তাওবা!
গুনাহ করা আর গুনাহ হয়ে যাওয়া এক নয়। মানুষ গুনাহ করে পরিকল্পিত ও ইচ্ছাকৃতভাবে। আর গুনাহ হয়ে যায় ইচ্ছার বিপরীত হঠাৎ নিজের অজান্তে। তো কারও দ্বারা যদি একাধিকবারও গুনাহ হয়ে যায় আর সে তাওবা- ইস্তেগফার করে, তা হলে তাকে 'বারবার পাপকারীদের' মধ্যে গণ্য করা হবে না। এ হলো এক হাদীসের মর্ম। কোনো ব্যক্তি যদি এমন হয় যে, সে গুনাহ পরিত্যাগ করেনি, বরং গুনাহ করেই যাচ্ছে আবার তাওবা-ইসতেগফারও করছে, এই লোক যেন আল্লাহর আয়াতসমূহ নিয়ে তামাশা করছে।
প্রকৃত অর্থে তাওবা-ইস্তেগফারের জন্য তিনটি বিষয় আবশ্যক।
১. যে গুনাহটি আগে হয়ে গেছে, তার জন্য অনুতপ্ত ও লজ্জিত হতে হবে এবং অন্তরে তার প্রতি ঘৃণা জাগ্রত হতে হবে, তার কুফল সম্পর্কে অবহিত হতে হবে।
২. তাৎক্ষণিকভাবে কাজটি পরিত্যাগ করতে হবে।
৩. ভবিষ্যতের জন্য দৃঢ় প্রত্যয় নিতে হবে যে, এই আমল জীবনে আর কোনো দিন আমি করব না।
যখন এই তিনটি বিষয় পাওয়া যাবে, তখন তাওবা-ইস্তেগফার পরিপূর্ণ হয়ে যাবে। আর এমন তাওবার জন্যই আল্লাহপাকের ওয়াদা আছে যে, যেলোক তাওবা করবে, সে এমন হয়ে যাবে, যেন সে কোনো গুনাহ করেইনি।
এ হলো আল্লাহপাকের ওয়াদা। তার গুনাহগুলো আমলনামা থেকে মুছে ফেলা হবে। আসল তাওবা হলো এটি। তাওবার আরও একটি প্রকার আছে। আমাদের মতো দুর্বলদের জন্য আল্লাহপাক সামান্য সুযোগও রেখেছেন। যেমন- এক ব্যক্তি কোনো একটি গুনাহে লিপ্ত। তার জন্য সে অনুতপ্ত ও লজ্জিত। গুনাহটি সে পরিত্যাগও করতে চায়। কিন্তু বিশেষ কোনো কারণে, কোনো অপারগতাবশত ছাড়তে পারছে না। যেমন- এক ব্যক্তি কোনো একটি অবৈধ চাকুরিতে ঢুকে পড়েছে, যেটি শরীয়তে জায়েয নয়। এর জন্য লোকটি মনে-মনে অনুতপ্ত ও লজ্জিত। সেইসঙ্গে ছাড়ার চেষ্টাও করছে। তাকে ছেড়ে উপার্জনের জন্য কোনো একটি হালাল উপায় অবলম্বনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু তার আর্থিক অবস্থা এমন যে, বিকল্প ব্যবস্থা না করে হঠাৎ ছাড়তেও পারছে না। সংসার আছে, স্ত্রী-সন্তান আছে। তাদের নিয়ে খেয়ে-পরে বাঁচতে হবে। হঠাৎ ছেড়ে দিলে না খেয়ে থাকতে হবে। আবার বিকল্প হালাল ব্যবস্থাটি হচ্ছেও না।
এমন ব্যক্তির জন্য হাদীসে বলা হয়েছে:
مَا أَصَرَّ مَنِ اسْتَغْفَرَ
'যেলোক ক্ষমা চাইল, সে গুনাহের উপর হঠকারী বলে বিবেচিত হবে না।'
[ মুফতি ত্বাকি উসমানী হাফি. ; ইসলাম ও আমাদের জীবন-৩ ]