আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-১৯৭: স্ত্রী বেনামাজি হওয়ার কারণে তাকে তালাক দেয়া যাবে কিনা?

No Comments

 


জিজ্ঞেসা-১৯৭: আসসালামু  আলাইকুম। স্ত্রী  যদি বেনামাজি হয়তাহলে স্বামী- স্ত্রীর  সম্পর্ক ঠিক থাকবে কিনা অথবা বেনামাজি  হওয়ার কারণে  তাকে তালাক দেয়া যাবে কিনাবিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।              তারিখ ২৬/০৬/২২     

 হাফেজ মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ফরিদপুর থেকে---


 জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আপনার সহজে বুঝার জন্য কয়েক ভাগে ভাগ করছি।                         

  প্রশ্ন:  ক।  স্ত্রী  যদি বেনামাজি হয়তাহলে স্বামী- স্ত্রীর  সম্পর্ক ঠিক থাকবে কিনা?                         


  উত্তর: ক।  কোন মুমিন কবীরা গুনাহ করলে তার ঈমান থাকে কিনা?  এ মাসয়ালায় খারিজের সাথে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের বিরোধ রয়েছে।  খারিজিদের মতে কবিরা গুনাহ করলেকাফের হয়ে যাবে। আর আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের মতেমুমিন যত বড়ই পাপ করুক না কেন কাফের হয় না। দলিল:

 

وَإِنْ طَائِفَتَانِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ اقْتَتَلُوا فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا فَإِنْ بَغَتْ إِحْدَاهُمَا عَلَى الْأُخْرَى فَقَاتِلُوا الَّتِي تَبْغِي حَتَّى تَفِيءَ إِلَى أَمْرِ اللَّهِ فَإِنْ فَاءَتْ فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا بِالْعَدْلِ وَأَقْسِطُوا إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ  অর্থ: মুমিনের দুই দল দ্বন্দ্বে লিপ্ত হলে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিবে। অতঃপর তাদের একদল অপর দলকে আক্রমণ করলে তোমরা আক্রমণকারী দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেযতক্ষণ না তারা আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। যদি তারা ফিরে আসে তাদের মধ্যে ন্যায়ের সাথে ফয়সালা করবে এবং সুবিচার  করবে। নিশ্চয়ই  আল্লাহ সুবিচারকারীদেরকে ভালবাসেন। সূরা হুজুরাত-০৯

  পরস্পর দ্বন্দ্বরত দুই দলের মাঝে মীমাংসা করে দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন। বলা বাহুল্য যেদ্বন্দ্ব সংঘাত লিপ্ত হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ তাআলা তাদেরকে ঈমানদার আখ্যা দিয়েছেন। তাই এ আয়াতের ওপর ভিত্তি করে আলহে সুন্নাত ওয়াল জামাআত মত পেশ করেছেন যেযত বড় পাপই  করুকতাতে মুমিন বে-ঈমান হয়ে যায় না। পক্ষান্তরে খারিজি ও মুতাজিলাদের একাংশের মতে  কবিরা গুনাহ করলে ঈমান থাকে না।

 হজরত আবু বকর(রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,  একদিন নবি কারিম (ﷺ) হাসান-কে নিয়ে বের হলেন এবং তাঁকেসহ মিম্বারে আরোহণ করলেন। অত্ঃপর বললেনআমার এ ছেলেটি সরদার। নিশ্চয়ই  আল্লাহ তাআলা এর মাধ্যমে বিবাদমান দুদল মুসলমানের মাঝে সমঝোতা মীমাংসা করিয়ে দিবেন। তাখরিজ : বুখারি-৩৬২৯;আবু দাউদ-৪৬৬২;তিরমিজি-৩৭৭৩;নাসায়ি-১৪১০;আহমদ-২০৩৯

 এ হাদিসেও প্রিয় নবি (ﷺ) বিবাদমান দুদলকে মুসলমানরূপে আখ্যা দিয়েছেন। পরস্পর সংঘাতে লিপ্ত হওয়ার পরও মুমিন নামটি মুছে যায়নিবরং তারা সাংবিধানিক অর্থে মুমিন ছিলেন। যদি তারা কাফের হয়ে যেত কক্ষনোও তাদের মুমিন নামে ডাকা হত না। আর তাদের মাঝে সংশোধনের হুকুম করা হত না। অন্য এক হাদিসে  আরও স্পষ্টভাবে এসেছে- আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ)  বলেছেনতিনটি বিষয় ঈমানের বুনিয়াদের অন্তর্ভুক্ত। (১) যে ব্যক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ কালেমা পড়বেতার প্রতি আক্রমণ করা হতে বিরত থাকবেকোন গুনাহর দরুন তাকে কাফের মনে করবে না এবং কোন আমলের দরুন তাকে ইসলাম হতে খারিজ করে দিবে না। (২) জিহাদ- যেদিন হতে আল্লাহ আমাকে জিহাদের হুকুম দিয়েছেন সেদিন হতে এই উম্মতের শেষ যামানার লোকেরা দাজালের সাথে জিহাদ করতে থাকবেকোন অত্যাচারী শাসকের অত্যাচার বা কোন সুবিচারকের সুবিচার জিহাদকে বাতিল করতে পারবে না এবং (৩) তাকদীরে বিশ্বাস করা। তাখরিজ : মিশকাতুল মাছাবিহ-কাবীরা গোনাহ ও মুনাফিকীর নিদর্শন অধ্যায়

সুতরাং প্রমাণিত হল মুমিন যত বড়ই গুনাহ করুক না কেসে কাফের হয় না।(তবে গুনাহ ঈমানকে দুর্বল করে এবং কিছু কিছু গুনাহ কুফরির দিকে ধাবিত করে। প্রত্যেক মুসলিমকে এ বিষয়ে আরও সতর্কতাবলম্বন করা উচিত)

সূত্র: "মহান আল্লাহর নিকট একজন মুমিন-মুসলমানের মর্যাদা-মূল্য" কিতাব থেকে

 

লেখক                                            মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক                        সুতরাং কোন মুসলমান নামাজ ছেড়ে দিলে সে কাফের হয় না,আপনার বর্ণিত ছুরুতে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক কোন বিঘ্ন বা নষ্ট হবে না।

                                                                    

প্রশ্ন:  খ।  বেনামাজি  হয়ার কারণে  তাকে তালাক দেয়া যাবে কিনা?                

     উত্তর: খ।  وَاللَّاتِي تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَاهْجُرُوهُنَّ فِي الْمَضَاجِعِ وَاضْرِبُوهُنَّ فَإِنْ أَطَعْنَكُمْ فَلَا تَبْغُوا عَلَيْهِنَّ سَبِيلًا -----إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيًّا كَبِيرًا

 

অর্থাৎ যাদের মধ্যে অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তাদের সদুপদেশ দাওতাদের শয্যা ত্যাগ কর এবং প্রহার কর। যদি তাতে তারা বাধ্য হয়ে যায়তবে আর তাদের জন্য অন্য কোন পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সবার উপর শ্রেষ্ঠ।

 

যদি তাদের মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ হওয়ার মত পরিস্থিতিরই আশঙ্কা করতবে স্বামীর পরিবার থেকে একজন এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন সালিস নিযুক্ত করবে। তারা উভয়ের মীমাংসা চাইলে আল্লাহ সর্বজ্ঞসবকিছু অবহিত। সূরা নিসা-৩৪,৩৫।        


 উপরোক্ত আয়াত গুলোর আমল করার পর কাজ না হলেচূড়ান্ত বিচ্ছেদ তালাক‌ দেয়া যাবে।  উল্লেখ্য যে উপরোক্ত আয়াতের উপর আমল না করে শুরুতেই তালাক দেওয়া যাবে না।


والله اعلم بالصواب