আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-১২৫৬৫: দেশ পরিবর্তনের কারণে রোজা কম হলে কাজা আদায় করতে রাখতে হবে কি?

No Comments


 


জিজ্ঞাসা-১২৫৬৫:

আসসালামু আলাইকুম। এবার রোজা ছিল ২৯ টি। যারা বাংলাদেশ থেকে সৌদিতে গিয়ে রমজানে ঈদ করেছেন তারা ২৮টি রোজা রাখতে পেরেছেন। প্রশ্ন হলো তাদের কি এখন ১/২ রোজা কাজা করতে হবে?  

তারিখ:  ২৫/৪/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 

মাওলানা মোঃ আব্দুছ ছালাম সিদ্দিকী সিলেট থেকে


জবাব:  وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

 نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 

 

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো,  দেশ পরিবর্তন এর জন্য যদি রোজা ৩০ বা ২৯ টা কম হয় তাহলে তাকে একটি বা দুইটি রোজা কাজা করতে হবে। দলিল:


Surah Al-Baqara, Verse 183:

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ

হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পার। সূরা বাকারা-১৮৩


ব্যাখ্যা: এ আয়াত দ্বারা রমজান মাসের পূর্ণ এক মাস রোজা ফরজ করা হয়েছে। সুতরাং কারও দেশ পরিবর্তনের দরুন যদি রমজানের পূর্ণ মাসের চেয়ে কম রোজা রাখে পরবর্তীতে সে একটি বা দুটি রোজা কাজা আদায় করবে।



দ্বিতীয় কথা হলো, রমজান বা আরবি মাস হলো ২৯ বা ৩০ দিনে, ২৮ দিনে নয়। দলিল:

عن ابن عمر أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: "الشهر تسع وعشرون، فلا تصوموا حتى تروا الهلال، ولا تفطروا حتى تروه فإن غم عليكم فأكملوا العدة ثلاثين"

অর্থাৎ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত যে, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “মাসটি হলো ২৯ দিনে, সুতরাং চাঁদ না দেখা পর্যন্ত রোজা রাখবেন না এবং যতক্ষণ না রোজা ভাঙবে না। দেখো, আর যদি তোমার জন্য মেঘলা হয়, তাহলে ত্রিশ দিন পূর্ণ করো। সূত্র: আরশিফু মুলতাকি আহলিল হাদিস -৭/৩৫৩


তৃতীয় কথা হলো, এ বিষয়ে শায়েখ ইবনে উসাইমিন রহ কে জিজ্ঞেস করা হলে, তিনি জবাবে বলেন,

يجب الصيام لأن الشهر لا يجوز أن يقل عن 29 يوماً. وفي الحالة الأولى سيصوم أكثر من 30 يومًا لأن القمر الجديد لم يُرَ بعد. في الحالة الأولى سنطلب منه الإفطار حتى لو لم تكتمل 29 يومًا. لأن القمر الجديد قد شوهد. وجوب الفطر بعد رؤية الهلال. يحرم صيام أول يوم من شوال. وإن صام أقل من 29 يوماً فعليه أن يكمل 29 يوماً. هذا يختلف عن الشرط الثاني. لأن رمضان في البلد الذي أتيت إليه ؛ لم يتم رؤية قمر جديد. فكيف يمكن للمرء أن يفطر حيث لا يزال رمضان قائماً ، لذلك عليك أن تستمر في الصيام. وإن زاد الشهر به كأنه زاد طول النهار ".

অর্থাৎ দ্বিতীয় ক্ষেত্রে রোযার কাযা রোজা পালন করতে হবে কারণ মাস ২৯ দিনের কম হতে পারে না। আর প্রথম ক্ষেত্রে সে ৩০ দিনের বেশি রোজা পালন করবে কারণ তখনও নতুন চাঁদ দেখা যায়নি। প্রথম ক্ষেত্রে আমরা তাকে বলব রোজাছেড়ে দাও যদিও তোমার ২৯ দিন পূর্ণ হয়নি। কারণ নতুন চাঁদ দেখা গিয়েছে। নতুন চাঁদ দেখা যাওয়ার পর রোজাছেড়ে দেয়া বাধ্যতামূলক। শাওয়াল মাসের প্রথম দিন রোজা পালন করা হারাম। আর কেউ যদি ২৯ দিনের কম রোজা পালন করে থাকে তাহলে তাকে ২৯ দিন পূরণ করতে হবে। এটি দ্বিতীয় অবস্থা হতে ভিন্ন। কারণ যে দেশে আসা হয়েছে সেখানে তখন রমজান চলছে; নতুন চাঁদ দেখা যায় নি। যেখানে এখনও রমজান চলছে সেখানে কিভাবে রোজা ভঙ্গ করা যেতে পারে?তাই আপনাকে রোজা পালন চালিয়ে যেতে হবে। আর যদি তাতে মাস বেড়ে যায়, তাহলে তা দিনের দৈর্ঘ্য বেড়ে যাওয়ার মত।”  সুত্র: মাজমূ ‘ফাতাওয়া আশ-শাইখ ইবনেউছাইমীন (১৯/ প্রশ্ন নং ২৫)

 

সারকথা হলো, আপনার প্রশ্নের আলোকে,  এবার রোজা ছিল ২৯ টি। যারা বাংলাদেশ থেকে সৌদিতে গিয়ে রমজানে ঈদ করেছেন তারা ২৮টি রোজা রাখতে পেরেছেন। এখন তাদের ১ টি রোজা কাজা আদায় করতে হবে। দলিল:

ثلاثين يوما لزم الناس قضاء يومين, وإن كان الشهر ناقصا لزمهم قضاء يوم

অর্থাৎ যদি ৩০ দিনে মাস হয়, তাহলে দুটি রোজা কাজা করা আবশ্যক আর যদি কম হয় তথা ২৯ দিনে হয়, তাহলে একটি রোজা কাজা করা আবশ্যক। সূত্র: ফিকহুল ইবাদাত, ইসবাতুল দুখুলি শাহরি রমাজান -১২৭৬৬২ ( ফতোয়া নং) 

 


 والله اعلم بالصواب

উত্তর প্রদানে মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক