জিজ্ঞাসা-১২৩০১: আসসালামুয়ালাইকুম। মুহতারাম, কি কি আমল করলে কিয়ামতে ও জান্নাতে প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটতম হওয়া যাবে? দলিল সহ জানালে উপকৃত হতাম। জাযাকাল্লাহ খাইরান। তারিখ-১০/১০/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা ফরিদউজ্জামান জামালপুর থেকে-----
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হলো, শুরুতে আপনাকে জাযাকাল্লাহু খয়র। কেননা আপনি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানতে চেয়েছেন। যাই হোক প্রতিটি মুমিনের কামনা রাসূল (ﷺ) এর ভালবাসা-নৈকট্য। এ মুহূর্তে আমার চরটি আমলের কথা মনে পড়ছে-
(০১) তাকওয়াবান হওয়া: দলিল:
عَن مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ إِنَّ أَوْلَى النَّاسِ بِي الْمُتَّقُونَ مَنْ كَانُوا وَحَيْثُ كَانُوا
অর্থ: হজরত মুআয বিন জাবাল (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, নিশ্চয় আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী মুত্তাক্বীনগণ; তারা যেই হোক, যেখানেই থাক। তাখরিজ: মুসনাদে আহমাদ ২২০৫২
ব্যাখ্যা: মহান আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُم مِّن ذَكَرٍ وَأُنثَىٰ وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ
হে মানব, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিতি হও। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেযগার। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন। সূরা হুজুরাত-১৩
সুতরাং প্রমাণিত হলো আল্লাহর নিকট সে অধিক সম্মানিত, সেই আবার তার রাসল (ﷺ)–এর কাছের লোকও।
(০২) বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা: দলিল:
إنَّ أولى النَّاسِ بي يَومَ القيامةِ أَكْثرُهُم عليَّ صلاةً
الراوي : عبدالله بن مسعود | المحدث : ابن حبان | المصدر : بلوغ المرام
الصفحة أو الرقم: 455 | خلاصة حكم المحدث : صحيح
التخريج : أخرجه الترمذي (484) باختلاف يسير، وابن حبان (911)، والبيهقي في ((شعب الإيمان)) (1563) واللفظ
অর্থ: হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন সেই ব্যক্তি সব লোকের তুলনায় আমার বেশি নিকটবর্তী হবে, যে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমার ওপর দরুদ পড়বে। তাখরিজ: তিরমিজি-৪৮৪; ছহিহ ইবনে হিব্বান-৯১১; বায়হাকি-১৫৬৩
প্রশ্ন: ক। বেশি বেশি দরুদের কোনো সংখ্যা আছে?
উত্তর: ক। আসলে বেশির কোনো সংখ্যা নেই। তবে এ বিষয়ে ফকিহুন নফস তাপস কুল শিরোমনি মাওলানা রশিদ আহমেদ গঙ্গহি (রহ.)-কে জিজ্ঞেস করা হলে , জবাবে তিনি বলেন, কোনো ব্যক্তি যদি দৈনিক ৩০০ বার দরুদ শরিফ পড়ে, তাহলে সে বেশি দরুদ পড়ার ব্যক্তির মধ্যে গণ্য হবে।
প্রশ্ন: খ। কোনো ব্যক্তি বেশি বেশি দরুদ পড়লো; কিন্তু তাকওয়ার ওপর চললো না, সে কি রাসূল (ﷺ) –এর নৈকট্যশীল হবে? উপরোক্ত দুটি হাদিসের মধ্যে সমন্বয় কী?
উত্তর: খ। এ দুটি হাদিসের সমন্বয় সম্পর্কে আল্লামা আব্দুল মতিন বিন হুসাইন দা.বা. বলেন, যাকে আল্লাহ বেশি বেশি দরুদ পাঠের তাওফিক দিবেন, তাকে গুনাহ ছাড়ারও তাওফিক দিবেন। সুতরাং আর কোনো থাকলো না।
(০৩) সুন্নাতে অনুসরণ:
أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ قَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " يَا بُنَىَّ إِنْ قَدَرْتَ أَنْ تُصْبِحَ وَتُمْسِيَ لَيْسَ فِي قَلْبِكَ غِشٌّ لأَحَدٍ فَافْعَلْ " . ثُمَّ قَالَ لِي " يَا بُنَىَّ وَذَلِكَ مِنْ سُنَّتِي وَمَنْ أَحْيَا سُنَّتِي فَقَدْ أَحَبَّنِي . وَمَنْ أَحَبَّنِي كَانَ مَعِي فِي الْجَنَّةِ " . وَفِي الْحَدِيثِ قِصَّةٌ طَوِيلَةٌ . قَالَ أَبُو
অর্থ: হজরত আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে বলেছেনঃ হে বৎস! তুমি যদি সকাল-সন্ধ্যা এমনভাবে কাটাতে পার যে, তোমার অন্তরে কারো প্রতি কোন রকম বিদ্বেষ নেই, তাহলে তাই কর। তিনি আমাকে পুনরায় বললেন, হে বৎস! এটা হল আমার সুন্নাত। আর যে ব্যক্তি আমার সুন্নাতকে জীবিত করল, সে আমাকেই ভালবাসল, আর যে ব্যক্তি আমাকে ভালবাসল সে তো জান্নাতে আমার সাথেই থাকবে। তখিরিজ: জামে তিরমিজি-২৬৭৮
(০৪) ইয়াতিমদের প্রতিপালন: দলিল:
وَأنا وكافِلُ اليَتِيمِ في الجَنَّةِ هَكَذا وأَشارَ بالسَّبَّابَةِ والوُسْطَى، وفَرَّجَ بيْنَهُما شيئًا.
الراوي : سهل بن سعد الساعدي | المحدث : البخاري | المصدر : صحيح البخاري | الصفحة أو الرقم : 5304 | خلاصة حكم المحدث : [صحيح
অর্থ: হজরত সাহল বিন সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, আমি ও এতিম প্রতিপালনকারী জান্নাতে এভাবে থাকব। (তিনি তর্জনী ও মধ্য অঙ্গুলি দিয়ে ইঙ্গিত করেন। এবং এ দুটির মধ্যে তিনি সামান্য ফাঁক করেন)। বুখারি- ৫৩০৪
(০৫) সুন্দর আখলাকের অধিকারী হওয়া: দলিল:
عَنْ جَابِرٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " إِنَّ مِنْ أَحَبِّكُمْ إِلَىَّ وَأَقْرَبِكُمْ مِنِّي مَجْلِسًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَحَاسِنَكُمْ أَخْلاَقًا وَإِنَّ أَبْغَضَكُمْ إِلَىَّ وَأَبْعَدَكُمْ مِنِّي مَجْلِسًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ الثَّرْثَارُونَ وَالْمُتَشَدِّقُونَ وَالْمُتَفَيْهِقُونَ " . قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ قَدْ عَلِمْنَا الثَّرْثَارُونَ وَالْمُتَشَدِّقُونَ فَمَا الْمُتَفَيْهِقُونَ قَالَ " الْمُتَكَبِّرُونَ " . قَالَ أَبُو عِيسَى وَفِي الْبَابِ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ . وَهَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِي
অর্থ: জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যার চরিত্র ও ব্যবহার ভাল সে ব্যক্তি আমার নিকট তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় এবং কিয়ামত দিবসে সে আমার সবচেয়ে নিকট অবস্থান করবে। আর আমার নিকট তোমাদের মধ্যে সবচে’ ঘৃণ্য ব্যক্তি কিয়ামত দিবসে যারা আমার থেকে দূরে থাকবে সেই ব্যক্তিরা হল যারা, ছারছারূন অনর্থক বক বক করে এবং মুতাশাদ্দিকুন যারা উপহাস করে এবং মুতাফায়হিকুন যারা অহংকার প্রদর্শন করে। সাহাবীগন বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল!ছারছারূন এবংমুতাশাদ্দিকুন তো আমরা জানি কিন্তু মুতাফায়হিকুন কি? তিনি বললেন, যারা অহংকার করে। তাখরিজ: তিরমিজি- ২০১৮
শেষ কথা হলো, আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে উপরোক্ত আমলগুলো করার মাধ্যমে প্রিয় নবী (ﷺ)-এর নিকটতম হওয়ার তৌফিক দান করুন আর আমি যে আমলগুলো উল্লেখ করলাম এর বাইরে যদি কারো জানা থাকলে আমাকে অবহিত করলে ইনশাআল্লাহ এর সাথে যুক্ত করে দিব।
والله اعلم بالصواب