জিজ্ঞাসা-১৩০৬৭:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
সম্মানিত মুফতি সাহেব,
নিম্নোক্ত প্রশ্নের উত্তর কোরআন ও হাদিসের আলোকে রেফারেন্সসহ প্রদান করলে কৃতজ্ঞ থাকব। জাযাকাল্লাহু খাইরান।
প্রশ্ন: অফিস চলাকালীন সময়ে ও ডিউটিতে থাকা অবস্থায় ইবাদত করার বিধান কি ?
তারিখ:০১/০৯/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি
হাফেজ মাওলানা সাজ্জাদ হোসেন নারায়ণগঞ্জ থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, যে কর্মচারী/কর্মকর্তা পেশাগত দায়িত্ব পালনের সাথে সাথে শরয়ি বিধান পালন করবে, তার ডাবল সাওয়াবের ওয়াদা রয়েছে। যেমন,
أَخْبَرَنَا مُحَمَّدٌ ـ هُوَ ابْنُ سَلاَمٍ ـ حَدَّثَنَا الْمُحَارِبِيُّ، قَالَ حَدَّثَنَا صَالِحُ بْنُ حَيَّانَ، قَالَ قَالَ عَامِرٌ الشَّعْبِيُّ حَدَّثَنِي أَبُو بُرْدَةَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " ثَلاَثَةٌ لَهُمْ أَجْرَانِ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ آمَنَ بِنَبِيِّهِ، وَآمَنَ بِمُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم وَالْعَبْدُ الْمَمْلُوكُ إِذَا أَدَّى حَقَّ اللَّهِ وَحَقَّ مَوَالِيهِ، وَرَجُلٌ كَانَتْ عِنْدَهُ أَمَةٌ (يَطَؤُهَا) فَأَدَّبَهَا، فَأَحْسَنَ تَأْدِيبَهَا، وَعَلَّمَهَا فَأَحْسَنَ تَعْلِيمَهَا، ثُمَّ أَعْتَقَهَا فَتَزَوَّجَهَا، فَلَهُ أَجْرَانِ ".
ثُمَّ قَالَ عَامِرٌ أَعْطَيْنَاكَهَا بِغَيْرِ شَىْءٍ، قَدْ كَانَ يُرْكَبُ فِيمَا دُونَهَا إِلَى الْمَدِينَةِ.
৯৭। মুহাম্মাদ ইবনে সালাম (রাহঃ) ......... আবু বুরদা (রাহঃ), তাঁর পিতা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ তিন ধরনের লোকের জন্য দুটি সাওয়াব রয়েছেঃ (১) আহলে কিতাব—যে ব্যক্তি তার নবীর ওপর ঈমান এনেছে এবং মুহাম্মাদ (ﷺ) এর উপরও ঈমান এনেছে। (২) যে ক্রীতদাস আল্লাহর হক আদায় করে এবং তার মালিকের হকও (আদায় করে)। (৩) যার একটি বাঁদী ছিল, যার সাথে সে মিলিত হত। তারপর তাকে সে সুন্দরভাবে আদব-কায়দা শিক্ষা দিয়েছে এবং ভালভাবে দ্বীনী ইলম শিক্ষা দিয়েছে, এরপর তাকে আযাদ করে বিয়ে করেছে; তার জন্য দুটি সাওয়াব রয়েছে। এরপর বর্ণনাকারী আমের শা'বী (রাহঃ) (তাঁর ছাত্রকে) বলেন, তোমাকে কোন কিছুর বিনিময় ছাড়াই হাদীসটি শিক্ষা দিলাম, অথচ এর চাইতে ছোট হাদীসের জন্যও লোক (দূর-দূরান্ত থেকে) সওয়ার হয়ে মদীনায় আসত।
Narrated Abu Burda’s father:
Allah’s Messenger (ﷺ) said "Three persons will have a double reward:
1. A Person from the people of the scriptures who believed in his prophet (Jesus or Moses) and then believed in the Prophet (ﷺ) Muhammad (i .e. has embraced Islam).
2. A slave who discharges his duties to Allah and his master.
3. A master of a woman-slave who teaches her good manners and educates her in the best possible way (the religion) and manumits her and then marries her."
—সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৭ (আন্তর্জাতিক নং ৯৭)
দ্বিতীয় কথা হলো, যে পেশা বা চাকরী করতে আল্লাহ তাআলার বিধান পালনে প্রতিবন্ধক বা নাফরমানি করতে বাধ্য করে, সেই চাকরি করা জায়েয নেই। দলিল-
, لاطاعة في معصية الله إنما الطاعة في المعروْف
আল্লাহর অবাধ্যতায় কোন আনুগত্য নেই। আনুগত্য কেবল ন্যায় কর্মে। তাখরিজ:বুখারী হা/৭২৫৭; মুসলিম-১৮৪০; যাদুল মাআদ পৃঃ ৪৫০
তৃতীয় কথা হলো, সর্বাবস্থায় আল্লাহ তাআলার বিধান পূর্ণ করার সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করা, কখনো ত্রুটি হয়ে গেলে জলদি তওবা করে নেওয়া। দলিল-
فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ وَاسْمَعُوا وَأَطِيعُوا وَأَنفِقُوا خَيْرًا لِّأَنفُسِكُمْ وَمَن يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
অতএব তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর, শুন, আনুগত্য কর এবং ব্যয় কর। এটা তোমাদের জন্যে কল্যাণকর। যারা মনের কার্পন্য থেকে মুক্ত, তারাই সফলকাম। সূরা তাগাবুন-১৬
وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। সূরা নূর-৩১
চতুর্থ কথা হলো, অফিস বা ডিউটি চলাকালীন সময়ে জামাআতে নামাজ আদায় ও জুমাআর নামজের বিধান সম্পর্কে আল-বুরহান জিজ্ঞাসা-১২৯১৭ শিরোনামে মাসয়ালাটি আলোচনা করা হয়েছে। সেটা দেখে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।
পঞ্চম কথা হলো, রোগীর বিস্তারিত বর্ণনার পরেই কেবল ডাক্তার তার ওষুধ নির্বাচন করে, তাই ব্যক্তি কি চাকরি করে, কি পরিস্থিতি ইত্যাদি ইত্যাদি বিস্তারিত বিজ্ঞ মুফতির কাছে বলার পরেই তিনি সিদ্ধান্ত দিবেন। আমভাবে বলা দুষ্কর। কেননা আপনি "ইবাদাত" শব্দ উল্লেখ করেছেন, শব্দটি ব্যাপক অর্থ বহন করে।
সারকথা হলো, একজন মুসলিম হিসেবে তার পেশাগতা দায়িত্ব পালন করা এটাও ইসলামের হুকুম আবার আল্লাহর নির্ধারিত শরয়ি বিধি-বিধান পালন করা এটাও তারই হুকুম।
উভয়ের মাঝে কিভাবে সমন্বয় করা যায়, ব্যক্তিগতভাবে বিজ্ঞ মুফতি/আলেম কাছে বিস্তারিত জেনে, আমল করা যেতে পারে। সমন্বয় করা সম্ভব না হলে, সর্বাবস্থায় বান্দাকে আল্লাহর শরীয়তে সিদ্ধান্তকে প্রাধান্য দিতে হবে।
والله اعلم بالصواب