আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

দ্বীনি সচেতনতা-৩৩: রসিকতা হোক পরিমিত-২

No Comments

 



রসিকতা হোক পরিমিত-২

 মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম

 ০৪ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ০৪ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৫ এএম, ইনকিলাব 



রসিকতাকে পরিমিত করে তোলার জন্য সত্যকথন ও সদুদ্দেশ্যের সাথে আরও দরকার স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনায় রাখা। একই কথা এক স্থানে বা এক সময়ে আনন্দদায়ী হলেও অন্য স্থান ও অন্য সময়ে তা বিরক্তকরও হতে পারে। ফলে আনন্দদানের লক্ষে বলা কথা হয়ে ওঠবে বেদনাদায়ক। যে কথা একাকী বলা যায় সব সময় তা মজলিসে বলা যায় না। এমনও দেখা গেছে যে, একজনের সামনে কাউকে লক্ষ্য করে বলা কথা যখন অন্য কারও সামনে বলা হয়েছে সে তাতে বিব্রত বোধ করেছে, অথচ প্রথম ক্ষেত্রে সে আনন্দই বোধ করেছিল। যে রসিকতা কারও সাথে তার বন্ধুদের সামনে করা যায়, তা কি তার পিতা বা অন্য কোনও গুরুজনের সামনে করাটা সুখকর হয়?


এমনিভাবে পাত্র বিবেচনাও জরুরি। সব রসিকতাই সকলের সাথে করা যায় না। রস গ্রহণের যোগ্যতা সকলের সমান থাকে না। একজন একটা কথাকে সানন্দে গ্রহণ করলেও অন্যজন তাতে ক্ষিপ্তও হতে পারে। দেদার তা হয়ে থাকে। কাজেই কারও সাথে পরিহাস করতে চাইলে আগে বিবেচনা করতে হবে রস গ্রহণের ক্ষমতা তার কতটুকু। নচেত হিতে বিপরীত হবে। এমনকি ফুর্তি করতে গিয়ে লাঞ্ছিত হয়ে ফেরাও অসম্ভব নয়। অনেকে রসিকতাচ্ছলে এমন কথা বলে বা এমন আচরণ করে যা নিতান্তই কদর্য।



রসিকতায় সীমালংঘনের আরেক রূপ হলো শরীরে আঘাত করা। সে আঘাত সহনীয় পর্যায়ের হলে তো কথা থাকে না। কিন্তু অনেকে এমন সজোরে আঘাত করে যা রীতিমত যুলুম। হয় মাথায় জোরসে গাট্টা মারল, নয়ত চুল ধরে টান দিল, অথবা চামড়া ধরে দলন করল কিংবা জোর চিমটি কাটল। সে তো মেরে আরাম পেল, কিন্তু যাকে মারল তার কষ্টের সীমা থাকে না। এ যেন ‘তোমাদের খেলা আমাদের মরণ’-এরই প্রতিরূপ। বিশেষত, শিশুদের সাথে এ জাতীয় রসিকতা নির্মম নিষ্ঠুরতা ছাড়া কিছু নয়।


আঘাত করার ও মারধরের রসিকতা কখনও মর্মান্তিক পরিণতিও বয়ে আনে। প্রাণহানিকর পরিহাস শেষে ‘বর হেসে কর ঠাট্টা’- কেবল কবি কল্পনাই নয়; বাস্তবেও তা মাঝে মধ্যে ঘটে। পত্রিকা পাঠকদের তা অজানা থাকার কথা নয়। এ ব্যাপারে সামাজিক সচেতনতাও জরুরি।


একটি বিরক্তিকর রসিকতা হলো একই কথা বারবার বলা। এটা কখনও হয় নির্বুদ্ধিতাবশত এবং কখনও হয় ইচ্ছাকৃত উত্যক্ত করার লক্ষে, প্রকৃতপ্রস্তাবে তাও নির্বুদ্ধিতাই বটে। একই কথার পৌনঃপুনিক উচ্চারণ কারওই ভালো লাগে না। ভালো কথাও বারবার অসহ্য প্যাচাল হয়ে যায়। কিন্তু উত্যক্ত করাই যাদের উদ্দেশ্য সেদিকে তাদের খেয়াল করার কথা নয়। বিরক্ত ব্যক্তি যতক্ষণ না মারমুখো হয় ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের হুশ হয় না। এটাও রসিকতার চরম বাড়াবাড়ি। অহেতুক অন্যকে বিরক্ত করা কোনও সুস্থ মানসিকতার লক্ষণ নয়। কাজেই তা পরিত্যাজ্য। যারা নির্বুদ্ধিতাবশত করে, তাদেরও নিজেদের মধ্যে বোধোদয় ঘটানো উচিত। সমঝদারদের কর্তব্য পরিণামের কথা স্মরণ করিয়ে তাদের বোধোদয়ে সহযোগিতা করা।


রসিকতা ছোট-বড়র মধ্যেও হতে পারে। সেক্ষেত্রে লক্ষণীয় হলো, ছোটর রসিকতায় যেন বড়র সাথে আদরের গণ্ডি-অতিক্রম করা না হয় আর বড়র রসিকতা যেন ছোটকে স্পর্ধিত করে না তোলে। বড়দের সাথে ছোটদের রসিকতার শীলিত দৃষ্টান্ত হিসেবে জনৈক সাহাবীর ঘটনা উল্লেখ করা যায়। একবার প্রিয় নবী (সা.) একটি তাঁবুর ভেতর অবস্থান করছিলেন। সেই সাহাবী এসে তাঁর সংগে দেখা করতে চাইলেন। নবীজী তাঁকে ভেতরে প্রবেশ করতে বললেন, কিন্তু তাঁবুটি ছিল বেশ ছোট। সাহাবী রসিকতা করে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার পুরো শরীরটাই প্রবেশ করাব, না আংশিক? প্রিয় নবী (সা.) বললেন, পুরোটাই। (সুনানে আবু দাউদ : ৫০০০)।


লক্ষ্য রাখতে হবে রসিকতা যেন কিছুতেই ভাঁড়ামি না হয়ে যায়। পরিহাস করতে গিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করা বা মাত্রাতিরিক্ত রসিকতা করার দ্বারা ব্যক্তির ভাবমূর্তি নষ্ট হয় এবং সমাজ চোখে সে একজন ভাঁড় সাব্যস্ত হয়। আসলে রসিকতা নিত্যচর্চার মত কোনও জিনিস নয়। এটা কখনও-সখনওই করা যায়। অর্থাৎ এমনই এক বিষয় যা সম্পূর্ণরূপে পরিহার করাও ভালো নয়, আবার বেশি করাও সমীচীন নয়। মধ্যপন্থায়ই শ্রেয়।