জিজ্ঞাসা-১২৩৬৫:
আসসালামু আলাইকুম। মুহতারাম,
খেলাধুলা সম্পর্কে শরিয়ি সীমা রেখা কী? কুরআন হাদিসের আলোকে জানালে উপকৃত হতাম। জাযাকাল্লাহু খইর। তারিখ: ০৪/১২/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মোজাম্মেল হোসেন কুমিল্লা থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, একজন মুমিনের জীবন খেল-তামাশার জন্য নয়। জীবন ও মৃত্যুর মাঝখানে সময় নামক পুঁজি দিয়ে রব্বুলামীন আমাদেরকে পাঠিয়েন, আমল করার জীবন। যেমন, ইরশাদ হচ্ছে-
Surah Al-Mulk, Verse 2:
الَّذِي خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا وَهُوَ الْعَزِيزُ الْغَفُورُ
অর্থ: যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন, যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন-কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাময়। সূরা মুলক-০২
বান্দার দুনিয়াবি কিংবা আখেরাতের ক্ষতি এরকম কাজের অনুমতি ইসলাম দেননি। তাই ঢালাওভাবে খেলাধুলা বা বিনোদনের অনুমতি ইসলাম নেই। আবার সর্ব প্রকারের খেলাধুলা বা বিনোদনকে নিষিদ্ধও করেনি। খেলাধুলা বা বিনোদন সম্পর্কে ইসলামে দৃষ্টিভঙ্গি আমরা অনেকেই জানি না, আবার অনেকে জানলেও পুরোপুরি মানিনা।
দ্বিতীয় কথা হলো, হজরতে ওলামায়ে কেরাম সর্বপ্রকার খেলাধুলাকে ৫ ভাগে ভাগ করেছেন। তবে ইসলামের দৃষ্টিতে প্রত্যেক প্রকারের বিধান ভিন্ন। নিম্নে তা সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা করা হবে ইনশাল্লাহ। ونسأل الله التوفيق وهو الموفق والمعين
এক: হারাম মৌলিকভাবে। এমন কিছু খেলাধুলা রয়েছে, যে খেলাগুলো মৌলিকভাবেই হারাম। যেমন জুয়া, তাস-পাশা, ষাড়ের লড়াই, মোরগের লড়াই, রেসলিং। কারণ এই খেলাগুলোতে বিনোদনের নামে প্রাণীকে কষ্ট দেওয়া হয়। এক পক্ষের সম্পদ নষ্ট হয়। যা বৈধ হতে পারে না। এমন খেলার আয়োজন করা, খেলা, দেখা, সবই নিষেধ। দলিল:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
অর্থ: হে মুমিনগণ, এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ তো নয়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাক-যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও। সূরা মায়েদা-৯০
দুই: নীতিগত কারণে হারাম। এমন কিছু খেলাধুলা রয়েছে, যেগুলো মৌলিকভাবে হারাম ছিল না কিন্তু খেলার মধ্যে এমন কিছু নিয়ম-নীতি রয়েছে যেগুলো হারাম। নিম্নোক্ত নীতিগত শর্তাবলী উপস্থিত না থাকার কারণে খেলাধুলাগুলো হারাম।
(১) ধর্মীয় জরুরি কর্তব্য পালন থেকে উদাসীন হওয়া:
কোনো খেলা বৈধ হতে হলে তার মধ্যে এ বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে যে তার নেশার ঘোর যেন মহান আল্লাহর কোনো ফরজ বিধান পালনের কথা দিব্যি ভুলিয়ে না দেয়। খেলার ছলে যেন ফরজ ছুটে না যায়। যেমন কোনো ফরজ নামাজের সময় খেলাধুলা করা।:
وَمِنَ النَّاسِ مَن يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَن سَبِيلِ اللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًا أُولَئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُّهِينٌ
অর্থ: ‘মানুষের মধ্যে এক শ্রেণির মানুষ এমন আছে, যারা খেলাধুলা-কৌতুকাবহ কথা ক্রয় করে মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে ভ্রষ্ট করার জন্য। আর এটা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে। এদের জন্য রয়েছে অবনামনাকর শাস্তি।’ সূরা লোকমান-৬
তাফসির/ব্যাখ্যা: (০১) আলোচ্য আয়াতটি খেলাধুলা ও অনর্থক কাজের নিন্দায় সুস্পষ্ট ও প্রকাশ্য। রুহুল মাআনি- ৫৬৪৪ পৃ.
(০২) বিংশ শতাব্দির প্রখ্যাত মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ শফী (র.) তার ‘আহকামুল ককোরআনে’ বর্ণিত আয়াতের হুকুম প্রসঙ্গে বলেন, পবিত্র কোরআনের এ আয়াতে ঐসকল কথা, কাজ, বস্তু ও বিষয়কে হারাম করা হয়েছে, যা মানুষকে আল্লাহ তায়ালার এবাদত ও তাঁর স্মরণ থেকে গাফিল করে দেয়। তা গান-বাজনা হোক বা খেলাধুলা কিংবা ক্রিড়া-কৌতুক-সবই এর অন্তর্ভুক্ত। তাফসিরে মাআরেফুল কুরআন-১০৫২ (সংক্ষিপ্ত) মাওলানা মুহিউদ্দন খান অনূদিত
(০৩) এ আয়াত দ্বারা কেউ ব্যাখ্যা করেছেন যে, অতিরিক্ত খেলাধুলাও মানুষকে আল্লাহর পথ বা বিধান পালন থেকে বিরত রাখে।
(২) শরিয়তের মহৎ লক্ষ্যের প্রতি খেয়াল না রাখা:
মহান আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসীমাত্রেই জানেন, পৃথিবীতে আমাদের আগমন অহেতুক নয়। পৃথিবীতে আমাদের জীবন লক্ষ্যহীন নয়। যেমন,
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ
অর্থ: ‘আমার এবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি।’ সূরা: আয-যারিয়াত-৫৬
অতএব খেলার লক্ষ্য যেন উদ্দেশ্যহীন খেলায়ই সীমাবদ্ধ না থাকে।
(৩) সতর আবৃত না থাকা এবং যৌন সুড়সুড়িদায়ক হওয়া:
যেমন ফুটবল। যে খেলাটি আসলে হারাম ছিল না, কিন্তু খেলার একটি নীতি সেটাকে হারাম করে দিয়েছে। সেটা হল এই খেলা হয় হাফপ্যান্ট পরে। আর প্রত্যেক পুরুষের জন্য নাভী থেকে হাটু পর্যন্ত অন্য পুরুষকে দেখানো হারাম। অন্যের জন্য দেখাও হারাম। খেলায় হাটুর উপরাংশ খোলা থাকায় এই খেলাটি হারাম। তাই এই খেলার আয়োজন করা, খেলা, দেখা, সবই নিষেধ। দলিল:
لاَ تَكْشِفْ فَخِذَكَ وَلاَ تَنْظُرْ إِلَى فَخِذِ حَىٍّ وَلاَ مَيِّتٍ.
আলী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ‘তুমি নিজের উরু উন্মুক্ত করো না এবং কোনো জীবিত বা মৃত ব্যক্তির উরুর দিকে দৃষ্টি দিও না।’ তাখরিজ: আবু দাউদ : ৪০১৭
আর যদি নাভী থেকে হাটু পর্যন্ত ঢেকে খেলা যায়, তাহলে নীতিগতভাবে হারাম হবে না।
স্যাটেলাইন চ্যানেলগুলো জনপ্রিয় খেলা সম্প্রচার করে কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ আয় করছে। যে আয়ের ভাগ গিয়ে পড়ছে ওই খেলার আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা, সংশ্লিষ্ট দেশের বোর্ড এবং প্রতিটি খেলোয়াড় পর্যায়ে। আর টিভি চ্যানেলগুলোর প্রধান উৎস অবশ্যই বিজ্ঞাপন। বল্গাহীন পুঁজিবাদী ও নৈতাকতাহীন অর্থলোভীরা তাদের সব ধরনের বিজ্ঞাপন হজম করাচ্ছে সব জাতি ও দেশকে। অথচ এসব বিজ্ঞাপনের অধিকাংশই বহু দেশ ও জাতি বিশেষত মুসলিম রাষ্ট্র ও উম্মাহর চেতনা ও সংস্কৃতির সঙ্গে মানানসই নয়। কেউ টিভিতে খেলা দেখবেন অথচ অশ্লীল বিজ্ঞাপন তার চোখে পড়বে না, এটা এখন আর সম্ভব নয়। তাই এসব দেখা ও এর মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ কোনোটাই যে অবৈধতামুক্ত নয়, তা বলাবাহুল্য।
খেলা দেখায় বিজ্ঞাপন মতো আরেক সমস্যা প্রমিলা দর্শক। স্টেডিয়ামে নারীদের উপস্থিতি এখন অপরিহার্য।
﴿ وَقَرۡنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجۡنَ تَبَرُّجَ ٱلۡجَٰهِلِيَّةِ ٱلۡأُولَىٰۖ وَأَقِمۡنَ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتِينَ ٱلزَّكَوٰةَ وَأَطِعۡنَ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥٓۚ إِنَّمَا يُرِيدُ ٱللَّهُ لِيُذۡهِبَ عَنكُمُ ٱلرِّجۡسَ أَهۡلَ ٱلۡبَيۡتِ وَيُطَهِّرَكُمۡ تَطۡهِيرٗا ٣٣ ﴾ [الاحزاب: ٣٣]
‘আর তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং প্রাক-জাহেলী যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না। ----তোমরা মূর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না।’ সূরা আল-আহযাব- ৩৩
যাদের অধিকাংশের বেশভূষাই শুধু ইসলামের দৃষ্টিতে নয়, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর স্থানীয় সংস্কৃতির দৃষ্টিকোণেও সমর্থনযোগ্য নয়। মিডিয়া ও পুঁজিবাদীরা নিজেদের স্বার্থে বরাবরই এদের পালে হাওয়া দিয়ে আসছে। অমুসলিম দেশগুলোয় স্টেডিয়ামে মেয়েদের খোলামেলা উপস্থিতি দেখে অতি দ্রুত মুসলিম মেয়েরা তাদের অনুসরণ করছে। আপনি খেলা দেখতে চাইলে বিজ্ঞাপনের মতো এদেরও না দেখে উপায় নেই। এবার আপনিই সিদ্ধান্ত নিন কিভাবে খেলা দেখবেন।
(৪) জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া:
খেলাটি এমন হতে হবে যাতে জীবন নাশের নিশ্চিত বা প্রবল সম্ভাবনা ন থাকে। কেননা নিজের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলা বা ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়ার অনুমতি ইসলামে নেই। দলিল:
وَأَنفِقُواْ فِي سَبِيلِ اللّهِ وَلاَ تُلْقُواْ بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ وَأَحْسِنُوَاْ إِنَّ اللّهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ
অর্থ: আর ব্যয় কর আল্লাহর পথে, তবে নিজের জীবনকে ধ্বংসের সম্মুখীন করো না। আর মানুষের প্রতি অনুগ্রহ কর। আল্লাহ অনুগ্রহকারীদেরকে ভালবাসেন। সূরা: আল-বাকারা-১৯৫
لاَ ضَرَرَ وَلاَ ضِرَارَ
আমর ইবন ইয়াহইয়া মাযেনী থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন ‘ইসলামে কারও ক্ষতি করা নেই, ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াও নেই।’ তাখরিজ: মুয়াত্তা মালেক-২৭৫৬; দারা কুতনী-৪৫৯
২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর ৪৫ বছর বয়সী মাইকেল শুমাখার ফ্রেঞ্চ আল্পসে স্কি দুর্ঘটনার শিকার হন। দীর্ষ ১৮ দিন তিনি কোমায় রয়েছেন। দুর্ঘটনার সময় তিনি স্কি হেলমেট পড়েছিলেন কিন্তু তাঁর মাথা একটি শিলার সঙ্গে আঘাতপ্রাপ্ত হয় এবং তাঁর হেলমেট ভেঙ্গে দুই খণ্ড হয়ে যায়। জার্মানির কিংবদন্তী এ ফর্মুলা ওয়ান চ্যাম্পিয়নকে বাকি জীবনটা কোমায় কাটাতে হতে পারে। টিম ম্যানেজমেন্ট ও পরিবারের নীরবতা থেকে এমন অনুমান করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ডেইলি মেইল। সূত্র : ডেইলি মেইল অন লাইন/স্কাই স্পোর্টস
(৫) প্রতিযোগিতার জয়-পরাজয়ে শত্রুতা-মিত্রতা সৃষ্টি না হওয়া:
খেলাধুলাকে শত্রুতা-মিত্রতার মাপকাঠি বানালে সে খেলাটি তার স্বাভাবিক বৈধতা হারায়। ভালো খেলার কারণে অতিভক্তি বা খারাপ খেলার কারণে অতিভক্তি কোনোটাই ইসলামে কাম্য নয়। ফুটবলে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার সমর্থক কিংবা ক্রিকেটে ভারত-পাকিস্তানের সমর্থকদের মধ্যে নিজেদের সমর্থিত দল নিয়ে মারামারি, হানাহানি ও শত্রুতা তৈরির ঘটনা পত্র-পত্রিকা প্রায়ই চোখে পড়ে। মানুষকে শয়তানের এসব দুরভিসন্ধিমূলক ঘটনার হাত থেকে বাঁচাতে তাই মহান আল্লাহ তায়ালা পরিষ্কার ঘোষণা করেছেন,
إِنَّمَا يُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَن يُوقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاء فِي الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَن ذِكْرِ اللّهِ وَعَنِ الصَّلاَةِ فَهَلْ أَنتُم مُّنتَهُونَ
অর্থ:‘নিশ্চয় শয়তান শুধু মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চার করতে চায়। আর (চায়) আল্লাহর স্মরণ ও নামাজ থেকে তোমাদের বাধা দিতে। অতএব, তোমরা কি বিরত হবে না?’ সূরা মায়েদা-৯১
ভালাবাসা-শত্রুতা তো ইকমাত্র আল্লাহর জন্যই। যেমন,
مَنْ أَحَبَّ لِلَّهِ وَأَبْغَضَ لِلَّهِ وَأَعْطَى لِلَّهِ وَمَنَعَ لِلَّهِ فَقَدِ اسْتَكْمَلَ الإِيمَانَ.
আবূ উমামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ‘যে কেউ আল্লাহর জন্যই ভালোবাসে এবং আল্লাহর জন্যই ঘৃণা করে এবং (কাউকে কিছু) দিয়ে থাকে আল্লাহর জন্যই এবং (কাউকে কিছু) দেয়া থেকে বিরত থাকেও আল্লাহরই জন্য; তাহলে তার ঈমান পরিপূর্ণ হলো।’ তাখরিজ: আবু দাউদ-৪৬৮১
তিন: সংযুক্ত হারাম। مباريات كرة القدم التي على مال أو نحوه من جوائز حرام ; لكون ذلك قمارا ; لأنه لا يجوز أخذ السَّبَق وهو العوض إلا فيما أذن فيه الشرع، وهو المسابقة على الخيل والإبل والرماية، وعلى هذا فحضور المباريات حرام، ومشاهدتها كذلك، لمن علم أنها على عوض ؛ لأن في حضوره لها إقرارا لها
অর্থাৎ খেলাধুলা/ ফুটবল ম্যাচ' যেগুলো টাকা অথবা এমন পুরষ্কারের জন্য খেলা হয় – কারণ নাজায়েজ, এটা হচ্ছে জুয়া। টাকার প্রবেশে স্বাস্থ্য/ক্রিকেট খেলা জুয়ার অন্তর্ভুক্ত। সূত্র: ফতওয়া আল-লাজনাহ আদ-দাইয়িমাহ-১৫/২৩৮। সৌদি স্থায়ী ফতওয়া ফতওয়া নম্বর: ১৮৯৫১
এমন খেলা যেগুলো মৌলিকভাবে হারাম ছিল না, হারাম শর্ত সংযুক্ত করণে হারাম হয়েছে। যেমন; বাজি। যেকোন খেলায় যদি বাজি ধরা হয়, তাহলে সেটা হারাম হয়ে যাবে। বাজির খেলার আয়োজন করা, খেলা, দেখা, সবই নিষেধ। বাজির টাকা লেন-দেনও নিষেধ।
আয়াত নং-০১
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ كُلُواْ مِمَّا فِي ٱلۡأَرۡضِ حَلَٰلٗا طَيِّبٗا وَلَا تَتَّبِعُواْ خُطُوَٰتِ ٱلشَّيۡطَٰنِۚ إِنَّهُۥ لَكُمۡ عَدُوّٞ مُّبِينٌ ١٦٨ ﴾ [البقرة: ١٦٨]
‘হে মানুষ, জমিনে যা রয়েছে, তা থেকে হালাল পবিত্র বস্তু আহার কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের জন্য সুস্পষ্ট শত্রু।’ সূরা বাকারা-১৬৮
আয়াত নং-০২
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالأَنصَابُ وَالأَزْلاَمُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
অর্থ: ‘হে মুমিনগণ, নিশ্চয় মদ, জুয়া, প্রতিমা-বেদী ও ভাগ্যনির্ধারক তীরসমূহ তো নাপাক শয়তানের কর্ম। সুতরাং তোমরা তা পরিহার কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। সূরা মায়েদা ৯০
হাদিস নং-০১
مَنْ لَعِبَ بِالنَّرْدِ شِيْرٍ فَكَأَنَّمَا صَبَغَ يَدَهُ فِيْ لَحْمِ خِنْزِيْرٍ وَدَمِهِ
অর্থঃ “যে ব্যক্তি দাবা খেলল সে যেন শুকরের রক্ত-মাংসে নিজের হাত রঞ্জিত করল”। মুসলিম-১৭৭০
হাদিস নং-০২
مَنْ لَعِبَ بِالنَّرْدِ فَقَدْ عَصَى اللهَ وَ رَسُوْلَهُ
অর্থঃ “যে ব্যক্তি দাবা খেলে সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিধানকে অমান্য করল”
তাখরিজ: আহমাদ ৪/৩৯৪, ছহীহুল জামে-৬৫০৫
চার: শর্তসাপেক্ষে হালাল। যেসব খেলাধুলা উপরোল্লিখিত ৩ পর্যায়ের নয়, সেসব খেলাধুলা কিছু শর্তে হালাল হবে। শর্তের মধ্যে রয়েছে- খেলায় ব্যক্তি, সমাজ বা রাষ্ট্রের ক্ষতিকারক কিছু থাকতে পারবে না। খেলাটি খেলোয়াড় বা দর্শকদের ইসলামের আবশ্যকীয় বিধান পালনে প্রতিবন্ধক হবে না, যেমন নামাজ, রোজা ইত্যাদি। যদি খেলা বা দেখার কারণে নামাজ, রোজা ইত্যাদি আদায় করা যায় না, তাহলে সে খেলা হালাল হবে না।
পাঁচ : সুন্নত। অবাক হলেও কিছু খেলা আছে সুন্নত। যেমন তীর নিক্ষেপ, পর্দ্দা রক্ষা করে স্ত্রীর সাথে দৌড় প্রতিযোগিতা। এখানে দুটি পর্যায়ের খেলা রয়েছে।
এক. তীর নিক্ষেপ। রাসুল সা. এর যুগে তীর ছিল অন্যতম যুদ্ধাস্ত্র। যুদ্ধের ট্রেনিং স্বরূপ সাহাবায়ে কেরাম রা. এর মধ্যে তীর নিক্ষেপ খেলা হয়েছে। তাই যুদ্ধের ট্রেনিং সংক্রান্ত খেলা বা প্রতিযোগিতা সুন্নতি খেলার তালিকায় গণ্য হবে। অতএব সৈনিকদের জন্য যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা সুন্নত।
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,
لاَ سَبَقَ إِلاَّ فِى نَصْلٍ أَوْ حَافِرٍ أَوْ خُفٍّ
‘প্রতিযোগিতা বৈধ কেবল তীরন্দাজিতে, উট ও ঘোড় দৌড়ে। তাখরিজ: তিরমিযী-১৭০০; নাসাঈ-৩৬০০
দুই. শরীয়তের বিধান মেনে স্ত্রীর সাথে বিনোদনমূলক খেলাধুলা সুন্নত। রাসুল (ﷺ)
আম্মাজান আয়েশা রা. এর দৌড় খেলায় অংশ নিয়েছেন।
সারকথা হলো, এসব শর্তে খেলাধুলার বৈধতা দেওয়া হলেও বর্তমানে প্রচলিত খেলাধুলায় ইসলামি মূল্যবোধের প্রতিফলন প্রায়ই পরিলক্ষিত হয় না। এসব খেলার মধ্যে জীবনের ঝুঁকি, নামাজেরর প্রতি অবহেলা, অন্য ধর্মের অনুসরণ, সময় ও অর্থের অপচয়, জুয়া-বাজিধরা, রঙখেলা, গ্যালারিতে উদ্দাম নৃত্য-গান, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, উল্কী আঁকা ইত্যাদির বাহুল্য থাকে। তাই এসব খেলাধুলা সম্পূর্ণ নাজায়েজ ও হারাম।
لأصل في مثل هذه الألعاب الرياضية الجواز إذا كانت هادفة وبريئة ، كما أشار إلى ذلك ابن القيم في كتاب " الفروسية " وذكره الشيخ تقي الدين ابن تيمية وغيره ، وإن كان فيها تدريب على الجهاد والكر والفر وتنشيط للأبدان وقلع للأمراض المزمنة وتقوية للروح المعنوية : فهذا يدخل في المستحبات إذا صلحت نية فاعله ، ويشترط للجميع أن لا يضر بالأبدان ولا بالأنفس ، وأن لا يترتب عليه شيء من الشحناء والعداوة التي تقع بين المتلاعبين غالباً ، وأن لا يشغل عما هو أهم منه ، وأن لا يصد عن ذكر الله وعن الصلاة " انتهى .
" فتاوى ابن إبراهيم " ( 8 / 118 ) .
এই ধরনের খেলাধুলার ব্যাপারে মৌলিক নীতি হল যে এটি যদি উদ্দেশ্যমূলক এবং নির্দোষ হয়, যেমনটি ইবনুল কাইয়্যিম "ফুরুসিয়া" গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন এবং শেখ তাকি আল-দীন ইবনে তাইমিয়া এবং অন্যান্যদের দ্বারা উল্লেখ করা হয়েছে। এটি সুপারিশ করা হয় যদি যে এটি করে তার উদ্দেশ্য ভাল, এবং এটি প্রত্যেকের জন্য নির্ধারিত হয় যে এটি দেহ বা আত্মার ক্ষতি করে না এবং এটি হেরফেরকারীদের মধ্যে প্রায়শই উদ্ভূত বিরক্তি এবং শত্রুতার কারণ হয় না এবং এটি করে এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থেকে বিক্ষিপ্ত হবেন না এবং এটি কাউকে আল্লাহকে স্মরণ করা এবং প্রার্থনা করতে বাধা দেয় না। সূত্র: ফাতাওয়া ইবনে ইব্রাহীম ৮ খণ্ড; ১১৮পৃ.
শেষকথা, যেসব খেলা মৌলিকভাবে হারাম, খেলার রীতি-নীতি হারাম, খেলায় সংযুক্ত বিষয় হারাম সেসব খেলার আয়োজন, খেলা, দেখা, সহযোগিতা করা, সাপোর্ট করা সবই হারাম। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সহিহ বুঝ দান করে এবং আমল করার তাওফীক দান করুন।
বিস্তারিত জানতে পড়ুন, "খেলাধুলা ও বিনোদনে শরয়ী সীমারেখা"- আল্লামা মুফতি তাকি ওসমানী দা.বা.
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক