আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-১২৯৯৬: নিজের পালিত পশু কোরবানির নিয়ত করলে, কুরবানি ওয়াজিব কি?

No Comments

 


জিজ্ঞাসা-১২৯৯৬: 

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। একজন লোকের একটি গাভী ছিল । সে নিয়ত করল যে সে গাভীটি দু/তিনটা বাচ্চা হবার পর গরুটিকে আল্লার ওয়াস্তে কুরবানী করবে। কিন্তু হঠাৎ গরুটির প্রচুর অসুখ হল ফলে গরুটিকে ঐ লোক 15000 টাকা বিক্রি করতে বাধ্য হয়,উল্লেখ্য গরুটি আজ থেকে কমপক্ষে 10 বছর আগে বিক্রি করা হয়। ঐ যেলোক তার নিয়ত পূরণ করতে গতকাল 34 হাজার টাকা দিয়ে একটা গরু কিনেছে। এখন প্রশ্ন হল ঐ লোককে কি মানত হিসেবে পুরো গরু ফকির মিসকিনদের মাঝে বিলিয়ে দিতে হবে? নাকি নরমাল কুরবানী করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে খেতে পারবে? নাকি বতমান গরুটি বিক্রি করে 10 দশ বছর আগে বিক্রি কৃত গরুর মূল্য 1500 0হাজার টাকা মানত হিসেবে হকদারদের মাঝে দান করলে। 

তারিখ: ১৯/০৫/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 মাওলানা  শাকুর হাসান খুলনা থেকে।


 জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, সাধারণ কুরবানি আর মান্নতের কুরবানির হুকুম এক নয়। মান্নতের কুরবানী আর সাধারণ কুরবানীর মধ্যে পার্থক্য সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে ইমাম রযিউদ্দীন সারাখসী রাহ. (৫৭১ হি.)-এর নিম্নোক্ত বক্তব্য থেকে। তিনি বলেন-

لأن الشراء موضوع لاستجلاب الملك، والنذر بالأضحية موضوع للإزالة، فكان بينهما مضادة.

(সাধারণ কুরবানীর নিয়তে) পশু ক্রয় হয়ে থাকে মূলত মালিকানা লাভের উদ্দেশ্যে। পক্ষান্তরে কুরবানীর মান্নতের মূলেই রয়েছে মালিকানা রহিতকরণ। তাই এ দুয়ের মাঝে বৈপরীত্য বিদ্যমান।১ -আলমুহীতুর রাযাবী ২/ ১২৫ (মাখতূত, ফয়যুল্লাহ আফিন্দী, ইস্তান্বুল)


দ্বিতীয় কথা হলো,

পোষা গরু কোরবানির নিয়ত করলেই এর মাধ্যমে কোরবানি করা আবশ্যক হয়ে যায় না। উদাহরণ: কোনও কারণে কোরবানির আগে কোরবানিদাতা ঋণগ্রস্ত হয়ে গেলে সেই পোষা প্রাণী বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করতে পারবে।


তবে যদি ঋণ পরিশোধের পর আবার কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার মতো সম্পদ হাতে আসে অথবা সেই ব্যক্তির ওপর আগে থেকেই কোরবানি ওয়াজিব হয়ে থাকে, তাহলে অন্য আরেকটি পশু দিয়ে কোরবানি আদায় করতে হবে। আর যদি এই পরিমাণ সম্পদ না হয় বা কোরবানি আর ওয়াজিব না হয়, তাহলে তাকে কোরবানি দিতে হবে না।


এক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় হলো- কেউ যদি পোষা প্রাণীর মাধ্যমে কোরবানি করার মান্নত করে থাকে, তাহলে তা দিয়েই কোরবানি করতে হবে।  একে বিক্রি করতে পারবে না।  যদি কোন কারণে বিক্রি করে, তাহলে সমপরিমাণ/তার চেয়ে বেশি টাকা দিয়ে আরেকটি পশু ক্রয় করতে হবে। টাকা উদ্ধৃত থাকলে সদকা করে দিতে হবে। দলিল- 

ولو كان فى ملك انسان شاة فنوى أن يضحى بها أو اشترى شاة ولم ينو الأضحية وقت الشراء ثم نوى بعد ذلك أن يضحى بها لا يجب عليه سواء كان غنيا أو فقيرا لأن النية لم تقارن الشراء فلا تعتبر (بدائع الصنائع، كتاب الأضحية-4/193، هندية-5/291، جديد-5/336)

অর্থাৎ, কোন ব্যক্তির স্বত্তাধিকারে যদি একটি ছাগল থাকে, আর সে সেই ছাগল দিয়েই কুরবানি আদায় করার ইচ্ছা পোষণ করে, অথবা ছাগল ক্রয় করার সময় নিয়ত ছিল না, কিন্তু পরবর্তীতে সেই ছাগল দিয়ে কুরবানি করার নিয়ত করে,তাহলে সে ধনী হোক কিংবা গরিব কোন অবস্থাতেই সেটি দিয়েই কুরবানি করা তার জন্য আবশ্যক হয়ে পড়বে না। কারণ ক্রয় করার সময় তার নিয়ত যুক্ত হয়নি। সুতরাং তার এই ক্রয়পরবর্তী নিয়ত গ্রহণযোগ্য নয়। ( বাদায়েউস সানায়ে, কুরবানির অধ্যায়-৪/১৯৩, হিন্দিয়্যাহ-৫/২৯১, জাদীদ- ৫/৩৩৬)


ইমাম জাসসাস রাহ. বলেন-

وقوله وَ لْیُوْفُوْا نُذُوْرَهُمْ قال ابن عباس: نحر ما نذروا من البدن، وقال مجاهد: كل ما نذر في الحج قال أبو بكر: إن كان التأويل نحر البدن المنذورة، فإن قوله تعالى (عَلٰی مَا رَزَقَهُمْ مِّنْۢ بَهِیْمَةِ الْاَنْعَامِ فَكُلُوْا مِنْهَا ) لم يرد به ما نذر نحره من البدن والهدايا... وقد أمر الله تعالى بالأكل من بهيمة الأنعام المذكور في الآية، فدل على أنه لم يرد النذر واستأنف ذكر النذر وأفاد به معاني أحدها أنه لا يؤكل منه.

প্রথম আয়াতে যে গোশত খেতে নির্দেশ করা হয়েছে- এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল, ঐ কুরবানী, যা মান্নতের নয়। বরং তা মান্নতমুক্ত সাধারণ কুরবানী- দমে তামাত্তু, দমে কিরান ও হজে¦র নফল কুরবানী। আর وَلْیُوْفُوْا نُذُوْرَهُمْ দ্বারা উদ্দেশ্য মান্নতের পশু এবং মান্নতের সকল কুরবানী। সুতরাং আগের আয়াতে খেতে নির্দেশ করার পর পরের আয়াতে মান্নতের কথা পৃথকভাবে ব্যক্ত করা- এ কথা প্রমাণ করে যে, মান্নতকারীর জন্য মান্নতের কুরবানীর গোশত খাওয়া জায়েয নয়। -আহকামুল কুরআন জাসসাস ৩/২৩৮


সারকথা হলো,  আপনার বর্ণনা অনুযায়ী বুঝা যায় লোকটি সাধারণ কুরবানির নিয়ত করেছে, তাই বর্তমানে যে পশুটি ক্রয় করেছে, তাই কুরবানি করে সবাই খেতে পারবে। মান্নতের মত গরিব-মিসকিনদের মধ্যে বিলিয়ে দিতে হবে না।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

فَكُلُوْا مِنْهَا وَ اَطْعِمُوا الْبَآىِٕسَ الْفَقِیْرَ.

আল্লাহর নামে জবাইকৃত পশুর গোশত নিজে খাও, দুঃস্থ-গরীবদের খাওয়াও। -সূরা হজ্জ (২২) : ২৮


এ আয়াতে কুরবানীর গোশত খেতে নির্দেশ করা হয়েছে।


ইমাম জাসসাস রাহ. বলেন-

وهذه الآية قد انتظمت سائر الهدايا والأضاحي وهي مقتضية لإباحة الأكل منها والندب إلى الصدقة ببعضها.

উক্ত আয়াতটি হজ্জের কুরবানী এবং ঈদুল আযহার কুরবানীর সর্বপ্রকারকে অন্তর্ভুক্ত করে। আর তা থেকে খাওয়ার অনুমোদন করে এবং কিছু সদকা করা উত্তম সাব্যস্ত করে। -আহকামুল কুরআন, জাসসাস ৩/২৩৭



  والله اعلم بالصواب