*_বিদায় হজ্জের বাণী:-_*
মক্কা বিজয়ের পর প্রায় এক লক্ষ চব্বিশ হাজার হজ্জ যাত্রী সমন্বয়ে দশম হিজরীর ৯ই যিলহজ্জ আরাফার ময়দানে উপস্থিত হয়ে। আবেগ জড়িত কণ্ঠে মানব জাতির মুক্তির দিশারী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) যে ভাষণ প্রদান করেন তার সারমর্ম নিম্নরুপঃ-
০১। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) জলদ গম্ভীর কণ্ঠে ঘোষণা করলেনঃ হে লোকসকল। স্মরণ রাখিও, তোমাদের রব এক, তোমাদের (আদি) পিতা এক, প্রত্যেক মুসলিম প্রত্যেক মুসলিমের ভাই।
০২। অজ্ঞতা যুগের সকল কুসংস্কার, অন্ধ বিশ্বাস ও অনাচার আজ আমার পদ তলে দলিত হল।
০৩। হুঁশিয়ার। কোন আরবের উপর কোন অনারবের প্রাধান্য নেই। তদ্রূপ কোন অনারবের উপর কোন আরবের প্রাধান্য নেই। কোন কৃষ্ণাঙ্গের উপর কোন শ্বেতাঙ্গের প্রাধান্য নেই, আর কোন শ্বেতাঙ্গের উপর কোন কৃষ্ণাঙ্গের প্রাধান্য নেই। পরস্পরে প্রাধান্যের মাপকাঠি হচ্ছে একমাত্র আল্লাহভীতি।
০৪। তোমাদের চাকর-চাকরানী। তোমাদের চাকর-চাকরানী। তোমরা যা খাবে, তাদেরকেও তা খাওয়াবে, তোমরা যা পরিধান করবে, তাদেরকেও তা পরিধান করাবে।
০৫। অন্ধকার যুগের সকল রক্ত (প্রতিশোধ গ্রহণীয় রক্ত) বাতিল করা হল। আর সর্ব প্রথম আমি আমার বংশের রবিয়া ইবনে হারেছের রক্ত
বাতিল ঘোষণা করলাম।
০৬। অন্ধকার যুগের সকল সুদ বাতিল করা হল। সকলের আগে আমাদের গোত্রের আব্বাস ইবনে আব্দুল মোত্তালেবের সকল সুদ আজ
আমি রোহিত করে দিলাম। ০৭। স্ত্রীজাতি সম্পর্কে আল্লাহকে ভয় করিও। স্ত্রীদের উপর তোমাদের যেমন অধিকার আছে তেমনি তোমাদের উপরও তাদের অধিকার আছে।
০৮। ০৯ (নয়টি) বিষয় বিশেষভাবে স্মরণ রাখিও: শিক করিওনা, বিধি সম্মত অধিকার ব্যতীত কাউকেও হত্যা করিও না, পরদ্রব্য হরণ করিও না, ব্যভিচারে লিপ্ত হইওনা, বংশের গৌরব করোনা, আমীরের আনুগত্য করবে, যতক্ষন পর্যন্ত সে আল্লাহর দীনের ওপর থাকবে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বে, রোজা রাখবে, যাকাত আদায় করবে, আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে চলবে, তবেই তোমরা জান্নাতী হতে পারবে।
০৯। আল্লাহ্ তায়ালা প্রত্যেক অধিকারীকে তার ন্যায্য হিস্যা নির্ধারিত করে দিয়েছেন। অতএব, কোন উত্তরাধিকারীর জন্য আর ওছিয়ত
করতে হবে না। ১০। সন্তান বিছানার মালিকেরই, ব্যভিচারীর জন্য রয়েছে প্রস্তর আঘাতের শান্তি, আর তাদের হিসাব আল্লাহ তায়ালার নিকট।
১১। যে সন্তান তার পিতা ছাড়া অন্যের ঔরশের দাবী করে এবং যে ক্রীতদাস তার মুনিব ছাড়া অন্যের দাস বলে পরিচয় দেয়, তাদের
উপর আল্লাহ তায়ালার অভিসম্পাত।
১২। সাবধান। স্ত্রী স্বামীর সম্পদের কোন অংশ তার অনুমতি ব্যতিরেকে কাহাকেও দান করতে পারবে না।
১৩। ঋণ পরিশোধ করতে হবে, ধার নিলে তা ফিরিয়ে দিতে হবে, দানের প্রতিদান দিতে হবে এবং জামিন জিম্মাদার হবে।
১৪। তোমাদের রক্ত ও ধনসম্পদ অন্যের জন্য কেয়ামত পর্যন্ত সংরক্ষিত (হারাম) করে দেয়া হল যেমন সংরক্ষিত আজকের এই দিন, এই মাস এবং এই কা'বার প্রাঙ্গণ।
১৫। সাবধান। দীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করিও না।
১৬। আমি তোমাদের নিকট দু'টি জিনিস রেখে যাচ্ছি, তা হল- আল্লাহ্ তায়ালার গ্রন্থ আল-কোরআন ও তাঁর রাসূলের সুন্নাহ। যতদিন তোমরা এ দু'টো জিনিস দৃঢ়তার সাথে অবলম্বন করবে, ততদিন তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। হুজুর (সাঃ) সমবেত লোকদের জিজ্ঞেস করলেন: "তোমাদেরকে আল্লাহ হাশরের ময়দানে আমার সম্বন্ধে যখন জিজ্ঞেস করবেন, তখন
তোমরা ইহার কি উত্তর দিবে"? সাহাবীগণ জবাবে বললেন: "হে আল্লাহর রাসূল, আপনি আল্লাহ তায়ালার পয়গাম আমাদের নিকট পৌঁছায়ে দিয়েছেন এবং আপনার কর্তব্য পালন করেছেন"।
জবাব শুনে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) আকাশের দিকে মুখ তুলে আবেগ জড়িত কণ্ঠে বলতে লাগলেন।" হে আল্লাহ্। তুমি স্বাক্ষী থেকো"। এই মুহূর্তে কুরআনের শেষ আয়াতটি নাজিল হয় "আজকের এই দিনে তোমাদের দীনকে পূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের উপর আমার নিয়ামত পূর্ণ করে দিলাম। ইসলামকেই তোমাদের ওপর দীন হিসেবে মনোনীত করলাম।"
আমিন।
______ _______