জিজ্ঞাসা-১৩০১০:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। মুহতারাম মুফতি সাহেব আমার জানার বিষয় হলো রুকাইয়া/তাবিজ এই বিষয়ে কুরআন/হাদীসের দলীল কি? বিষয় টি জানালে উপকৃত হবো। যাজাকাল্লাহু খাইর।
তারিখ: ৩০/০৫/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মোঃ নেছার উদ্দিন শেরপুর থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, এ বিষয়ে দুটি মতামত রয়েছে। যেমন,
প্রথম মত: ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. একটি মত ও আহলে হাদিসের মতে, সর্ব প্রকার তাবিজ হারাম, অনেকে শিরক বলে। দলিল-
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْعَلاَءِ، حَدَّثَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ، حَدَّثَنَا الأَعْمَشُ، عَنْ عَمْرِو بْنِ مُرَّةَ، عَنْ يَحْيَى بْنِ الْجَزَّارِ، عَنِ ابْنِ أَخِي، زَيْنَبَ امْرَأَةِ عَبْدِ اللَّهِ عَنْ زَيْنَبَ، امْرَأَةِ عَبْدِ اللَّهِ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " إِنَّ الرُّقَى وَالتَّمَائِمَ وَالتِّوَلَةَ شِرْكٌ " . قَالَتْ قُلْتُ لِمَ تَقُولُ هَذَا وَاللَّهِ لَقَدْ كَانَتْ عَيْنِي تَقْذِفُ وَكُنْتُ أَخْتَلِفُ إِلَى فُلاَنٍ الْيَهُودِيِّ يَرْقِينِي فَإِذَا رَقَانِي سَكَنَتْ . فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ إِنَّمَا ذَاكِ عَمَلُ الشَّيْطَانِ كَانَ يَنْخَسُهَا بِيَدِهِ فَإِذَا رَقَاهَا كَفَّ عَنْهَا إِنَّمَا كَانَ يَكْفِيكِ أَنْ تَقُولِي كَمَا كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " أَذْهِبِ الْبَاسَ رَبَّ النَّاسِ اشْفِ أَنْتَ الشَّافِي لاَ شِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ سَقَمًا " .
৩৮৪৩. মুহাম্মাদ ইবনে আলা (রাহঃ) .... আব্দুল্লাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লহ (ﷺ)কে বলতে শুনেছিঃ মন্ত্র, তাবিজ ও তাওলা* করা শিরক। একথা শুনে যয়নাব (রাযিঃ) বলেনঃ তুমি এ কি বলছ, আল্লাহর শপথ! আমার চোখে ব্যথা হলে আমি একজন ইয়াহুদীর কাছে যেতাম, যে মন্ত্র পাঠের পর আমার চোখে ফুঁ দিলে ব্যথার উপশম হতো।
তখন আব্দুল্লাহ (রাযিঃ) বলেনঃ এতো শয়তানের অপকর্ম ছিল, যে তার হাত দিয়ে চোখে ব্যথা দিত। আর যখন ঐ ইয়াহুদী তাতে ফুঁ দিত, তখন সে বিরত থাকতো। তোমার জন্য তা-ই পাঠ করা উচিত ছিল, যা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) পাঠ করতেন। আর তা হলোঃ হে মানব জাতির রব! যন্ত্রণা দূর করে দিন, আরোগ্য দান করুন, আপনিই আরোগ্যদাতা, আপনার দেয়া নিরাময়ই যথার্থ নিরাময়, যার পরে আর কোন রোগ বাকী থাকে না।
* তাওলা এক প্রকার যাদু, যা দিয়ে বেগানা স্ত্রী-পুরুষের মধ্যে অবৈধ প্রেম সৃষ্টি করা হয়। নিঃসন্দেহে এটি হারাম কাজ।
Narrated Abdullah ibn Mas’ud:
Zaynab, the wife of Abdullah ibn Mas’ud, told that Abdullah said: I heard the Messenger of Allah (ﷺ) saying: spells, charms and love-potions are polytheism.
I asked: Why do you say this? I swear by Allah, when my eye was discharging I used to go to so-and-so, the Jew, who applied a spell to me. When he applied the spell to me, it calmed down. Abdullah said:
That was just the work of the Devil who was picking it with his hand, and when he uttered the spell on it, he desisted. All you need to do is to say as the Messenger of Allah (ﷺ) used to say: Remove the harm, O Lord of men, and heal. Thou art the Healer. There is no remedy but Thine which leaves no disease behind.
—সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৮৪৩ (আন্তর্জাতিক নং ৩৮৮৩)
দ্বিতীয় মত:
ذهب الحنفية، والمالكية، والشافعية، وأحمد في رواية إلى جواز ذلك، وهو ظاهر ما روي عن عائشة، وهو قول عبد الله بن عمرو بن العاص، وحملوا حديث: إن الرقى، والتمائم، والتولة شرك. على التمائم التي فيها شرك.
হানাফি, মালিকি, শাফেয়ি এবং ইমাম আহমদ রহ এর একটি মতে তাবিজ ব্যবহার করা জায়েয।
যে তাবিজে শিরক, শরিয়ত বিরোধী কথা নেই। অর্থাৎ এমন তাবিজ যাতে আল্লাহর নাম, কোরআনের আয়াত, দোয়ায়ে মাসূরা থাকে, তাহলে জায়েজ। দলিল:
আয়াত নং -০১
وَنُنَزِّلُ مِنَ ٱلۡقُرۡءَانِ مَا هُوَ شِفَاۤءࣱ وَرَحۡمَةࣱ لِّلۡمُؤۡمِنِینَ وَلَا یَزِیدُ ٱلظَّـٰلِمِینَ إِلَّا خَسَارࣰا
অর্থ: আমি কোরআনে এমন বিষয় নাযিল করি যা রোগের সুচিকিৎসা এবং মুমিনের জন্য রহমত। গোনাহগারদের তো এতে শুধু ক্ষতিই বৃদ্ধি পায়। সূরা বানী ইসরাইল-৮২
হাদিস/আসার নং-০১
حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ إِسْمَاعِيلَ، حَدَّثَنَا حَمَّادٌ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ إِسْحَاقَ، عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ يُعَلِّمُهُمْ مِنَ الْفَزَعِ كَلِمَاتٍ " أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ مِنْ غَضَبِهِ وَشَرِّ عِبَادِهِ وَمِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ وَأَنْ يَحْضُرُونِ " . وَكَانَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَمْرٍو يُعَلِّمُهُنَّ مَنْ عَقَلَ مِنْ بَنِيهِ وَمَنْ لَمْ يَعْقِلْ كَتَبَهُ فَأَعْلَقَهُ عَلَيْهِ .
. মুসা ইবনে ইসমাঈল (রাহঃ) .... আমর ইবনে শুআয়েব (রাহঃ) তার পিতা ও দাদা থেকে বর্ণিত করেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদের বিপদের সময় এ দুআ পড়তে বলতেনঃ আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতে মিন গাযাবিহি ওয়া শাররি ইবাহিদি ওয়া মিন হামাযাতিশ শায়াতিনে ওয়া আই- ইয়াহ দুরূনী।
আর আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাযিঃ) তার বয়স্ক ছেলে মেয়েদের এ দুআ শিখিয়ে দিতেন এবং ছোট বাচ্চাদের গলায় তাবিজ বানিয়ে ঝুলিয়ে দিতেন। সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৮৫৩ (আন্তর্জাতিক নং ৩৮৯৩)
তাহকীক: বিশুদ্ধ (পারিভাষিক হাসান)
হাদিস/আসার নং -০২
سألت سعيد بن المسيب عن التعويذ فقال لا بأس به إذا كان في أديم
অর্থ: সাঈদ ইবনে মুসায়্যিব র: ইছমা বলেন, আমি সায়ীদ ইবনুল মুসায়্যিবকে তাবীয সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি, জবাবে তিনি বলেন, কোনো অসুবিধা নেই যদি চামড়ায় মোড়ানো থাকে। সূত্র: মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা হাদিস-২৪০০৯
হাদিস/আসার নং -০৩
عن علقمة قال سأَلْتُ ابْنَ الْمُسَيِّبِ عَنِ الِاسْتِعَاذَةِ تَكُونُ عَلَى الْحَائِضِ وَالْجُنُبِ فَقَالَ لَا بَأْسَ بِهِ إِذَا كَانَ فِي قَصَبَةٍ أَوْ رُقْعَةٍ يَجُوزُ عَلَيْهَا
অর্থ: আলকামা র: বলেন, আমি সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব র: কে জিজ্ঞেস করলাম, গোসল ফরয হওয়া ব্যক্তি বা ঋতুমতী নারীর গায়ে তাবীয থাকাতে কোনো অসুবিধা আছে কি না? জবাবে বললেন, যদি কোনো খোলের মধ্যে হয় অথবা কোনো কাগজে মোড়ানো থাকে তাহলে অসুবিধা নেই।
সূত্র: মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক হাদিস-১৩৪৮
হাদিস/আসার নং -০৪
عن ثوير قال كان مجاهد يكتب للناس التعويذ فيعلق عليهم
অর্থ: হযরত মুজাহিদ র: হযরত ছুওয়াইর রাহ. বলেন- মুজাহিদ র: মানুষের জন্য তাবীয লিখতেন। অতপর তাদের গায়ে ঝুলিয়ে দিতেন।
সূত্র: মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা বর্ণনা-২৪০১১
সম্প্রতি কুয়েত সরকারের তত্তাবধানে প্রকাশিত ‘আল মাওসুআতুল ফিকহিয়্যা আল কুওয়াইতিয়্যাহ” তে বলা হয়েছে:
لا خلاف بين الفقهاء في عدم جواز التميمة إذا كان فيها اسم لا يعرف معناه؛ لأن ما لا يفهم لا يؤمن أن يكون فيه شيء من الشرك، ولأنه لا دافع إلا الله، ولا يطلب دفع المؤذيات إلا بالله، وبأسمائه. أما إذا كانت التميمة، لا تشتمل إلا على شيء من القرآن، وأسماء الله تعالى وصفاته، فقد اختلفت الآراء فيها على النحو التالي: ذهب الحنفية، والمالكية، والشافعية، وأحمد في رواية إلى جواز ذلك، وهو ظاهر ما روي عن عائشة، وهو قول عبد الله بن عمرو بن العاص، وحملوا حديث: إن الرقى، والتمائم، والتولة شرك. على التمائم التي فيها شرك.
অর্থাৎ এ ব্যাপারে ফুকাহায়ে কেরামের মাঝে কোন মতনৈক্য নেই যে, অর্থ বুঝা যায় না এমন কোন কিছু লিখে লটকালে সেটা জায়েজ নেই। কারণ, যার অর্থ বুঝা যায় না সেটার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে না যে শিরক আছে কিনা? কারণ, রোগ নিরাময়কারী আল্লাহ ছাড়া আর কেই নয়। এজন্য আল্লাহর নাম ছাড়া অন্য কোন কিছু দিয়ে রোগ থেকে মুক্তি চাওয়া যাবে না। যদি কেউ কুরআনের কোন আয়াত, আল্লাহর নাম কিংবা গুণাবলি লিখে লটকায় সেটা জায়েজ কিনা? সে ব্যাপারে মতানৈক্য রয়েছে। হানাফী, মালেকী, শাফেয়ী এবং এক বর্ণনামতে ইমাম আহমদ বিন হাম্বলের মতে জায়েজ আছে। আয়েশা রাযি. থেকেও এমনটি বর্ণিত হয়েছে। এমনটি হলো প্রসিদ্ধ সাহাবী আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আস রাযি. এর মত। যে হাদীসে ‘তামিমা’ কে শিরক বলা হয়েছে, তাদের মতে সে হাদীস দ্বারা এমন তামিমা উদ্দেশ্য, যার মাঝে শিরক রয়েছে। আল মাওসুয়াতুল ফিকহিয়্যাহ আল কুওয়াইতিয়্যাহ: ৬/৪১৯
প্রশ্ন: ক। তাবিজ শিরক এর ব্যাখ্যা/ উদ্দেশ্য কী?
উত্তর: ক। যে তাবিজের মধ্যে শিরকি কথাবার্তা থাকে, এটা হারাম। দলিল-
على أنّ المراد بالتمائم هي التمائم التي فيها شرك وتشمل غير القرآن الكريم، وممّن قال بهذا القول جماعة من السلف ومنهم عائشة أم المؤمنين -رضي الله عنها-، وعبد الله بن عمرو بن العاص -رضي الله عنه-.
যাইহোক, তাবিজ বলতে যা বোঝায় তা হল তাবিজ যা শিরক ধারণ করে এবং পবিত্র কোরান ব্যতীত অন্যদের অন্তর্ভুক্ত করে এবং যারা এই উক্তিটি বলেছিল তাদের মধ্যে রয়েছে সালাফদের একটি দল, যার মধ্যে রয়েছে আয়েশা রা. । তার - এবং আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আল-আস রা. । সূত্র: হুকমুল তামিমা ফিল ইসলাম- ৪০৬; আল্লামা আহমদ আশ-শাওবিকি
হাদিসে এসেছে,
عَنْ عَوْفِ بْنِ مَالِكٍ الأَشْجَعِىِّ قَالَ كُنّا نَرْقِي في الجاهِلِيَّةِ فَقُلْنا يا رَسولَ اللهِ، كيفَ تَرى في ذلكَ فَقالَ اعْرِضُوا عَلَيَّ رُقاكُمْ لا بَأْسَ بالرُّقى ما لَمْ يَكُنْ فيه شِرْكٌ
অর্থ: হযরত আউফ ইবনে মালেক আশজায়ী রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জাহেলিয়াতের যুগে আমরা ঝাড় ফুঁক করতাম অতপর বললাম ইয়া রাসুলুল্লাহ! এ সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? তিনি বলেন তোমাদের মন্ত্রগুলো আমার সামনে পেশ কর। ঝাড় ফুঁকে যদি শিরকের শব্দ না থাকে তাহলে এতে কোন সমস্যা নেই।
সূত্র: মুসলিম হাদিস-২২০০
বুঝা গেল ঝাড়ফুঁকে কোন শিরক মন্ত্র না থাকলে সেটাকে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিরক বলেননি। তেমনি হাদিসের মধ্যে থাকা আরেকটি অংশ হলো তাবিজ। সেটাও কুরআনের আয়াত বা নবি স: এর দোয়া,কালাম থাকলে শিরক হওয়ার কোন কারণই থাকতে পারে না।
ইমাম নববী বলেন:
إنَّ التَّمِيمَةَ خَرَزَةٌ كَانُوا يُعَلِّقُونَهَا يَرَوْنَ أَنَّهَا تَدْفَعُ عَنْهُمْ الْآفَاتِ وَيُقَالُ قِلَادَةٌ يُعَلَّقُ فِيهَا الْعُودُ وَعَنْ عُتْبَةَ بْنِ عَامِرٍ قَالَ (سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ مَنْ عَلَّقَ تَمِيمَةً فَلَا أَتَمَّ اللَّهُ لَهُ وَمَنْ عَلَّقَ وَدَعَةً فَلَا وَدَعَ اللَّهُ لَهُ) رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ وَقَالَ هُوَ أَيْضًا رَاجِعٌ إلَى مَعْنَى مَا قَالَ أَبُو عُبَيْدَةَ قَالَ وَيَحْتَمِلُ أَنْ يَكُونَ ذَلِكَ وما اشبه مِنْ النَّهْيِ وَالْكَرَاهَةِ فِيمَنْ يُعَلِّقُهَا وَهُوَ يَرَى تَمَامَ الْعَافِيَةِ وَزَوَالَ الْعِلَّةِ بِهَا عَلَى مَا كَانَتْ عَلَيْهِ الْجَاهِلِيَّةُ وَأَمَّا مَنْ يُعَلِّقُهَا مُتَبَرِّكًا بِذِكْرِ اللَّهِ تَعَالَى فِيهَا وَهُوَ يَعْلَمُ أَنْ لَا كَاشِفَ لَهُ إلَّا اللَّهُ وَلَا دَافِعَ عَنْهُ سِوَاهُ فَلَا بَأْسَ بِهَا إنْ شَاءَ الله تعالى
অর্থাৎ তামিমা বলা হয় ছোট ছোট পাথরকে , লোকেরা মনে করত যে এ পাথরই তাদের অনিষ্ট দূর করবে। আবার কারও মতে তামিমা বলা হয় মালাকে, সেখানে তারা বিভিন্ন কনা লটকাতো। উতবা বিন আমির রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে এ ধরণের ছোট ছোট পাথর লটকাবে, আল্লাহ যেন তাকে সুস্থ না করেন। এ হাদীসটি বায়হাকী রাহি. বর্ণনা করেছেন। যে সমস্ত হাদীসে নিষেধ করা হয়েছে, এ সমস্ত হাদীস দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, যারা এটা মনে করবে যে লটকানো বস্তুই তাকে সুস্থ করবে। যেমনটি ধারণা লালন করত জাহেলি যুগের লোকজন। তবে যদি কেউ বরকতলাভের জন্য আল্লাহর নাম লিখে লটকায়, যে এটা জানে যে রোগ নিরাময়কারী আল্লাহ ছাড়া আর কেউ নয়, তাহলে কোন সমস্যা নেই ইনশাআল্লাহ। আল মাজমু শারহুল মুহাযযাব: ৯/৬৬,
সারকথা হলো, হাদিসে যে তাবিজ-কবচকে শিরক বা নাজায়েজ বলা হয়েছে, সেটা তখন হবে যখন অন্তরে এ বিশ্বাস রাখবে যে, এসব তাবিজ-কবচ তার উপকার বা ক্ষতি করতে পারে। সুতরাং কেউ যদি বরকতের উদ্দেশ্যে এগুলো ব্যবহার করে তাহলে কোনো সমস্যা নেই। সূত্র: মায়ালিমুস সুনান, খাত্তাবি, খণ্ড: ৪, পৃষ্ঠা: ২২৬
ইবনে হাজার আসকালানি রাহি. বলেন:
هَذَا كُلُّهُ فِي تَعْلِيقِ التَّمَائِمِ وَغَيْرِهَا مِمَّا لَيْسَ فِيهِ قُرْآنٌ وَنَحْوُهُ فَأَمَّا مَا فِيهِ ذِكْرُ اللَّهِ فَلَا نَهْيَ فِيهِ فَإِنَّهُ إِنَّمَا يُجْعَلُ لِلتَّبَرُّكِ بِهِ وَالتَّعَوُّذِ بِأَسْمَائِهِ وَذِكْرِهِ وَكَذَلِكَ لَا نَهْيَ عَمَّا يُعَلَّقُ لِأَجْلِ الزِّينَةِ مَا لَمْ يَبْلُغِ الْخُيَلَاءَ أَوِ السَّرَفَ
অর্থাৎ যে সমস্ত হাদীসে ‘তামিমা’ লটকাতে নিষেধ করা হয়েছে, সে হাদীসগুলোতে ‘তামিমা’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, যার মধ্যে কুরআন বা আল্লাহর নাম জাতীয় কোন কিছু লেখা নেই। যদি আল্লাহর নাম লেখা থাকে, তাহলে লটকাতে সমস্যা নেই। কারণ, এটা স লটকায় বরকতলাভের জন্য। এমনভাবে কেউ যদি অহংকার এবং অপচয় এড়িয়ে সৌন্দর্যের জন্য লটকায়, তাহলে সমস্যা নেই। ফাতহুল বারি: ৬/১৪২।
والله اعلم بالصواب