আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-১৩০১১: ফরজ নামাজের পর মুসল্লিদের দিকে মুখ ফিরানোর হুকুম কি

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১৩০১১: 

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।  মুফতি সাহেবের কাছে আমার জানার বিষয় হলো, ইমাম সাহেব ফরজ সালাতের পরে মুসল্লীদের দিকে ফিরে বসেন না এবং ওই মসজিদে ফরজ সালাতের পর দোয়া হয় না। এতে কোনো পাপ হবে কিনা,আর ফিরে বসাটা কি?

তারিখ: ০২/০৬/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 মাওলানা  আব্দুল মতিন চট্টগ্রাম থেকে।


 জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, ফরজ সালাতের পরে মুসল্লির দিকে মুখ ফেরানো এবং দোয়া করা নামাজের অংশ নয়।


তবে ফিকহি হানিফির মতে যে নামাজের পর সুন্নাত নেই (ফজর ও আসর) সেই নামাজের পর মুসল্লিদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসা সুন্নাত/মুস্তাহাব। দলিল-


كَانَ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ إِذَا صَلّى الصّبْحَ أَقْبَلَ عَلَيْهِمْ بِوَجْهِهِ فَقَالَ: هَلْ رَأَى أَحَدٌ مِنْكُمُ الْبَارِحَةَ رُؤْيَا.

ছামুরা ইবনে জুনদুব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ফজরের নামায শেষ করতেন তখন সকলের দিকে মুখ করে বসতেন। এরপর বলতেন, ‘তোমাদের কেউ কি গত রাতে কোনো স্বপ্ন দেখেছে?’ -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২২৭৫


 দ্বিতীয় কথা হলো, ফরজ নামাজের পর মুসল্লিদের দিকে মুখ করে বসার অনেক হিকমাহ রয়েছে। যেমন, ইবনে হাজার আসকালানি রহ. বলেন,


قال الحافظ ابن حجر رحمه الله : " قِيلَ الْحِكْمَةُ فِي اسْتِقْبَالِ الْمَأْمُومِينَ أَنْ يُعَلِّمَهُمْ مَا يَحْتَاجُونَ إِلَيْهِ ، وَقِيلَ الْحِكْمَةُ فِيهِ تَعْرِيفُ الدَّاخِلِ بِأَنَّ الصَّلَاةَ انْقَضَتْ إِذْ لَوِ اسْتَمَرَّ الْإِمَامُ عَلَى حَالِهِ لَأَوْهَمَ أَنَّهُ فِي التَّشَهُّدِ مَثَلًا ، وَقَالَ الزَّيْنُ بْنُ الْمُنِيرِ : اسْتِدْبَارُ الْإِمَامِ الْمَأْمُومِينَ إِنَّمَا هُوَ لِحَقِّ الْإِمَامَةِ فَإِذَا انْقَضَتِ الصَّلَاةُ زَالَ السَّبَبُ ، فَاسْتِقْبَالُهُمْ حِينَئِذٍ يَرْفَعُ الْخُيَلَاءَ وَالتَّرَفُّعَ على الْمَأْمُومين " .

انتهى من "فتح الباري" (2/ 334).

অর্থাৎ, ইবনে হাজার আসকালানি (রাহি.) বলেন, নামাজ শেষ হওয়ার পর ইমামের মুসল্লিদের দিকে অভিমুখী হয়ে বসার উদ্দেশ্য হলো, তাদের প্রয়োজনীয় কোন বিষয়ে শিক্ষা প্রদান করা। কারো কারো মতে, নতুন করে মুসল্লীকে মসজিদে প্রবেশরত মুসল্লিকে এ কথা জানান দেয়া যে, সালাতের জামাত শেষ হয়ে গিয়েছে। কারণ ইমাম সাহেব হয়ে পবিষ্ট থাকলে তার মনে ধারণার উদয় হতে পারে যে, ইমাম সাহেব সালাতে তাশাহহুদ পাঠরত অবস্থায় রয়েছেন। 

আল্লামা জাইন ইবনে মুনির ( রাহি.) বলেন, ইমাম তার মুসল্লিদেরকে একমাত্র ইমামতির খাতিরেই পিছনে রেখে বসতে পারেন। যেহেতু সালাত শেষ হওয়ার মাধ্যমে ইমামতির দায়িত্ব শেষ হয়ে গিয়েছে, সুতরাং তিনি মুসল্লিদেরকে পিছনে রেখে আর বসতে পারেন না। অতএব নামাজ শেষ হওয়ার পরে মুসল্লিদের দিকে অভিমুখী হয়ে উপবিষ্ট হওয়ার মাধ্যমে, নিজের অহমিকাবীধ বিদূরিত করা হয়। এবং মুসল্লিদের চাইতে নিজেকে উচ্চস্তরের মর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তি ধারণা করার সংশয় থেকেও মুক্ত হওয়া যায়। সূত্র: ফাতহুল বারী- ৩৩৪/২


তৃতীয় কথা হলো, ফরজ নামাজের পর দুআ কবুল হয়, জমহুরের মতে মুস্তাহাব। দলিল-


হাদিস নং-০১ 

عَنْ كاتب المغيرة رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدْعُو في دبر صلاته

 ইমাম বুখারী রহঃ স্বীয় কিতাব আততারীখুল কাবীরে এনেছেন- হযরত মুগিরা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) নামায শেষে দুআ করতেন। আততারীখুল কাবীর, হাদীস নং-১৭৭২, ৬/৮০


হাদিস নং-০২ 

عن زید بن أرقم سمعت رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم یدعو في دبر کل صلاۃ اللہم بنا ورب کل شيء۰ (رواہ أبو داود : ۱/۲۱۱ الحدیث ۱۵۰۸)

 হযরত যায়েদ বিন আরকাম (রাঃ) বলেন যে, নবী (ﷺ) কে প্রত্যেক নামাযের পর এ দু‘আ করতে শুনতাম, হে আল্লাহ যিনি আমাদের প্রতিপালক এবং প্রত্যেক জিনিসের প্রতিপালক। তাখরিজ: আবু দাউদ-১৫০৮


হাদিস নং-০৩ 

اخرج ابن ابي شيبة في مصنفه عن الاسود العامري عن ابيه قال صليت مع رسول الله صلى الله عليه وسلم الفجر فلما سلم انحرف ورفع يديه دعا.

অর্থাৎ, প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ইবনু আবী শাইবা ( রাহি.) স্বীয় সংকলিত গ্রন্থ "মুসান্নাফ " কিতাবে আসওয়াদ আল আমেরীর পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, 'আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে ফজরের সালাত আদায় করলাম। যখন তিনি সালাম ফেরালেন, তখন তিনি ফিরে বসলেন এবং দুই হাত তুলে দুআ করলেন। তাখরিজ: মুসান্নেফে ইবনে আবি শাইবা -১ম খণ্ড; ৩০২ পৃষ্ঠা


নোট:

 قال العلامة المباركفوري (٢): الحديث رواه ابن أبي شيبة (تحفة الأحوذي شرح الجامع للترمذي)) (١/ ٢٤٦)في مصنفه، فالله تعالى أعلم. أهو صحيح أو ضعيف؟

অর্থাৎ হাদিসটির সনদ সহিহ হতে পারে আবার যয়িফ হতে পারে। সূত্র: তুহফাতুল আহওয়াজি শারহুল জামিউ তিততিরমিজি-১/২৪৬


সারকথা হলো,  যেহেতু মুসল্লিদের দিকে মুখ করে বসা এবং মুনাজাত করা জরুরি নয়। তাই তা পরিত্যাগ করলে গুনাহ হবে না। তবে ফজর ও আসরের পর মুসল্লিদের দিকে মুখ করে বসা পরিত্যাগ করা উচিত নয়, যেহেতু তা সর্বসম্মতিক্রমে সুন্নাত।




  والله اعلم بالصواب