আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

নির্বাচিত প্রবন্ধ-৩৬: স্বচ্ছতা : মুমিনের বড় গুণ-২

No Comments

 



স্বচ্ছতা : মুমিনের বড় গুণ-২

Daily Inqilab মাওলানা মুহাম্মাদ ইমদাদুল হক

 ১৭ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১৭ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৫ এএ


খিয়ানত ও মিথ্যার মূল অস্বচ্ছতা, এটি ঈমানের সাথে মেলে না। ঈমান ও নিফাকের পার্থক্যই এখানে যে, মুমিন স্বচ্ছ, মুনাফিক অস্বচ্ছ! তাবুক যুদ্ধে মুনাফিকদের অস্বচ্ছতা এবং ঐসব সাহাবী যারা যুদ্ধে যেতে পারেননি তাদের অবস্থার বিবরণ দিয়ে আল্লাহ তাআলা মুমিনদের সম্বোধন করে বলেন : হে ঈমানদাররা! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক। ‘সাদেকীন’ এখানে ‘মুনাফিকীন’-এর বিপরীতে এসেছে ‘কাফিরীন’-এর বিপরীতে নয়। কারণ আয়াতের উদ্দেশ্য মুনাফিকদের সঙ্গ ত্যাগ করার নির্দেশ দান। সাদেকীন দ্বারা উদ্দেশ্য এখানে মুমিন। অর্থাৎ তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং মুমিনদের সাথে থাক। তাদের সাথে জিহাদে শরীক হও, মুনাফিকদের সাথে থেকো না এবং জিহাদ থেকে লুকিয়ে থেকো না।


মুনাফিক অস্বচ্ছ, ‘তারা মুখে তোমাদের সন্তুষ্ট রাখে, কিন্তু তাদের হৃদয় তা অস্বীকার করে।’ (সূরা তাওবা : ৮)। মুমিন স্বচ্ছ তাই তারা সত্যবাদী। মুমিনরাই যে সত্যবাদী আল্লাহ তাআলা তা অন্য আয়াতে এভাবে বলেছেন : মুমিন তো তারাই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছে অতঃপর তাতে কোনো সন্দেহে পতিত হয়নি এবং তাদের জানমাল দিয়ে আল্লাহর পধে জিহাদ করেছে। তারাই তো সত্যবাদী। (সূরা হুজুরাত : ১৫)।

মুমিন এজন্যই সত্যবাদী যে, সে যা বলে তার অন্তরেও তা থাকে এবং কাজে কর্মে হুবহু সেটাই বাস্তবায়ন করে দেখায়। এতে কোনো লুকোচুরি বা অস্বচ্ছতা থাকে না। হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে : সত্যবাদী ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিন নবী সিদ্দীক ও শহীদগণের সাথে থাকবে। সত্যবাদী ব্যবসায়ী কারা তা হাদিসে এভাবে বর্ণিত হয়েছে : যদি ক্রেতা-বিক্রেতা সত্য বলে এবং ভালো-মন্দ প্রকাশ করে দেয় তাহলে তাদের লেনদেন বরকতময় হবে। আর যদি উভয়ে মিথ্যা বলে এবং দোষ-ত্রুটি গোপন করে তাহলে এ লেনদেন থেকে বরকত উঠিয়ে নেয়া হবে। (সহীহ মুসলিম : ১৫৩২)।



এক মহিলা নবীজীর নিকট এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার একজন সতীন রয়েছে। তো আমি যদি চালচলনে, কথাবার্তায় সতীনের নিকট এমন ভাব প্রকাশ করি যে, স্বামী আমাকে অনেক কিছু দেয় এতে কি পাপ হবে? উত্তরে নবীজী বলেছেন : যে লোক এমন বিষয়ে প্রাপ্তি ও তৃপ্তির ভাব প্রকাশ করে যা সে প্রাপ্ত হয়নি সে যেন মিথ্যার একপ্রস্ত কাপড় পরিহিতের ন্যায়।


কোনো ব্যক্তি আবেদ যাহেদের পোশাক পরে বুঝায় সে তাদের একজন এবং এমন তাকওয়া ও বিনয় প্রকাশ করে যা তার অন্তরে নেই। তাকে মিথ্যার কাপড় পরিধানকারী বলা হয়। মানুষ সাধারণত দুইটি কাপড় পরিধান করে। একটি শরীরের ঊর্ধ্বাংশে, অপরটি নি¤œাংশে। তাই দুই কাপড় পরিহিতের ন্যায় বলা হয়েছে। অর্থাৎ সে সম্পূর্ণরূপে মিথ্যায় আহত। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত নবীজী (সা.) বলেন : সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ হলো দু’মুখো মানুষ। এর কাছে আসে এক চেহারায় ওর কাছে যায় আরেক চেহারায় । (মুসনাদে আহমদ : ৮০৬৯)।

হযরত আসমা বিনতে উমাইস (রা.) বলেন, যেসব সখী আয়েশাকে সাজিয়ে নবীজীর বাসরে নিয়ে গিয়েছিল আমিও ছিলাম তাদের একজন। আল্লাহর শপথ, তখন তাঁর ঘরে শুধু এক পেয়ালা দুধ ছিল। প্রথমে নবীজী তা থেকে পান করেন অতঃপর আয়েশাকে দেন। সে খুব লজ্জা করছে এবং নিচ্ছে না দেখে আমরা বললাম, নবীজীর হাত ফিরিয়ে দিও না, নিয়ে নাও তখন সে খুব লাজুকতার সাথে নিল ও পান করল।


অতঃপর নবীজী বললেন, তোমার সখীদের দাও। আমরা বললাম, আমাদের ক্ষুধা নেই। তখন নবীজী বললেন, দেখ, ক্ষুধা ও মিথ্যা একত্র করো না। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কোনো কিছুর প্রতি আমাদের চাহিদা আছে বটে তবে কেউ দিলে বলি, আমার এখন চাহিদা নেই এটা কি মিথ্যা হবে? তখন নবীজী বললেন : মিথ্যাকে মিথ্যা হিসেবে লিখা হয় এমন কি ছোট মিথ্যাকেও ছোট মিথ্যা হিসেবে লিখা হয়। (মুসনাদে আহমদ : ২৭৪৭১)।


গরু ছাগল উট দুম্বা বিক্রি করতে গিয়ে দু’তিন দিন দুধ দোহন না করে ওলান ফুলিয়ে বিক্রি করতে নবীজী (সা.) কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন, বরং ওই লেনদেনকে অবৈধ ও ভেঙ্গে দেয়া আবশ্যক বলেছেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) একবার একজন শস্যব্যবসায়ীর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। সে সময় তিনি তার শস্যের স্তূপের ভেতর হাত ঢুকিয়ে দিলেন। তখন ভেতরের শস্যগুলোতে কিছু আর্দ্রতা অনুভূত হল। নবীজী (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন, এটা কী? সেই ব্যবসায়ী উত্তর দিলেন, বৃষ্টিতে ভিজে গিয়েছিল। নবীজী তখন বললেন, ‘ভেজা অংশটা উপরে রাখলে না কেন?’ তারপর নবীজী আরো বললেন, যারা আমাদেরকে ধোঁকা দেয় তারা আমাদের নয়। (সহীহ মুসলিম : ১০২)।