
এদের অনেক শাখা রয়েছে। এর কোনটি কাফের; কোনটি কাফের নয়। এদের শাখাটির বিশ্বাস অপেক্ষাকৃত হালকা ত্রুটিপূর্ণ তারা বলে: আলী (রাঃ) অপর তিন খলিফা– আবু বকর (রাঃ), উমর (রাঃ) ও উসমান (রাঃ) এর চেয়ে উত্তম। এ দলটি কাফের নয়; তবে এটি ভুল। কারণ আলী (রাঃ) চতুর্থ স্থানে রয়েছেন। আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ), উমর (রাঃ) ও উসমান (রাঃ) তাঁর চেয়ে উত্তম। যদি কেউ আলী (রাঃ) কে এ তিনজনের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দেয় তাহলে সে ভুল করল এবং সাহাবীদের ইজমা বা ঐকমত্যের বিরোধিতা করল। তবে সে কাফের হবে না। সূত্র: শায়েখ ইবনে বাজ রহ এর ওয়েবসাইট থেকে।
সারকথা হলো, শিয়াদের মধ্যে যারা কুফরী আকিদা পোষণ করে, তাদের জন্য দোয়া করা জায়েয নেই, কিন্তু যদি নিশ্চিত না জানি কে কুফুরিতে আক্রান্ত, তাহলে সন্দেহযুক্ত বিষয়ে ইসলামের বিধান হলো, বিরত/এড়িয়ে চলা।
والله اعلم بالصواب