জিজ্ঞাসা-২৫৯:
আসসালামুআলাইকুম,আমার জিজ্ঞাসা মৃতদেহকে যে খাট বা মর্গের যে জায়গায় রেখে গোসল করানো হয় সেটা কোন দিক করে স্থাপন করতে হবে,(সাধারণত আমরা লাশ উত্তর দক্ষিণ দিক করে কবর দেই।)উক্ত বিষয়ে শরঈ সিদ্ধান্ত একান্ত দরকার। জানিয়ে বাধিত করবেন। তারিখ-৩০/০৮/২০২২
মাওলানা রমজান সৈয়দপুর নীলফামারী থেকে --
জবাব:
وعليكم السلام ورحمه الله وبركاته.
بسم الله الرحمن الرحيم. نحمده ونصلي على رسوله الكريم اما بعد.
তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হলো, মৃত ব্যক্তিকে গোসলের সময় উত্তর দিকে মাথা আর দক্ষিণ দিকে পা দিয়ে শোয়ানো ফোকাহায়ে কেরাম উত্তম বা মুস্তাহাব বলেছেন।
হাদিস দ্বারা দলিল:
হাদিস নং -০১
عَنْ يَحْيَى بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ أَبِىْ قَتَادَةَ عَنْ أَبِيْهِ أَنَّ النَّبِىَّ ﷺ حِيْنَ قَدِمَ الْمَدِيْنَةَ سَأَلَ عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ مَعْرُوْرٍ فَقَالُوْا تُوُفِّى وَأَوْصَى بِثُلُثِهِ لَكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ وَأَوْصَى أَنْ يُوَجَّهَ إِلَى الْقِبْلَةِ لَمَّا احْتُضِرَ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ
أَصَابَ الْفِطْرَةَ وَقَدْ رَدَدْتُ ثُلُثَهُ عَلَى وَلَدِهِ ثُمَّ ذَهَبَ فَصَلَّى عَلَيْهِ وَقَالَ اللهُمَّ اغْفِرْ لَهُ وَارْحَمْهُ وَأَدْخِلْهُ جَنَّتَكَ وَقَدْ فَعَلْتَ.
ইয়াহইয়া ইবনু আব্দুল্লাহ ইবনু আবী ক্বাতাদা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদ্বীনায় আগমন করলেন, তখন বারা ইবনু মা‘রূর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তারা জবাবে বলল, সে মারা গেছে এবং আমাদেরকে তিনটি অছিয়ত করে গেছে। তার মধ্যে একটি হল, যখন তার মৃত্যু হবে তখন ক্বিবলার দিকে করবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে ঠিকই বলেছে। আমি এই তিনটি বিষয় তার সন্তানদের বলে গেলাম। অতঃপর তিনি তার জানাযা পড়ালেন। তাখরিজ: হাকেম হা/১৩০৫, ১/৩৫৩; বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/৬৮৪৩
হাদিস নং -০২
قِبلتِكمْ أحياءً و أمْواتًا
الراوي : عمير بن قتادة الليثي خلاصة حكم المحدث : حسن | التخريج : أخرجه أبو داود (2875)، والنسائي (4012) باختلاف يسير.
অর্থ: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জীবিত ও মৃত উভয় অবস্থায় সকলের কিবলা হলো কাবা। তাখরিজ: আবু দাউদ: ২৮৭৫, নাসায়ি-৪০১২
হাদিস নং -০৩
শরীয়তের বিধান হলো কিবলা দিকে মুখ,পিঠ ফিরিয়ে পেশাব পায়খানা করা নাজায়েজ।
حَدَّثَنَا مُسَدَّدُ بْنُ مُسَرْهَدٍ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَزِيدَ اللَّيْثِيِّ، عَنْ أَبِي أَيُّوبَ، رِوَايَةً قَالَ " إِذَا أَتَيْتُمُ الْغَائِطَ، فَلَا تَسْتَقْبِلُوا الْقِبْلَةَ بِغَائِطٍ، وَلَا بَوْلٍ، وَلَكِنْ شَرِّقُوا أَوْ غَرِّبُوا " . فَقَدِمْنَا الشَّامَ، فَوَجَدْنَا مَرَاحِيضَ قَدْ بُنِيَتْ قِبَلَ الْقِبْلَةِ فَكُنَّا نَنْحَرِفُ عَنْهَا وَنَسْتَغْفِرُ اللهَ
আবূ আইয়ূব (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘তোমরা পায়খানায় গিয়ে কিবলামুখী হয়ে পায়খানা-পেশাব করবে না, বরং পূর্ব অথবা পশ্চিমমূখী হয়ে বসবে।’’ আবূ আইয়ূব (রাঃ) বলেন, আমরা সিরিয়ায় গিয়ে দেখতে পেলাম, সেখানকার শৌচাগারগুলো কিবলামুখী করে বানানো। সেজন্য উক্ত স্থানে আমরা একটু বেঁকে বসতাম এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাইতাম।
বুখারী (অধ্যায়ঃ উযু, অনুঃ পায়খানার সময় ক্বিবলাহমুখী না হওয়া, হাঃ ১৪৪,আবু দাউদ ০৯)
হাদিস নং-০৪
حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْمَخْزُومِيُّ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ عُيَيْنَةَ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَزِيدَ اللَّيْثِيِّ، عَنْ أَبِي أَيُّوبَ الأَنْصَارِيِّ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " إِذَا أَتَيْتُمُ الْغَائِطَ فَلاَ تَسْتَقْبِلُوا الْقِبْلَةَ بِغَائِطٍ وَلاَ بَوْلٍ وَلاَ تَسْتَدْبِرُوهَا وَلَكِنْ شَرِّقُوا أَوْ غَرِّبُوا " . فَقَالَ أَبُو أَيُّوبَ فَقَدِمْنَا الشَّأْمَ فَوَجَدْنَا مَرَاحِيضَ قَدْ بُنِيَتْ مُسْتَقْبَلَ الْقِبْلَةِ فَنَنْحَرِفُ عَنْهَا وَنَسْتَغْفِرُ اللَّهَ
আবু আইয়ুব আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা যখন মলত্যাগ করতে যাও, তখন মলত্যাগ বা পেশাবের সময় কিবলাকে সামনে বা পেছনে রেখে বসো না, বরং পূর্ব অথবা পশ্চিম দিকে ফিরে বস। আবু আইয়ূব (রাঃ) বলেন, আমরা সিরিয়াতে এসে দেখতে পেলাম এখানকার পায়খানাগুলো কিবলার দিকে করে স্থাপিত। অতএব আমরা কিবলার দিক হতে ঘুরে যেতাম এবং আল্লাহ তা'আলার কাছে ক্ষমা চাইতাম। —সহীহ। ইবনু মাজাহ– (৩১৮), বুখারী ও মুসলিম,তিরমিজি ০৮)
قوله : (وَلكِنْ شَرِّقُوْا أَوْ غَرِّبُوْا) অর্থাৎ- তোমরা পূর্ব পশ্চিম দিকে মুখ করে পেশাব-পায়খানা কর। এ আদেশটি মূলত মাদীনাবাসী এবং যাদের ক্বিবলাহ্ (কিবলাহ/কিবলা) মাদীনাবাসীদের ক্বিবলার দিকে তাদের জন্য প্রযোজ্য।
এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো যে, দিকাভিমুখী হলে ক্বিবলাহ্ (কিবলাহ/কিবলা) সামনে বা পেছনে হয় না সেদিকে মুখ করে স্বাভাবিক প্রয়োজন (তথা পেশাব-পায়খানা) পূরণ করা যা দেশভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। (অর্থাৎ- প্রত্যেক দেশের অধিবাসীরা সেদিকে মুখ করে স্বাভাবিক প্রয়োজন পূরণ করবে যে দিকাভিমুখী হবে (ক্বিবলাহ্ সামনে বা পেছনে হবে না)। হাদীসটি বাহ্যিকভাবে খোলা ময়দান ও প্রাচীর বেষ্টিত টয়লেটের মাঝে কোন পার্থক্যকরণ ছাড়াই স্বাভাবিক প্রয়োজন পূরণের সময় ক্বিবলাকে সামনে বা পিছনে করতে নিষিদ্ধের বিষয়ে সুস্পষ্ট প্রমাণ।
ফাতাওয়ায়ে শামীতে আছে
کرہ تحریما استقبال قبلة واستدبارہا ل أجل بول أو غائط (درمختار) وفي ”رد المحتار“ أي جہتہا کما في الصلاة فیما یظہر ونصّ الشافعیة علی أنہ لو استقبلہا بصدرہ وحوّل ذکرہ عنہا وبال لم یکرہ بخلاف عکسہ اھ أي فالمعتبر الاستقبال ․․․ فلیس في الحدیث دلالة علی أن المنہيّ استقبال العین کما لا یخفی الخ (رد المحتار علی الدر المختار ۱/۵۵۴، فصل في الاستنجاء، ط: زکریا) وراجع ”در ترمذی“ (۱/۱۸۹)
সারমর্মঃ কিবলা দিকে মুখ,পিঠ ফিরিয়ে পেশাব পায়খানা করা মাকরুহে তাহরিমি।
উল্লেখ্য যে, মাইয়্যাতকে গোসলের শুরুতে তাকে বসার মাধ্যমে প্রসাব-পায়খানা করাতে হয় অর্থাৎ পেটে আস্তে আস্তে চাপ দিতে হয় যাতে পেটের ভেতরে নাপাকিগুলো বের আসে। সুতরাং তখন তাকে পশ্চিম দিকে প্রসাব পায়খানা করানো আওতায় পড়ে যাবে। কেননা মৃত ব্যক্তি জীবিত ব্যক্তির ন্যায়। দলিল:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক মেয়ের ইন্তেকালের পর তার গোসল প্রসঙ্গে মহিলাদেরকে উদ্দেশ্য করে তিনি বললেন-
ابْدَأْنَ بِمَيَامِنِهَا، وَمَوَاضِعِ الوُضُوءِ مِنْهَا.
অর্থাৎ তোমরা (গোসল করানোর ক্ষেত্রে) তাঁর ডান দিক থেকে এবং অযুর স্থানসমূহ দ্বারা শুরু করো। (সহীহ বুখারী, হাদীস ১২৫৫)
উক্ত হাদীসের আলোকে ইমাম আবু বকর জাসসাস রাহ. বলেন-
يوضأ وضوءه للصلاة أولاً.
অর্থাৎ মায়্যেতকে প্রথমে নামাযের অযুর মত অযু করাবে। (শরহু মুখতাসারিত তহাবী ২/১৮৭)
প্রসিদ্ধ তাবেয়ী ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন-
يُبْدَأُ بِالْمَيِّتِ فَيُوَضّأُ وُضُوءَهُ لِلصّلاَةِ ثُمّ يَبدَأ بِمَيَامِنِه.
মায়্যেতকে (গোসলের শুরুতে) প্রথমে নামাযের অযুর ন্যায় অযু করাবে। এরপর তার ডান দিক থেকে (ধোয়া) শুরু করবে। তাখরিজ: মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১১০০১
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মৃত ব্যক্তির হাড় ভেঙে ফেলা জীবিত মানুষের হাড় ভেঙে ফেলার মতো। তাখরিজ: আবু দাউদ, হাদিস নম্বর ৩২০৯
কিয়াস দ্বারা দলিল:
কবরে নামানোর আগে তাকে কবরের কিবলার দিকে রাখতে হয়। মৃতের মাথা উত্তর দিকে এবং পা দক্ষিণ দিকে থাকবে। সূত্র: ফাতাওয়া হাক্কানিয়া : ৩/৪৪৬, মারাকিল ফালাহ : ২২০
যেহেতু কবরে আমাদের দেশে উত্তর দিকে মাথা আর দক্ষিণ দিকে পা রাখা হয়,এর উপর কিয়াস করে উপমহাদেশের ওলামায়ে কেরাম বলেছেন যে, মাইয়াতকেও গোসলের সময় উত্তর দিকে মাথা আর দক্ষিণ দিকে পা রাখবে।
সার কথা হল, উপরোক্ত হাদিস ও কিয়াসের দ্বারা ফোকাহায়ে কেরামগণ বলেছেন, মৃত ব্যক্তিকে গোসলের সময় উত্তর দিকে মাথা এবং দক্ষিণ দিকে পা রাখা উচিত যদি সম্ভব হয়।
উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক