আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-১২৫৫১: রমজান মাসে বিতরের নামাজ জামাআতের সাথে আদায় করার ব্যাপারে কোন নস/দলিল আছে কি?

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১২৫৫১:

السلام عليكم ورحمة الله 

আল বুরহানের সম্মানিত শায়খদের কাছে আমার বিনয়ের সাথে জানার বিষয় হলো বছরের অন্যান্য মাসে বিতরের সালাত একাকী পড়া হয়ে থাকে, শুধু মাত্র রমাদ্বান মাসে বিতরের সালাত জামাআতে আদায় করা হয় কেনো? এর স্বপক্ষে কুরআন ও সুন্নাহর দলীল দিয়ে উপকৃত করবেন। মাআসালাম।

তারিখ:  ১৮/৪/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 

মাওলানা জামাল টাঙ্গাইল থেকে


জবাব:  وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

 نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 

 

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, শুধু রমজান মাসে তারাবিহর পরে বিতর নামাজ জামাআতের সাথে পড়ার ব্যাপারে পবিত্র হাদিস, সাহাবী ও তাবেঈদের আমল দ্বারা এবং যুগ যুগ ধরে আমলে তাওয়াতির দ্বারা প্রমাণিত।


হাদিস থেকে দলিল:


عن جابر بن عبد الله قال خرج النبى صلى الله عليه وسلم ذات ليلة فى رمضان فصلى الناس اربعة وعشرون ركعة واوتر بثلاثة

হযরত জাবের রাঃ বলেনঃ রমজান মাসের এক রাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাহিরে তাশরীফ নিয়ে এলেন। আর সাহাবায়ে কেরামকে ২৪ রাকাত [৪ রাকাত ঈশার, আর ২০ রাকাত তারাবীহের] নামায পড়ালেন। আর তিন রাকাত বিতির পড়ালেন।  তাখরিজ: তারীখে জুরজান-২৭



আসার তথা সাহাবিদের আমল দ্বারা দলিল:


আসার নং -০১

عن ابى عبد الرحمن السلمى عن على قال دعى القراء فى رمضان فامر منهم رجلا يصلى بالناس عشرين ركعة قال وكان على يوتر بهم


হযরত আবু আব্দুর রহমান সুলামী বলেনঃ হযরত হযরত আলী রাঃ রমজান মাসে কারীদের ডাকতেন। তারপর তাদের মাঝে একজনকে বিশ রাকাত তারাবীহ পড়াতে হুকুম দিতেন। আর বিতিরের জামাত হযরত আলী নিজেই পড়াতেন। {বায়হাকী-৪/৪৯৬}


আসার নং-০২

عن عبد العزيز بن رفيع قال كان ابى بن كعب يصلى بالناس فى رمضان بالمدينة عشرين ركعة ويوتر بثلاثة

হযরত আব্দুল আজীজ বিন রফী থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ হযরত উবায় বিন কাব রাঃ লোকদেরকে রমজান মাসে মদীনা মুনাওয়ারায় বিশ রাকাত তারাবীহ এবং তিন রাকাত বিতির নামায পড়াতেন। {মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা-৫/২২৪}


আসার নং -০৩

عن زيد بن وهب قال كان عبد الله يصلي بنا في شهر رمضان فينصرف وعليه ليل قال الا  عمش كان يصلى عشرين ركعة ويوتر بثلث

হযরত জায়েদ বিন ওহাব বলেনঃ হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ আমাদের তারাবীহ পড়িয়ে ফারিগ হতেন এমতাবস্থায় যে, তখনো রাত অনেক বাকি থাকতো, ইমাম আমাশ বলেনঃ তিনি বিশ রাকাত তারাবীহ আর তিন রাকাত বিতির পড়াতেন। {কিয়ামুল লাইল-১৫৭}


আসার নং-০৪

عن سعيد بن ابى عبيد ان على بن ربيعة كان يصلى بهم فى رمضان خمس ترويحات ويوتر بثلاث

হযরত সাঈদ বিন আবু উবায়েদ থেকে বর্ণিত। হযরত আলী বিন রাবীয়া পাঁচ তারবিহা তথা বিশ রাকাত তারাবীহ এবং তিন রাকাত বিতির জামাতের সাথে পড়তেন। {মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা-২/৩৯৩}


 ইজমায়ে সাহাবা:


بإجماع المسلمين) ش: أي على ترك الوتر بجماعة في غير رمضان بإجماع المسلمين قال تاج الشريعة لأن الصحابة - رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ - لم يجتمعوا على الوتر بغير جماعة كما اجتمعوا على التراويح،

মুসলিমদের ঐক্যমত অনুসারে অর্থাৎ বিতরের নামায জামাআতের সাথে রমজানের বাইরে ছেড়ে দেওয়া। মুসলমান অর্থ সাহাবায়ে কেরাম রা.।  তারা বিতরের নামাজ জামাআতের সাথে আদায় করার ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করেনি রমজান ব্যতীত যেভাবে ঐক্যমত পোষণ করেছেন তারাবির ব্যাপারে। সূত্র: কিতাবুল বিনাইয়া শারহুল হিদায়া-২/৫৫৮


তাবেয়িদের আমল:

মক্কা মুকাররমায় হযরত আতা বিন আবী রাবাহ রহঃ [মৃত্যু ১১৪হিজরী] বলেনঃ ادركت الناس وهم يصلون ثلاثة وعشرون ركعة بالوتر তথা আমি লোকদের [সাহাবা ও তাবেয়ীগণ] বেতের নামাযসহ ২৩ রাকাত পড়তে দেখেছি। {মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা-২/৩৯৩}


প্রশ্ন: ক। খোলাফায়ে রাশেদিন, সাহাবা এবং তাবেয়িদের আমল গ্রহণযোগ্য তার দলিল আছে কি?


উত্তর: ক। হ্যাঁ, সাহাবা তথা খোলাফায়ে রাশেদিন তাবিয়িদের আমল গ্রহণযোগ্য। তাদেরকে অনুসরণ করতে আল্লাহ রাসুল নির্দেশ দিয়েছেন। দলিল:


হাদিস নং-০১

إِنّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ بَعْدِي فَسَيَرَى اخْتِلَافًا كَثِيرًا، فَعَلَيْكُمْ بِسُنّتِي وَسُنّةِ الْخُلَفَاءِ الرّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ، تَمَسّكُوا بِهَا، وَعَضّوا عَلَيْهَا بِالنّوَاجِذِ.

قال الترمذي: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ.

কোনো সন্দেহ নেই, আমার পর যারা বেঁচে থাকবে তারা অনেক এখতেলাফ দেখতে পাবে। তখন আমার সুন্নাহ এবং হেদায়েতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাহকে গ্রহণ করবে। এই আদর্শকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরবে এবং মাঢ়ীর দাঁত দিয়ে কামড়ে থাকবে। Ñজামে তিরমিযী, হাদীস ২৬৭৬; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৬০৭


হাদিস নং-০২

عن عمران بن الحصين قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم خَيْرُ أُمَّتي قَرْنِي ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ

অর্থঃ হযরত ইমরান বিন হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম তারা যারা আমার যুগে রয়েছে (অর্থাৎ সাহাবায়ে কেরাম)। অতঃপর তাদের পরবর্তী যুগের উম্মাত (তথা তাবেয়ীগণ)। অতঃপর তাদের পরবর্তী যুগের উম্মাত। (অর্থাৎ, তাবয়ে তাবেয়ীণ) । তাখরিজ: বুখারি-২৬৫২,২৬৫১


হাদিস নং-০৩

 قال رسول الله صلي الله عليه وسلم أوحي الله يا محمد ان اصحابك عندي كالنجوم بعضها اضوأ من بعض ولكل نور فمن اخذ بشي مماهم عليه من اختلافهم فهو عندي علي الهدي – رواه الدارقطني-

অর্থঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন আল্লাহ অহী পাঠিয়েছেন যে, হে মুহাম্মাদ! আপনার সাহাবীগণ আমার নিকট নক্ষত্রতুল্য, কেউ অতি উজ্জল কেউ তার চেয়ে কম, তবে সকলেরই আলো আছে। অতএব, তাদের মতবিরোধের ক্ষেত্রেও যে কোন এক পক্ষকে অনুসরণ করলেই সে অনুসারী আমার নিকট হেদায়াত প্রাপ্ত বলে গণ্য হবে।


নোট: কেননা, তাদের বিরোধ হবে ইজতেহাদী, আর সঠিক ইজতেহাদের কোন অংশকেই নিশ্চিত ভুল বলা যাবে না) হাদীসটির সনদে দুর্বলতা থাকলেও এ মর্মে আরো অনেক হাদীস থাকায় এবং হাদীসটি বিষয় বস্তু কুরআনের বিভিন্ন আয়াত ও অপরাপর হাদীস সমর্থিত হওয়ায় হাদীসটি সম্পূর্ণ গ্রহণযোগ্য)। তাফসীরে মাযহারী ২য় খন্ড পৃঃ ১১৬

 

সারকথা হলো, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণিত একটি হাদীস এবং সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়িগণের নিরবচ্ছিন্ন আমল দ্বারা এটি প্রমাণিত যে, রমজানে তারাবিহর শেষে বিতর নামায জামাআতের সাথে পড়া হবে। অন্য সময়ে এমনটি বর্ণিত হয়নি।


 

 والله اعلم بالصواب

উত্তর প্রদানে মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক