জিজ্ঞাসা-২৬১:
আসসালামু আলাইকুম।
প্রশ্ন: কোন কোন এলাকায় ঘোড়ার জানাজা করা হয়। এর কোন দালিলিক ভিত্তি আছে কিনা?
প্রশ্ন: ঘোড়ার গোশত খাওয়া হয় না কেন? আগস্ট ২০২২
মাওলানা শহীদ যশোর থেকে---
জবাব:
وعليكم السلام ورحمه الله وبركاته.
نحمده ونصلي على رسوله الكريم اما بعد.
তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হলো, আপনার প্রশ্নের আলোকে প্রশ্ন-উত্তর কে দুই ভাগে ভাগ করছি--
প্রশ্ন: ক। কোন কোন এলাকায় ঘোড়ার জানাজা করা হয়। এর কোন দালিলিক ভিত্তি আছে কিনা?
উত্তর: ক। যদি কোন এলাকায় ঘোড়ার জানাজা হয়ে থাকে,তাহলে এটি কুসংস্কার ও বিদআত। ইসলামে শরীয়তে এর কোন ভিত্তি নেই। দলিল:
শাব্দিক দলিল:
الجنازة শব্দ টি আরবি। এর শাব্দিক অর্থ হলো,
মৃতের সদ্গতির জন্য প্রার্থনা; সজ্জিত মৃতদেহ; মুসলমানদের অন্ত্যেষ্টি, শবযাত্রা। সূত্র: সংসদ বাংলা অভিধান
পরিভাষায় বলা হয়, মৃত ব্যক্তিকে সমাহিত করার পূর্বে সমবেত নামাজ বা প্রার্থনা। সূত্র: সংসদ বাংলা অভিধান
উপরোক্ত শাব্দিক অর্থ ও সংজ্ঞা দ্বারা প্রমাণিত হলো জানাযা শুধু মৃত্যু ব্যক্তির জন্য অন্য কারো জন্য নয়।
হাদিস শরীফ দ্বারা দলিল:
হাদিস নং-০১
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ دَاوُدَ بْنِ سُفْيَانَ، وَخُشَيْشُ بْنُ أَصْرَمَ، قَالَا: حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنِ ابْنِ الْمُسَيِّبِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: خَمْسٌ تَجِبُ لِلْمُسْلِمِ عَلَى أَخِيهِ، رَدُّ السَّلَامِ، وَتَشْمِيتُ الْعَاطِسِ، وَإِجَابَةُ الدَّعْوَةِ، وَعِيَادَةُ الْمَرِيضِ، وَاتِّبَاعُ الْجَنَازَةِ
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক মুসলিমের উপর তার মুসলিম ভাইয়ের পাঁচটি অবশ্য করণীয় রয়েছে। সালামের জবাব দেয়া, হাঁচি শুনে জবাব দেয়া, দাওয়াত কবূল করা, অসুস্থ হলে দেখতে যাওয়া এবং জানাযা ও দাফনে অংশগ্রহণ করা। তাখরিজ: আবু দাউদ ৫০৩০, বুখারী,মুসলিম
হাদিস নং-০২
প্রিয় নবী (ﷺ) বলেন, “যখন তোমরা মাইয়্যেতের জানাযা পড়বে তখন তার জন্য বিশুদ্ধচিত্তে দুআ করবে।” তাখরিজ: আবু দাউদ ২৭৮৪ক, ইবনে মাজাহ ১৪৮৬
হাদিস নং-০৩
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِحَيِّنَا وَمَيِّتِنَا وَصَغِيرِنَا وَكَبِيرِنَا وَذَكَرِنَا وَأُنْثَانَا وَشَاهِدِنَا وَغَائِبِنَا ، اللَّهُمَّ مَنْ أَحْيَيْتَهُ مِنَّا فَأَحْيِهِ عَلَى الْإِيمَانِ ، وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلَى الْإِسْلَامِ .
উচ্চারণঃ- আল্লা-হুম্মাগফির লিহাইয়িনা অমাইয়িতিনা অশা-হিদিনা অগায়িবিনা অস্বাগীরিনা অকাবীরিনা অযাকারিনা অউনষা-না, আল্লা-হুম্মা মান আহয়্যাইতাহু মিন্না ফাআহয়িহি আলাল ইসলাম, অমান তাওয়াফফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফফাহু আলাল ঈমান।
অর্থ- হে আল্লাহ! আমাদের জীবিত-মৃত, উপস্থিত অনুপস্থিত, ছোট-বড়, পুরুষ ও নারীকে ক্ষমা করে দাও। হে আল্লাহ! আমাদের মধ্যে যাকে তুমি জীবিত রাখবে তাকে ইসলামের উপর জীবিত রাখ এবং যাকে মরণ দিবে তাকে ঈমানের উপর মরণ দাও। হে আল্লাহ! ওর সওয়াব থেকে আমাদেরকে বঞ্চিত করো না এবং এর পরে আমাদেরকে ফিতনায় ফেলো না। তাখরিজ: আহমাদ ২/৩৬৮, তিরমিযী ৯৪৫, নাসাঈ ১৯৬০ক, আহমাদ ১৬৮৮৫ক, আবু দাউদ ২৭৮৬ক, ইবনে মাজাহ-১৪৮৬ মিশকাত- ১৬৭৫
নোট: বিভিন্ন বর্ণনায় শব্দের কম বেশি রয়েছে।
উপরোক্ত তিনটি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় জানাজা শুধু মুসলমানদের জন্য, অন্য কোন প্রাণীর জন্য নয়।
জানাযার ইতিহাস দ্বারা দলিল:
আদম (আ.)-এর জানাযার নামাজের মাধ্যমে সর্বপ্রথম জানাযার নামাজ শুরু হয়। আর তার জানাযার নামাজ পড়ান একজন ফেরেশতা। তার কাফন-দাফনের ব্যাবস্থাও করেন ফেরেশতাগণ। তার জানাযার নামাজ পড়ানোর পর আদম সন্তানদেরকে লক্ষ্য করে ফেরেশতারা বলেন:
‘হে বনী আদম! এটি তোমাদের জন্য বিধান।’
সেখান থেকেই জানাযার নামাজ পড়ার প্রচলন শুরু হয়। সূত্র: আলবিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ১/১৫৬-১৫৭
জানাযা ইতিহাস থেকে জানা গেল এটা শুধু আদম সন্তানদের জন্য অন্য কোন মাখলুকের জন্য নয়।
কিয়াস দ্বারা দলিল:
আমলের হিসাব-নিকাশ শুধুই মানুষ এবং জিন জাতির জন্য, অন্য কোন প্রাণীর হবে না। আর জানাজা নামাজ পড়া হয় তার উপকার্থে, দোয়ার জন্য।
ঘোড়া বা অন্য কোন প্রাণীর জন্য দোয়া কোন কাজে আসবে না।
প্রশ্ন: খ। ঘোড়ার গোশত খাওয়া হয় না কেন?
উত্তর: খ। ঘোড়ার গোস্ত খাওয়া মৌলিকভাবে হারাম নয়। ফোকাহায়ে কেরামের মধ্যে ঘোড়ার গোস্ত খাওয়া নিয়ম মতভেদ রয়েছে। সাহাবায়ে কেরাম ঘোড়া গোস্ত খেয়েছেন। দলিল:
إِسْحَاقُ سَمِعَ عَبْدَةَ عَنْ هِشَامٍ عَنْ فَاطِمَةَ عَنْ أَسْمَاءَ قَالَتْ ذَبَحْنَا عَلٰى عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَرَسًا وَنَحْنُ بِالْمَدِينَةِ فَأَكَلْنَاهُ.
অর্থ: আসমা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে আমরা একটি ঘোড়া নহর করলাম এবং সেটি খেলাম। তাখরিজ: বুখারী- ৫৫১৯
কিন্তু পরবর্তীতে তা নিষেধ করেছেন। দলিল:
হজরত খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোড়ার গোশত খেতে নিষেধ করেছেন।’ তাখরিজ:নাসাঈ শরিফ : ৮/২০৬, আবু দাউদ : ২/৫৩১
ঘোড়ার গোশত মাকরুহ তাহরিম হওয়ার হিকমাহ:
ঘোড়ার গোশত খাওয়া যদি সাধারণ করা হয় তাহলে যুদ্ধের জন্য জেহাদের জন্য বাহন ব্যত্যয় ঘটবে। ঘোড়া শুধু সাধারণ বাহন নয় ; ঘোড়া হলো যুদ্ধের অন্যতম বাহন। যেমন মহান আল্লাহ তা'আলা বলেন,
আয়াত নং -০১
وَأَعِدُّوا لَهُم مَّا اسْتَطَعْتُم مِّن قُوَّةٍ وَمِن رِّبَاطِ الْخَيْلِ تُرْهِبُونَ بِهِ عَدُوَّ اللَّهِ وَعَدُوَّكُمْ وَآخَرِينَ مِن دُونِهِمْ لَا تَعْلَمُونَهُمُ اللَّهُ يَعْلَمُهُمْ وَمَا تُنفِقُوا مِن شَيْءٍ فِي سَبِيلِ اللَّهِ يُوَفَّ إِلَيْكُمْ وَأَنتُمْ لَا تُظْلَمُونَ
আর প্রস্তুত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের শক্তি সামর্থ্যের মধ্যে থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে, যেন প্রভাব পড়ে আল্লাহর শুত্রুদের উপর এবং তোমাদের শত্রুদের উপর আর তাদেরকে ছাড়া অন্যান্যদের উপর ও যাদেরকে তোমরা জান না; আল্লাহ তাদেরকে চেনেন। বস্তুতঃ যা কিছু তোমরা ব্যয় করবে আল্লাহর রাহে, তা তোমরা পরিপূর্ণভাবে ফিরে পাবে এবং তোমাদের কোন হক অপূর্ণ থাকবে না।
সূরা আনফাল-৬০
আয়াত নং -০২
Surah An-Nahl, Verse 8:
وَالْخَيْلَ وَالْبِغَالَ وَالْحَمِيرَ لِتَرْكَبُوهَا وَزِينَةً وَيَخْلُقُ مَا لَا تَعْلَمُونَ
তোমাদের আরোহণের জন্যে এবং শোভার জন্যে তিনি ঘোড়া, খচ্চর ও গাধা সৃষ্টি করেছেন। আর তিনি এমন জিনিস সৃষ্টি করেন যা তোমরা জান না। সূরা নাহল-০৮
আলোচ্য আয়াতে বাহন ও সৌন্দর্যের উপকরণ হিসেবে ঘোড়া, খচ্চর ও গাধা সৃষ্টি করার কথা বলা হয়েছে। মহান আল্লাহ মানুষের কল্যাণে এগুলো সৃষ্টি করেছেন। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফতি শফি (রহ.) লিখেছেন, ‘পবিত্র কোরআনে উট, গরু ও ছাগল ইত্যাদির কথা বিভিন্ন স্থানে এসেছে। এগুলোর উপকারিতার মধ্যে গোশত খাওয়াও একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু এ আয়াতে ঘোড়া, গাধা ও খচ্চরের কথা বলা হলেও এগুলোর গোশত খাওয়ার কথা বলা হয়নি। শুধু বলা হয়েছে, এগুলো বাহন ও সৌন্দর্যের উপকরণ
এতে প্রমাণিত হয়, ঘোড়া, গাধা ও খচ্চরের গোশত খাওয়া বৈধ নয়।’ সূত্র: তাফসিরে মাআরেফুল কুরআন
একটি সংশয় ও তার নিরসন:
প্রশ্নটি হল এখন তো যুদ্ধক্ষেত্রে ঘোড়ার ব্যাপক ব্যবহার হয় না, তাহলে এখন সেই নিষেধাজ্ঞা বহাল রয়েছেন।
এর উত্তর হল যদিও আধুনিক যুগে যুদ্ধক্ষেত্রে ঘোড়ার ব্যাপক ব্যবহার নেই, তবে পৃথিবীর সব সামরিক বাহিনীতে ঘোড়ার একটি ইউনিট বা ব্যাটালিয়ন রয়েছে। এমনও অনেক অঞ্চল আছে যেখানে আধুনিক যন্ত্রপাতি গাড়ি অচল ঘোড়ার যুদ্ধ একমাত্র সচল।
তাই বর্তমান যুগের ফোকাহায়ে কেরামের মতে আগের মতই মাকরুহ তাহারিমি বলবৎ রেখেছেন। সূত্র:আহকামুল কোরআন লিল জাসসাস : ৩/১৮৩, ১৮৪