জিজ্ঞাসা-১৩০৫৬:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নষ্ট হয়ে যাওয়া কুরআন শরীফের অংশটুকু অকেজো করণের দালীলিক পদ্ধতি সমুহ কি কি?
তারিখ: ১৬/০৮/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা নজরুল ইসলাম কঙ্গো থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, পুরাতন, ছেঁড়া বা ভুল ছাপার কারণে পবিত্র কুরআনকে হিফাজতে ওলামায়ে কেরাম চারটি পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন। যেমন,
১। পাক পবিত্র কাপড় দিয়ে ঢেকে মাটির নিচে দাফন করে দেয়া। দলিল-
وقال ابن الجوزي : ذلك لتعظيمه وصيانته . وذكر القاضي أن أبا بكر بن أبي داود روى بإسناده عن طلحة بن مصرف قال : دفن عثمان المصاحف بين القبر والمنبر ، وبإسناده عن طاوس أنه لم يكن يرى بأسا أن تحرق الكتب ، وقال : إن الماء والنار خلق من خلق الله " انتهى.
"كشاف القناع" (1/137)
অর্থাৎ হজরত তালহা ইবনে মাসরিফ রহ়. বলেন, হজরত ওসমান রা. কবর ও মিম্বারের মাঝখানে কুরআনুল কারিম দাফন করেন। সূত্র: কাশফুল কনা-১/১৩৭
واذا صار المصحف بحيث لا يمكن أن يقرأ فيه يجعل فى خرقة طاهرة ويدفن فى أرض طاهرة (حلبى كبير-498، الفتاوى الهندية-5\323، جديد-5\375، تاتارخانية-18\69)
অর্থাৎ যদি কুরআন এমন হয়ে যায় যে তাতে পাঠ করা যায় না, তবে এটি একটি পরিষ্কার কাপড়ে স্থাপন করা হয় এবং একটি পরিষ্কার জমিতে দাফন করা হয় (হালাবী কাবীর - 498, আল-ফাতাওয়া আল-হিন্দি - 5/323, জাদিদ - 5/375 , তাতারখানিয়া - 18/69)
২। পুড়িয়ে ফেলা। দলিল-
حَدَّثَنَا مُوسَى، حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ، حَدَّثَنَا ابْنُ شِهَابٍ، أَنَّ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ، حَدَّثَهُ أَنَّ حُذَيْفَةَ بْنَ الْيَمَانِ قَدِمَ عَلَى عُثْمَانَ وَكَانَ يُغَازِي أَهْلَ الشَّأْمِ فِي فَتْحِ إِرْمِينِيَةَ وَأَذْرَبِيجَانَ مَعَ أَهْلِ الْعِرَاقِ فَأَفْزَعَ حُذَيْفَةَ اخْتِلاَفُهُمْ فِي الْقِرَاءَةِ فَقَالَ حُذَيْفَةُ لِعُثْمَانَ يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ أَدْرِكْ هَذِهِ الأُمَّةَ قَبْلَ أَنْ يَخْتَلِفُوا فِي الْكِتَابِ اخْتِلاَفَ الْيَهُودِ وَالنَّصَارَى فَأَرْسَلَ عُثْمَانُ إِلَى حَفْصَةَ أَنْ أَرْسِلِي إِلَيْنَا بِالصُّحُفِ نَنْسَخُهَا فِي الْمَصَاحِفِ ثُمَّ نَرُدُّهَا إِلَيْكِ فَأَرْسَلَتْ بِهَا حَفْصَةُ إِلَى عُثْمَانَ فَأَمَرَ زَيْدَ بْنَ ثَابِتٍ وَعَبْدَ اللَّهِ بْنَ الزُّبَيْرِ وَسَعِيدَ بْنَ الْعَاصِ وَعَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ الْحَارِثِ بْنِ هِشَامٍ فَنَسَخُوهَا فِي الْمَصَاحِفِ وَقَالَ عُثْمَانُ لِلرَّهْطِ الْقُرَشِيِّينَ الثَّلاَثَةِ إِذَا اخْتَلَفْتُمْ أَنْتُمْ وَزَيْدُ بْنُ ثَابِتٍ فِي شَىْءٍ مِنَ الْقُرْآنِ فَاكْتُبُوهُ بِلِسَانِ قُرَيْشٍ فَإِنَّمَا نَزَلَ بِلِسَانِهِمْ فَفَعَلُوا حَتَّى إِذَا نَسَخُوا الصُّحُفَ فِي الْمَصَاحِفِ رَدَّ عُثْمَانُ الصُّحُفَ إِلَى حَفْصَةَ وَأَرْسَلَ إِلَى كُلِّ أُفُقٍ بِمُصْحَفٍ مِمَّا نَسَخُوا وَأَمَرَ بِمَا سِوَاهُ مِنَ الْقُرْآنِ فِي كُلِّ صَحِيفَةٍ أَوْ مُصْحَفٍ أَنْ يُحْرَقَ.
৪৬২৬। মুসা (রাহঃ) ......... আনাস ইবনে মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান (রাযিঃ) একবার উসমান (রাযিঃ) এর কাছে এলেন। এ সময় তিনি আরমিনিয়া ও আযারবাইজান বিজয়ের ব্যাপারে সিরীয় ও ইরাকী যোদ্ধাদের জন্য রণ-প্রস্তুতির কাজে ব্যস্ত ছিলেন। কুরআন পাঠে তাঁদের মতবিরোধ হুযাইফাকে ভীষণ চিন্তিত করল। সুতরাং তিনি উসমান (রাযিঃ) কে বললেন, হে আমীরুল মু’মিনীন! কিতাব সম্পর্কে ইহুদী ও নাসারাদের মত- মত পার্থক্যে লিপ্ত হবার পূর্বে এই উম্মতকে রক্ষা করুন। তারপর উসামান (রাযিঃ) হাফসা (রাযিঃ) এর কাছে জনৈক ব্যক্তিকে এ বলে পাঠালেন যে, আপনার কাছে সংরক্ষিত কুরআনের সহীফাসমূহ আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিন, যাতে আমরা সেগুলোকে পরিপূর্ণ মাসহাফসমূহে লিপিবদ্ধ করতে পারি। এরপর আমরা তা আপনার কাছে ফিরিয়ে দেব।
হাফসা (রাযিঃ) তখন সেগুলো উসমান (রাযিঃ) এর কাছে পাঠিয়ে দিলেন। এরপর উসমান (রাযিঃ) যায়দ ইবনে সাবিত (রাযিঃ), আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের (রাযিঃ), সাঈদ ইবনে আস (রাযিঃ) এবং আব্দুর রহমান ইবনে হারিস ইবনে হিশাম (রাযিঃ) কে নির্দেশ দিলেন। তাঁরা মাসহাফে তা লিপিবদ্ধ করলেন। এ সময় উসমান (রাযিঃ) তিনজন কুরাইশী ব্যক্তিকে বললেন, কুরআনের কোন বিষয়ে যদি যায়দ ইবনে সাবিতের সঙ্গে তোমাদের মতপার্থক্য দেখা দেয়, তাহলে তোমরা তা কুরাইশদের ভাষায় লিপিবদ্ধ করবে। কারণ, কুরআন তাদের ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তাঁরা তাই করলেন। যখন মূল লিপিগুলো থেকে কয়েকটি পরিপূর্ণ গ্রন্থ লিপিবদ্ধ হয়ে গেল, তখন উসমান (রাযিঃ) মূল লিপিগুলো হাফসা (রাযিঃ) এর কাছে ফিরিয়ে দিলেন। তারপর তিনি কুরআনের লিখিত মাসহাফ সমূহের এক একখানা মাসহাফ এক এক প্রদেশে পাঠিয়ে দিলেন এবং এতদভিন্ন আলাদা আলাদা বা একত্রে সন্নিবেশীত কুরআনের যে কপিসমূহ রয়েছে তা জ্বালিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিলেন।
ইবনে শিহাব (রাহঃ) খারিজা ইবনে যায়দ ইবনে সাবিতের মাধ্যমে যায়দ ইবনে সাবিত থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আমরা যখন গ্রন্থকারে কুরআন লিপিবদ্ধ করছিলাম তখন সূরা আহযাবের একটি আয়াত আমার থেকে হারিয়ে যায়; অথচ আমি তা রাসূল (ﷺ) কে পাঠ করতে শুনেছি। তাই আমরা অনুসন্ধান করতে লাগলাম। অবশেষে আমরা তা খুযায়মা ইবনে সাবিত আনসারী (রাযিঃ) এর কাছে পেলাম। আয়াতটি হচ্ছে এইঃ “মু’মিনদের মধ্যে কতক আল্লাহর সঙ্গে তাদের কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করেছে, তাদের কেউ কেউ শাহাদত বরণ করেছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষায় রয়েছে। তাঁরা তাদের অঙ্গীকারে কোন পরিবর্তন করেনি”। (৩৩: ২৩)
তারপর আমরা এ আয়াতটি সংশ্লিষ্ট সূরার সাথে মাসহাফে লিপিবদ্ধ করলাম।
—সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৬২৬ (আন্তর্জাতিক নং ৪৯৮৭-৪৯৮৮)
নোট: পুড়ানোর পর এমন জায়গায় ঐ ছাই দাফন করতে হবে, যেখানে লোকজনের চলাচল নেই
কিংবা পুড়িয়ে ছাই পানিতে ভাসিয়ে দিবে।
৩। যদি দাফন করার স্থান না থাকে, প্রবাহিত পানিতে ভাসিয়ে দিবে বা কোনো ভারী জিনিসের সাথে বেঁধে গভীর পুকুর বা নদীতে ডুবিয়ে দেয়া যেতে পারে। যাতে সেগুলো নদী বা পুকুরের গভীরে পৌঁছে যায়। দলিল-
ولا بأس بأن تلقى فى ماء جار كما هى أو تدفن وهو أحسن (الدر المختار مع رد المحتار-9\605)
অর্থাৎ প্রবাহমান পানিতে ভেসে দেওয়াতে কোন দোষ নেই এবং দাফন করা। তবে দাফন করা উত্তম। সূত্র: আদ-দুররুল মুখতার-৯/৬০৫
৪। ছিঁড়ে ফেলা (ক্ষুদ্রভাবে)। দলিল-
التمزيق والتخريق : ولعل هذه الطريقة هي أسهل الطرق اليوم ، فقد وجدت بعض الآلات التي تدخل إليها الأوراق فتفرمها فرما دقيقا بحيث لا تعود كلمات القرآن ولا حتى أحرفه مقروءة ، وهي طاهرة ومأمونة ولا تكلف كثيرا من الجهود كما هو الحال في الحرق أو الدفن .
انتهى.
"فتاوى نور على الدرب" (شريط/25، وجه ب)
وانظر: "الموسوعة الفقهية" (2/123)
ছিঁড়ে ফেলা এবং পাংচার করা: এই পদ্ধতিটি সম্ভবত আজ সবচেয়ে সহজ পদ্ধতিতে পাওয়া গেছে যেগুলি এর মধ্যে পাতাগুলিকে এত সূক্ষ্মভাবে কেটে দেয় যে এটি আর শুদ্ধ হয় না নিরাপদ এবং কবরস্ত বা দাফনের ক্ষেত্রে বেশি প্রচেষ্টার প্রয়োজন হয় না। সূত্র: ফাতওয়া নূরু আলাদ দারব-২৫
والله اعلم بالصواب