*রমযানে দৈনিক অল্প সময়ে ৩০০ টা ফরয আদায়ের নেকী অর্জনের সহজ পদ্ধতি -*
হাদীসে পাকে এসেছে, রমযানে কেউ একটা নফল আমল করলে একটা ফরজের সমান সওয়াব পাবে। - ইবনে খুযাইমাহ, বাইহাকী, সহীহ ইবনে হিব্বান
এই হাদীসের আলোকে এক বুযুর্গ বলেন- রমযানে কেউ যদি একবার "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ " বলে তাহলে সে একটা ফরজের সওয়াব পাবে, কেউ যদি ১০ বার "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" পড়ে তাহলে দশটা ফরজের সওয়াব পাবে, কেউ যদি একবার "সুবহানাল্লাহ" পড়ে তাহলে সে একটা ফরজের সওয়াব পাবে, কেউ যদি ১০০ বার "সুবহানাল্লাহ" পড়ে তাহলে সে ১০০ টা ফরজের সওয়াব পাবে।
পুরা রমযান নূরে ভরপুর, রহমতে ভরপুর। এজন্য এই মাসে আমল অনেক বেশি করা উচিত। যারা আখেরাতমুখী, তাদের এই মাসে বেশি করে ফিকির করা চাই। যাতে করে আল্লাহ তা'আলার সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ ও নিবিঢ় হয়। আল্লাহ পাকের সাথে বন্ধন যাতে আরো উন্নত হয়, মজবুত হয়। এজন্য পুরা রমযানে বেশি বেশি আমল করার জন্য চেষ্টা করি।
কোনো অবস্থাতেই এমন যাতে না হয় যে, রমজান মাস আর বাকি ১১ মাসের আমল এক বরাবর। কমবেশ করা চাই। রমযানে আমল অবশ্যই বাড়ানো চাই। এজন্য কিছু কথা বলার জন্য চেষ্টা করছি। আল্লাহ তা'য়ালা তৌফিক দান করেন।
এমন ভাবে যদি কিছু আমল করা যায় যে, আমলে সময় একেবারে অল্প লাগবে কিন্তু এর দ্বারাও ইনশাআল্লাহ অনেক সওয়াব পাওয়া যাবে। আল্লাহপাকের নৈকট্য লাভ হবে অনেক বেশি। আল্লাহ তা'আলা আমাদের সকলকে তৌফিক দান করেন।
যদি এমন করা হয় যে প্রত্যেক নামাজের পর, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের প্রত্যেক ওয়াক্তে যদি এমন করা যায় যে, ১০ বার "সুবহানাল্লাহ", ১০ বার "আলহামদুলিল্লাহ", ১০ বার "আল্লাহু আকবার", ১০ বার "লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ", এরপর ১০ বার "ইস্তেগফার", এরপর ১০ বার "দূরুদ শরীফ" তাহলে মোট হচ্ছে ৬০ বার। ৬০ বার পড়ার কারণে ৬০ ফরজের সওয়াব পাওয়া যাবে।
ফজরের নামাজ পড়ার পর এই যিকির গুলি আমরা করে নিই, অল্প কয়েক মিনিট সময় লাগবে। ২/৪ মিনিট সময় লাগতে পারে। কিন্তু এর দ্বারা অনেক বেশি নৈকট্য অর্জন করা যাবে ইনশাআল্লাহ।
জোহরের নামাজ পড়লাম। জোহরের চার রাকাত সুন্নত পরলাম, তারপর চার রাকাত ফরজ পড়লাম, তারপর দুই রাকাত সুন্নত নামাজ পড়া শেষ হয়ে গেল, এখন আমি ২/৪ মিনিটে ১০ বার "সুবহানাল্লাহ", ১০ বার "আলহামদুলিল্লাহ", ১০ বার "আল্লাহু আকবার" ১০ বার "লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ", ১০ বার "ইস্তেগফার"। সংক্ষিপ্ত এস্তেগফার "আস্তাগফিরুল্লাহ" পড়া যেতে পারে। যেকোনো দূরূদ শরীফ ১০ বার।
ছোট দূরূদ শরীফ আছে, "সাল্লাল্লাহু 'আলান নাবিয়ীল উম্মিয়ী" এটা পড়া যেতে পারে। " সাল্লাল্লাহু 'আলা রাসুলিহি ওয়া সাল্লাম " এটাও পড়া যেতে পারে। এটা মুসলিম শরীফে এসেছে।
"সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম" এটাও পড়া যেতে পরে। যার কোনো দরুদ শরীফ মুখস্থ নাই, এমন যদি কেউ থাকে তাহলে প্রচলিত এই দূরূদ "সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম" পড়তে পারি।
এইগুলো প্রত্যেকটা যদি ১০ বার করে পড়ি, তাহলে (৬×১০ =৬০) ৬০ টা ফরজের সওয়াব পাওয়া যাবে। এমনি ভাবে আসর, মাগরীব, এশা।
এশার নামাজ পড়লাম, তারপর তারাবির নামাজ পড়লাম, এরপর ২/৪ মিনিটে এ আমলগুলো করে নিই।
দেখা যাবে যে প্রতিদিন ৫ বার এ আমল গুলো করা হইতেছে ৫ ওয়াক্ত নামাজে। তাহলে ৬০ বার করে হলে প্রতি ওয়াক্তে, পাঁচ ওয়াক্ত হবে মোট ৩০০ বার। তাহলে প্রতিদিন ৩০০ টা ফরজ আদায়ের সওয়াব পাওয়া যাবে। সুবহানাল্লাহ! কত বড় বিষয় ! কত বড় বিষয়! কত বড় বিষয়!
আর দৈনিক ৩০০ টা করে হলে ৩০দিনে হবে (৩০০×৩০=৯০০০) অর্থাৎ নয় হাজার। তার মানে ৯ হাজার ফরজের সওয়াব পাওয়া যাবে। তো এটা একেবারে অল্প সময়ে অনেক বড় উপার্জন হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
রমযানের একমাস যদি একেবারেই অল্প সময়ে এই ছোট আমলটি করতে পারি তাহলে ৯০০০ ( নয় হাজার) ফরজ আদায়ের সওয়াব পাওয়া যাবে। রমযান যদি ২৯ দিনেও হয় তাহলেও ওই ৯০০০ ( নয় হাজার) ফরজের সওয়াব পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ। কারণ আমাদের ইচ্ছা তো ৩০ রমজানের। এই মাস ৩০ দিনে হোক, এটাই আমাদের আশা। এমনটাই আমাদের দিলের তামান্না। আল্লাহপাক বান্দার দিলের আকাঙ্ক্ষা দেখেন। দিলের যে আরজু, সেই মোতাবেক তাকে সওয়াব দান করে থাকেন।
একেবারেই সংক্ষিপ্ত সময়ের ভিতরে আমার এই বিপুল সওয়াব অর্জন করতে পারি। এই যে নকশাটা পেশ করা হল আমরা যারা একেবারেই সময় কম খরচ করতে ইচ্ছুক, ব্যস্ততা বা অন্য যেকোনো কারণেই হোক। আমলের বিশেষ একটা সুযোগ হয় না। তারা কমসে কম এতোটুকু চেষ্টা করি। আর যাদের সময় সুযোগ অনেক বেশি আছে, খুব বেশি হিম্মত আছে, রমযানের অনেক আগে থেকে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতেছেন, কখন রমযান আসবে আর আমি অনেক বেশি আমল করব। এখন যা আমল করতেছি তার চেয়ে অনেক বাড়িয়ে দিব। তাদের বিষয়টা তো আরো সুন্দর, খুবই ভালো।
বেশি করে নফল নামাজ পড়া, বেশি করে তেলাওয়াত করা, বেশি করে জিকির করা, বেশি করে দূরুদ শরীফ পড়া, বেশি করে এস্তেগফার করা, আর বেশি করে দান-সদকা করা ইত্যাদি আমলে ব্যাস্ত থাকা।
মূল কথা পুরা রমযানে নফল আমল আগের চেয়ে অনেক বেশি হওয়া উচিত। যারা আমরা বেশি করে আমল করার হিম্মত রাখি তারাও ইনশাআল্লাহ ঐ বেশি আমলের সঙ্গে এই আমলটাও সংযুক্ত করে নিতে পারি। আল্লাহ তা'য়ালা আমাদের সকলকে ভরপুর তৌফিক দান করেন। আমীন...
8 may 2019 ডা: রবিউল আকরাম হাফিজাহুল্লাহু