আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-২৪৮: নামাজের মধ্যে কান্নাকাটি করলে, সালাতের কোন ক্ষতি হবে কি ?

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-২৪৮মুহতারাম আসসালামু আলাইকুম। মুহতারামফরয সালাত বা সুন্নাত সালাতের মাঝে নিজের পাপের কথা স্মরণ করে কান্নাকাটি করে তাতে সালাতের কোন ক্ষতি হবে কি নাজানতে চাই। তারিখ-১৫/৮/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি

 মাওলানা সাইফুল ইসলাম ময়মনসিংহ----



জবাব
:  وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

 نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 

 

হামদ-সানা ও তাসলিমবাদ প্রথম কথা হলোনিজের পাপের কথা স্মরণ হলেতওবা-এস্তেগফার করা খুবই প্রশংসনীয়। আর কাঁদা তওবারই চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন,

 

وَ الَّذِیۡنَ اِذَا فَعَلُوۡا فَاحِشَۃً اَوۡ ظَلَمُوۡۤا اَنۡفُسَهُمۡ ذَکَرُوا اللّٰهَ فَاسۡتَغۡفَرُوۡا لِذُنُوۡبِهِمۡ ۪ وَ مَنۡ یَّغۡفِرُ الذُّنُوۡبَ اِلَّا اللّٰهُ ۪۟ وَ لَمۡ یُصِرُّوۡا عَلٰی مَا فَعَلُوۡا وَ هُمۡ یَعۡلَمُوۡنَ

আর যারা কোন অশ্লীল কাজ করলে অথবা নিজদের প্রতি যুলম করলে আল্লাহকে স্মরণ করেঅতঃপর তাদের গুনাহের জন্য ক্ষমা চায়। আর আল্লাহ ছাড়া কে গুনাহ ক্ষমা করবে আর তারা যা করেছেজেনে শুনে তা তারা বার বার করে না। সূরা ইমরান-১৩৫


দ্বিতীয় কথা হলো, নামাজের মধ্যে কাঁদলে নামাজ ভেঙ্গে যাবে কিনা?

এর জবাব হলো আল্লাহর ভয়-মহব্বতে, দোযখের ভয়ে  নামাজে  কাঁদলে চোখের পানি প্রবাহিত হলে কোন সমস্যা নেই।

দলিল:
আয়াতে কারিমা


 
وَ یَخِرُّوۡنَ لِلۡاَذۡقَانِ یَبۡکُوۡنَ وَ یَزِیۡدُهُمۡ خُشُوۡعًا 

আর তারা কাঁদতে কাঁদতে লুটিয়ে পড়ে এবং এটা তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে। সুরাবনি ইসরাঈল-১০৯

 

হাদিসে নববি:

 

كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا حَزَبَهُ أَمْرٌ صَلَّى) رواه أبو داود (1319) " .

روى أبو داود (904) والنسائي (1214) – واللفظ له - عن عبد الله بن الشّخّير رضي الله عنه قَالَ : أَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يُصَلِّي وَلِجَوْفِهِ أَزِيزٌ كَأَزِيزِ الْمِرْجَلِ [القِدْر] - يَعْنِي يَبْكِي " .

অর্থ: মুত্বাররিফ ইবনু আব্দুল্লাহ বিন শিখখীর (রহঃ) স্বীয় পিতা থেকে বর্ণনা করেনতিনি বলেনআমি নবী করীম () এর নিকট আসলাম। তখন তিনি ছালাত আদায় করছিলেন এবং তাঁর ভিতর থেকে টগবগে আওয়াজ হচ্ছিল যেমন ডেগের ফুটন্ত পানির টগবগ আওয়াজ হয়। অর্থাৎ তিনি কান্নাকাটি করছিলেন। অন্য বর্ণনায় আছেতিনি বলেনআমি নবী করীম () কে ছালাত আদায় করতে দেখেছি। এমতাবস্থায় তাঁর বুকের মধ্যে চাক্কির আওয়াজের ন্যায় কান্নার আওয়াজ হতে থাকত। তাখরিজ: আববু দাউদ-৯০৪নাসাঈ হা/১২১৪ছহীহ আত-তারগীব হা/৫৪৪মিশকাত হা/১০০০

 

তৃতীয় কথা হলো,  নামাজের মধ্যে চুপ থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে,

 দলিল:


حَافِظُوا عَلَى الصَّلَوَاتِ وَالصَّلَاةِ الْوُسْطَىٰ وَقُومُوا لِلَّهِ قَانِتِينَ

অর্থসমস্ত নামাযের প্রতি যত্নবান হওবিশেষ করে মধ্যবর্তী নামাযের ব্যাপারে। আর আল্লাহর সামনে একান্ত আদবের সাথে দাঁড়াও। সূরা বাকারা-২৩৮

 

হাদিস নং-০১

حَدَّثَنَا يَحْيَى عَنْ إِسْمَاعِيْلَ بْنِ أَبِيْ خَالِدٍ عَنِ الْحَارِثِ بْنِ شُبَيْلٍ عَنْ أَبِيْ عَمْرٍو الشَّيْبَانِيِّ عَنْ زَيْدِ بْنِ أَرْقَمَ قَالَ كُنَّا نَتَكَلَّمُ فِي الصَّلَاةِ يُكَلِّمُ أَحَدُنَا أَخَاهُ فِيْ حَاجَتِهِ حَتَّى نَزَلَتْ هَذِهِ الْآيَةُ {حَافِظُوْا عَلَى الصَّلَوٰتِ وَالصَّلَاةِ الْوُسْطٰى وَقُوْمُوْا لِلهِ قَانِتِيْنَ} فَأُمِرْنَا بِالسُّكُوْتِ

অর্থ: জায়েদ ইবনে আরকাম (রা.) বলেন, ‘আমরা নামাজে কথা বলতাম। নামাজি ব্যক্তি তার পাশের ব্যক্তির সঙ্গে নামাজে কথা বলত। অতঃপর যখন ওয়া কু-মু-লিল্লাহি ক্বানিতিন... এই আয়াত অবতীর্ণ হলো— তখন আমাদের চুপ থাকার আদেশ দেওয়া হয় এবং কথা বলতে নিষেধ করা হয়। তাখরিজ: মুসলিম- ৫৩৯বুখারি-৪৫৩৪

 

হাদিস নং-০২

মুআবিয়া ইবনে হাকাম আসসুলামি (রা.) বলেনরাসুল () বলেছেন, ‘নামাজে কোনো ধরনের কথাবার্তা বলার সুযোগ নেইএ তো হলো তাসবিহতাকবির ও কোরআনের তিলাওয়াত। তাখরিজ: মুসলিম-৫৩৭

 

হাদিস নং-০৩

حَدَّثَنَا أَبُو جَعْفَرٍ، مُحَمَّدُ بْنُ الصَّبَّاحِ وَأَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ - وَتَقَارَبَا فِي لَفْظِ الْحَدِيثِ - قَالاَ حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ حَجَّاجٍ الصَّوَّافِ، عَنْ يَحْيَى بْنِ أَبِي كَثِيرٍ، عَنْ هِلاَلِ بْنِ أَبِي مَيْمُونَةَ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَسَارٍ، عَنْ مُعَاوِيَةَ بْنِ الْحَكَمِ السُّلَمِيِّ، قَالَ بَيْنَا أَنَا أُصَلِّي، مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِذْ عَطَسَ رَجُلٌ مِنَ الْقَوْمِ فَقُلْتُ يَرْحَمُكَ اللَّهُ . فَرَمَانِي الْقَوْمُ بِأَبْصَارِهِمْ فَقُلْتُ وَاثُكْلَ أُمِّيَاهْ مَا شَأْنُكُمْ تَنْظُرُونَ إِلَىَّ . فَجَعَلُوا يَضْرِبُونَ بِأَيْدِيهِمْ عَلَى أَفْخَاذِهِمْ فَلَمَّا رَأَيْتُهُمْ يُصَمِّتُونَنِي لَكِنِّي سَكَتُّ فَلَمَّا صَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَبِأَبِي هُوَ وَأُمِّي مَا رَأَيْتُ مُعَلِّمًا قَبْلَهُ وَلاَ بَعْدَهُ أَحْسَنَ تَعْلِيمًا مِنْهُ فَوَاللَّهِ مَا كَهَرَنِي وَلاَ ضَرَبَنِي وَلاَ شَتَمَنِي قَالَ " إِنَّ هَذِهِ الصَّلاَةَ لاَ يَصْلُحُ فِيهَا شَىْءٌ مِنْ كَلاَمِ النَّاسِ إِنَّمَا هُوَ التَّسْبِيحُ وَالتَّكْبِيرُ وَقِرَاءَةُ الْقُرْآنِ "

আবূ জাফার মুহাম্মাদ ইবনুস্ সাব্বাহ ও আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বাহ (রহঃ) ..... মু'আবিয়াহ ইবনুল হাকাম আস সুলামী (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনকোন এক সময় আমি রসূলুল্লাহ () এর সাথে সলাত আদায় করছিলাম। ইতোমধ্যে (সলাত আদায়কারীদের মধ্যে) কোন একজন লোক হাচি দিলে (জবাবে) আমি "ইয়ারহামুকাল্প-হ" (অর্থাৎ- আল্লাহ তোমার প্রতি রহম করুন) বললাম। এতে সবাই রুষ্ট দৃষ্টিতে আমার প্রতি তাকাতে থাকল। তা দেখে আমি বললামঃ আমার মা আমার বিয়োগ ব্যথায় কাতর হোক। (অর্থাৎ এভাবে আমি নিজেকে ভৎসনা করলাম)। কি ব্যাপার! তোমরা আমার দিকে এভাবে তাকাচ্ছ যেতখন তারা নিজ নিজ উরুতে হাত চাপড়াতে থাকল। (আমার খুব রাগ হওয়া সত্ত্বেও) আমি যখন দেখলাম যেতারা আমাকে চুপ করাতে চায় তখন আমি চুপ করে রইলাম।

পরে রসূলুল্লাহ () সলাত শেষ করলে আমি তাকে সবকিছু বললাম। আমার পিতা ও মাতা তার জন্য কুরবান হোক। আমি ইতোপূর্বে বা এর পরে আর কখনো অন্য কোন শিক্ষককে তার চেয়ে উত্তম পন্থায় শিক্ষা দিতে দেখিনি। আল্লাহর শপথ করে বলছিতিনি আমাকে ধমকালেন না বা মারলেন না কিংবা বকাঝকাও করলেন না। বরং বললেনঃ সলাতের মধ্যে কথাবার্তা ধরনের কিছু বলা যথোচিত নয়। বরং প্রয়োজনবশতঃ তাসবীহতাকবীর বা কুরআন পাঠ করতে হবে। তাখরিজ: মুসলিম শরীফ ১০৮৬

 

হাদিস/আসার নং-০৪

ইবনে জুরাইজ (রহ.) বলেনআমি আতা (রহ.)-কে জিজ্ঞেস করলামআমি যদি নামাজে ভুলে কথা বলে— ফেলি (তাহলে এর কী হুকুম হবে?) তিনি বললেনমুখে উচ্চারণ করেআমি বললামহ্যাঁতিনি বললেনতাতে তোমার নামাজ ফাসেদ হয়ে গেছে। নতুন করে আবার পড়তে হবে।  তাখরিজ: মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক-৩৫৬৬

 

হাদিস/আসার নং-০৫

 ইবরাহিম নাখায়িকাতাদা ও হাম্মাদ (রহ.) প্রমুখ তাবেয়ি থেকেও অনুরূপ বক্তব্য বর্ণিত আছে। তাখরিজ:  মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক-৩৫৭১৩৫৭৩

উপরোক্ত আয়াতে কারিমা ও হাদিসে নববির ওপর ভিত্তি করে ফুকাহায়ে কেরামগণ বলেন, নামাজের ভেতর কথা বলা। নামাজে এমন কোনো অর্থবোধক শব্দ করাযা সাধারণ কথার অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। (হোক সেটা এক অক্ষর বা দুই অক্ষরে ঘটিত) তাহলে নামাজ ভেঙে যাবে। সূত্র: ফাতাওয়ায়ে শামী ১/৬১৩আল বাহরুর রায়েক : ২/২ নিম্নে কয়েকটি প্রশ্নের অবতারণা করছি বুঝার সহজের জন্য।


প্রশ্ন:     ক।  উহ আহ শব্দ দ্বারা কি নামাজ ফাসেদ/বাতিল হয়ে যাবে?  

উত্তর:   ক।   নামাজে উহ্-আহ্ শব্দ করলে নামাজ ভেঙে যায়। নামাজরত অবস্থায় কোনো ব্যথা কিংবা দুঃখের কারণে উহ্-আহ্ শব্দ করলে নামাজ ভেঙে যাবে। সূত্র: আদ্দুররুল মুখতার : ১/৬১৯আল-বাহরুর রায়েক : ২/৪; মারাকিল ফালাহ ১/১২১

প্রশ্ন:   খ।  দুনিয়াবি/বিপদের কারণে কাঁদলে কি নামাজ বাতিল হবে?

উত্তর: খ।    বিপদে কিংবা বেদনায় শব্দ করে কাঁদা। দুনিয়াবি কোনো বিপদ-আপদ কিংবা দুঃখের কারণে শব্দ করে কাঁদলে নামাজ ভেঙে যায়।  তাখরিজ: হাশিয়াতু তাহতাবি ১/৩২৫ফাতাওয়ায়ে শামী ১/৬১৯নূরুল ইজাহপৃ. ৬৮

 

প্রশ্ন:   গ।  ইচ্ছাপূর্বক কান্নাকাটি করলে কি নামাজ ফাসেদ হবে?

উত্তর: গ।  হ্যাঁ, কান্না নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও ইচ্ছাকরে / যদি কেউ  কোনো শব্দ/কান্নাকাটি করলে, যা দুনিয়বি কারণে হোক অথবা আখেরাতের ভয়ে হোক নামাজ ফাসেদ হবে। তবে যদি অধিক কষ্টের কারনে অথবা জাহান্নামের কথা স্মরণ হওয়ায় অনিচ্ছায় কান্নার আওয়াজ বেড়িয়ে আসে এবং তা রোধ করা সম্ভব না হয় তাহলে নামাজ নষ্ট হবে না । সূত্র: রদ্দুল মুখতার-২/৩৭৭-৩৭৮

 

প্রশ্ন:    ঘ।  এ বিষয়ে সতর্কতা কি?

উত্তর:  ঘ।  এ বিষয়ে সতর্কতা হলো, কান্নার কারণে যদি দম বন্ধ হয়ে যায়/ কেরাত, দুআ ইত্যাদি পাঠ করতে অপরাগ হয়। তিন তাসবিহর বেশি সময় হলে সাহু সিজদা দিতে হবে। সাহু সিজদা না দিলে নামাজ বাতিল হিসেবে গণ্য হবে।  সূত্র: ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/১২

 

সারকথা হলো, আপনার প্রশ্নে বর্ণিত ছুরুতে উক্ত ব্যক্তি নিজের গুনাহের কারণে নামাজে কান্না করা প্রসংশনীয়।  যদি অনিচ্ছাকৃত কান্নার শব্দ বের হয়, তা মাফ কিন্তু ইচ্ছাকৃত করলে নামাজ বাতিল হবে।  আর ঘ নং প্রশ্ন-উত্তরে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি আব্দুর রাজ্জাক