জিজ্ঞাসা-১২৯২২:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আস্সালামু আলাইকুম। । একটি জানাৱ বিষয়। শ্বাসকষ্টে ভোগা ৱোগী ৱোজা অবস্থায় অধিক কষ্টেৱ কাৱণে ইনহেলার নিতে পাৱবে কি?
তারিখ: ০২/০৩/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আশরাফুল ইসলাম কুমিল্লা থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, ইনহিলার গ্রহণ করলে রোজা ভাঙ্গবে কি না এ বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। আহলে হাদিসের মতে রোজা ভাঙ্গবে না আর ফিকহি হানিফর মতে ভেঙ্গে যাবে।
দ্বিতীয় কথা হল পাকস্থলীতে কোন কিছু পৌঁছে গেলে রোজা ভেঙে যাবে এটা সর্ব সম্মত সিদ্ধান্ত।
আলোচ্য মাসআলায় মতভেদের কারণ হলো, ইনহিলার পেটে পৌঁছে কি না।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে,শ্বাস গ্রহণের রাস্তা দিয়ে কোন ঔষধ উদাহরণ স্বরূপ ভেনটোলিন ইনহেলার ব্যবহার করলে তার ১০% উপকরণ সরাসরি ফুসফুসে পৌছায়,বাকী ৯০% উপকরণ পরিপাকযন্ত্র শোষন করে,আর এ অবস্থায় ঔষধ সরাসরি রোগীর পেটে গিয়ে পৌঁছায়।
যেহেতু ইনহেলার গ্রহণের রাস্তাটি সেটাই যেটা দ্বারা খাদ্য পেটে যায়, বা খাদ্য পৌঁছানোর নালির নিকটবর্তী শিরা দিয়ে তা গ্রহণ করা হয়,তাই এর দ্বারা রোযা ভেঙ্গে যাবে। সতর্কতা এটাই। সতর্কতা হিসেবে শরয়ী অনেক বিধানই সাব্যস্ত হয়। উদাহরণত-
ঘুমকে অযু ভঙ্গের কারণ সাব্যস্ত করা। এ হিসেবে যে, ঘুমিয়ে গেলে নিতম্ব জমিন থেকে উঠে যেতে পারে, ফলে বায়ু বের হয়ে যায়। যদিও ঘুম অযু ভঙ্গের কারণ নয়, বরং বায়ু বের হওয়া হল অযু ভঙ্গের কারণ। কিন্তু যেহেতু ঘুমিয়ে গেলে এসব ব্যাপারে কোন খবর থাকে না, তাই ঘুমটাকেই সতর্কতাস্বরূপ অযু ভঙ্গের কারণ সাব্যস্ত করা হয়েছে। {বাদায়েউস সানায়ে-২/৫৩৫}
تعدد فتاوى لجنة الافتاء في الوزارة بشأن استعمال جهاز الكمام الكهربائي، وبخاخات الفنتولين الموسعة للشعب الهوائية لمرضى الربو لضيق التنفس.لقد صدرت الفتوى اخيرا بأن هذه الاجهزة تفطر في شهر الصيام، علما بأنه في السابق قالوا انها لا تفطر.واطلعت الهيئة على الفتوى السابقة رقم (98ع89/)، ونصها:ما هو حكم استخدام الفنتولين (البخاخ) لمرضى الربو في شهر رمضان هل هو مفطر؟ أم لا؟
وايضا ما حكم الشرع في استخدام الكمام الكهربائي (فنتولين + انتال) لتوسعة الشعب الهوائية - علاج ضيق الرئتين.
ويوجد عينة لجهاز البخاخ مرفق مع الاستفتاء.
واجابت اللجنة على ذلك الاستفتاء في حينه بما يلي:
استخدام البخاخ لا يفطر لانه يدخل الى القصبات الهوائية بشكل غاز ولا يصل الى المعدة ولا تشتهيه النفس، بل هو للعلاج، وفي تركه للمحتاج اليه مشقة وحرج يؤدي الى منعه من الصيام ابدا، والله اعلم.
كما اطلعت هيئة الفتوى على الفتوى اللاحقة رقم (1 ه93/)، ونصها: ما هو حكم استخدام الفنتولين (البخاخ) لمرضى الربو في شهر رمضان، هل هو مفطر، ام لا؟
وبعد ان اطلعت الهيئة على تقرير رئيس وحدة الصدر ومكافحة الدرن د. عدنان ابل المتضمن: ان هذه البخاخات تحمل جزئيات مواد تدخل الى المعدة عن طريق الحلق.
وعليه فترى الهيئة ان المريض الذي يستعمل هذا البخاخ ان كان مرضه مستمرا ولا يستغني يوما عن استعماله يعتبر من اصحاب الاعذار، وله ان يفطر ويفدي وليس عليه القضاء، واما ان كانت الازمة تأتيه على فترات متقطعة فاستعمال هذا البخاخ مفطر، وعلى من استعمله ان يقضي بعد ذلك في فترات الصحة، والله اعلم.
অর্থাৎ সিয়াম পালনকালে শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানীরোগীদের পথ্য সরঞ্জাম হিসেবে স্প্রে ব্যবহার করা যাবে কিনা, এবিষয়ে ধর্মমন্ত্রণালয়ের ফতোয়া বোর্ড প্রথমে এই সিদ্ধান্ত প্রদান করে যে, এজাতীয় স্প্রে ব্যবহারের মাধ্যমে রোজা ভঙ্গ হবেনা। কেননা তা এক প্রকার বায়বীয় আকার ধারণ করে গলদেশে প্রবেশ করে, তবে তা পাকস্থলী পর্যন্ত পৌঁছায়না। তাছাড়া এটি খাদ্য পরিপূরক হিসেবেও মানুষ গ্রহণ করেনা, বরং এটি নিছক আরোগ্যদায়ী পথ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়ে থাকে। সুতরাং হাঁপানী রোগাক্রান্ত ব্যক্তিকে এধরণের স্প্রে গ্রহণে বাধা প্রদান করার মানে প্রকারান্তরে স্থায়ীভাবে তার সিয়াম পালনের দ্বার রুদ্ধ করে দেয়া। সুতরাং শ্বাসকষ্ট রোগের যাতনায় আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য সন্দেহাতীতভাবেই ইনহেলার ব্যবহার করা যাবে।
এটি ছিলো ফতোয়া বোর্ডের প্রথম ফতোয়া।
তবে যক্ষা ও বক্ষব্যাধী নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আদনানের গবেষণালব্ধ মতামত হলো, এজাতীয় স্প্রেগুলোর মাঝে একপ্রকার খাদ্য উপকরণ আছে, যা গলদেশ দিয়ে প্রবেশ করে পাকস্থলীর পর্যন্ত পৌঁছে যায়।
ফতোয়া বোর্ডের নিকট যখন এই গবেষক, চিন্তক ডাক্তার সাহেবে প্রতিবেদনটি গোচরীভূত হয়, তখন তারা পূর্বেকার মতামত থেকে ফিরে এসে আগের সিদ্ধান্তকে প্রত্যাহার করে নেয়। এবং এই বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয় যে, দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত অসুস্থ ব্যক্তির যদি এই স্প্রে নিয়মিত ব্যবহার করা লাগে, তাহলে সে এই স্প্রে রমাদানের দিবসগুলোতেও ব্যবহার করতে পারবে। এবং এটিকে শরয়ী 'ওজর' হিসেবে বিবেচনা করত তাকে রোজা না রাখার অবকাশ দেয়া হবে। সে রোজা ভেঙ্গে এর ফিদয়া আদায় করে দিবে। উল্লেখ্য, তার জন্য বিগতদিনগুলোতে ছুটে যাওয়া রোজার কাজা করা আবশ্যক নয়। তবে তার এই রোগটি যদি সাময়িক ব্যাধী হয়ে থাকে, তাহলে তারও তো রোজা ভাঙার অবকাশ তো থাকবেই, তবে পরবর্তীতে সুস্থ হয়ে গেলে ছুটে যাওয়া রোজাগুলো তাকে যথাযথভাবে দায়িত্বশীলতার সাথে কাজা করে নিতে হবে।
আল্লাহ তায়ালাই ভালো জানেন।
প্রশ্ন: ক। যদি রোজা অবস্থায় ইনহিলার গ্রহণ করা জরুরি হয়ে পড়ে, তাহলে কি করবে?
উত্তর: ক। রোযা অবস্থায় ইনহেলার ব্যবহার করলে রোযা ভেঙ্গে যায়। তাই সাহরীর শেষ সময় এবং ইফতারের প্রথম সময় ইনহেলার ব্যবহার করলে যদি তেমন অসুবিধা না হয় তবে রোযা অবস্থায় ইনহেলার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা জরুরি। কিন্তু অসুস্থতা বেশি হওয়ার কারণে যদি দিনেও ব্যবহার করা জরুরি হয় তাহলে তখন ব্যবহার করতে পারবে। সেক্ষেত্রে করণীয় হল :
১. উক্ত ওজরে দিনের বেলা ইনহেলার করলেও অন্যান্য পানাহার থেকে বিরত থাকবে।
২. পরবর্তীতে রোগ ভালো হলে এর কাযা করে নিবে।
৩. আর ওজর যদি আজীবন থাকে তাহলে ফিদয়া আদায় করবে। দলিল -
Surah Al-Baqara, Verse 184:
أَيَّامًا مَّعْدُودَاتٍ فَمَن كَانَ مِنكُم مَّرِيضًا أَوْ عَلَىٰ سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ وَعَلَى الَّذِينَ يُطِيقُونَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ فَمَن تَطَوَّعَ خَيْرًا فَهُوَ خَيْرٌ لَّهُ وَأَن تَصُومُوا خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ
গণনার কয়েকটি দিনের জন্য অতঃপর তোমাদের মধ্যে যে, অসুখ থাকবে অথবা সফরে থাকবে, তার পক্ষে অন্য সময়ে সে রোজা পূরণ করে নিতে হবে। আর এটি যাদের জন্য অত্যন্ত কষ্ট দায়ক হয়, তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাদ্যদান করবে। যে ব্যক্তি খুশীর সাথে সৎকর্ম করে, তা তার জন্য কল্যাণ কর হয়। আর যদি রোজা রাখ, তবে তোমাদের জন্যে বিশেষ কল্যাণকর, যদি তোমরা তা বুঝতে পার। সূরা বাকারা-১৮৪
সারকথা হলো, ফিকহি হানিফর মতটা অধিক শক্তিশালী। সুতরাং ইনহিলার নিলে রোজা ভেঙ্গে যাবে।
যদি কারও বক্ষব্যাধি এমন জটিল ও মারাত্মক আকার ধারণ করে যে, ইনহেলার নেওয়া ব্যতীত ইফতার পর্যন্ত অপেক্ষা করা সম্ভব নয়, তাদের জন্য শরিয়তে সুযোগ আছে, তারা প্রয়োজন অনুযায়ী ইনহেলার ব্যবহার করবে ও পরে রোজার কাজা করে নেবে । আর কাজা সম্ভব না হলে ফিদিয়া আদায় করবে। (ইসলাম ও আধুনিক চিকিৎসা, ৩২৪)
والله اعلم بالصواب