আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-১২৯২৭: জাকাত আদায় করার সময় কি বলতে হবে এটা জাকাতের অর্থ?

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১২৯২৭: 

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আসসালামু আলাইকুম 

আমার জানার বিষয় হলো 

১) যিনি জাকাত দিবেন তিনি নিয়ত করে দিয়ে দিলেন তবে যাকে দিলেন তাকে এই ব্যাপারে কিছু বললেন না।

স্বাভাবিক সাহায্য হিসেবে দিলেন,  উল্লেখিত সুরতে যাকাত আদায় হবে কি না?

আরেকটি বিষয় হলো,  

২) প্রথমে জাকাতের নিয়তে না দিয়ে  কোনো দরিদ্রের উপর টাকা খরচ করলেন, পরে এই খরচকৃত টাকা জাকাতের নিয়ত করলে জাকাত আদায় হবে কিনা?


৩) আর মাহে রামাজানে দান/ জাকাত দিলে অন্যান্য মাস থেকে বেশি সাওয়াব এই মর্মে কোনো দলিল থাকলে শেয়ার করার অনুরোধ রইলো 

তারিখ:  ২০/০৩/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 মাওলানা  মোঃ কামরুল হাসান যশোর থেকে।


 জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, আপনার প্রশ্নকে সহজে বোঝার জন্য আপনার প্রশ্নানুসারে তিন ভাগে উত্তর দেওয়া হচ্ছে-


প্রশ্ন: ১। যিনি জাকাত দিবেন তিনি নিয়ত করে দিয়ে দিলেন তবে যাকে দিলেন তাকে এই ব্যাপারে কিছু বললেন না। স্বাভাবিক সাহায্য হিসেবে দিলেন, উল্লেখিত সুরতে যাকাত আদায় হবে কি না?

উত্তর: ১। জাকাত আদায় করার ক্ষেত্রে যাকাত গৃহীতাকে জানানো শর্ত নয়। দলিল -

لا حرج في دفع الزكاة لمستحقها دون إخباره بشخص المزكّي من هو، ولا يلزم إخباره بأنها من الزكاة، إلا من عُلِمَ أنه لا يقبل الزكاة؛ فلا بد من إخباره حينئذ.

অর্থাৎ যাকাতের পাওনাদারকে একথা জানানোর প্রয়োজন নেই যে, কার পক্ষ থেকে তাকে যাকাত দেয়া হচ্ছে। অনুরূপভাবে তাকে একথা বলারও প্রয়োজন নেই যে, যাকাতের অর্থ থেকেই তাকে অর্থায়ন করা হচ্ছে। তবে ব্যক্তি যদি অভাবগ্রস্থ হওয়া সত্ত্বেও এমন আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন হয়ে থাকে যে, দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত হবে, কিন্তু তবুও সে যাকাতের অর্থ থেকে সাহায্য গ্রহণে প্রস্তুত নয়, তাহলে অবশ্যই তার কাছে বিষয়টি স্পষ্ট করে দিতে হবে। যাতে করে তার অজান্তে তার অপছন্দনীয় বস্তু গ্রহণ না করে বসে। সূত্র: ফিকহুল ইবাদাত, মাসারিফুজ জাকাত -১১১৯১৯ (ফতোয়া নং)


প্রশ্ন: ২। প্রথমে জাকাতের নিয়তে না দিয়ে কোনো দরিদ্রের উপর টাকা খরচ করলেন, পরে এই খরচকৃত টাকা জাকাতের নিয়ত করলে জাকাত আদায় হবে কিনা?


উত্তর:২। প্রথমে জাকাতের নিয়তে না করে কোনো দরিদ্রের উপর টাকা খরচ করলেন, পরে এই খরচকৃত টাকা জাকাতের নিয়ত করলে জাকাত আদায় হবে না। কেননা জাকাত আদায়ের জন্য নিয়ত শর্ত। দলিল -


تجِب النِّيةُ عند أداءِ الزَّكاةِ، وهذا باتِّفاقِ المَذاهِبِ الفِقهيَّةِ الأربَعةِ: الحنفيَّة، والمالكيَّة، والشافعيَّة، والحَنابِلَة، والظَّاهِريَّة، وبه قال عامَّةُ الفُقهاءِ

الأدلَّة:

أوَّلًا: مِنَ الكِتابِ

قَولُ الله تعالى: وَمَا آتَيْتُمْ مِنْ زَكَاةٍ تُرِيدُونَ وَجْهَ اللَّهِ [الروم: 39]

ثانيًا: من السُّنَّة

عن عُمرَ بنِ الخطَّابِ رَضِيَ اللهُ عنه أنَّ النبيَّ صلَّى اللهُ عليه وسَلَّم قال: ((إنَّما الأَعمالُ بالنِّيَّاتِ ))

অর্থাৎ যাকাত আদায়ের সময় নিয়ত জরুরি। এ বিষয়ে চার মাযহাবের ফকিহগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন। যেমন- হানাফি, মালেকি, শাফিয়ি, হাম্বলি এবং যাহেরি। সূত্র: আলমুগনি, ইবনে কুদামা-৩/১৩৮; মিনহাজুত তালিবীন, ইমাম নববি -৭২


দলিল -

وَمَا آتَيْتُم مِّن زَكَاةٍ تُرِيدُونَ وَجْهَ اللَّهِ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُضْعِفُونَ

 পক্ষান্তরে, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় পবিত্র অন্তরে যারা দিয়ে থাকে, অতএব, তারাই দ্বিগুণ লাভ করে। সূরা রুম-৩৯


عن عُمرَ بنِ الخطَّابِ رَضِيَ اللهُ عنه أنَّ النبيَّ صلَّى اللهُ عليه وسَلَّم قال: ((إنَّما الأَعمالُ بالنِّيَّاتِ ))

হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণিত, নিশ্চয় নাবিয়ে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রতিটি কাজের বিনিময় তার নিয়তের উপর নির্ভরশীল। তাখরিজ: বুখারি -০১


প্রশ্ন: ৩‌ । আর মাহে রামাজানে দান/ জাকাত দিলে অন্যান্য মাস থেকে বেশি সাওয়াব এই মর্মে কোনো দলিল থাকলে শেয়ার করার অনুরোধ রইলো।

উত্তর: ৩। অবশ্যই রমজান মাসে আমল করলে বেশি সওয়াব হবে। দলিল -


يا أيُّها الناسُ قدْ أظَلَّكمْ شهرٌ عظيمٌ مبارَكٌ ، شهرٌ فيه ليلةٌ خيرٌ من ألفِ شَهرٍ ، شهرٌ جعلَ اللهُ صِيامَهُ فرِيضةً ، وقيامَ ليلِهِ تطوُّعًا ، ومَنْ تَقربَ فيه بِخصلَةٍ ، كان كَمَنْ أدَّى فرِيضةً فِيما سِواهُ ، ومَنْ أدَّى فرِيضةً فيه كان كمنْ أدَّى سبعينَ فرِيضةً فِيما سِواهُ وهُوَ شهرُ الصَّبرِ والصَّبْرُ ثَوابُهُ الجنةُ وشهرُ الْمُواساةُ وشَهرٌ يُزادُ في رِزقِ المُؤمِنِ فيه,هذا الحديث رواه ابن خزيمة بلفظه في صحيحه 3/191 رقم (1887) وقال: إن صح الخبر، وسقطت (إن) من بعض المراجع مثل (الترغيب والترهيب) للمنذري (2/95) فظنوا أن ابن خزيمة قال: صح الخبر، وهو لم يجزم بذلك.

رواه المحاملي في أماليه (293) والبيهقي في شعب الإيمان (7

অর্থাৎ একবার শাবান মাসের শেষ দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের উদ্দেশ্যে খোতবা (ভাষণ) দিলেন। খোতবা দিতে গিয়ে তিনি বলেন: “হে লোকেরা! আপনাদের নিকট এক মহান মাস হাজির হয়েছে। এক বরকতময় মাস এসেছে। এ মাসে এমন এক রাত আছে যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। এ মাসে সিয়াম পালন করা আল্লাহ ফরজ (আবশ্যকীয়) করেছেন এবং এ মাসের রাতে কিয়াম (নামায আদায়) করা নফল (ফজিলতপূর্ণ) করেছেন। এ মাসে যে কোন একটি (নফল) ভালো কাজ করা অন্য মাসে একটি ফরজ কাজ করার সমান। আর এ মাসে কোন একটি ফরজ আমল করা অন্য মাসে সত্তরটি ফরজ আমল করার সমান। এটি হল- ধৈর্য্যের মাস; ধৈর্য্যের প্রতিদান হচ্ছে- জান্নাত। তাখরিজ: সহিহ ইবনে খুযাইমা-১৮৮৭; সুনানে বাইহাকি


নোট: হাদিসটির সনদ দুর্বল। তবে তবে অন্যান্য সহিহ হাদিস দ্বারা সমর্থিত। যেমন -

وحدثنا أبو بكر بن أبي شيبة، حدثنا أبو معاوية، ووكيع، عن الأعمش، ح وحدثنا زهير بن حرب، حدثنا جرير، عن الأعمش، ح وحدثنا أبو سعيد الأشج، - واللفظ له - حدثنا وكيع، حدثنا الأعمش، عن أبي صالح، عن أبي هريرة، - رضى الله عنه - قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم " كل عمل ابن آدم يضاعف الحسنة عشر أمثالها إلى سبعمائة ضعف قال الله عز وجل إلا الصوم فإنه لي وأنا أجزي به يدع شهوته وطعامه من أجلي للصائم فرحتان فرحة عند فطره وفرحة عند لقاء ربه . ولخلوف فيه أطيب عند الله من ريح المسك " 

আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, আদম সন্তানের প্রতিটি আমল দশ গুণ থেকে সাতশত গুণ বাড়য়ে দেয়া হয়। আল্লাহ তা’আলা বলেন, কিন্তু রোযা; রোযা আমার জন্য এবং আমিই এর প্রতিদান দিব। কারণ সে আমারই জন্য তার কামাচার এবং পানাহার বর্জন করে। রোযা পালনকারী ব্যক্তির জন্য খুশির বিষয় দুটি। একটি খুশি ইফতারের সময়, আরেকটি খুশি তার প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাতের সময়। তার মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর কাছে মিশকের সুগন্ধ ির চেয়েও অধিক উৎকৃষ্ট। (মুসলীম-১১৫১)


ফজিলতের  ক্ষেত্রে দুর্বল হাদিস সর্বজন স্বীকৃত। নিচে কয়েকটি মুহাদ্দিসে কিরামের মতামত তুলে ধরা হলো।


০১.ইমাম আহমাদ (رحمة الله عليه) সহ অন্যান্য মুহাদ্দিসীনে কেরাম বলেন-

إذا روينا في الحلال والحرام شددنا وإذا روينا في الفضائل ونحوها تساهلنا

“যখন আমরা হালাল – হারামে রেওয়ায়েত করি (সনদে খুব) কড়াকড়ি করি। আর যখন ফযীলাত ইত্যাদির ক্ষেত্রে রেওয়ায়েত করি শিথিলতা করি”।(হাফেয সুয়ূতী, তাদরীবুর রাবী ১/২৯৮)


০২. ইমাম মোল্লা আলী কারী (رحمة الله عليه) বলেন, যঈফ হাদীস ফাযায়েলে আমালে গ্রহণযোগ্য সমস্ত বিজ্ঞ উলামায়ে কেরামের নিকট।

তিনি অন্যত্র বলেন, ফাযায়েলে আমালে যঈফ হাদীসের উপর সর্বসম্মতিক্রমে আমল করা হবে। এজন্যই আমাদের আয়িম্মায়ে কেরাম বলেছে, মাথা মাসেহ করা সুন্নাত অথবা মুস্তাহাব। (আলমাউজূআত, মোল্লা আলী কারী,পৃঃ ৭৩)


০৩. আল্লামা নববী (رحمة الله عليه) বলেন-

ويجوز عند أهل الحديث وغيرهم التساهل في الأسانيد ورواية ما سوى الموضوع من الضعيف والعمل به من غير بيان ضعفه في غير صفات الله تعالى والأحكام

“হাদীস বিশারদকারীদের নিকট যঈফ সনদ সমূহে শিথিলতা করা এবং জাল ছাড়া দুর্বল হাদীসের দুর্বলতা উল্লেখ করা ব্যতীত বর্ণনা করা জায়েয। আর তার উপর আমল করা বৈধ। যখন তা আহকাম এবং আল্লাহ তা’য়ালার ছিফাতের ব্যাপারে না হয়”। (তাক্বরীবে নববী, পৃষ্ঠা ১৯৬)


সারকথা হলো,  যাকাত গ্রহণকারীকে একথা জানানোর প্রয়োজন নেই যে, তাকে যাকাত দেওয়া হচ্ছে। যেকোনোভাবে দরিদ্র ব্যক্তিকে যাকাতের মাল দেওয়া হলে মালিক যদি মনে মনে যাকাতের নিয়ত করে তাহলে যাকাত আদায় হয়ে যাবে।



  والله اعلم بالصواب