জিজ্ঞাসা-১৩০৬৩:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। বন্যা পরিস্থিতিতে যদি লাশ কবরে দাফন করা না যায় তাহলে শরিয়তের দৃষ্টিতে করণীয় কী? দলিলসহ জানানোর অনুরোধ করছি।
তারিখ: ২৫/০৮/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা খন্দকার মনজুরুর রহমান ঢাকা থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, সাগরে বা বন্যাদুর্গত অঞ্চলে লাশ কবর দেওয়ার মতো শুকনা জায়গা না থাকলে এবং লাশ শুকনা অঞ্চলে পাঠিয়ে দেওয়ার মতো কোনো ব্যবস্থাও না থাকলে এবং বন্যার পানি চলে যাওয়ার অপেক্ষা করলেও লাশ নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকলে এমতাবস্থায় জানাজা ও কাফন সম্পন্ন করে লাশকে ভাসিয়ে দিতে হবে। ইমাম আহমদ ইনবে হাম্বল (রহ) বলেন, লাশের সাথে ভারী কিছু বেঁধে স্রোতস্বিনী কোনো স্থানে ডুবিয়ে দিবে। শুকনো স্থানে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা থাকলে বা লাশ নষ্ট হওয়ার আশংকা না থাকলে ডুবিয়ে দেবে না, বরং অপেক্ষা করবে আর যথাযথভাবে দাফন করবে। দলিল-
واستدل أصحاب هذا الرأي بما روي عَنْ أَنَسٍ أَنَّ أَبَا طَلْحَةَ قَرَأَ سُورَةَ بَرَاءَةً ، فَأَتَى عَلَى هَذِهِ الْآيَةِ: انْفِرُوا خِفَافًا وَثِقَالًا، فقال: مَا أَرَى رَبَّنَا تَعَالَى اسْمُهُ إِلَّا يَسْتَنْفِرُنَا، شَبَابًا وَشُيُوخًا، جَهِّزُونِي، فَقَالَ لَهُ بَنُوهُ: قَدْ غَزَوْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى قُبِضَ، وَغَزَوْتُ مَعَ أَبِي بَكْرٍ حَتَّى مَاتَ، وَغَزَوْتُ مَعَ عُمَرَ، فَنَحْنُ نَغْزُو عَنْكَ، فَقَالَ: جَهِّزُونِي. فَجَهَّزُوهُ وَرَكِبَ الْبَحْرَ، فَمَاتَ فِي غَزَاتِهِ تِلْكَ، فَلَمْ يَجِدُوا لَهُ جَزِيرَةً يَدْفِنُونَهُ فِيهَا إِلَّا بَعْدَ سَبْعَةِ أَيَّامٍ، وَلَمْ يَتَغَيَّرْ.
وأما إذا خُشي من الانتظار به أن يتغير فيغسل ويكفن ويصلَّى عليه، ثم يُلقى في البحر.
এই মতের প্রবক্তাদের দালীলিক ভিত্তি হলো,হযরত আনাস (রাযি.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, একবার হযরত আবু তালহা (রাযি.) পবিত্র কুরআন থেকে সূরা বারাআত (তাওবাহ) তিলাওয়াত করছিলেন। যখন তিনি এই আয়াত পর্যন্ত পৌঁছালেন,
"তোমরা হালকা কিংবা ভারী অবস্থায় যুদ্ধাভিযানে বেরিয়ে পড়ো।" (সূরা তাওবা-৪১)
এই আয়াতখানা তিলাওয়াত করা মাত্রই তিনি বলে উঠলেন, এখান থেকে এই কথাই সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, আমাদের পক্ষ থেকে আল্লাহ তায়ালার একমাত্র চাওয়াই হলো যে, বার্ধক্য - তারুণ্যের বিবেচনা না করে সর্বাবস্থায়ই আমরা যেন যুদ্ধাভিযানে বেরিয়ে পড়ি। সুতরাং তোমরা আমাকে রণসাজে সজ্জিত করে দাও। তারপর তিনি নিজ সন্তানদেরকে সম্বোধন করে বললেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবদ্দশায় প্রতিটি গাযওয়াতে (যুদ্ধাভিযানে) আমি তাঁর নিত্যসহচর ছিলাম। অতপর আবু বকর (রাযি.) এর সময়কালেও তাঁর ইন্তিকালের পূর্বমুহুর্ত পর্যন্ত তাঁর সহযোদ্ধা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছিলাম। হযরত ওমর (রাযি.) এর সাথেও আমি ছিলাম সম্মুখসারির অতন্দ্র সমরযোদ্ধা। সুতরাং
আমার সংগ্রামমুখর জীবনের কার্যধারায় এখনো আমি তোমাদের পক্ষ হয়ে যুদ্ধাভিযানে রওয়ানা হয়ে যেতে চাই। অতএব তোমরা আমাকে রণসাজে সজ্জিত করে দাও। তখন তারা তাঁকে যুদ্ধসামগ্রীর সম্ভারে প্রস্তুত করে দিলো। তখন তিনি সমুদ্রপথে যুদ্ধাভিযানে রওয়ানা হলেন। পথিমধ্যে সেখানেই তাঁর ইন্তিকাল হয়ে গেল। তখন তাঁর সহযোদ্ধাগণ তাঁকে দাফন দেয়ার জন্য একটি দ্বীপ কিংবা বিস্তীর্ণ জলরাশি বুক চিরে জেগে ওঠা কোন চরের অনুসন্ধানে ছিলেন। কিন্তু এমন কোন স্থলভাগ তাঁদের নজরে এলোনা। এভাবে সাতদিন কেটে গেলো। অবশেষে সাতদিন পর একটি ভূখন্ডের দেখা মিললো। সেখানেই তাঁকে কবরস্থ করা হলো। কিন্তু এই সময়কালে তাঁর লাশের কোন প্রকার পচন কিংবা গলন ধরেনি। বরং পূর্বাবস্থায় বহাল তবিয়তে অটুট ছিলো"
তবে স্থলসীমায় উপনীত হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে গিয়ে যদি লাশের পচন ধরে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়, তখন তাকে সমুদ্রস্থলেই গোসল করিয়ে কাফন পরিয়ে জানাযার নামাজ আদায় করে সমুদ্রবক্ষে নিক্ষেপ করে সেখানেই তার সলিল সমাধি ঘটিয়ে ফেলতে হবে। সূত্র: তাফসির ইবনে কাসির, সূরা তাওবার ৪১ নং আয়াতের ব্যাখ্যায়
সারকথা হলো,
والله اعلم بالصواب