জিজ্ঞাসা-২৩৮: জমি বন্ধকের জায়েজ/বিকল্প পদ্ধতি কি? জানালে উপকৃত হতাম, ভাল হয়। তারিখ-২/০৭/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা ইব্রাহীম ঢাকা থেকে---
জবাব:
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
১ম সুরত : যিনি জমি নেবেন তিনি এ হিসেবে চুক্তি করবেন যে, তিনি জমিটি ভাড়া নিচ্ছেন। নামমাত্র কিছু মূল্য মাসিক ভাড়া হিসেবে নির্দিষ্ট করে নিবে। যেমন ৫০ টাকা বা ১০০ টাকা। আর অগ্রিম ভাড়া হিসেবে প্রদান করবে ১/২ লাখ টাকা। তারপর যেদিন জমিনটি ফেরত নিতে চাইবে, সেদিন আগের নির্ধারণকৃত নামমাত্র ভাড়ার টাকা রেখে বাকি টাকা ফেরত দিয়ে দেবে জমিনটি ভোগদখলকারী তথা জমির ভাড়াটিয়াকে। যেমন আবদুল্লাহ এর জমি আছে। কিন্তু টাকা নেই। তার টাকা প্রয়োজন। আর আবদুর রহমানের টাকা আছে। কিন্তু জমি নেই। তার জমি প্রয়োজন। আবদুল্লাহ তার জমিটি আবদুর রহমানের কাছে দিয়ে ৫ লাখ টাকা নিতে চাচ্ছে। আর আবদুর রহমান টাকা প্রদান করে জমিটির ফসল নিতে চাচ্ছে।
এমতাবস্থায়, আবদুল্লাহ তার জমিটি আবদুর রহমানের কাছে ভাড়া দিবে। মাসিক ভাড়া নির্দিষ্ট করে নিল কথার কথা ৫০ টাকা। যতদিন আবদুর রহমান জমিটি রাখবে, ততদিন মাসিক ৫০ টাকা করে ভাড়া প্রদান করবে। মাসিক ভাড়া অগ্রিম হিসেবে আবদুর রহমান ৫ লাখ আবদুল্লাহকে দিয়ে দিবে। ফলে জমিটির ভাড়াটিয়া হিসেবে আবদুর রহমান ভোগদখল করতে থাকবে। আর আবদুল্লাহ টাকাটি খরচ করতে পারবে।
তারপর যেদিন আবদুল্লাহ তার জমিটি ফেরত নিতে চাইবে, সেদিন বিগত দিনের মাসিক ভাড়া বাদ দিয়ে বাকি টাকা প্রদান করে জমিটি ফেরত নিয়ে নেবে। কথার কথা যদি ৫ মাস পর ফেরত নিতে চায়, তাহলে ৫ মাসের ভাড়া ২৫০ টাকা রেখে বাকি ১ লাখ ৯৯ হাজার ৭৫০ টাকা প্রদান করে আবদুল্লাহ সাহেব তার জমিটি ফেরত নিয়ে নিবেন। সূত্র: ফতহুল কদ্বীর, কিতাবুয জাকাত ২/১৭৪
২য় সুরত : দুটি চুক্তি সম্পাদন করবে। প্রথমে ক্রয় বিক্রয় চুক্তি। তারপর আলাদা আরেকটি চুক্তি নামায় যেদিন টাকা পরিশোধ করতে পারবে, সেদিন জমিটি প্রথম জমির মালিক ক্রয় নিয়ে নিয়ে যাবে, আর বুর্মান মালিক তা বিক্রি করে দিবে মর্মে চুক্তি সম্পাদিত করবে। যেমন- আবদুল্লাহ এর জমি আছে। কিন্তু টাকা নেই। তার টাকা প্রয়োজন। আর আবদুর রহমানের টাকা আছে। কিন্তু জমি নেই। তার জমি প্রয়োজন। আবদুল্লাহ তার জমিটি আবদুর রহমানের কাছে দিয়ে ৫ লাখ টাকা নিতে চাচ্ছে। আর আবদুর রহমান টাকা প্রদান করে জমিটির ফসল নিতে চাচ্ছে।
এমতাবস্থায়, আবদুল্লাহ তার জমিটি ৫ লাখ টাকায় আবদুর রহমানের কাছে বিক্রি করে টাকা গ্রহণ করে নিবে। এভাবে আব্দুল্লাহ টাকার মালিক ও আবদুর রহমান জমিটির ভোগ দখলের মালিক হয়ে যাবে। তারপর ভিন্ন আরেকটি চুক্তি সম্পাদন করবে। যাতে লিখবে যে, যেদিন আবদুল্লাহ ৫ লাখ টাকা দিতে পারবে, সেদিন আবদুর রহমান জমিটি আবদুল্লাহের কাছে ৫ লাখ টাকা দিয়ে বিক্রি করে দিবে। এভাবে ভিন্ন দুটি চুক্তি সম্পাদিত করলে টাকা খরচ করা এবং জমিটি ভোগ দখলের মধ্যে অবৈধতার কোনো কিছুই বাকি থাকবে না। সূত্র: বাহরুর রায়েক্ব, কিতাবুল বুয়ু’-বাবু খিয়ারিশ শরত ৬/৮; রদ্দুল মুহতার, কিতাবুল বুয়ু’ ৭/২৮১
এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত দেখুন- মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৮/২৪৪-২৪৫; শরহু মুখতাসারিত তহাবি ৩/১৪৯; রদ্দুল মুহতার ৬/৪৮২; বাদায়েউস সানায়ে ৫/২১২; শরহুল মাজাল্লা, খালেদ আতাসি ৩/১৯৬-১৯৭; ইলাউস সুনান ১৮/৬৪; ইরওয়াউল গালিল হা/১৩৯৭
শেষ কথা হলো, উপরোক্ত দুটি পদ্ধতি ফুকাহায়ে উম্মত জায়েজ এর পথ বলে দিয়েছেন। আর আসল তাকওয়া হলো এর থেকে পরিপূর্ণভাবে বেঁচে থাকা অর্থাৎ বন্ধককৃত বস্তু থেকে কোন উপকার/ফায়দা না নেওয়া।
তথ্যসহযোগিতায়- “জমি বন্ধক রাখার শরিয়া পদ্ধতি” মাওলানা মুফতি ফাওয়াজ মুহাম্মাদ প্রবন্ধ থেকে
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন,