জিজ্ঞাসা-২৫২
বিজ্ঞজনদের নিকট জানার বিষয়, আর্মির লোকেরা পেনশন যাওয়ার পরে পেনশনের টাকা পাওয়ার জন্য যে ঘুস দেয়, তার বৈধতা কতটুকু আবার ঘুস দিয়ে উত্তলিত টাকার বৈধতা কতটুকু?? কুরআন হাদিসের আলোকে সমাধান কামনা করছি। (তারিখ- ১৮/০৮/২০২২ ঈসায়ি/ইংরেজি)
মাওলানা শফিউল ইসলাম সিলেট থেকে-----
জবাব: ঘুষের ভয়াবহতা সম্পর্কে আমরা সবাই অবগত। কিছু কিছু গুনাহ আছে যা কোন ধর্মে তা সমর্থন করে না। তারমধ্যে অন্যতম হলো ঘুস। আপনার প্রশ্নকে সহজভাবে বুঝার জ্যন তিনভাগে ভাগ করছি।
প্রশ্ন: ক। ঘুষ কাকে বলে?
উত্তর: ক। ঘুষ শব্দটি বাংলা, দেশি শব্দ। কোনো কাজে সাহায্য লাভের জন্য বা কার্যসিদ্ধির জন্য গোপনে দেওয়া পুরস্কার বা অর্থ, উত্কোচ। সূত্র: সংসদ বাংলা অভিধান
কোনো প্রতিষ্ঠানে কমকতা কর্মকতা কর্মচারী তাদের কাজে জন্য নিদিষ্ট বেতন ভাতা পায়। কিন্তু তারা যদি ঐ কাজে জন্য অন্যয়ভাবে আরও বেশি কিছু গ্রহণ করে তা হলো ঘুষ।
প্রশ্ন: খ। ঘুষ গ্রহণ করা কি জায়েজ আছে?
প্রশ্ন: খ। না, কোন অবস্থায় ঘুষ গ্রহণ করা জায়েজ নেই। দলিল:
وَلَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُم بَيْنَكُم بِالْبَاطِلِ وَتُدْلُوا بِهَا إِلَى الْحُكَّامِ لِتَأْكُلُوا فَرِيقًا مِّنْ أَمْوَالِ النَّاسِ بِالْإِثْمِ وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ
অর্থ: ‘তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না এবং মানুষের ধন-সম্পত্তির কিছু অংশ জেনে-বুঝে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে বিচারককে উৎকোচ দিও না। সুরা বাকারা- ১৮৮
আবু হুরায়রা রা. রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন,
«لَعَنَ اللهُ الرَّاشِيَ وَالْمُرْتَشِيَ فِي الْحُكْمِ» অর্থ: বিচার-ফায়সালায় ঘুষ দাতা ও ঘুষ গ্রহীতা উভয়ের উপরে আল্লাহ তা‘আলা লা‘নত করেছেন। তাখরিজ: মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ৯০১১
প্রশ্ন: গ। মাজলুম/নিরাপায় হয়ে ঘুষ দেওয়া কি জায়েজ?
উত্তর: গ। হ্যাঁ, মাজলুম/নিরাপায় হয়ে ঘুষ দেওয়া জায়েজ আছে। অর্থাৎ মাজলুম ব্যক্তি যদি বৈধ কোনো পন্থায় নিজের হক উদ্ধার করার সক্ষমতা না রাখে, তাহলে সে তাই করবে। আর যদি বৈধ পদ্ধতিতে উদ্ধার করার সক্ষমতা না থাকে; তাহলে অর্থ প্রদানের মাধ্যমেও অধিকার রক্ষা করতে পারে। তবে মুমিন মুসলমানদের জন্য এই অনুমতির বিষয়টা একান্ত অপারগ পরিস্থিতিতে পালন করা উচিত। দলিল-
فقد ورد في الأثر أن ابن مسعود ـ رضي الله عنه: كان بالحبشة فرشا بدينارين، حتى خلي سبيله، وقال: إن الإثم على القابض دون الدافع.
ইবনে মাসঊদ রা. হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি হাবশা (ইথিওপিয়া) গিয়েছিলেন কিন্তু তাকে সেখানে আটকে দেয়া হয়। পরে তিনি দু দিনার প্রদান করলে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। এ বিষয়ে তিনি বলেন,
“গ্রহণকারীর উপর গুনাহ বর্তাবে; প্রদানকারীর উপর নয়।” তাখরিজ:
সুনান কুবরা-বায়হাকী, ২০৪৮২, শরহুস সুন্নাহ-ইমাম বাগাভী ১০/৮৮, তাফসীর কুরতুবী ৬/১৮৪
আল্লামা মোল্লা আলী কারী রহ. বলেছেন,
وفي المرقاة شرح المشكاة: قيل الرشوة: ما يعطى لإبطال حق أو لإحقاق باطل، أما إذا أعطى ليتوصل به إلى حق أو ليدفع به عن نفسه فلا بأس به.
ঘুষ হল যা দেওয়া হয় একটি হককে বাতিল বা একটি মিথ্যা /বাতিলকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। আর যদি ঘুষ দেওয়া হয় নিজের হক/ অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে এবং জুলুমকে প্রতিহত করতে, তাহলে এমতাবস্থায় ঘুষ দেওয়াতে কোন দোষ নেই। সূত্র: মিরকাত শরহুল মিশকাত, ফিকহুল মুআআলাত, হিবা-রিশওয়াহ-১
৩৮৮০৮ ( ফতোয়া নং)
*সারকথা: আপনার* প্রশ্নে বর্ণিত ছুরুতে যদি পেনশনের টাকার সত্যি কারের দাবিদার (অনেকে ঘুষ দিয়ে পেনশনে টাকা বাড়িয়ে নেয়) হয় সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা-ফিকির করার পরও যদি লক্ষ্য অর্জিত না হয়। এমতাবস্থায় অপারগতার কারণে ঘুষ দেওয়া জায়েজ হবে। কিন্তু ঘৃণাভরে ঘুষটা দিতে হবে। হারাম জিনিস হালাল মনে করলে ঈমান থাকে না; তেমনি হারাম কাজে খুশি হওয়াও ঈমান যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
*সর্বোচ্চ তাকওয়া:* তবে এ বিষয়ে কেউ ঘুষের ভয়ে মূল টাকা/দাবিও ছেড়ে দেয়; তাহলে তার জন্য অবশ্যই এটা উত্তম/সর্বোচ্চ তাকওয়া। যেমন,
আবু দারদা (রা.) বলেন, পরহেজগারিতা পরিপূর্ণ হয় যখন বান্দা তার প্রতিপালককে ভয় করবে। এমনকি সে অণু পরিমাণ গুনাহের ব্যাপারেও সতর্ক থাকে। সূত্র: জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম : ৮/২২
অভিজ্ঞতা দেখা গেছে, পেনশন সময় যদি ঘুষ না দেওয়া হয়, তাহলে পেনশনের টাকা পাওয়া যায়, তারা দিতে বাধ্য। তবে কম এবং দেরিতে পাওয়া যায়। কেউ যদি এতেই সন্তুষ্ট থাকে, তাহলে তার জন্য ঘুষ দেওয়া না দেওয়াই ভালো, উত্তম।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন