আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

সিরাত-৩০: মক্কী জীবন

No Comments

 



আলোচ্য বিষয় ছিল, 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়ত প্রাপ্তির পর থেকে ১৩ বছরের মক্কি জীবনে দাওয়াতের ক্ষেত্রে মৌলিক মেসেজ। 


হামদ ও সানার পর আলোচনা এভাবে শুরু করেছিলাম, প্রিয় উপস্থিতি প্রথমেই চারটি সংখ্যা মনে রাখেন। 

৩.২.৫.৩

সবাই আমর সাথে উপরের চারটি সংখ্যা বললেন, তারপর বললাম আমারা মাক্কী জীবনকে চারভাগে ভাগ করব। 


এক. 

গোপনে তিন(৩) বছর দাওয়াত। 

দুই. 

প্রকাশ্যে দাওয়াত শুরু করার পর দুবছর (২) মিথ্যা অপবাদ সহ্য।

তিন. 

পরের পাচ(৫) বছর জুলুম নির্যাতন সহ্য। 

চার. 

চাচা আবু তালিব ও খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহার মৃত্যুর পর তিন(৩) বছর অসহনীয় যন্ত্রনা। 


এবার মিলিয়ে নেন সংখ্যাগুলো। 

৩.২.৫.৩=১৩


প্রিয় উপস্থিতি সংক্ষেপে ১৩ বছরের দাওয়াতের বিবরণ পেশ করছি। 

প্রথমেই মনে রাখব, যে কোন কাজকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য বিরোধী পক্ষ অনেক অপকৌশল অবলম্বন করে, মক্কার কাফেররা প্রিয় হাবিবের কাজকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য নানান অপকৌশল অবলম্বন করে। আমি আটটি বাধার কথা আপনাদের সামনে করছি। 


এক. 

মুবাল্লীগকে(মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্যাতন, এ ব্যাপারে আপনাদের সামনে দুটি দৃষ্টান্ত পেশ করছি। 


দৃষ্টান্ত-১

বুখারী- ৫২০


عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ بَيْنَمَا رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَائِمٌ يُصَلِّي عِنْدَ الْكَعْبَةِ وَجَمْعُ قُرَيْشٍ فِي مَجَالِسِهِمْ 

‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা‘বার নিকটে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিলেন। আর কুরাইশের একদল তাদের মাজলিসে উপবিষ্ট ছিল। 


إِذْ قَالَ قَائِلٌ مِنْهُمْ أَلاَ تَنْظُرُونَ إِلَى هَذَا الْمُرَائِي أَيُّكُمْ يَقُومُ إِلَى جَزُورِ آلِ فُلاَنٍ فَيَعْمِدُ إِلَى فَرْثِهَا وَدَمِهَا وَسَلاَهَا فَيَجِيءُ بِهِ ثُمَّ يُمْهِلُهُ حَتَّى إِذَا سَجَدَ وَضَعَهُ بَيْنَ كَتِفَيْهِ 

তাদের মধ্য হতে এক ব্যক্তি বললঃ তোমরা কি এই রিয়াকারকে লক্ষ করছ না? (তাদের সামনে সালাত পড়ছিলেন, তাই তারা এই কথা বলেছে) 

তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে, যে অমুক গোত্রের উট যবহ্ করার স্থান পর্যন্ত যেতে পার? সেখান হতে গোবর, রক্ত ও নাড়িভুড়ি নিয়ে এসে অপেক্ষা করবে। যখন তিনি সাজদায় যাবেন, তখন এগুলো তার দুই কাঁধের মাঝখানে রেখে দিবে।


فَانْبَعَثَ أَشْقَاهُمْ فَلَمَّا سَجَدَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَضَعَهُ بَيْنَ كَتِفَيْهِ وَثَبَتَ النَّبِيُّ سَاجِدًا فَضَحِكُوا حَتَّى مَالَ بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ مِنْ الضَّحِكِ

 এ কাজের জন্য তাদের চরম দুর্ভাগা ব্যক্তি (‘উক্ববাহ ইবনু আবূ মু‘আইত) উঠে দাঁড়াল (এবং তা নিয়ে আসলো)। যখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাজদায় গেলেন তখন সে তাঁর দু’কাঁধের মাঝখানে সেগুলো রেখে দিল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাজদাহ্য় স্থির রয়ে গেলেন। এতে তারা পরস্পর হাসাহাসি করতে লাগলো। এমনকি হাসতে হাসতে একজন আরেকজনের গায়ের উপর লুটোপুটি করতে লাগল।


বুখারী- ৫২০

মুসল্লীর দেহ হতে মহিলা কর্তৃক অপবিত্রতা পরিষ্কার করা।


দৃষ্টান্ত-২

বুখারী-৪৮১৫


حَدَّثَنِيْ عُرْوَةُ بْنُ الزُّبَيْرِ قَالَ قُلْتُ لِعَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ أَخْبِرْنِيْ بِأَشَدِّ مَا صَنَعَ الْمُشْرِكُوْنَ بِرَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ 

‘উরওয়াহ ইবনু যুবায়র (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু আমর ইবনুল আ‘স (রাঃ)-কে বললাম, মুশরিকরা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে কঠোরতম কী আচরণ করেছে, সে সম্পর্কে আপনি আমাকে বলুন। তিনি বললেন,


بَيْنَا رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يُصَلِّيْ بِفِنَاءِ الْكَعْبَةِ إِذْ أَقْبَلَ عُقْبَةُ بْنُ أَبِيْ مُعَيْطٍ فَأَخَذَ بِمَنْكِبِ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَلَوَى ثَوْبَهُ فِيْ عُنُقِهِ فَخَنَقَهُ بِهِ خَنْقًا شَدِيْدًا 

একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা‘বার আঙ্গিণায় সালাত আদায় করছিলেন। এমন সময় ‘উকবাহ ইবনু আবূ মু’আইত আসল এবং সে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ঘাড় ধরল এবং তার কাপড় দিয়ে তাঁর গলায় পেচিয়ে খুব শক্ত করে চিপা দিল।


فَأَقْبَلَ أَبُوْ بَكْرٍ فَأَخَذَ بِمَنْكِبِهِ وَدَفَعَ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَقَالَ (أَتَقْتُلُوْنَ رَجُلًا أَنْ يَّقُوْلَ رَبِّـِيَ اللهُ وَقَدْ جَآءَكُمْ بِالْبَيِّنٰتِ مِنْ رَّبِّكُمْ)

  এ সময় আবূ বক্র (রাঃ) হাজির হয়ে তার ঘাড় ধরে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তাকে সরিয়ে দিলেন এবং বললেন, তোমরা কি এ ব্যক্তিকে এ জন্য হত্যা করবে যে সে বলে ‘আমার রব আল্লাহ্’; অথচ তিনি তোমাদের রবের নিকট থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণ সহকারে তোমাদের কাছে এসেছেন।


বুখারী- ৪৮১৫


দুই. 

মুবাল্লীগের অনুসারীদের উপর জুলুম নির্যাতন, এক্ষেত্রে আপনারা হযরত বেলাল, আম্মার ইবনে ইয়াসির, সুমাইয়া রাদিয়াল্লাহু আনহার নির্যাতনের কথাগুলো সীরাত থেকে পড়ে নিতে পারেন। 


তিন. 

মুবাল্লীগের সমর্থক এবং সাহায্যকারী কে বিভিন্ন হুমকি ধমকি দেওয়া, চাপ প্রয়োগ করা। 

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সবচেয়ে কাছের সমর্থক এবং সাহায্যকারী চাচা আবু তালিব কে কাফেররা ঐক্যবদ্ধভাবে চাপ প্রয়োগ করেছিল। 


চার. 

মুবাল্লীগের উপর মিথ্যা অপবাদ দেওয়া, 

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নামে তারা কবি, গনক ইত্যাদি বলে মিথ্যা রটিয়ে দিত। 

আল্লাহ জানিয়ে দিলেন, 


وَ مَا عَلَّمۡنٰہُ الشِّعۡرَ وَ مَا یَنۡۢبَغِیۡ لَہٗ ؕ اِنۡ ہُوَ اِلَّا ذِکۡرٌ وَّ قُرۡاٰنٌ مُّبِیۡنٌ 

আমি রাসূলকে কাব্য শিখাইনি এবং এটি তার জন্য শোভনীয়ও নয়। এ তো কেবল এক উপদেশ ও স্পষ্ট কুরআন মাত্র।

ইয়াসীন-৬৯


            وَّ مَا ہُوَ بِقَوۡلِ شَاعِرٍ ؕ قَلِیۡلًا مَّا تُؤۡمِنُوۡنَ 

আর এটি কোন কবির কথা নয়। তোমরা কমই বিশ্বাস কর।

হাককাহ-৪১


                 وَ لَا بِقَوۡلِ کَاہِنٍ ؕ قَلِیۡلًا مَّا تَذَکَّرُوۡنَ 

আর কোন গণকের কথাও নয়। তোমরা কমই উপদেশ গ্রহণ কর।

হাককাহ-৪২


পাঁচ. 

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইসলাম প্রচারে বাধা, 

হজ্জের মৌসুমে কাফেররা চিন্তিত হয়ে পড়ল, কিভাবে বিদেশীদের কে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে দূরে রাখা যায়? 

তারা ওলিদ ইবনে মুগীরা কে সভাপতি বানিয়ে বৈঠকে বসল। 


কেউ বলল তাকে বিদেশীদের কাছে যাদুকর বলে পরিচয় দিব, কেউ বলল গনক, কেউ বলল কবি, কেউ বলল পাগল বলে পরিচয় দিবে। 

ওলিদের কাছে একটি পরামর্শও পছন্দ হলো না, সে বলল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে পাগল, গনক, কবি, যাদুকর কোনটাই মনে হয়না। 

যাইহোক তোমরা তাকে যাদুকর বলেই পরিচয় দিও। 

বিদেশীরা যাদুকর শুনে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে দেখার আগ্ৰহ প্রকাশ করে, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখতে এসে তার আখলাক দেখে, তাঁর তিলাওয়াত শুনে বিদেশীরা ইসলামের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠে। 


এই পর্যায়ে এসে সহীহ মুসলিমের একটি হাদীস পেশ করলাম, 

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ ضِمَادًا، قَدِمَ مَكَّةَ وَكَانَ مِنْ أَزْدِ شَنُوءَةَ وَكَانَ يَرْقِي مِنْ هَذِهِ الرِّيحِ فَسَمِعَ سُفَهَاءَ مِنْ أَهْلِ مَكَّةَ يَقُولُونَ إِنَّ مُحَمَّدًا مَجْنُونٌ ‏.‏ فَقَالَ لَوْ أَنِّي رَأَيْتُ هَذَا الرَّجُلَ لَعَلَّ اللَّهَ يَشْفِيهِ عَلَى يَدَىَّ 

ইবনু আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। যিমাদ মাক্কায় আগমন করেন। তিনি আযদ শানুয়াহ গোত্রের সদস্য। তিনি বাতাস লাগার ঝাড়ফুঁক করতেন। তিনি মাক্কার কতক নির্বোধকে বলতে শুনলেন, মুহাম্মাদ নিশ্চয়ই উম্মাদ। যিমাদ বলেন, আমি যদি লোকটিকে দেখতাম তাহলে আল্লাহ হয়ত আমার হাতে তাকে আরোগ্য দান করতেন।


 قَالَ - فَلَقِيَهُ فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ إِنِّي أَرْقِي مِنْ هَذِهِ الرِّيحِ وَإِنَّ اللَّهَ يَشْفِي عَلَى يَدِي مَنْ شَاءَ فَهَلْ لَكَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ إِنَّ الْحَمْدَ لِلَّهِ نَحْمَدُهُ وَنَسْتَعِينُهُ مَنْ يَهْدِهِ اللَّهُ فَلاَ مُضِلَّ لَهُ وَمَنْ يُضْلِلْ فَلاَ هَادِيَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ أَمَّا بَعْدُ ‏


বর্ণনাকারী বলেন, তিনি তার সাথে সাক্ষাত করে বলেন, হে মুহাম্মাদ! আমি এসব বাতাস লাগার ঝাড়ফুঁক করি। আল্লাহ যাকে চান তাকে আমার হাতে আরোগ্য দান করেন। আপনি কি ঝাড়ফুক করাতে চান? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ নিশ্চয়ই সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর। আমি তার প্রশংসা করি, তার সাহায্য প্রার্থনা করি। আল্লাহ যাকে হিদায়াত দান করেন, কেউ তাকে বিপথগামী করতে পারে না এবং তিনি যাকে বিপথগামী করেন, কেউ তাকে হিদায়াত দান করতে পারে না। আমি সাক্ষ্য দেই যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, তিনি একক, তার কোন শারীক নেই এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ তার বান্দা ও রসূল।


 ‏.‏ قَالَ فَقَالَ أَعِدْ عَلَىَّ كَلِمَاتِكَ هَؤُلاَءِ ‏.‏ فَأَعَادَهُنَّ عَلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ثَلاَثَ مَرَّاتٍ - قَالَ - فَقَالَ لَقَدْ سَمِعْتُ قَوْلَ الْكَهَنَةِ وَقَوْلَ السَّحَرَةِ وَقَوْلَ الشُّعَرَاءِ فَمَا سَمِعْتُ مِثْلَ كَلِمَاتِكَ هَؤُلاَءِ وَلَقَدْ بَلَغْنَ نَاعُوسَ الْبَحْرِ 

অতঃপর বর্ণনাকারী বলেন, যিমাদ বললেন, আপনি এ কথাগুলো আমাকে পুনরায় শুনান। অতএব, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে কথাগুলো তাকে তিনবার পুনরাবৃত্তি করে শুনান। বর্ণনাকারী বলেন, যিমাদ বলল, আমি অনেক গণক, যাদুকর ও কবির কথা শুনেছি, কিন্তু আপনার এ কথাগুলোর অনুরূপ কথা আমি শুনিনি। এ কথাগুলো সমুদ্রের গভীরে পৌছে গেছে।

قَالَ - فَقَالَ هَاتِ يَدَكَ أُبَايِعْكَ عَلَى الإِسْلاَمِ - قَالَ - فَبَايَعَهُ ‏.‏ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ وَعَلَى قَوْمِكَ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ وَعَلَى قَوْمِي

 বর্ণনাকারী বলেন, যিমাদ বলেন, আপনার হাত প্রসারিত করুন, আমি আপনার নিকট ইসলামের বায়’আত গ্রহণ করব। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি তাকে বায়’আত করালেন (ইসলাম গ্রহণ করালেন)।


রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমার সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রেও কি (বায়’আত প্রযোজ্য)? যিমাদ বলেন, আমার সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রেও। সুবহানাল্লাহ! 


মুসলিম-৮৬৮

মাদ্রাসা সিলেবাস অনুসারে মোট হাদীস( ৩০৩৩) 


ছয়. 

প্রলোভন দেখিয়ে দায়িকে/মুবাল্লীগ কে দাওয়াত থেকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা। 


কোনভাবেই যখন নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াত দেওয়া বন্ধ করতে পারছিলনা, তখন কাফিররা উতবা ইবনে রবিয়া কে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে পাঠায়, উতবাহ নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে তাঁর প্রশংসা করে বলল ভাতিজা! তোমার কাছে চারটি প্রস্তাব নিয়ে এসেছি, 


প্রস্তাব-১

 يا ابن أخي ، إن كنت إنما تريد بما جئت به من هذا 

الأمر مالا جمعنا لك من أموالنا حتى تكون أكثرنا مالا 

ভাতিজা! তুমি যদি তোমার এই কাজ দিয়ে সম্পদ কামাই করার ইচ্ছা থাকে, তাহলে আমরা তোমার জন্য প্রচুর সম্পদ জমা করে দেই, তুমিই হবা আমাদের মাঝে সবচেয়ে সম্পদশালী?! 


প্রস্তাব-২

وإن كنت تريد به شرفا سودناك علينا

 حتى لا نقطع أمرا دونك 

তুমি যদি পদমর্যাদা চাও, আমরা সর্বোচ্চ পদ দিয়ে তোমার পরামর্শ ছাড়া কোন সিদ্ধান্ত নিবনা। 


প্রস্তাব-৩

                وإن كنت تريد به ملكا ملكناك علينا 

তুমি যদি রাজত্ব চাও, আমরা তোমাকে রাজা বানিয়ে দেই!


প্রস্তাব-৪

 وإن كان هذا الذي يأتيك رئيا تراه لا تستطيع رده عن نفسك 

 طلبنا لك الطب ، وبذلنا فيه 

উপরের কোনটিই যদি তোমার পছন্দ না হয়, তাহলে আমরা চিকিৎসার ব্যবস্থা করব। (অর্থাৎ কোন সুস্থ মানুষ তো উপরের প্রস্তাবগুলো ফিরিয়ে দিতে পারে না) 

                                                   [ ص: 294 ] 

সীরাতে ইবনে হিশাম পৃ-২৯৪


নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন চাচা! আপনার কথা শেষ? 

উতবা বলল হ্যাঁ। 

তখন নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুরা হা-মীম আসসসাজদা সুরা থেকে তেলাওয়াত করলেন সিজদার আয়াত পর্যন্ত, তখন উতবা দুহাত পিছনের দিকে মাটিতে রেখে তন্ময় হয়ে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তেলাওয়াত শুনছিল।যখন নবিজী ১৩ নং আয়াত পড়ছিলেন, 


فَاِنۡ اَعۡرَضُوۡا فَقُلۡ اَنۡذَرۡتُکُمۡ صٰعِقَۃً مِّثۡلَ صٰعِقَۃِ عَادٍ وَّ ثَمُوۡدَ 

তবুও যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে তুমি বলে দাও, ‘আদ ও সামূদের ধ্বংসের মতই এক মহাধ্বংস সম্পর্কে আমি তোমাদেরকে সতর্ক করছি’।

লম্বা ঘটনা.....) 

ওতবা বলতে লাগলো আমাদের প্রতি দয়া করো। 


ওতবা ফিরে আসার পর কাফিরদের কে বলল তোমরা তাকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দাও, এতে তোমাদেরই গৌরব হবে,ওতবা নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আরও কিছু প্রশংসা করল। তখন আবু জাহিল বলল , তোমাকে জ্বীনে আছর করেছে। ইত্যাদি। 


সাত. 

মুশরিকরা কোনভাবে সফলতা না পেয়ে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বয়কটের সিদ্ধান্ত নিল। 

চারটি কথা লিখে একটি কাগজ কাবার দেয়ালে ঝুলিয়ে দিল, 


(১) মুসলমানদের সাথে কেনা বেচা নিষেধ, 

(২) তাদের সাথে বিবাহ নিষেধ, 

(৩) কোন ব্যক্তি কোন অবস্থাতেই মুসলমানদের কে কোন ধরনের সহযোগিতা নিষেধ, 

(৪) মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তাদের(কাফিরদের) হাতে সোপর্দ না করা পর্যন্ত এই বয়কট চলবে। 


বয়কট চলল প্রায় তিন বছর, 

শিয়াবে আবি তালিবে অসহনীয় সেই বছরের কষ্টের কথা আজ বলার সময় নেই। 


আট. 

তায়ফের নির্যাতন। 

নিজের কাছের মানুষদের থেকে জুলুম নির্যাতন সহ্য করে মক্কার বাহিরে তথা তায়েফে দাওয়াত দিতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হন। 


حَدَّثَنِيْ عُرْوَةُ أَنَّ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا زَوْجَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم حَدَّثَتْهُ أَنَّهَا قَالَتْ لِلنَّبِيِّ هَلْ أَتَى عَلَيْكَ يَوْمٌ كَانَ أَشَدَّ مِنْ يَوْمِ أُحُدٍ قَالَ لَقَدْ لَقِيْتُ مِنْ قَوْمِكِ مَا لَقِيْتُ وَكَانَ أَشَدَّ مَا لَقِيْتُ مِنْهُمْ يَوْمَ الْعَقَبَةِ إِذْ عَرَضْتُ نَفْسِيْ عَلَى ابْنِ عَبْدِ يَالِيْلَ بْنِ عَبْدِ كُلَالٍ فَلَمْ يُجِبْنِيْ إِلَى مَا أَرَدْتُ 

‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, একবার তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজেস করলেন, উহুদের দিনের চেয়ে কঠিন কোন দিন কি আপনার উপর এসেছিল? তিনি বললেন, আমি তোমার ক্বওম হতে যে বিপদের সম্মুখীন হয়েছি, তা তো হয়েছি। তাদের হতে অধিক কঠিন বিপদের সম্মুখীন হয়েছি, আকাবার দিন যখন আমি নিজেকে ইবনু ‘আবদে ইয়ালীল ইবনে ‘আবদে কলালের নিকট পেশ করেছিলাম। আমি যা চেয়েছিলাম, সে তার জবাব দেয়নি।


فَانْطَلَقْتُ وَأَنَا مَهْمُومٌ عَلَى وَجْهِيْ فَلَمْ أَسْتَفِقْ إِلَّا وَأَنَا بِقَرْنِ الثَّعَالِبِ فَرَفَعْتُ رَأْسِيْ فَإِذَا أَنَا بِسَحَابَةٍ قَدْ أَظَلَّتْنِيْ فَنَظَرْتُ فَإِذَا فِيْهَا جِبْرِيْلُ فَنَادَانِيْ فَقَالَ إِنَّ اللهَ قَدْ سَمِعَ قَوْلَ قَوْمِكَ لَكَ وَمَا رَدُّوْا عَلَيْكَ وَقَدْ بَعَثَ إِلَيْكَ مَلَكَ الْجِبَالِ لِتَأْمُرَهُ بِمَا شِئْتَ فِيْهِمْ 


তখন আমি এমনভাবে বিষণ্ণ চেহারা নিয়ে ফিরে এলাম যে, কারনুস সাআলিবে পৌঁছা পর্যন্ত আমার চিন্তা দূর হয়নি। তখন আমি মাথা উপরে উঠালাম। হঠাৎ দেখতে পেলাম এক টুকরো মেঘ আমাকে ছায়া দিচ্ছে। আমি সে দিকে তাকালাম। তার মধ্যে ছিলেন জিব্রাঈল (আঃ)। তিনি আমাকে ডেকে বললেন, আপনার ক্বওম আপনাকে যা বলেছে এবং তারা উত্তরে যা বলেছে তা সবই আল্লাহ শুনেছেন। তিনি আপনার নিকট পাহাড়ের ফেরেশতাকে পাঠিয়েছেন। এদের সম্পর্কে আপনার যা ইচ্ছে আপনি তাঁকে হুকুম দিতে পারেন।

فَنَادَانِيْ مَلَكُ الْجِبَالِ فَسَلَّمَ عَلَيَّ ثُمَّ قَالَ يَا مُحَمَّدُ فَقَالَ ذَلِكَ فِيْمَا شِئْتَ إِنْ شِئْتَ أَنْ أُطْبِقَ عَلَيْهِمْ الأَخْشَبَيْنِ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم بَلْ أَرْجُوْ أَنْ يُخْرِجَ اللهُ مِنْ أَصْلَابِهِمْ مَنْ يَعْبُدُ اللهَ وَحْدَهُ لَا يُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا


তখন পাহাড়ের ফেরেশতা আমাকে ডাকলেন এবং আমাকে সালাম দিলেন। অতঃপর বললেন, হে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! এসব ব্যাপার আপনার ইচ্ছাধীন। আপনি যদি চান, তাহলে আমি তাদের উপর আখশাবাইন১কে চাপিয়ে দিব। উত্তরে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বরং আশা করি মহান আল্লাহ তাদের বংশ থেকে এমন সন্তান জন্ম দেবেন যারা এক আল্লাহর ‘ইবাদাত করবে আর তাঁর সঙ্গে কাউকে শরীক করবে না।


বুখারী- ৩২৩১


প্রিয় উপস্থিতি! 

আমরা যারা দাওয়াতের কাজ করব, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মক্কি জীবনের এই আটটি বাধার কথা মাথায় রেখেই সামনে এগিয়ে যেতে হবে, পিছু হটার কোন সুযোগ নেই। 


আসলে অনুষ্ঠানটি শেষ করতে পারলে ভালো লাগত, আমার অনেকগুলি ব্যস্ততা আছি, তাই আপনাদের কাছে দূ'আ চেয়ে বিদায় নিচ্ছি, আসসালামুআলাইকুম।