জিজ্ঞাসা-২৮৩: আসসালামুআলাইকুম মুহতারাম! অনুগ্রহ পূর্বক কবরের প্রকারভেদ ও গায়েবানা জানাযাসহ বিধান সম্পর্কে জানালে ভালো হয়। তারিখ-২৬/০৯/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
হাফেজ মাওলানা সাইফুল ইসলাম সিলেট থেকে-----
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হলো, আপনার প্রশ্ন আলোকে আলোচনাটিকে সহজভাবে বুঝার জন্য কয়েকভাগে ভাগ করেছি।
প্রশ্ন: ক। কবরের প্রকারভেদ?
উত্তর: ক। কবর দুই প্রকার। (০১) আশ-শাক্কু বা সিন্দুক কবর (০২) আল-লাহদ বা বহলী কবর। বগলী ও সিন্দুকী উভয় প্রকার কবরই বৈধ। কারণ, নবী (ﷺ) এর যুগে উভয় প্রকার কবরই প্রচলিত ছিল। আনাস বিন মালেক (রাঃ) বলেন, মদীনায় কবর খননকারী ২টি লোক ছিল। একজন বগলী এবং অপরজন সিন্দুকী কবর খনন করত। সূত্র: ইবনে মাজাহ ১৫৫৭, আহমাদ ৩/৯৯
الشق: وهو أن يحفر في وسط القبر حفرة على قدر الميت، ويُبنى جانباها بالطوب اللبن حتى لا تنضم على الميت، ويوضع فيها الميت على جنبه الأيمن مستقبلاً القبلة، ثم تسقف هذه الحفرة بأحجار أو غيرها ويرفع السقف قليلاً بحيث لا يمس الميت، ثم يهال التراب عليه.
অর্থাৎ আশশাক্কু বা সিন্ধুকী কবর: কবরের মাঝখানে মৃতের সমান গর্ত খনন করা এবং মাটির ইট দিয়ে তার দুপাশ নির্মাণ করা যাতে মৃতের সাথে মিলিত না হয় এবং মৃতকে তার ডান দিকে কেবলামুখী করে রাখা। এই গর্তটি পাথর বা অন্য কিছু দিয়ে ছাদ করুন এবং ছাদটি একটু উঁচু করুন যাতে মৃত ব্যক্তি স্পর্শ না করে, তারপরে তার উপর ময়লা ছড়িয়ে পড়ে।
اللحد: أن يحفر في أسفل جدار القبر الأقرب إلى القبلة مكاناً يوضع فيه الميت على جنبه الأيمن مستقبل القبلة ثم تسد هذه الحفرة بالطوب اللبن خلف ظهر الميت، ثم يهال التراب عليه
অর্থাৎ আল-লাহদ বা বগ্লী কবর" : কিবলার সবচেয়ে কাছের কবরের দেয়ালের নিচ দিয়ে এমন একটি জায়গা খনন করতে যেখানে মৃতকে তার ডান পাশে কিবলার দিকে মুখ করে রাখা হয়, তারপর এই গর্তটি মৃতের পিঠের পিছনে মাটির ইট দিয়ে ভরা হয়, তারপর মাটি ফেলা হয়।
প্রশ্ন: খ। কোন কবর উত্তম?
উত্তর: খ। উভয় প্রকার কবরের মধ্যে বগলী কবরই আফযাল উত্তম। কারণ এই কবরেই মহানবী (ﷺ)-কে দাফন করা হয়েছিল। আসল কথা হলো, যে স্থানের মাটি আলগা ও নরম, সে স্থানের সিন্দুকী এবং যে স্থানের মাটি টাইট ও শক্ত; ধসার ভয় থাকে না, সে স্থানে বগলী কবর খনন করা উত্তম। সূত্র: মাজমু, নওবী ৫/২৮৫, আউনুল মা'বুদ ৯১৯ প্রভৃতি
আর এ কারণেই মধ্যপ্রাচ্যের শক্ত মাটিতে বগ্লী কবর খোদাই করা হয়।আবার বাংলাদেশের মাটি নরম বিধায় সাধারণত সিন্ধুকী কবর করা হয়।
প্রশ্ন: গ। কেউ যদি সাগরে জাহাজে মৃত্যবরণ করে, কুলে নিতে দেরি হবে, এমতাবস্থায় কি করা যাবে?
উত্তর: গ। সমুদ্রের মাঝে জাহাজ-স্টীমারে কারও মৃত্যু হলে এবং তীরে জাহাজ লাগতে অসাধারণ দেরী হলে এবং ফ্রিজ না থাকলে ও লাশের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকলে গোসল-কাফন দিয়ে জানাযা পড়ে পিঠের নিচে একটি ভারি কিছু বেঁধে সমুদ্রে সলিল-সমাধি দেওয়াও প্রয়োজনে বৈধ। সূত্র: ইবনে আবী শাইবাহ ১১৮৪৯-১১৮৫০
প্রশ্ন: ঘ। গায়েবানা জানাজার বিধান?
উত্তর: ঘ।
وَشَرْطُ صِحَّتِهَا إسْلَامُ الْـمَيِّتِ وَطَهَارَتُهُ وَوَضْعُهُ أَمَامِ الْـمُصَلِّيْ، فَلِهَذَا الْقَيْدِ لَا تَجُوزُ عَلَىٰ غَائِبٍ وَلَا حَاضِرٍ مَحْمُوْلٍ عَلَىٰ دَابَّةٍ أَوْ غَيْرِهَا، وَلَا مَوْضُوْعٍ مُّتَقَدِّمٍ عَلَيْهِ الْـمُصَلِّيْ، وَهُوَ كَالْإِمَامِ مِنْ وَجْهٍ.
‘জানাযা সহিহ হওয়ার জন্য শর্ত হলো, মৃতকে মুসলমান হতে হবে, পবিত্র হতে হবে এবং লাশ মুসল্লিদের সামনে রাখতে হবে। কাজেই অনুপস্থিত লাশের ওপর গায়েবানা জানাযা জায়েয নয়। সূত্র: ইবনুল হুমাম, ফতহুল কদীর শরহুল হিদায়া, দারুল ফিকর, বৈরুত, লেবানন, খ. ২, পৃ. ১১৭
এ সম্পর্কে আল্লামা ইবনু আবদিল বার (রহ.) গায়েবানা জানাযা নাজায়েয হওয়ার উক্তিকে জমহুর ফুক্বাহা তথা সংখ্যাগরিষ্ঠ উলামায়ে কেরামের মতামত বলে অভিহিত করেছেন। সূত্র: লামিউদ দারারী- ৪/৪৩২ পৃষ্ঠা। নিচে সম্মানিত ইমামদের মতামত তুলে ধরা হলো,
لا يُصلَّى على الميِّتِ إلَّا إذا وُجِد أكثرُه، وهو مذهبُ الحَنفيَّة، والمالِكيَّة ؛ لأنَّه إذا صُلِّي على أكثرِه لم يُحتجْ إلى الصَّلاةِ على الباقي إنْ وُجِدَ، أمَّا إذا صُلِّى على الأقلِّ فتلزمُ الصَّلاةُ على أكثرِه إنْ وُجِدَ مراقي الفلاح)) للشرنبلالي (ص: 218). ويُنظر: ((بدائع الصنائع)) للكاساني (1/311). وعندهم لا يُصلَّى على الميِّت إلَّا مع حضورِ أكثرِ بَدَنِه، أو نِصْفِه مع رأسه.
ইমাম আযম আবু হানিফা (রহ.) ও তার অনুসারি সকল ইমাম-ফুকাহা এবং ইমাম মালেক (রহ.)এর মতে- গায়েবানা জানাযা জায়েয নেই। চাই দাফনের আগে হোক বা পরে। মাইয়্যিত শহরের ভিতরে থাক বা বাইরে। সূত্র: মারাকিল ফালাহ -২১৮ পৃ. বাদাউস সানায়ে-১/৩১১
ইমামদ্বয়ের দলিল:
হাদিস/আসার-০১
كَانَ ابْنُ عُمَرَ إِذَا انْتَهَى إِلَى جِنَازَةٍ وَقَدْ صُلِّيَ عَلَيْهَا دَعَا وَانْصَرَفَ وَلَمْ يُعِدِ الصّلَاةَ.
অর্থ: নাফে রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. কোনো জানাযায় পৌঁছতে পৌঁছতে জানাযা নামায শেষ হয়ে গেলে মৃতের জন্য দুআ করে ফিরে আসতেন। দ্বিতীয় বার জানাযা পড়তেন না। তাখরিজ: মুছান্নাফে আবদুর রাযযাক-৬৫৪৫
হাদিস/আসার-০২
كَانَ أَصْحَابُ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم إذَا تَضَايَقَ بِهِمَ الْمَكَانُ رَجَعُوا ، وَلَمْ يُصَلُّوا.
সালেহ ইবনে নাবহান রাহ. বলেন, সাহাবাগণ রা. জানাযা নামাযের জায়গা সংকীর্ণ হলে (মসজিদে) নামায না পড়ে ফিরে যেতেন। তাখরিজ: মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা-১২০৯৭
মাইয়াতের অলির অনুমতিতে একবার জানাযা পড়া হলে, দ্বিতীয়বার পড়া জায়েজ নেই। উপরোক্ত আসার দ্বারা প্রমাণিত হয়, সাহাবা তাবেঈনের যুগে দ্বিতীয়, তৃতীয় জানাযার প্রচলন ছিল না। একাধিক জানাযা যদি জায়েয হত তবে তারা ফিরে যেতেন না।
হাদিস/আসার নং-০৩
হযরত ইমরান বিন হুসাইন রাঃ বলেন- وَمَا نَحْسِبُ الْجِنَازَةَ إِلَّا مَوْضُوعَةً بَيْنَ يَدَيْهِতথা আমরা জানাযার ব্যাপারে এটাই অনুধাবন করছিলাম যে, তা আমাদের সামনে রাখা আছে। তাখরিজ: মুসনাদে আহমাদ-২০০০৫
হাদিস/আসার নং-০৪
হযরত ইমরান বিন হুসাইন রাঃ বলেন- وَهُمْ لَا يَظُنُّونَ إِلَّا أَنَّ جَنَازَتَهُ بَيْنَ يديهতথা “সাহাবায়ে কেরামের বিশ্বাস এটাই ছিল যে, জানাযা হুযূর (ﷺ) এর সামনে উপস্থিত। তাখরিজ: সহীহ ইবনে হিব্বান-৩১০২
হাদিস/আসার নং-০৫
হযরত আবান (রাহ.) সূত্রে হযরত ইমরান ইবনে হাছীন থেকে বর্ণিত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে যে, “যখন নবীজী (ﷺ) এর পিছনে জানাযা পড়েছি, তখন নাজাশীর লাশকে আমাদের সামনে উপস্থিত দেখতে পেয়েছি।” সূত্র: উমদাতুল কারী শরহুল বুখারী- ৭/৩৩
জানাযা পড়ার জন্য লাশ সামনে থাকা জরুরি, না হলে জানাযা পড়া জায়েজ নেই। উপরোক্ত আসার দ্বারা প্রমাণিত হয়। অর্থাৎ বাদশা নাজাশির লাশ নবিজি (ﷺ) ও সাহাবাদের সামনে ছিল
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রাহ.) থেকে জায়েয হওয়ার একটি উক্তি থাকলেও স্বীয় শাগরিদ ইবনে আবী মুসা তাঁর থেকে নাজায়েয হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। হাম্বলী মাযহাবের প্রসিদ্ধ ফিক্বাহ্বিদ আল্লামা ইবনে কুদামা (রাহ.) এ প্রসঙ্গে লিখেছেন, অর্থাৎ- “ইমাম মালেক (রাহ.) ও ইমাম আবু হানীফা (রাহ.) উভয়ে বলেন, গায়েবানা জানাযা জায়েয নেই। ইমাম আহমদ (রাহ.) থেকে ইবনে আবী মুসা উক্ত ইমামদ্বয়ের অনুরূপ (নাজায়েয হওয়ার) একটি উক্তি বর্ণনা করেছেন।” সূত্র: আলমুগনী, ইবনে কুদামা (রাহ.)- ২/৩৮৬ পৃষ্ঠা
ইমাম শাফেয়ী (রাহ.) ও ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রাহ.)এর মতে মাইয়্যিত ভিন্ন শহরে থাকলে গায়েবানা জানাযা জায়েয। لكن يجوز الصلاة على الميت الغائب الذي يموت في بلاد غير المسلمين ولم يصلَّ عليه، কিন্তু শহরের ভিতরে থাকার মাইয়্যেতের গায়েবানা জানাযা জায়েজ নয়। মাইয়্যেতকে উপস্থিত করতে হবে। সূত্র: আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু- ১/৫০৪
ইমামদ্বয়ের দলিল:
إِنّ أَخَاكُمْ النّجَاشِيّ تُوُفِّيَ فَصَلُّوا عَلَيْهِ. قَالَ: فَصَفّ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ، وَصَفَفْنَا خَلْفَهُ فَصَلّى عَلَيْهِ، وَمَا نَحْسِبُ الْجِنَازَةَ إِلّا مَوْضُوعَةً بَيْنَ يَدَيْهِ.
অর্থ: ইমরান ইবনে হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তিনি বলেন, তোমাদের ভাই নাজাশী ইন্তেকাল করেছে। সুতরাং তোমরা তার জানাযা আদায় কর। ইমরান রা. বলেন, অতপর রাসূলে কারীম (ﷺ) দাঁড়ালেন। আর আমরা তাঁর পেছনে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ালাম। অতপর তিনি তার জানাযা পড়ালেন। আমাদের মনে হচ্ছিল যে, নাজাশীর লাশ তাঁর সামনেই রাখা ছিল। তাখরিজ: মুসনাদে আহমদ-২০০০৫; সহীহ ইবনে হিব্বান-৩০৯৮
أنها تشرع الصلاة على الغائب بشرط ألا يكون قد صُلِّي عليه في المكان الذي مات فيه ، فإن صُلِّي عليه فلا تشرع صلاة الغائب عليه .
وهذا القول رواية أخرى عن الإمام أحمد ، واختارها شيخ الإسلام ابن تيمية وتلميذه ابن القيم ، ومال إليها من المتأخرين : الشيخ ابن عثيمين .
واستدل لذلك: بأن الصلاة على الجنازة عبادة، والعبادة لا تشرع إلا من الكتاب والسنة، ولم يحفظ عن النبي صلّى الله عليه وسلّم أنه صلى على غائب إلا على النجاشي؛ لأنه مات بين أمة مشركة، ليسوا من أهل الصلاة، وإن كان أحد منهم آمن،
অর্থাৎ ইমাম আহমদ, ইমাম ইবনে তাইমিয়া, তার ছাত্র ইবনুল কাইয়েম এবং শাইখ উসাইমীন, আলবানি রহ. প্রমুখদের মতে, যার জানাযা হয়েছে তার পুনরায় গায়েবানা জানাযা পড়া ঠিক নয়। দলীল ও যুক্তির নিরিখে এটি অধিক সঠিক মত বলে প্রতিয়মান হয়। কেননা বাদশাহ নাজশি মুশরিকদের মধ্যে মারা গিয়ে ছিলেন এবং তার জানাযা পড়া হয়নি। সূত্র: আল-ইসলামু সুওয়াল ওয়া জওয়াব- প্রশ্নং ৩৫৮৫৩
বিশুদ্ধতম মত ও জায়েজ প্রবক্তাদের দলিল খণ্ডন:
أَبِي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه، أَنَّ رَسُولَ اللهِ نَعَى النَّجَاشِيَّ فِي الْيَوْمِ الَّذِي مَاتَ فِيهِ، خَرَجَ إِلَى الْمُصَلَّى فَصَفَّ بِهِمْ وَكَبَّرَ أَرْبَعًا
আবূ হুরায়রাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। নাজাশী যেদিন মারা যান সেদিন-ই আল্লাহর রসূল (ﷺ) তাঁর মৃত্যুর খবর দেন এবং জানাযাহ্’র স্থানে গিয়ে লোকদের কাতারবন্দী করে চার তাকবীর আদায় করলেন। তাখরিজ: বুখারি- ১২৪৫; মুসলিম-৯৫১
এই হাদিস থেকে বুঝা যায় গায়েবানা জানাযা পড়া জায়েজ, কেননা রসূল (ﷺ) পড়েছেন।
এ ঘটনার ব্যাখ্যা সম্পর্কে ফুকাহায়ে কিরাম বলেন,
(০১) প্রথম ব্যাখ্যা:
قال الخرشي (مالكي) (2/142) : " وصلاته عليه الصلاة والسلام على النجاشي من خصوصياته " انتهى . ونحوه في " بدائع الصنائع " للكاسائي ( حنفي ) ( 1/ 312) .
অর্থাৎ এটা ছিল নববী জীবনের স্বাভাবিক রীতি বহির্ভূত মাত্র একটি ঘটনা। যা রাসূল (ﷺ) –এর সাথে খাছ ছিল।
(০২) দ্বিতীয় ব্যাখ্যা:
مَا مَاتَ مِنْكُمْ مَيِّتٌ مَا كُنْتُ بَيْنَ أَظْهُرِكُمْ إِلّا آذَنْتُمُونِي بِهِ فَإِنّ صَلَاتِي عَلَيْه رَحْمَةٌ.
অর্থ: তোমাদের কেউ মারা গেলে আমাকে জানাবে। কেননা আমার জানাযা নামায মৃতের জন্য রহমত। তাখরিজ: সহীহ ইবনে হিব্বান-৩০৮৩
بِي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ شَهِدَ الْجَنَازَةَ حَتَّى يُصَلِّي عَلَيْهَا فَلَهُ قِيرَاطٌ، وَمَنْ شَهِدَ حَتَّى تُدْفَنَ كَانَ لَهُ قِيرَاطَانِ، قِيلَ: وَمَا الْقيرَاطَانِ قَالَ: مِثْلُ الْجَبَلَيْنِ الْعظيمَيْنِ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মৃতের জন্য সালাত আদায় করা পর্যন্ত জানাযায় উপস্থিত থাকবে, তার জন্য এক কীরাত, আর যে ব্যক্তি মৃতের দাফন হয়ে যাওয়া পর্যন্ত উপস্থিত থাকবে তার জন্য দু’ কীরাত। জিজ্ঞেস করা হল দু’ কীরাত কী? তিনি বললেন, দু’টি বিশাল পর্বত সমতুল্য (সাওয়াব)। তাখরিজ: বুখারি- ১৩২৫; মুসলিম- ৯৪৫
দুটি হাদিস থেকে বুঝা যায়, জানাযা মৃত্যু ব্যক্তির জন্য রহমত এবং জীবিতের জন্য অনেক সওয়াব রয়েছে। সুতরাং এমন কাজ সাহাবা-তাবেয়িরা ছাড়তে পারে না।
অথচ খোলাফায়ে রাশেদীন থেকেও গায়েবানা জানাযা নামায পড়ার প্রমাণ নেই। অথচ তাদের খেলাফতকালে বিভিন্ন মুজাহিদ শহীদ হয়েছেন। গায়েবানা জানাযা নামায যদি সুন্নাহসম্মত হত তাহলে সাহাবীগণ অবশ্যই উক্ত সুন্নাহর অনুসরণ করতেন। কখনো পরিত্যাগ করতেন না।
(০৩) তৃতীয় ব্যাখ্যা: বাদশা বাদশা নাজাশী ইন্তেকাল করেছেন নবম হিজরীর রজব মাসে। আর গায়েবানা জানাযার হাদিস বর্ণনাকারী (যা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে) সাহাবাগণ মৃত্যবরণ করেছেন অনেক পরে, কিন্তু তারা কখনও গায়েবানা সালাত আদায় করেনি। সূত্র: হাশিয়ায়ে মুয়াত্তা মালিক-২০৮
(০৪) চতুর্থ ব্যাখ্যা: রসূল (ﷺ) মুজিজার অংশ হিসেবে বাদশা নাজাশি জানাযা পড়ার সময় লাশ সামনে ছিল, সাহাবারা তা ধারণা করতেন এবং দেখেছেন। দলিল:
হযরত ইমরান বিন হুসাইন রাঃ বলেন- وَمَا نَحْسِبُ الْجِنَازَةَ إِلَّا مَوْضُوعَةً بَيْنَ يَدَيْهِতথা আমরা জানাযার ব্যাপারে এটাই অনুধাবন করছিলাম যে, তা আমাদের সামনে রাখা আছে। তাখরিজ: মুসনাদে আহমাদ-২০০০৫
হযরত আবান (রাহ.) সূত্রে হযরত ইমরান ইবনে হাছীন থেকে বর্ণিত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে যে, “যখন নবীজী (ﷺ) এর পিছনে জানাযা পড়েছি, نحن لا نرى ان الجنازة قدمنا তখন নাজাশীর লাশকে আমাদের সামনে উপস্থিত দেখতে পেয়েছি।” সূত্র: উমদাতুল কারী শরহুল বুখারী- ৭/৩৩
সুতরাং আমাদের গায়েবানা জানাযায় লাশ সামনে থাকা অনিশ্চিত। তাই তা আদায় করার প্রশ্নেই আসেনা।
শেষ কথা হলো, আমি সেই কথাই বললো, যা বলেছিলেন,
হাম্বলী মাযহাবের ইমাম ইবনুল কায়্যিম বলেন,
وَلَـمْ يَكُنْ مِنْ هَدْيِهِ وَسُنَّتِهِ الصَّلَاةُ عَلَىٰ كُلِّ مَيِّتٍ غَائِبٍ فَقَدْ مَاتَ خَلْقٌ كَثِيْرٌ مِنَ الْـمُسْلِمِيْنَ وَهُمْ غُيَّبٌ فَلَمْ يُصَلِّ عَلَيْهِمْ.
“গায়েবানা জানাযা পড়া (ﷺ)-এর সুন্নাত পরিপন্থি। কেননা রাসুল (ﷺ)-এর জীবদ্দশায় দূর-দূরান্তে বহু সাহাবায়ে কেরাম ইন্তেকাল করেছেন; কিন্তু তিনি তাদের গায়েবানা জানাযা পড়েননি।’’ সূত্র: আওনুল মা’বুদ শরহু সুনানি আবী দাউদ, দারু আল-খ. ৯, পৃ. ; যাদুল মাআদ ১/১৪৮
সুতরাং বর্তমানে যেসব অনুপস্থিত লাশের গায়েবানা জানাযা পড়া হয় তা সুন্নাহসম্মত নয় এবং সালাফের আমলের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। তাই এ প্রথা অবশ্যই বর্জনীয়।
والله اعلم بالصواب