জিজ্ঞাসা: ২৬২:
একটি মাসয়ালাঃ স্ত্রী কি তার স্বামী কে তুই করে বলতে পারে?
(তার স্বামী রাগের মাথায় একেকবার বলে এই প্রতিশোধ নিতে স্ত্রী তার স্বামীকে সব সময় বলছেন)
তারিখ:০৫/০৯/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
জবাব:
نحمده ونصلي على رسوله الكريم اما بعد.
হামদ ও সানার পর কথা হলো, ইসলামের দৃষ্টিতে স্বামীর মর্যাদা অনেক।
প্রথম কথা হলো, তাই স্বামী কষ্ট পায়, অপছন্দ করেন এমন আচরণ না করা স্ত্রীর কর্তব্য।
স্বামীর সম্মান-মর্যাদার দলিল:
আয়াত নং-০১
الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ وَبِمَا أَنفَقُوا مِنْ --.
অর্থ: পুরুষেরা নারীদের উপর কৃর্তত্বশীল এ জন্য যে, আল্লাহ একের উপর অন্যের বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং এ জন্য যে, তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে। সূরা নিসা -৩৪
হাদিস নং-০১
عَنْ مُعَاذٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَوْ كُنْتُ آمِرًا أَحَدًا أَنْ يَسْجُدَ لِأَحَدٍ لَأَمَرْتُ النِّسَاءَ أَنْ يَسْجُدْنَ لِأَزْوَاجِهِنَّ»
অর্থ: হজরত মুয়াজ রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যদি আমি যদি কোন ব্যক্তিকে অন্য কাউকে সেজদা করার আদেশ দিতাম, তাহলে আমি স্ত্রীদের আদেশ দিতাম তাদের স্বামীকে সেজদা দিতে। তাখরিজ: মুসন্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৮৭৮৫, আবু দাউদ-২১৪০
হাদিস নং-০২
إذا صلَّت المرأةُ خمسَها وصامت شهرَها وحفِظت فرجَها وأطاعت زوجَها قيل لها ادخُلي الجنَّةَ من أيِّ أبوابِ الجنَّةِ شئتِ
الراوي : عبدالرحمن بن عوف | المحدث : السخاوي | المصدر : البلدانيات | الصفحة أو الرقم : 161 | خلاصة حكم المحدث : حسن | التخريج : أخرجه أحمد (1661) واللفظ له، والطبراني في ((المعجم الأوسط)) (8805
হজরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করে, রমজান মাসের রোযা রাখে, লজ্জাস্থানের হেফাজত করে এবং স্বামীর অনুগত থাকে; তাকে বলা হবে- তুমি যে দরজা দিয়ে চাও জান্নাতে প্রবেশ কর।’ তাখরিজ: মুসনাদে আহমদ-১৬৬১; তাবারানি-৮৮০৫
হাদিস নং-০৩
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তার কোনো নামাজ কবুল হয় না, কোনো নেক আমল ওপরে উঠানো হয় না; যতক্ষণ স্বামী তার প্রতি সন্তুষ্ট না হবে।’ তাখরিজ: ইবনে হিব্বান
হাদিস নং-০৪
স্বামীর সঙ্গে স্ত্রীর আচরণ কেমন হবে তা প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে এক নারীর আলাপচারিতায় ফুটে ওঠেছে। হাদিসে এসেছে-
হজরত হুসাইন ইবনে মুহসিন থেকে বর্ণিত, তাঁর এক ফুফু প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে কোনো প্রয়োজনে এসেছিলেন। তাঁর প্রয়োজন পূর্ণ হলে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি কি বিবাহিতা? তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ’। প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি স্বামীর সঙ্গে কেমন আচরণ করে থাক? তিনি বললেন, আমি একেবারে অপারগ না হলে তার সেবা ও আনুগত্যে ত্রুটি করি না।
তখন প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘স্বামীর সঙ্গে তোমার আচরণ কেমন তা ভেবে দেখ। কারণ স্বামীই তোমার জান্নাত কিংবা জাহান্নাম।’ তাখরিজ: মুসনাদে আহমদ
দ্বিতীয় কথা হলো, আপনি, তুমি, তুই শুধু বাংলা ভাষায় ব্যবহার হয়। আরবি, ইংরেজি বা অন্য ভাষায় এভাবে ব্যবহার নেই। যেমন, আরবিতে انت (আনতা) মানে (আপনি তুমি তুই) ইংরেজিতে you (উই) মানে আপনি তুমি তুই। বাংলা ভাষায় তুই কখনো অধিক আন্তরিকতা আবার তাচ্ছিল্য হিসেবে ব্যবহার হয়।
তৃতীয় কথা হলো,
আল্লাহ বলেন,
وَ لَا تَسُبُّوا الَّذِیۡنَ یَدۡعُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ فَیَسُبُّوا اللّٰهَ عَدۡوًۢا بِغَیۡرِ عِلۡمٍ ؕ
অর্থ: আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদেরকে তারা ডাকে তোমরা তাদেরকে গালি দিও না, কেননা তারা তাদের অজ্ঞতাপ্রসূত শত্রুতার বশবর্তী হয়ে আল্লাহকে গালি দেবে। সূরা আনআম-১০৮
এ আয়াতের শিক্ষা হলো, অন্য ধর্মের খোদা, অপরের পিতা-মাতা, বংশ ইত্যাদিকে গালি দিলে, তারা আবার পাল্টা গালি দিবে। সুতরাং নিজ ধর্ম, পিতা-মাতা, নিজের সম্মান-ইজ্জত রক্ষার্থে অপরকে গালি-তাচ্ছিল্য থেকে বেঁচে থাকতে হবে।
সারকথা হলো, আপনার উল্লেখিত প্রশ্ন আলোকে বুঝা যায়, স্ত্রীর আচরণে স্বামী খুশি নয়, এমতাবস্থায় স্ত্রীর উচিত তার স্বামী সন্তুষ্ট হয়, এমন আচরণ করা। অর্থাৎ স্বামীকে তাচ্ছিল্যস্বরে তুই বলা থেকে বিরত থাকা। কারণ এতে স্বামীর অসম্মান হয় ও দুনিয়া-আখিরাতের ক্ষতির কারণ। আর নিজ স্বামীকে সম্মান স্ত্রীর কর্তব্য।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন,