আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-১২৯৪৫: তাহাজ্জুদ নামাজ জামাতের সাথে আদায় করার বিধান কি?

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১২৯৪৫:  

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। তাহাজ্জুদের নামাজ জামাতে পড়ার দলিল দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো। 

তারিখ:  ০২/০৪/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 মাওলানা  জামাল হোসাইন  " থেকে।


 জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো,

তাহাজ্জুদ নামাজ জামাতের সাথে আদায় করা কোন ইমামের মতে সুন্নত বা মুস্তাহাব নয়, অধিকাংশ ইমামদের মতই মাকরূহ। 

হাদীস ও সীরাতের বর্ণনানুযায়ী নবী-যুগে একটি অথবা দুটি ঘটনাই এমন পাওয়া যায় যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাজ্জুদের নামাজ শুরু করার পর, কোনো সাহাবী এসে তার পেছনে নিয়ত করেছেন। এ জাতীয় এক দুটি ঘটনা ছাড়া, (জামাত যেখানে ঘটনাচক্রে হয়ে গিয়েছিল।) তাহাজ্জুদের জামাতের অন্য কোনো দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় না। 

وَحَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، وَإِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، كِلاَهُمَا عَنْ جَرِيرٍ، - قَالَ عُثْمَانُ حَدَّثَنَا جَرِيرٌ، - عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ أَبِي وَائِلٍ، قَالَ قَالَ عَبْدُ اللَّهِ صَلَّيْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَأَطَالَ حَتَّى هَمَمْتُ بِأَمْرِ سَوْءٍ قَالَ قِيلَ وَمَا هَمَمْتَ بِهِ قَالَ هَمَمْتُ أَنْ أَجْلِسَ وَأَدَعَهُ .

১৬৮৮। উসমান ইবনে আবি শাঈবা ও ইসহাক ইবনে ইবরাহীম (রাহঃ) ......... আবু ওয়াইল (রাহঃ) এর সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ (রাযিঃ) বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাথে (রাতের) নামায আদায় করছিলাম। তিনি এত দীর্ঘ করলেন যে, আমার মন্দ ইচ্ছা উদিত হচ্ছিল। বর্ণনাকারী আবু ওয়াইল (রাহঃ) বলেন, তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল, কি মন্দ ইচ্ছা উদিত হচ্ছিল? তিনি বললেন, ″আমি ইচ্ছা করছিলাম যে, আমি বসে পড়ব এবং তাঁকে (তাঁর ইক্তিদা) ছেড়ে দেব।″

—সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৬৮৮ (আন্তর্জাতিক নং ৭৭৩-১)


প্রশ্ন: ক। এ বিষয়ে ইমামদের মতামত কি?

উত্তর: অধিকাংশ ইমামদের মতে জামাআতের সঙ্গে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা মাকরুহ। যেমন,

وفي "الموسوعة الفقهية" (25/ 283): " قال الحنفية : تكره الجماعة في صلاة النوافل .

وقال المالكية كذلك : تكره الجماعة في النوافل , لأن شأن النفل الانفراد به , كما تكره صلاة النفل في جمع قليل بمكان مشتهر بين الناس .

وإن لم تكن الجماعة كثيرة والمكان مشتهرا : فلا تكره.

وقال الشافعية : تستحب الجماعة في التراويح والوتر في رمضان , ولا يستحب فعل سائر الرواتب جماعة .

وقال الحنابلة : يجوز التطوع جماعة ومنفردا " انتهى

"হানাফী মাযহাবের মতে: নফল নামায জামাতে নামায পড়া মাকরুহ। 

মালেকীগণ বলেনঃ নফল জামাতে নামায পড়া অপছন্দনীয়, কেননা নফল নামায একাকী আদায় করাই শান। তেমনি জনগণের মধ্যে প্রসিদ্ধ স্থানে স্বল্প ভিড়ে নফল নামায পড়াও মাকরুহ। .

দল বড় না হলে এবং জায়গাটা বিখ্যাত হলে মাকরুহ হয় না।

শাফেঈ বলেছেন: রমজানে তারাবীহ ও বিতরের নামায জামাতে আদায় করা বাঞ্ছনীয়, তবে অন্যান্য ফরয নামায জামাতে আদায় করা বাঞ্ছনীয় নয়।

হাম্বলী বলেছেন: দলবদ্ধভাবে বা একা নফল নামাজ করা জায়েয। সূত্র: আল-মাওসুআহ আল-ফিকহিয়্যাহ" (25/283)


প্রশ্ন: খ। ফকিহদের মতামত কি?

উত্তর: খ। ইমাম বদরুদ্দীন আইনী রহ. বলেন,

وصلاة النفل بالجماعة مكروهة ما خلا قيام رمضان وصلاة الكسوف لأنه لم يفعلها الصحابة، ولو فعلوا لاشتهرت، كذا ذكره الولوالجي

 রমজানের কিয়ামুল লাইল ও সালাতুল কুসূফ ব্যতীত সকল নফল নামায জামাতে পড়া মাকরূহে তাহরীমী। কেননা এটা সাহাবায়ে কেরাম করেন নি। কেউ যদি তা করে থাকে তবে তা বিধি সম্মত হবে না। যেমন তা ওয়াল ওয়ালিজি নিজ কিতাবে বলেছেন। (আল বেনায়া শরহুল হেদায়া ২/৫৫৮)


قال النووي رحمه الله في "المجموع" (3/548) : " قد سبق أن النوافل لا تشرع الجماعة فيها إلا في العيدين والكسوفين والاستسقاء

ইমাম নববি রহ. বলেছেন: "ইতিপূর্বে বলা হয়েছে যে দুটি ঈদ, দুটি সূর্যগ্রহণ এবং সালাতুল ইসতেকা ছাড়া জামাতে নফল নামায আদায় করা শরয়ি সম্মত নয়।" সূত্র: "আল-মাজমু' (3/548)


প্রশ্ন: গ। একাকী নফল নামাজ আদায় করার কোন দলিল আছে কী?

উত্তর: গ। তাহাজ্জুদ বা অন্যান্য নফল নামাজ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

فَعَلَيْكُمْ بِالصَّلاَةِ فِي بُيُوتِكُمْ، فَإِنَّ خَيْرَ صَلاَةِ المَرْءِ فِي بَيْتِهِ إِلَّا الصَّلاَةَ المَكْتُوبَةَ

সুতরাং তোমাদের উচিত যে, তোমরা ঘরেই নামাজ আদায় করবে। কারণ ফরজ ছাড়া অন্য নামাজ নিজ নিজ ঘরে পড়াই উত্তম। (বুখারী ৬১১৩ মুসলিম ৭৮১)


প্রশ্ন: ঘ। কতজন তাহাজ্জুদ নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা জায়েয?

উত্তর: ঘ।ঘোষণা দিয়ে জামাত করে নফল নামাজ পড়া মাকরুহ। আগে থেকে ঘোষণা দিলেও তিনজনের বেশি ব্যক্তি জামাত করে নফল নামাজ পড়া মাকরুহ। দলিল-

ইমাম শামসুল আইয়িম্মাহ হালওয়ানী রহ. বলেন,

إنْ كَانَ سِوَى الْإِمَامِ ثَلَاثَةٌ لَا يُكْرَهُ بِالِاتِّفَاقِ وَفِي الْأَرْبَعِ اخْتَلَفَ الْمَشَايِخُ وَالْأَصَحُّ أَنَّهُ يُكْرَهُ. هَكَذَا فِي الْخُلَاصَةِ.

ইমাম ছাড়া ৩ জন মুকতাদি হলে সকলের ঐক্যমতে মাকরূহ হবেনা আর ৪ জন হয়ে গেলে এখতেলাফ আছে, কিন্তু বিশুদ্ধ মতে মাকরূহ তাহরীমী হবে। যেমন তা খুলাছা কিতাবে আছে। (ফাতাওয়া আল হিন্দিয়্যাহ ১/৯২, বৈরত)


সারকথা হলো,  বুখারী শরীফসহ অন্যান্য হাদীস গ্রন্থে মসজিদে এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবাগণের সাথে যে নামায পড়েছিলেন তিন দিন। মুহাদ্দিসগণ ও ফুক্বাহায়ে কেরামের বক্তব্য অনুপাতে তা তারাবীহ নামায ছিল। তাহাজ্জুদ নামায নয়।

ফিকহে হানাফীর ফাতাওয়া হল, তাহাজ্জুদের নামাজ রোজার মাসে পড়া হোক কিংবা অন্য মাসে, একাকী পড়া উচিত। জামাতের সাথে তাহাজ্জুদ পড়া ঠিক নয়। তবে কেউ যদি তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া কোনো ব্যক্তির ইক্তিদা করে ফেলে তাহলে সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু এটাকে নিয়ম বানিয়ে ফেলা সুন্নত পরিপন্থী কাজ।


  والله اعلم بالصواب