কবরের আযাব থেকে মুক্তি পেতে ছোট্ট একটি আমল
-------------------------------------------------------------------------
আবু হুরাইরা রা. বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
إِنَّ سُورَةً مِنَ القُرْآنِ ثَلَاثُونَ آيَةً شَفَعَتْ لِرَجُلٍ حَتَّى غُفِرَ لَهُ، وَهِيَ سُورَةُ تَبَارَكَ الَّذِي بِيَدِهِ المُلْكُ.
“নিশ্চয় কুরআনে ৩০ আয়াত বিশিষ্ট একটি সূরা রয়েছে, যা তিলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ করবে, যতক্ষন পর্যন্ত তাকে ক্ষমা না করা হয়। সূরাটি হচ্ছে “তাবারাকাল্লাযী বি ইয়াদিহিল মুলকু...।” (তিরমিযী হা. ২৮৯১, আবু দাউদ হা. ১৪০০, হাসান)
মুসতাদরাকে হাকিমের বর্ণনায় এসেছে,
..شَفَعَتْ لِرَجُلٍ فَأَخْرَجَتْهُ مِنَ النَّارِ وَأَدْخَلَتْهُ الْجَنَّةَ.
“..উক্ত সূরা তিলাওয়াতকারীকে সুপারিশ করে জাহান্নাম থেকে বের করে জান্নাতে প্রবেশ করাবে।” (মুসতাদরাকে হাকিম হা. ৩৮৩৮, তিনি বলেন, এর সনদ সহীহ। এছাড়া তাবরানীর আল-মুজামুল আওসাত হা. ৫৬৬৪ গ্রন্থে আনাস রা.ও এরূপ বর্ণনা করেছেন।)
হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. বলেন, “কবরস্থিত ব্যক্তির পায়ের দিকে দিয়ে (আযাবের ফেরেশতা শাস্তির জন্য) আসতে চাইলে তার পদদ্বয় বলবে, আমার এ দিক দিয়ে আসার রাস্তা নেই। কেননা সে ‘সূরা মুলক’ তিলাওয়াত করত। এরপর তার সীনা অথবা পেটের দিক দিয়ে আসতে চাইবে, তখন বলা হবে, তোমাদের জন্য আমার এ দিকে দিয়ে আসার কোন সুযোগ নেই। কেননা সে আমি ‘সূরা মুলক’কে তিলাওয়াত করত।
অতঃপর তার মাথার দিক দিয়ে আসার চেষ্টা করলে মাথা বলবে, এ দিক দিয়েও আসার রাস্তা নেই। কেননা সে আমি ‘সূরা মুলক’কে তিলাওয়াত করত। (এর কারণ বর্ণনা করে বলেন,) সূরা মুলক হচ্ছে বাধাপ্রদানকারী তথা কবরের আযাব থেকে বাধা প্রদান করে। তাওরাতেও ‘সূরা মুলক’ ছিল। যে ব্যক্তি তা রাত্রে তিলাওয়াত করল, সে অধিক ও পবিত্র-উৎকৃষ্ট আমল করল।” (মুসতাদরাকে হাকিম হা. ৩৮৩৯, তিনি বলেন, এর সনদ সহীহ, মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক হা. ৬০২৪, ৬০২৫।)
অন্যত্র এসেছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন,
مَنْ قَرَأَ {تَبَارَكَ الَّذِي بِيَدِهِ الْمُلْكُ} كُلَّ لَيْلَةٍ مَنَعَهُ اللهُ بِهَا مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَكُنَّا فِي عَهْدِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نُسَمِّيهَا الْمَانِعَةَ...
“যে ব্যক্তি প্রতি রাতে তাবারাকাল্লাযী বি ইয়াদিহিল মুলক তিলাওয়াত করবে, আল্লাহ তাআলা এর উসিলায় তাকে কবরের আযাব থেকে রক্ষা করবেন।”
অতঃপর বলেন, “আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে সূরাটিকে মানিআ’ বা বাধা প্রদানকারী সূরা বলে আখ্যা দিতাম।” (আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ, নাসায়ী হা. ৭১১, আস-সুনানুল কুবরা, নাসায়ী হা. ১০৪৭৯।)
হযরত জাবের রা. বলেন,
عَنْ جَابِرٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ لَا يَنَامُ حَتَّى يَقْرَأَ الم تَنْزِيلُ، وَتَبَارَكَ الَّذِي بِيَدِهِ المُلْكُ.
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সূরা) আলীফ-লাম-মীম (সেজদা) ও তাবারাকাল্লাযী বি ইয়াদিহিল মুলক পড়া ব্যতীত শুইতেন না। (তিরমিযী হা. ২৮৯২, মুসতাদরাকে হাকিম হা. ৩৫৪৫, আল-আদবুল মুফরাদ, বুখারী হা. ১২০৭, সনদ সহীহ বা হাসান।)
হযরত কা’ব রা. বলেন, যে ব্যক্তি (রাতে সূরা) আলীফ-লাম-মীম সেজদা ও তাবারাকাল্লাযী বি ইয়াদিহিল মুলক পড়বে, তার জন্য ৭০টি নেকী লেখা হবে, তার ৭০টি গুনাহ মাফ করা হবে এবং ৭০টি মরতবা বুলন্দ করা হবে। (সুনানে দারেমী হা. ৩৪৫২, সনদ সহীহ, ফাযায়েলে কুরআন, ইবনে দুরাইস হা. ২১৩।)
আরেকটি হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করা হয়েছে, যে ব্যক্তি সূরা মূলক ও আলিম-লাম-মিম সিজদা মাগরিব ও এশার মাঝখানে পড়ল, সে যেন শবে কদরে ইবাদত করল। (ফাযায়েলে কুরআন, মুস্তাগফিরী হা. ৮৫৯, ৮৬১, ৮৮২, ১১৯৯, তাখরীজুল কাশ্শাফ, যায়লায়ী ৩/৮৮, আল-আজইবাতুল মারদিয়্যাহ, সাখাবী ২/৪৬১-৬২, এর সনদগুলোতে সমস্যা থাকলেও নির্ভরযোগ্য হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।)
উল্লেখ্য, কবর আযাব কোন সাধারণ বিষয় নয়, মৃত্যুর পর এর সম্মুখীন হতে হবে। হযরত উসমান রা. যখন কবরের পাশ দিয়ে যেতেন, তখন কান্নায় উনার দাড়ি ও বুক ভাসিয়া যেত। তাকে জিজ্ঞাসা করা হল, আপনি জান্নাত-জাহান্নামের বর্ণনাও এত বেশী কান্নাকাটি করেন না, অথচ কবরের পাশ দিয়ে গেলে করেন- এর কারণ কি?
তিনি বললেন, আমি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি, “কবর আখেরাতের প্রথম মনজিল। যে ব্যক্তি এখানে নাজাত পাবে, তার জন্য সমস্ত মনজিল আছান বা সহজ। আরো শুনেছি, কবর হইতে ভয়ংকর দৃশ্য আমি আর কিছু দেখিনি।” (তিরমিযী হা. ২৩০৮, হাসান।)
আসুন! আমরা সূরা মূলক প্রতি রাতে তিলাওয়াত করি, মুখস্ত করি ও এবং কবর আযাব হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য আল্লাহর দরবারে দুআ করি। হে আল্লাহ! তুমি আমাদের কবর আযাব হতে হেফাযত করুন।
🖋️ মাওলানা সাঈদ আহমাদ হাফিঃ