আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-২৫৩: জামাতে নামাজ আদায় করার ফজিলত সম্পর্কে জানতে চাই।

No Comments

 




জিজ্ঞাসা-২৫৩: জামাতে নামাজ আদায় করার ফজিলত সম্পর্কে জানতে চাই।  তারিখ ১৯/০৮/২২ ইং 

       হাফেজ মাওলানা মাসুম বিল্লাহ রামু কক্সবাজার থেকে--



জবাব: نحمده ونصلي على رسوله الكريم اما بعد


হামদ ও ছানার পর, প্রথম কথা হল ইমাম আবু হানিফার মতে জামাতের সাথে নামাজ পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা কিন্তু অন্য ইমামের  মতে জামাতে নামাজ আদায় করা ফরজ। যাইহোক নিম্নে জামাতের সাথে নামাজ আদায় করার ফজিলত বর্ণনা করা হলো:


হাদিস নং-০১

عن ابنِ عمَر رضي اللَّه عنهما أَنَّ رسولَ اللَّه ﷺ قَالَ: صَلاةُ الجَمَاعَةِ أَفضَلُ مِنْ صَلاةِ الفَذِّ بِسَبْعٍ وَعِشْرِينَ درَجَةً متفقٌ عليه.

জামাতে নামাজের ফজিলত একাকী নামাজের চেয়ে ২৭ গুণ বেশি।’বুখারি, মুসলিম


হাদিস নং-০২

وعن أَبي هريرة  قَالَ: قَالَ رسولُ اللَّهِ ﷺ: صَلاةُ الرَّجُلِ في جَماعةٍ تُضَعَّفُ عَلى صلاتِهِ فِي بَيْتِهِ وفي سُوقِهِ خَمْسًا وَعِشْرينَ ضِعفًا، وذلكَ أَنَّهُ إِذا تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوءَ ثُمَّ خَرَجَ إِلى المَسْجِدِ، لا يُخْرِجُه إِلاَّ الصَّلاةُ، لَمْ يَخْطُ خَطْوةً إِلاَّ رُفِعَتْ لَه بهَا دَرَجَةٌ، وَحُطَّتْ عَنْه بهَا خَطِيئَةٌ، فَإِذا صَلى لَمْ تَزَلِ المَلائِكَة تُصَلِّي عَلَيْهِ مَا دَامَ في مُصَلاَّه، مَا لَمْ يُحْدِثْ، تَقُولُ: اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَيْهِ، اللَّهُمَّ ارحَمْهُ. وَلا يَزَالُ في صَلاةٍ مَا انْتَظَرَ الصَّلاةَ متفقٌ عَلَيهِ. وهذا لفظ البخاري.

আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জামাতের সাথে পুরুষের নামায পড়া, তার ঘরে ও বাজারে একা নামায পড়ার চাইতে ২৫ গুণ বেশি শ্রেষ্ঠ। তা এই জন্য যে, যখন কোন ব্যক্তি ওযূ করে এবং উত্তমরূপে ওযূ সম্পাদন করে। অতঃপর মসজিদ অভিমুখে যাত্রা করে। আর একমাত্র নামাযই তাকে (ঘর থেকে) বের করে (অন্য কোন উদ্দেশ্য থাকে না), তখন তার (পথে চলার সময়) প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয় এবং একটি গোনাহ মাফ করা হয়। তারপর সে নামাযান্তে নামায পড়ার জায়গায় যতক্ষণ ওযূ সহকারে অবস্থান করে, ফিরিশতাবর্গ তার জন্য দু’আ করেন; তাঁরা বলেন, হে আল্লাহ! ওর প্রতি অনুগ্রহ কর। হে আল্লাহ! তুমি ওকে রহম কর। আর সে ব্যক্তি ততক্ষণ নামাযের মধ্যেই থাকে, যতক্ষণ সে নামাযের প্রতীক্ষা করে। তাখরিজ: বুখারী ৬৪৭, মুসলিম ১৫০৮


হাদিস নং-০৩

তোমাদের কেউ যখন নামাজ আদায় করার পর নামাজের স্থানেই বসে থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত মালায়েকাহ (ফেরেশতাগণ) তার জন্য এ বলে দোয়া করতে থাকে যে-

اللَّهُمَّ ارْحَمْهُ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ اللَّهُمَّ تُبْ عَلَيْهِ مَا لَمْ يُؤْذِ فِيهِ مَا لَمْ يُحْدِثْ فِيهِ

‘হে আল্লাহ! তুমি তার প্রতি অনুগ্রহ দান করো। হে আল্লাহ! তুমি তাকে ক্ষমা করো। হে আল্লাহ! তুমি তার তওবা কবুল করো।’এরূপ দোয়া ততক্ষণ পর্যন্ত করতে থাকে যতক্ষণ না সে কাউকে কষ্ট দেয় এবং যতক্ষণ পর্যন্ত অজু নষ্ট না হয়।’  তাখরিজ: মুসলিম, ইবনে মাজাহ-৬৫৮


হাদিস নং-০৪

عَنْ يَزِيدَ بْنِ الأَسْوَدِ الْعَامِرِىُّ عَنْ أَبِيهِ قَالَ: شَهِدْتُ مَعَ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم حَجَّتَهُ، فَصَلَّيْتُ مَعَهُ صَلاَةَ الصُّبْحِ فِى مَسْجِدِ الْخَيْفِ. قَالَ فَلَمَّا قَضَى صَلاَتَهُ وَانْحَرَفَ إِذَا هُوَ بِرَجُلَيْنِ فِى أُخْرَى الْقَوْمِ لَمْ يُصَلِّيَا مَعَهُ فَقَالَ : عَلَىَّ بِهِمَا، فَجِىءَ بِهِمَا تُرْعَدُ فَرَائِصُهُمَا فَقَالَ: مَا مَنَعَكُمَا أَنْ تُصَلِّيَا مَعَنَا؟ فَقَالاَ: يَا رَسُولَ اللهِ! إِنَّا كُنَّا قَدْ صَلَّيْنَا فِى رِحَالِنَا. قَالَ: فَلاَ تَفْعَلاَ إِذَا صَلَّيْتُمَا فِى رِحَالِكُمَا ثُمَّ أَتَيْتُمَا مَسْجِدَ جَمَاعَةٍ فَصَلِّيَا مَعَهُمْ فَإِنَّهَا لَكُمَا نَافِلَةٌ-


অর্থ: ইয়াযীদ ইবনুল আসওয়াদ আল-আমেরী (রাঃ) স্বীয় পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর সঙ্গে আমি হজ্জে হাযির ছিলাম। তাঁর সঙ্গে মসজিদে খায়ফে ফজরের ছালাত আদায় করলাম। ছালাত শেষে তিনি যখন ফিরলেন তখন শেষ প্রান্তে দুই ব্যক্তিকে দেখতে পেলেন, তারা তাঁর সঙ্গে ছালাত আদায় করেনি। তিনি বললেন, এদেরকে আমার কাছে নিয়ে এসো। তাদের নিয়ে আসা হ’ল। তখন ভয়ে তাঁদের ঘাড়ের রগ পর্যন্ত কাঁপছিল। তিনি তাদের বললেন, আমাদের সঙ্গে ছালাত আদায় করতে তোমাদেরকে কিসে বাধা দিল? তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমরা আমাদের বাড়িতে ছালাত পড়ে নিয়েছিলাম। তিনি বললেন, এরূপ করবে না। যদি তোমাদের বাড়িতে ছালাত পড়ে মসজিদে জামা‘আতে আস, তবে তাদের সঙ্গে জামা‘আতে শরীক হয়ে যেও। তোমাদের জন্য তা নফল হিসাবে গণ্য হবে’। তিরমিযী হা/২১৯; মিশকাত হা/১১৫২


হাদিস নং-০৪

عَنْ أَبِى سَعِيدٍ الْخُدْرِىِّ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَبْصَرَ رَجُلاً يُصَلِّى وَحْدَهُ فَقَالَ : أَلاَ رَجُلٌ يَتَصَدَّقُ عَلَى هَذَا فَيُصَلِّىَ مَعَهُ-

 আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এক ব্যক্তিকে (জামা‘আতের পর) একাকী ছালাত আদায় করতে দেখে বলেন, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই কি- যে এই ব্যক্তিকে ছাদাক্বা দিয়ে তার সাথে একত্রে ছালাত পড়তে পারে’? তাখরিজ: আবূদাউদ হা/৫৭৪; মিশকাত হা/১১৪৬


 অন্য বর্ণনায় রয়েছে, জনৈক ছাহাবী মসজিদে প্রবেশ করে দেখলেন রাসূল (ছাঃ) তাঁর ছাহাবীদের নিয়ে যোহরের ছালাত জামা‘আতে সম্পাদন করে নিয়েছেন। রাসূল তাকে একাকি দেখে বললেন, তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে যে, তার সাথে ছওয়াব লাভের ব্যবসায় লিপ্ত হবে? তখন একজন ছাহাবী দাঁড়িয়ে তার সাথে জামা‘আতে ছালাত আদায় করলেন। তাখরিজ: আহমাদ হা/১১০৩২, ১১৮২৫, 


হাদিস নং-০৫

(عَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ السُّوَائِىِّ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: أَلاَ تَصُفُّوْنَ كَمَا تَصُفُّ الْمَلاَئِكَةُ عِنْدَ رَبِّهَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى؟ قَالَ قُلْنَا: يَا رَسُوْلَ اللهِ! وَكَيْفَ تَصُفُّ الْمَلاَئِكَةُ عِنْدَ رَبِّهَا؟ قَالَ يُتَمِّمُوْنَ الصُّفُوْفَ الأُوَلَ وَيَتَرَاصُّونَ فِى الصَّفِّ-

জাবের ইবনু সামুরাহ সুয়াঈ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ বললেন, ‘ফেরেশতামন্ডলী যেরূপ তাদের প্রভুর নিকট সারিবদ্ধ হন, তোমরা কি সেরূপ সারিবদ্ধ হবে না? আমরা জিজ্ঞেস করলাম, হে আললাহর রাসূল (ছাঃ)! ফেরেশতামন্ডলী তাদের প্রভুর নিকট কিরূপ সারিবদ্ধ হন? তিনি বললেন, প্রথম সারিগুলো পূর্ণ করেন এবং সারিতে ঘন হয়ে দাঁড়ান’। তাখরিজ: আহমাদ হা/২১০৬২; মুসলিম হা/৪৩০; মিশকাত হা/১০৯১


হাদিস নং-০৬

 عَنْ أَبِى سَعِيدٍ الْخُدْرِىِّ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم رَأَى فِى أَصْحَابِهِ تَأَخُّرًا فَقَالَ لَهُمْ: تَقَدَّمُوْا فَائْتَمُّوْا بِىْ وَلْيَأْتَمَّ بِكُمْ مَنْ بَعْدَكُمْ لاَ يَزَالُ قَوْمٌ يَتَأَخَّرُوْنَ حَتَّى يُؤَخِّرَهُمُ اللهُ-

 আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁর ছাহাবীদেরকে ছালাতের কাতার হ’তে পশ্চাৎগামী দেখে বললেন, ‘তোমরা প্রথম কাতারে এসো এবং আমার অনুসরণ কর। অতঃপর পরবর্তী লোকেরাও তোমাদের অনুসরণ করবে। এক শ্রেণীর লোক সবসময় সামনের কাতার থেকে পিছনে থাকবে। মহান আল্লাহও তাদেরকে পিছনে ফেলে রাখবেন’। অর্থাৎ তোমরা ছালাতের পিছনের কাতার পসন্দ করলে আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর রহমত, দয়া, উঁচু মর্যাদা, জ্ঞান ও জান্নাত প্রাপ্তি হ’তে পশ্চাৎগামী করে দিবেন’‌ তাখরিজ: মুসলিম হা/৪৩৮; মিশকাত হা/১০৯০