জিজ্ঞাসা-১২৫৪১:
আসসালামু আলাইকুম ফিতরা টাকা দিয়ে আদায় করবো নাকি খাদ্যদ্রব্য দিয়ে?
এই নিয়ে চরম বিতর্ক চলছে, এই ব্যাপারে দালিলিক জবাব আশা করছি,
জুমুয়াতে আলোচনা করতে হবে তাই নামাজের আগে উত্তর দিলে উপকৃত হতাম।
অগ্রিম জাজাকাল্লাহ খাইরান এটি
তারিখ: ১৪/০৪/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা কামরুল হাসান, যশোর থেকে
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, খাদ্য দ্রব্য দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় করার ব্যাপারে ইমামদের মধ্যে রয়েছে।
ইমাম শাফি, ইমাম মালেক শায়েখ ইবনে বাজ, আলবানী রহ. মতে খাদ্যদ্রব্য ছাড়া কোন কিছু বা টাকা দিয়ে সদকাতুল ফিতর আদায় করা জায়েজ নয়।
ওলামায়ে আহনাফ এবং ইমাম আহমদের রহ. একটি মতে খাদ্যদ্রব্যের মূল্য তথা টাকা দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় করা জায়েজ, বরং উত্তম।
ফিকহি আহনাফের দলিল:
হাদিস/আসার নং-০১
قال البخاري في صحيحه: وقال طاوس: قال معاذ رضي الله عنه لأهل اليمن: ائتوني بِعَرْض ثياب خميص أو لبيس في الصدقة مكان الشعير والذرة أهون عليكم وخير لأصحاب النبي صلى الله عليه وسلم بالمدينة.
ইমাম বুখারি (রহ.) তাঁর সহিহ বুখারিতে মুআজ (রা.)-এর বক্তব্য উল্লেখ করেছেন,
তিনি ইয়ামেনবাসীকে বলেন, তোমরা সদকার মধ্যে খাদ্যদ্রব্যের পরিবর্তে কাপড় নিয়ে আসো। কেননা এটা তোমাদের জন্য অধিকতর সহজ এবং মদিনার সাহাবিগণের জন্যও অধিক উপযোগী। (বুখারি, হাদিস : ১১৪৭)
হাদিস/আসার নং-০২
مصنف ابن أبي شيبة (2/ 398)
فِي إِعْطَاءِ الدَّرَاهِمِ فِي زَكَاةِ الْفِطْرِ
10371 – حَدَّثَنَا أَبُو أُسَامَةَ، عَنْ زُهَيْرٍ، قَالَ: سَمِعْتُ أَبَا إِسْحَاقَ، يَقُولُ: «أَدْرَكْتُهُمْ وَهُمْ يُعْطُونَ فِي صَدَقَةِ رَمَضَانَ الدَّرَاهِمَ بِقِيمَةِ الطَّعَامِ»
অর্থ : হযরত যুহাইর (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবূ ইসহাক (রহ.) থেকে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, আমি সাহাবায়ে কেরাম (রা.) কে এই অবস্থায় পেয়েছি যে, তারা রমজানে সাদাকায়ে ফিতর খাবারের বিনিময়ে টাকা দ্বারা আদায় করতেন। তাখরিজ: ইবনে আবি শায়বা-২/৩৯৮, হাদীস-১০৩৭১
নোট: এটির সনদ সম্পূর্ণ সহীহ তথা প্রমাণযোগ্য।
قال ابن رشيد: وافق البخاري في هذه المسألة الحنفية مع كثرة مخالفته لهم لكن قاده إلى ذلك الدليل. ولهم في ذلك أدلة اعتمدوا عليها، واعتبارات استندوا إليها، كما أن المانعين لإخراج القيمة لهم أيضًا أدلة واعتبارات مخالفة. وقد فصلنا القول في ذلك في موضعه من كتابنا: "فقه الزكاة " فصل: إخراج القيمة من باب طريقة أداء الزكاة.
قال ابن حجر في الفتح: وعلى غير عادة البخاري في مخالفته للأحناف أن اتفق معهم في إخراج صدقة الفطر نقوداً وفي جواز إخراج العوض في الزكاة وبوب البخاري باباً سماه "باب العوض".
আল্লামা ইবনু রাশিদ (রহ.) বলেন, উক্ত মাসআলাটির মাঝে ইমাম বুখারি (রহ.) হানাফিদের সহমত পোষণ করেছেন। (ফাতহুল বারি, ইবনে হাজার : ৩/৩১২)
হাদিস/আসার নং-০৩
مصنف ابن أبي شيبة (2/ 398)
10370 – حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنْ سُفْيَانَ، عَنْ هِشَامٍ، عَنِ الْحَسَنِ، قَالَ: «لَا بَأْسَ أَنْ تُعْطِيَ الدَّرَاهِمَ فِي صَدَقَةِ الْفِطْرِ»
অর্থ : হযরত হাসান বসরী (রহ.) বলেন, টাকা দ্বারা সাদাকায়ে ফিতর আদায় করার দ্বারা কোন সমস্যা নেই। ইবনে আবি শায়বা-২/৩৯৮, হাদীস-১০৩৭০
তাবেয়িদের আমল:
হযরত ওমর বিন আব্দুল আযীয (রহ.) এর চিঠি-
مصنف ابن أبي شيبة (2/ 398)
10369 – حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنْ قُرَّةَ، قَالَ: جَاءَنَا كِتَابُ عُمَرَ بْنِ عَبْدِ الْعَزِيزِ فِي صَدَقَةِ الْفِطْرِ «نِصْفُ صَاعٍ عَنْ كُلِّ إِنْسَانٍ أَوْ قِيمَتُهُ نِصْفُ دِرْهَمٍ»
অর্থাৎ এক ব্যক্তির জন্য অর্ধ সা অথবা অর্ধ সার মূল্য , অর্ধেক দিরহাম দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় করার জন্য লেখে পাঠিয়েছেন। তাখরিজ:
ইবনে আবি শায়বা-২/৩৯৮, হাদীস-১০৩৬৯।
হাদিস বিশারদ এর কিতাবে উল্লেখ:
আর ইমাম বায়হাকী (রহ.) তার রচিত কিতাব সুনানুল কুবরা-৪/১৮৯ এর মাঝে এই ভাবে অনুচ্ছেদ স্থাপন করেন যে–بَابُ مَنْ أَجَازَ أَخْذَ الْقِيَمِ فِي الزَّكَوَاتِ. অথাৎ এই অনুচ্ছেদ হলো টাকা দ্বারা যাকাত আদায় করা অনুমোদিত।
কিয়াস দ্বারা দলিল:
حَدَّثَنَا مَحْمُودُ بْنُ خَالِدٍ الدِّمَشْقِيُّ، وَعَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ السَّمَرْقَنْدِيُّ، قَالاَ حَدَّثَنَا مَرْوَانُ، قَالَ عَبْدُ اللَّهِ حَدَّثَنَا أَبُو يَزِيدَ الْخَوْلاَنِيُّ، - وَكَانَ شَيْخَ صِدْقٍ وَكَانَ ابْنُ وَهْبٍ يَرْوِي عَنْهُ - حَدَّثَنَا سَيَّارُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، - قَالَ مَحْمُودٌ الصَّدَفِيُّ - عَنْ عِكْرِمَةَ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ فَرَضَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم زَكَاةَ الْفِطْرِ طُهْرَةً لِلصَّائِمِ مِنَ اللَّغْوِ وَالرَّفَثِ وَطُعْمَةً لِلْمَسَاكِينِ مَنْ أَدَّاهَا قَبْلَ الصَّلاَةِ فَهِيَ زَكَاةٌ مَقْبُولَةٌ وَمَنْ أَدَّاهَا بَعْدَ الصَّلاَةِ فَهِيَ صَدَقَةٌ مِنَ الصَّدَقَاتِ .
অর্থ: ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সাদ্কাতুল ফিতর রোযাকে বেহুদা ও অশ্লীল কথাবার্তা ও আচরণ থেকে পবিত্র করার উদ্দেশ্যে এবং মিস্কীনদের খাদ্যের ব্যবস্থার জন্য ফরজ করেছেন। যে ব্যক্তি তা (ঈদুল্ ফিতরের) নামাযের পরে পরিশোধ করে তা অন্যান্য সাধারণ দান-খয়রাতের অনুরূপ হিসাবে গণ্য।
—সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ১৬০৯ (আন্তর্জাতিক নং ১৬০৯)
তাহকীক: বিশুদ্ধ (পারিভাষিক হাসান)
উপরোক্ত হাদিস থেকে আমরা জানতে পারলাম সাদকাতুল ফিতের আজব হওয়ার কারণ দুটি।
০১. রোজার কাফফারা স্বরূপ।
০২. মিসকিনদের খাবারের ব্যবস্থা করা।
হাকিমুল উম্মত, মোজাদ্দেদুল মিল্লাত শাহ আশরাফ আলী রহ. বলেন, টাকা হলো সবচেয়ে বড় রিজিক। (তাই আমি টাকা বাম হাতে কখনো গ্রহণ করি না।) টাকা দিয়ে সবকিছুই হয়, নিজের সব প্রয়োজন মেটানো যায়।
তাই ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এই দৃষ্টিকোণ থেকেই বলেছেন, টাকা দিয়ে আদায় করা উত্তম। কারণ এটি মানুষের জন্য সহজ এবং উপকারী।
শায়েখ ইবনে তাইমিয়ার বক্তব্য:
ومثل أن يكون المستحقون للزكاة طلبوا منه إعطاء القيمة لكونها أنفع، فيعطيهم إياها أو يرى الساعي أنها أنفع للفقراء، كما نُقِلَ عن معاذ بن جبل: أنه كان يقول لأهل اليمن: "ائتوني بخميس أو لبيس، أيسر عليكم وخير لمن في المدينة من المهاجرين والأنصار، وهذا قد قيل: إنه قاله في الزكاة وقيل في الجزية). (مجموع فتاوى ابن تيمية 25/82، 83 ط. السعودية)، وهذا، وإن قاله في زكاة المال، فهو ينطبق على زكاة الفطر
অনুরূপভাবে যাকাতের হকদাররা তাকে মূল্য দিতে বলেন কারণ এতে অধিক উপকার হয়। তাই তিনি তা তাদের দেন, অথবা তিনি চিন্তা দেখেন যে এটি গরীবদের জন্য বেশি উপকারী, যেমন মুআয বিন জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে: তিনি ইয়েমেনবাসীদের বলতেন: “আমার কাছে বৃহস্পতিবার বা একটি দিন নিয়ে এসো। পোশাকের টুকরো, যা আপনার জন্য সহজ এবং মদিনার মুহাজির ও আনসারদের জন্য উত্তম। সূত্র: মাজমু' ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া 25/82, 83 সংস্করণ, সৌদি আরব।
সারকথা হলো, মোটকথা সালাফদের কর্ম ও বক্তব্য দ্বারা স্পষ্ট যে টাকা দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় করা যায়; বরং ক্ষেত্রবিশেষ এর মাধ্যমে আদায় করা উত্তম।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক