আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-২৭৮: ছোট সোনামনিকে দোলনায় শোয়ানো কি জায়েজ আছে?

No Comments

 


 



জিজ্ঞাসা-৭৮: ছোট সোনামনিকে দোলনায় শোয়ানো কি জায়েজ আছে? দয়া করে কোরআন-হাদিসের আলোকে জানালে উপকৃত হতাম। যেমন:----------। তারিখ-২২/০৯/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি

মাওলানা শরিয়তুল্লাহ বাহাদুর মুন্সিগঞ্জ থেকে-----


জবাব

 نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 


হামদ-সানা ও দরুদের পর কথা হলো, ছোট বাচ্চারা দোলনায় শোয়ানো যাবে না, এ রকম কোন বিধি-নিষেধ ইসলামে নেই। বরং শোয়ানোর পক্ষেই ইশারাতুন নস দ্বারা দালালত করে। 


কুরআনুল কারিম থেকে দলিল:

Surah Al-Maeda, Verse 110:

إِذْ قَالَ اللَّهُ يَا عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ اذْكُرْ نِعْمَتِي عَلَيْكَ وَعَلَىٰ وَالِدَتِكَ إِذْ أَيَّدتُّكَ بِرُوحِ الْقُدُسِ تُكَلِّمُ النَّاسَ فِي الْمَهْدِ وَكَهْلًا

 অর্থ: যখন আল্লাহ বলবেনঃ হে ঈসা ইবনে মরিয়ম, তোমার প্রতি ও তোমার মাতার প্রতি আমার অনুগ্রহ স্মরণ কর, যখন আমি তোমাকে পবিত্র আত্মার দ্বারা সাহায্য করেছি। তুমি মানুষের সাথে কথা বলতে দোলনায় ও পরিণত বয়সে। সূরা মায়েদা-১১০

 

হাদিস শরিফ থেকে দলিল:

وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ النَّبيّ ﷺ، قَالَ: «لَمْ يَتَكَلَّمْ في المَهْدِ إلاَّ ثَلاثَةٌ : عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ، وَصَاحِبُ جُرَيْجٍ، وَكَانَ جُرَيْجٌ رَجُلاً عَابِداً، فَاتَّخَذَ صَوْمَعَةً فَكَانَ فِيهَا، فَأَتَتْهُ أُمُّهُ وَهُوَ يُصَلِّي، فَقَالَتْ : يَا جُرَيْجُ، فَقَالَ : يَا رَبِّ أُمِّي وَصَلاتِي فَأَقْبَلَ عَلَى صَلاتِهِ فَانْصَرَفَتْ . فَلَمَّا كَانَ مِنَ الغَدِ أتَتْهُ وَهُوَ يُصَلِّي، فَقَالَتْ : يَا جُرَيْجُ، فَقَالَ : أيْ رَبِّ أمِّي وَصَلاتِي، فَأقْبَلَ عَلَى --------». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ

 

অর্থ: হজরত আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত নবি () বলেছেন, (নবজাত শিশুদের মধ্যে) দোলনায় তিনজনই মাত্র কথা বলেছে; মারয়্যামের পুত্র ঈসা, আর (বনি ইসরাইলের) জুরাইজের (পবিত্রতার সাক্ষী) শিশু। জুরাইজ ইবাদতগুযার মানুষ ছিল এবং সে একটি উপাসনালয় (আশ্রম) বানিয়েছিল। একদা সে সেখানে নামাজ পড়ছিল। এমন সময় তার মা তার নিকট এসে তাকে ডাকলে সে (মনে মনে) বলল, হে প্রভু! আমার মা ও আমার নামাজ (দুটিই গুরুত্বপূর্ণ; কোনটিকে প্রাধান্য দিই, তার সুমতি দাও)। সুতরাং সে নামাযে মশগুল থাকল। আর তার মা ফিরে গেল। পরবর্তী দিনে সে নামাযে ব্যস্ত থাকা অবস্থায় আবার তার মা এসে ডাক দিল, জুরাইজ! সে (মনে মনে) বলল, হে প্রভু! আমার মা ও আমার নামাজ (এখন কী করি?) সুতরাং সে নামাযে মশগুল থাকল। তার পরবর্তী দিনে সে নামাযে ব্যস্ত থাকা অবস্থায় আবার তার মা এসে ডাক দিল, জুরাইজ! সে (মনে মনে) বলল, হে প্রভু! আমার মা ও আমার নামাজ (এখন কী করি?) সুতরাং সে নামাযে মশগুল থাকল। তখন (তিন তিন দিন সাড়া না পেয়ে তার মা তাকে বদদোয়া দিয়ে) বলল, হে আল্লাহ! বেশ্যাদের মুখ না দেখা পর্যন্ত তুমি ওর মরণ দিও না। বনি ইসরাইল জুরাইজ ও তার ইবাদতের কথা চর্চা করতে লাগল। এক বেশ্যা মহিলা ছিল, যার দৃষ্টান্তমূলক রূপ-সৌন্দর্য ছিল। সে বলল, তোমরা চাইলে আমি ওকে ফিতনায় ফেলতে পারি। সুতরাং সে নিজেকে তার কাছে পেশ করল। কিন্তু জুরাইজ তার প্রতি ভ্রূক্ষেপ করল না। পরিশেষে সে এক রাখালের কাছে এল, যে জুরাইজের আশ্রমে আশ্রয় নিত। সে দেহ সমর্পণ করলে রাখাল তার সাথে ব্যভিচার করল এবং বেশ্যা তাতে গর্ভবতী হয়ে গেল। অতঃপর সে যখন সন্তান ভূমিষ্ঠ করল, তখন (লোকেদের জিজ্ঞাসার উত্তরে) বলল, এটি জুরাইজের সন্তান। সুতরাং লোকেরা জুরাইজের কাছে এসে তাকে আশ্রম থেকে বেরিয়ে আসতে বলল। (সে বেরিয়ে এলে) তারা তার আশ্রম ভেঙ্গে দিল এবং তাকে মারতে লাগল। জুরাইজ বলল, কী ব্যাপার তোমাদের? (এ শাস্তি কিসের?) লোকেরা বলল, তুমি এই বেশ্যার সাথে ব্যভিচার করেছ এবং তার ফলে সে সন্তান জন্ম দিয়েছে। সে বলল, সন্তানটি কোথায়? অতঃপর লোকেরা শিশুটিকে নিয়ে এলে সে বলল, আমাকে নামাজ পড়তে দাও। সুতরাং সে নামাজ পড়ে শিশুটির কাছে এসে তার পেটে খোঁচা মেরে জিজ্ঞাসা করল, ওহে শিশু! তোমার পিতা কে? সে জবাব দিল, অমুক রাখাল। অতএব লোকেরা (তাদের ভুল বুঝে এবং এই অলৌকিক ঘটনা দেখে) জুরাইজের কাছে এসে তাকে চুমা দিতে ও স্পর্শ করতে লাগল। তারা বলল, আমরা তোমার আশ্রমকে স্বর্ণ দিয়ে বানিয়ে দেব। সে বলল, না, মাটি দিয়েই তৈরী করে দাও, যেমন পূর্বে ছিল। সুতরাং তারা তাই করল। (তৃতীয় শিশুর ঘটনা হচ্ছে বনি ইসরাইলের) এক শিশু তার মায়ের দুধ পান করছিল। এমন সময় তার পাশ দিয়ে উৎকৃষ্ট সওয়ারিতে আরোহী এক সুদর্শন পুরুষ চলে গেল। তার মা দোয়া করে বলল, হে আল্লাহ! আমার ছেলেটিকে ওর মত করো। শিশুটি তখনি মায়ের দুধ ছেড়ে দিয়ে সেই আরোহীর দিকে ফিরে তাকিয়ে বলল, হে আল্লাহ আমাকে ওর মত করো না। তারপর মায়ের দুধের দিকে ফিরে দুধ চুষতে লাগল। আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ () নিজের তর্জনী আঙ্গুলকে নিজ মুখে চুষে শিশুটির দুধ পান দেখাতে লাগলেন। আমি যেন তা এখনো দেখতে পাচ্ছি। পুনরায় (তাদের) পাশ দিয়ে একটি দাসীকে লোকেরা মারতে মারতে নিয়ে যাচ্ছিল। তারা বলছিল, তুই ব্যভিচার করেছিস, চুরি করেছিস! আর দাসীটি বলছিল, হাসবিয়াল্লাহু অনিমাল অকীল। (আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট ও তিনিই উত্তম কর্মবিধায়ক।) তা দেখে মহিলাটি দোয়া করল, হে আল্লাহ! তুমি আমার ছেলেকে ওর মত করো না। ছেলেটি সাথে সাথে মায়ের দুধ ছেড়ে দাসীটির দিকে তাকিয়ে বলল, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ওর মত করো। অতঃপর মা-বেটায় কথোপকথন করল। মা বলল, একটি সুন্দর আকৃতির লোক পার হলে আমি বললাম, হে আল্লাহ! তুমি আমার ছেলেকে ওর মত করো। তখন তুমি বললে, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ওর মত করো না। আবার ওরা ঐ দাসীকে নিয়ে পার হলে আমি বললাম, হে আল্লাহ! তুমি আমার ছেলেকে ওর মত করো না। কিন্তু তুমি বললে, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ওর মত করো! (এর কারণ কী?) শিশুটি বলল, (তুমি বাহির দেখে বলেছ, আর আমি ভিতর দেখে বলেছি।) ঐ লোকটি স্বৈরাচারী, তাই আমি বললাম, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ওর মত করো না। আর ঐ দাসীটির জন্য ওরা বলছে, তুই ব্যভিচার করেছিস, চুরি করেছিস, অথচ ও এ সব কিছুই করেনি। তাই আমি বললাম, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ওর মত করো। তাখরিজ: বুখারি৩৪৩৬, ২৪৮২, ৩৪৬৬, মুসলিম ২৫৫০, আহমদ ৮০১০, ৮৭৬৮, ৯৩১৯



তবে সতর্ক থাকতে হবে যাতে বাচ্চাটি পড়ে না যায়, দোলনাটি খাঁচাযুক্ত হওয়া । কেননা খোলা আকাশের নিচে/বেষ্টনবিহীন ছাদে ঘুমানো নিষেধ। দলিল:

من بات على ظهرِ بيتٍ ليس له حجارٌ فقد بَرِئَتْ منه الذِّمَّةُ

ن بات على ظهرِ بيتٍ ليس له حجارٌ فقد بَرِئَتْ منه الذِّمَّةُ

الراوي : علي بن شيبان | أبي داود

التخريج : أخرجه أبو داود (5041) واللفظ له، والبخاري في ((الأدب المفرد)) (1192) واللفظ له، وأبو نعيم في ((معرفة الصحابة)) (4953). 

অর্থ: ‘কেউ যদি রাতে বেষ্টনীবিহীন ছাদে ঘুমায়, তাহলে (কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে) তার ব্যাপারে (আল্লাহর) কোনো দায়িত্ব নেই। তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ-৫০৪১



সুতরাং উপরোক্ত ইশারাতুন নস দ্বারা প্রমাণিত হলো, ছোট সোনামনিদেরকে দোলনায় শোয়াতে কোন সমস্যা নেই।

 

و الله اعلم بالصواب