জিজ্ঞাসা - ২৯২
আচ্ছালামু আলাইকুম। জানার বিষয় হলো- আবাসন সংকুলান না হওয়ায় কিছু সংখ্যক জনবলকে মসজিদে ঘুমাতে দেওয়া হয়। প্রশ্ন হলো ফজরের সময় লোকজন মসজিদে ঘুমিয়ে ছিল, নামাজ আদায় করা হয় বারান্দায়। এভাবে মসজিদে অবস্থানের বিধান জানতে চাই,,, মুহাক্কিক উলামায়ে কিরামগণ, দয়া করে হেল্প করবেন। তারিখ -০২/১০/২০২২
মাওলানা জাফর তৈয়্যব রুমা, বান্দরবান থেকে----
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হলো, আপনার প্রশ্ন সহজভাবে বুঝার জণ্য কয়েকভাগে ভাগ করছি—
প্রশ্ন: ক। মসজিদে ঘুমানো জায়েজ কি না?
প্রশ্ন: ক। মুসাফির কিংবা মুকিম ব্যক্তি প্রয়োজনে/স্বাভাবিক অবস্থায় মসজিদে ঘুমানো জায়েজ। দলিল:
হাদিস নং-০১
” أَنَّهُ رَأَى رَسُولَ اللَّهِ مُسْتَلْقِيًا فِي الْمَسْجِدِ وَاضِعًا إِحْدَى رِجْلَيْهِ عَلَى الْأُخْرَى
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদ আনসারী রা. বলেন আমি রাসূলুল্লাহ সা. কে দেখেছি, মসজিদে এক পা অপর পায়ের উপর রেখে চিৎ হয়ে শুয়ে আছেন। তাখরিজ: বুখারি-৪৭৫
হাদিস নং-০২
عَبْدُ اللَّهِ، ” أَنَّهُ كَانَ يَنَامُ وَهُوَ شَابٌّ أَعْزَبُ لَا أَهْلَ لَهُ فِي مَسْجِدِ النَّبِيِّ . ولفظ ابن ابى شيبة-كنا ونحن شباب نبيت في عهد رسول الله صلى الله عليه و سلم في المسجد ونقيل. وهكذا لفظ الترمذى.
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. নিজের সম্পর্কে বলেন, তিনি ছিলেন অবিবাহিত যুবক। স্ত্রী-পুত্র কেউ ছিল না। তখন তিনি মসজিদে নববীতেই (রাতে ও দিনে) ঘুমাতেন। তাখরিজ: বুখারি-৪৪০
জামে তিরমিযী (তিরমিযী শরীফ) ও ইবনে আবীশাইবার বর্ণনায় বক্তব্যটি তুলে ধরা হয়েছে এভাবে, ‘আমারা একদল যুবক রাতে ও দিনে মসজিদে শয়ন করতাম’।
হাদিস/আসার নং-০৩
عَنْ عَائِشَةَ “أَنَّ وَلِيدَةً كَانَتْ سَوْدَاءَ لِحَيٍّ مِنْ …فَجَاءَتْ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَسْلَمَتْ قَالَتْ عَائِشَةُ فَكَانَ لَهَا خِبَاءٌ فِي الْمَسْجِدِ أَوْ حِفْشٌ قَالَتْ فَكَانَتْ تَأْتِينِي فَتَحَدَّثُ عِنْدِي قَالَتْ فَلاَ تَجْلِسُ عِنْدِي مَجْلِسًا إِلاَّ قَالَتْ: وَيَوْمَ الْوِشَاحِ مِنْ تعَاجِيبِ رَبِّنَا … أَلاَ إِنَّهُ مِنْ بَلْدَةِ الْكُفْرِ أَنْجَانِي
অর্থ; হযরত আয়শা রা.। তিনি বলেন মহিলাটি ইসলাম গ্রহণ করলে তাঁর থাকার জন্য মসজিদে একটি তাবু খাটানো হল। তাখরিজ: বুখারি-৪৩৯
হাদিস/আসার-০৩
أَنَّ أَبَا ذَرٍّ الْغِفَارِيَّ كَانَ يَخْدُمُ النَّبِيَّ صلى الله عليه و سلم فَإِذَا فَرَغَ مِنْ خِدْمَتِهِ، آوَى إِلَى الْمَسْجِدِ، فَكَانَ هُوَ بَيْتُهُ، يَضْطَجِعُ فِيهِ، فَدَخَلَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه و سلم الْمَسْجِدَ لَيْلَةً، فَوَجَدَ أَبَا ذَرٍّ نَائِمًا مُنْجَدِلًا فِي الْمَسْجِدِ، فَنَكَتَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه و سلم بِرِجْلِهِ حَتَّى اسْتَوَى جَالِسًا، فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه و سلم :” أَلَا أَرَاكَ نَائِمًا؟ “،…
হযরত হারেস ইবনে আব্দুর রহমান বলেন, হযরত সুলায়মান ইবনে ইয়াসারকে জিজ্ঞেস করলাম, মসজিদে ঘুমানোর বিধান কী? তিনি উত্তরে বললেন, তোমরা কেন এবিষয়ে প্রশ্ন কর? আহলে ছুফফাতো মসজিদেই থাকতেন, মসজিদেই নামাজ পড়তেন। অর্থাৎ মসজিদে ঘুমানো জায়েয। আহলে ছুফফার মসজিদে ঘুমানোটাই এর দলীল। মুসান্নাফে ইবনে আবীশাইবা হা. ৪৯১১
ওলামায়ে কেরামের মতামত: এ সম্পর্কে হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন,
قوله: “باب نوم الرجال في المسجد” أي جواز ذلك، وهو قول الجمهور،
অর্থাৎ পুরুষদের জন্য মসজিদে ঘুমানো জায়েয। এটাই অধিকাংশের মত। ফাতহুল বারী-১খণ্ড, ৫৩৫ পৃ.
প্রশ্ন: খ। বারান্দা মসজিদের অন্তর্ভুক্ত কিনা?
উত্তর: খ। সাধারণত বাংলাদেশের মসজিদের বারান্দাগুলো মসজিদের অন্তর্ভুক্ত। এ বিষয়ে আল-বুরহানে জিজ্ঞাসা-১৫৯ শিরোনামে আলোচনা করা হয়েছে, দ্বিতীয়বার আলোচনা করতে চাচ্ছি না। লিংকটি এখানে দেওয়া হচ্ছে।
https://al-burhaan.blogspot.com/2022/06/blog-post_18.html
সুতরাং আপনার প্রশ্ন আলোকে আপনারা যেহেতু মসজিদে বারান্দায় জামাত হয়েছেন তাই মসজিদের নামাজ পড়ার সওয়াব পেয়ে যাবেন।
তবে বিষয়টি দৃষ্টিকটু, আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটে অপছন্দনীয় মসজিদের ভেতরে ঘুমাবে আর আমরা বারান্দা নামাজ পড়বো, সুতরাং এটা পরিহার করা উচিত।
পরামর্শ: আপনি প্রশ্নে উল্লেখ করেছেন যে, জায়গা সংকলন হচ্ছে না। তাই মানবিক বিষয় বিবেচনা করে কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে, তারা বারান্দায় ঘুমাবে আর আপনারা মসজিদের জামাত আদায় করবেন।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন,