আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-১২৯৪৬: অমুসলিমদের জন্য রোগ মুক্তির দুআ জায়েজ আছে কি?

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১২৯৪৬: 

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আমার জানার বিষয় হলো, একটি ইউনিটে মুসলিম অমুসলিম সবাই চাকরি করেন। একজন মুসলিম সদস্য অসুস্থ হলে আমরা তার জন্য নামাজ অন্তে দোয়া করি। এখন প্রশ্ন হলো অমুসলিম সদস্য অসুস্থ অর্থাৎ ক্যানসার আক্রান্ত। তার জন্য নামাজ অন্তে দোয়া করা যাবে কি?

তারিখ:  ০৩/০৪/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 মাওলানা  আব্দুল মজিদ  যশোর থেকে।


 জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, অমুসলিমদের জন্য রহমত- মাগফেরাতের জন্য দোয়া করা সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। যেমন-

আল্লাহ তাআলা বলেন-

مَا كَانَ لِلنَّبِیِّ وَ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْۤا اَنْ یَّسْتَغْفِرُوْا لِلْمُشْرِكِیْنَ وَ لَوْ كَانُوْۤا اُولِیْ قُرْبٰی مِنْۢ بَعْدِ مَا تَبَیَّنَ لَهُمْ اَنَّهُمْ اَصْحٰبُ الْجَحِیْمِ

“নবী ও যারা ঈমান এনেছে তাদের পক্ষে মুশরিকদের জন্য মাগফিরাতের দোয়া করা সংগত নয়, তারা তাদের আত্মীয়-স্বজন হলেই বা কি এসে যায়, যখন একথা সুষ্পষ্ট হয়ে গেছে যে, তারা জাহান্নামেরই উপযুক্ত।”(সূরা আত তওবা : ১১৩)


ইমাম নববী রহ. বলেন,

الصلاة على الكافر والدعاء له بالمغفرة : حرام بنص القرآن والإجماع

অমুসলিমের জন্য রহমত ও মাগফিরাতের দোয়া করা কোরআনের বক্তব্য ও সকলের ঐক্যমতে হারাম। (আলমাজমু’ ৫/১১৯)


দ্বিতীয় কথা হলো, হেদায়েতের জন্য তাদের জন্য দোয়া করা, ইসলামী শিক্ষা, এটা কাম্য। দলিল -

قَالَ : إِنَّ دَوْسًا قَدْ عَصَتْ وَأَبَتْ ، فَادْعُ اللَّهَ عَلَيْهِمْ ، فَقَالَ : اللَّهُمَّ اهْدِ دَوْسًا وَأْتِ بِهِمْ

আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তুফায়েল ইবনু আমর রাযি. রাসূল ﷺ–এর কাছে এসে বললেন, দাওস গোত্র হালাক হয়ে গেছে। তারা নাফরমানী করেছে এবং (দীনের দাওয়াত) গ্রহন করতে অস্বীকার করেছে। সুতরাং আপনি তাদের প্রতি বদদোয়া করুন। তখন রাসূল ﷺ বললেন, হে আল্লাহ্! দাওস গোত্রকে হেদায়েত দান করুন এবং (দীনের দিকে) নিয়ে আসুন। (বুখারী ২৯৩৭ মাগাযী অধ্যায়)


তৃতীয় কথা হলো, স্বাভাবিক অবস্থায় মানবিক দিক বিবেচনায় অমুসলিমদের রোগমুক্তির জন্য আল্লাহপাকের নিকট প্রার্থনা করা যাবে। দলিল -


أبي هريرة رضي الله عنه قَال: قَالَ رسولُ الله صلى الله عليه وسلم : "إنَّ اللهَ عز وجل يَقُولُ يَومَ القِيَامَةِ: يَا ابْنَ آدَمَ، مَرِضْتُ فَلَمْ تَعُدنِي! قَالَ: يَا رَبِّ، كَيْفَ أعُودُكَ وَأنْتَ رَبُّ العَالَمِينَ؟!، قَالَ: أمَا عَلِمْتَ أنَّ عَبْدِي فُلاَناً مَرِضَ فَلَمْ تَعُدْهُ! أمَا عَلِمْتَ أنَّكَ لَوْ عُدْتَهُ لَوَجَدْتَني عِنْدَهُ! يَا ابْنَ آدَمَ، اسْتَطْعَمْتُكَ فَلَمْ تُطْعِمنِي! قَالَ: يَا رَبِّ، كَيْفَ أطْعِمُكَ وَأنْتَ رَبُّ العَالَمِينَ؟! قَالَ: أمَا عَلِمْتَ أنَّهُ اسْتَطْعَمَكَ عَبْدِي فُلانٌ فَلَمْ تُطْعِمْهُ! أمَا عَلِمْتَ أنَّكَ لَوْ أطْعَمْتَهُ لَوَجَدْتَ ذَلِكَ عِنْدِي! يَا ابْنَ آدَمَ، اسْتَسْقَيْتُكَ فَلَمْ تَسْقِنِي! قَالَ: يَا رَبِّ، كَيْفَ أسْقِيكَ وَأنْتَ رَبُّ العَالَمينَ؟! قَالَ: اسْتَسْقَاكَ عَبْدِي فُلاَنٌ فَلَمْ تَسْقِهِ! أمَا عَلِمْتَ أنَّكَ لَوْ سَقَيْتَهُ لَوَجَدْتَ ذَلِكَ عِنْدِي".  

[صحيح] - [رواه مسلم]

আবু হুরায়রাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মহান আল্লাহ কিয়ামতের দিন বলবেন, ‘হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ ছিলাম, তুমি আমাকে দেখাশুনা করনি।’ সে বলবে, ‘হে আমার রব! কিভাবে আমি আপনাকে দেখাশুনা করব, আপনি তো সৃষ্টিকুলের রব?’ তিনি বলবেন, ‘তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল? অথচ তুমি তাকে দেখাশুনা করনি। তুমি কি জানতে না যে, তুমি যদি তাকে দেখাশুনা করতে, তাহলে অবশ্যই তুমি আমাকে তার কাছে পেতে? হে আদম সন্তান! আমি তোমার কাছে খাবার চেয়েছিলাম, তুমি আমাকে খাওয়াওনি।’ সে বলবে, ‘হে আমার রব! আমি আপনাকে কিভাবে খাওয়াব, আপনি তো সৃষ্টিকুলের রব?’ আল্লাহ বলবেন, ‘তোমার কি জানা ছিল না যে, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাবার চেয়েছিল, কিন্তু তাকে তুমি খাবার দাওনি? তোমার কি জানা ছিল না যে, যদি তাকে খাওয়াতে, তাহলে অবশ্যই তা আমার কাছে পেতে? হে আদম সন্তান! তোমার কাছে আমি পানি পান করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে পানি পান করাওনি।’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার রব! আপনাকে কিরূপে পানি পান করাবো, আপনি তো সকল সৃষ্টির রব?’ তিনি বলবেন, ‘আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে পানি চেয়েছিল, তুমি তাকে পানি পান করাওনি। তুমি কি জানতে না যে, যদি তাকে পানি পান করাতে, তাহলে তা অবশ্যই আমার কাছে পেতে?’’। তাখরিজ: মুসলিম-২৫৬৯


সারকথা হলো,  রোগ মুক্তির জন্য অমুসলিমদের জন্য দুআ জায়েজ আছে, তবে মাগফিরাতের দুআ করা হারাম।



  والله اعلم بالصواب