জিজ্ঞাসা-১৩০৬০:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। ১. অজুফা খাতুন
২. অজিফা খাতুন। শব্দ দ্বয়ের অর্থ কী?
তারিখ: ১০/০৭/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা শাহ আলম সুদান থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
[ওজিফা] (বিশেষ্য) ১ দৈনিক নির্দিষ্ট সময়ে তসবিহ পড়া বা তদ্রূপ ধর্মকার্য।
২ দৈনিক নির্দিষ্ট ভাতা।
(আরবি) রজীফাহ
অজিফা (وظيفة)
ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে ‘অজিফা’ শব্দটি সুপরিচিত। এটি আরবি শব্দ। কিন্তু এর অর্থ অনেকের অজানা। বাংলা অভিধানে এর সন্তোষজনক অর্থ ও ব্যাখ্যা নেই।
বাংলা একাডেমি ব্যাবহারিক বাংলা অভিধান মতে, দুটি অর্থে অজিফা শব্দ ব্যবহার করা হয়। এক. প্রাণীদের শ্বাস গ্রহণ ও ত্যাগ ক্রিয়ারূপে জপিত হয়, এমন মন্ত্র। দুই. খোরপোশ; ভরণপোষণ। অন্য একটি অভিধানে এর অর্থ লেখা হয়েছে নিত্য ধর্মশাস্ত্র পাঠ।
কিন্তু মুসলমানদের ব্যাবহারিক জীবনে অজিফা শব্দটি অনেকটা তাসবিহ-তাহলিল ও জিকির-আজকারের সমর্থক। যদিও আধুনিক আরবি ভাষায় অজিফা শব্দটি চাকরি ও পেশা গ্রহণ অর্থে ব্যবহৃত হয়।
সাধারণত, ফজর ও মাগরিবের নামাজের পর যেসব দোয়া ও আমল প্রতিদিন পাঠ করা হয়, সেগুলোকে অজিফা বলা হয়।
আবার যারা বিভিন্ন পীরের মুরিদ হন, তাঁদের জন্য পীরের দেওয়া নিয়ম অনুসারে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট দোয়া-কালাম পাঠ করতে হয়, সেগুলোকেও অজিফা বলা হয়।
‘পাঞ্জেগানা অজিফা’ বলে একটি পরিভাষা আছে। কোরআনের পাঁচটি সুরা যেমন—সুরা ইয়াসিন, সুরা মুলক, সুরা আর-রহমান, সুরা ওয়াকিয়াহ ও সুরা মুজাম্মিলসহ প্রতিদিনের দোয়া-দরুদ ও আমল নিয়ে পাঞ্জেগানা অজিফা বা পাঞ্জেসুরা হয়ে থাকে। এ বিষয়ে বাজারে বই পাওয়া যায়। তবে এমন পরিভাষা কোরআন-হাদিসে ব্যবহার করা হয়নি। যদিও কোরআন ও সুন্নাহে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর বিভিন্ন দোয়া, আমল ও তাসবিহ পাঠের কথা বর্ণিত হয়েছে।
এছাড়া অজিফা নামের আরবি অর্থ হিসেবে চাকরি ও পেশা গ্রহণ অর্থে ব্যবহৃত হয়।
* অজুফা ( وَجُوْفة) শব্দটি আরবী। তার অর্থ হলো- উত্তেজিত, তেজস্বিনী, ইত্যাদি।
* খাতুন ( خاتون)
পাক-ভারত উপমহাদেশে মেয়েদের নামের শেষে ‘খাতুন’ যুক্ত করা হয়। এ শব্দটির অর্থ নিরূপণ করতে গিয়ে বিখ্যাত আরবি অভিধান আল মুজামুল ওয়াসিতে এসেছে,
الخَاتونُ : المرأَة الشريف ة . والجمع : خواتين.|الخَاتونُ رباط الصوفية .
‘খাতুন’ মূলত তুর্কি ভাষার শব্দ। এর বহুবচন খাওয়াতিন।
খাতুন শব্দের অর্থ ভদ্রমহিলা’ বা ‘আভিজাত্য। এটি হলো মুসলমান নারীদের আভিজাত্যের একটি উপাধি যা খান উপাধি থেকে এসেছে।
এটি তুর্কি শব্দ খান বা খাকানের স্ত্রীলিঙ্গ। আর খান শব্দের অর্থ অভিজাত ব্যক্তি, শাসক ইত্যাদি।
বাংলাপিডিয়ার তথ্যমতে, খান বা খাঁ একটি উপাধি, যা বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। উৎপত্তিগতভাবে মঙ্গোলীয় ও তুর্কি ভাষায় এর অর্থ সেনানায়ক, নেতা বা শাসক।
খান বলতে গোত্রপতিও বোঝায়।
খাতুন ও খানম হলো এর স্ত্রীবাচক রূপ। সে হিসেবে খাতুন মঙ্গোলীয় ও তুর্কিতে রাজার রানি সমপর্যায়ের শব্দ। খান ও খাতুন হিসেবে ঘোষণার পর এই উপাধি দ্বারা একজন খানের রাজরানি (স্ত্রী) খানের সমপর্যায়ের সম্মান পাওয়ার যোগ্য হন।
বাংলা একাডেমির ব্যাবহারিক বাংলা অভিধানে ‘খাতুন’ শব্দের অর্থ গৃহিণী, অভিজাত মহিলা ইত্যাদি।
আরবি নামকোষ ‘আল মাউসুয়াতুল আলামিয়্যাতে’ ড. মাহমুদ আল আক্কাম বলেন, সেলজুক শাসনামলে ‘খাতুন’ শব্দটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে শুরু করে। তখনকার সেলজুক সুলতানদের স্ত্রীদের খাতুন নামে ডাকা হতো, যেমন খাতুনে সুলতান সোলায়মান।
তবে এর আগে ৭০০ হিজরির শুরুতে তুর্কিদের সঙ্গে আরবদের মেলামেশা শুরু হলে আরবদের মধ্যেও খাতুন শব্দটির ব্যবহার শুরু হয়। যেমন: বিখ্যাত আব্বাসী খলিফা হারুনুর রশিদের স্ত্রীর নাম ছিল জুবাইদা খাতুন।
পরবর্তী সময়ে কালের পরিক্রমায় খাতুন শব্দটি তুর্কিদের সূত্র ধরে ভারত উপমহাদেশে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে থাকে। মোগল শাসনামলে ফার্সি ভাষায় খাতুনের অনুপ্রবেশ ঘটে।
তখন এই শব্দটি অভিজাত মহিলাদের জন্য নির্দিষ্ট ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় উর্দু ও বাংলা ভাষায় তুর্কি খাতুন শব্দটি ঢুকে পড়ে। এখানকার নারীদের নামের পরে খাতুন শব্দের ব্যবহার অনেক লক্ষ করা যায়।
والله اعلم بالصواب