জিজ্ঞাসা-২৫৫:
বিজ্ঞজনদের নিকট সবিনয়ে আমার জানার বিষয় হলো এক ব্যক্তির কিডনির চিকিৎসার জন্য ৪০ লক্ষ টাকা প্রয়োজন। এমতাবস্থায় তার চিকিৎসার জন্য স্বাভাবিক ভাবে সাহায্য করলে সামান্য টাকা দেওয়া যায়। কিন্তু যাকাতের টাকা দিলে মোটা অংকে দেওয়া যায়। এখন যাকাতের টাকা দেওয়া যাবে কি না জানালে উপকৃত হতাম। তারিখ-২৪/০৮/২২
মাওলানা মুহাম্মদ মিজানুর রহমান কুমিল্লা থেকে
জবাব:
وعليكم السلام ورحمه الله وبركاته
نحمده و ونصلي على رسول الكريم اما بعد
তাসলিম ও হামদ-ছানার পর কথা হলো, আপনি উল্লেখ করেননি উক্ত ব্যক্তি ধনী না গরিব। যাইহোক, প্রথম কথা হলো, কোন মুসলমানকে উপকার করতে পারা দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের বড় কিসমত। যেমন, যেমন পবিত্র হাদিস শরীফে এসেছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " مَنْ نَفَّسَ عَنْ أَخِيهِ كُرْبَةً مِنْ كُرَبِ الدُّنْيَا نَفَّسَ اللَّهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِنْ كُرَبِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَهُ اللَّهُ فِي الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ وَمَنْ يَسَّرَ عَلَى مُعْسِرٍ يَسَّرَ اللَّهُ عَلَيْهِ فِي الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ وَاللَّهُ فِي عَوْنِ الْعَبْدِ مَا كَانَ الْعَبْدُ فِي عَوْنِ أَخِيهِ وَمَنْ سَلَكَ طَرِيقًا يَلْتَمِسُ فِيهِ عِلْمًا سَهَّلَ اللَّهُ لَهُ طَرِيقًا إِلَى الْجَنَّةِ وَمَا قَعَدَ قَوْمٌ فِي مَسْجِدٍ يَتْلُونَ كِتَابَ اللَّهِ وَيَتَدَارَسُونَهُ بَيْنَهُمْ إِلاَّ نَزَلَتْ عَلَيْهِمُ السَّكِينَةُ وَغَشِيَتْهُمُ الرَّحْمَةُ وَحَفَّتْهُمُ الْمَلاَئِكَةُ وَمَنْ أَبْطَأَ بِهِ عَمَلُهُ لَمْ يُسْرِعْ بِهِ نَسَبُهُ " . قَالَ أَبُو عِيسَى
আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দুনিয়াতে যে লোক তার কোন ভাইয়ের একটি বিপদ দূর করবে, কিয়ামতের দিবসে আল্লাহ তা’আলা তার একটি বিপদ দূর করবেন। আর কোন মুসলিমের দোষ-ত্রুটি যে লোক গোপন রাখবে, আল্লাহ তা’আলা ইহকালে ও পরকালে তার দোষ গোপন রাখবেন। কোন অভাবীর কষ্ট যে ব্যক্তি দূর করবে, ইহকালে ও পরকালে তার কষ্ট আল্লাহ তা’আলা দূর করবেন। ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ তা’আলা বান্দার সহায়তা করতে থাকেন যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার কোন ভাইয়ের সাহায্যে নিয়োজিত থাকে। মুসলিম-২৩১৪, ইবনে মাজাহ-২২৫
দ্বিতীয় কথা হলো, আপনার প্রশ্নে বর্ণিত ব্যক্তি যদি সাহেবে নিসাব না হয়, তাহলে যাকাতের টাকা তাকে দেওয়া যাবে।
কেননা যাকাতের টাকা শুধু গরিবের হক, যা মহান আল্লাহ তা'আলা কর্তৃক নির্ধারিত। যেমন,আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলছেন
إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاء وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ وَفِي سَبِيلِ اللّهِ وَابْنِ السَّبِيلِ فَرِيضَةً مِّنَ اللّهِ وَاللّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ
যাকাত হল কেবল (১)ফকির, (২)মিসকীন, (৩)যাকাত উসূলকারী ও (৪)যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন তাদের হক (৫)এবং তা দাস-মুক্তির জন্যে ও (৬)ঋণগ্রস্তদের জন্য, (৭)আল্লাহর পথে জেহাদকারীদের জন্যে এবং(৮) মুসাফিরদের জন্যে, এই হল আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। সূরা আত-তাওবাহ-৬০
প্রশ্ন: ক । কি পরিমান সম্পদ থাকলে বা টাকা থাকলে সাহেবের নিসাব হিসেবে গণ্য হবে?
উত্তর: ক। আজকের বাজারে সাহেবে নিসাব পরিমাণ হলো, ১৫১৬×৫২.৫=৭৯৫৯০ টাকা অর্থাৎ কোন ব্যক্তির কাছে প্রয়োজনীয় খরচ বাদ দিয়ে যদি অতিরিক্ত সাড়ে ৫২ তোলা রুপার পরিমাণ টাকা বা এত টাকার সম্পদ থাকে তাহলে তিনি সাহেবে নিসাব তার জন্য যাকাতের টাকা খাওয়া জায়েজ নাই। সূত্র: মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস ৬৭৯৭,৬৮৫১; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা হাদীস ৯৯৩৭
প্রশ্ন: খ। উক্ত ব্যক্তি যদি সাহেবে নিসাব হয় কিন্তু চিকিৎসা করার মতো টাকা না থাকে, তাহলে কি যাকাতের টাকা গ্রহণ করতে পারবে?
উত্তর: খ। হ্যাঁ, এমতাবস্থায় তিনি জাকাতের টাকা গ্রহণ করতে পারবে। তবে চিকিৎসা গ্রহণের পূর্বেই তাকে এই পরিমাণ টাকা না দেওয়া, যাতে সে আবার সাহেবে নিসাব হয়। বরং চিকিৎসা গ্রহণ করার পর তাকে যাকাতের টাকা দেওয়া। সূত্র: দারুন দেওবন্দের ফতুয়া প্রশ্ন নং: ৬৭২৯৩
প্রশ্ন: গ। অসুস্থ ব্যক্তিকে যাকাত দেওয়ার ব্যাপারে সতর্কতা কি?
উত্তর: গ। এ ব্যাপারে সতর্কতা হলো, যাকাতের টাকার মালিক বানিয়ে দিতে হবে যাকাত গৃহীতাকে। যদি মালিক বানিয়ে দেয়া না হয়, তাহলে যাকাত আদায় হবে না। সূত্র: মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদিস: ১৬৫৯১
, ইনায়া আলা ফাতহিল কাদীর-২/২৬৭-২৬৮
ولا يبنى بها مسجدا ولا يكفن بها ميت لإنعدام التمليك هو ষالركن، (الهداية-1/205)
والله اعلم بالصواب